আদম-ইভ থেকে শাহরুখ খান! পৃথিবীবিখ‍্যাত এই জাদুঘরগুলিতে প্রতিপদে রয়েছে চমক

Museums of World: চলুন ঘুরে দেখা যাক বিশ্বনন্দিত সব জাদুঘরের আনাচকানাচ।

Travel makes one modest. You see what a tiny place you occupy in the world.

–গুস্তাভে ফ্লবেয়ার

ভ্রমণ মানুষকে যতই বিনীত করুক না কেন, জানার ইচ্ছে মানুষকে বারবার ঘরছাড়া করেছে। ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখতে মানুষ পথে নেমেছে। কেন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পথ এসে মিশেছে বিশ্বনন্দিত জাদুঘরগুলোর কাছে? এর উত্তর একটাই। ইতিহাসের প্রতি সন্ধিৎসা।

প্রাচীনতম নিদর্শনগুলো আমাদের সভ্যতার পরিচায়ক। প্রতিটি জাতির নিজস্ব ইতিহাস, নিজস্ব সংস্কৃতি, নিজস্ব ঐতিহ্য রয়েছে। আর এইসব স্মৃতি যুগ যুগ ধরে বহন করে আসছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক জাদুঘরগুলো। জাদুঘর ইতিহাসের ধারক ও বাহক। ইতিহাস জানতে চাইলে জাদুঘরের বিকল্প নেই। জাদুঘর জ্ঞান আহরণের স্থান। যেখান থেকে উৎসুক মন ইতিহাসকে আরও কাছ থেকে জানার সুযোগ পায় নিশ্চয়ই।

জাদুঘর শব্দটা শুনতেই সর্বপ্রথম মাথায় আসে অদ্ভুত সব সংগ্রহে ভর্তি এমন একটি স্থান। যেখানে সারিবদ্ধভাবে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন প্রাচীনতম ইতিহাস ও সংস্কৃতি। যা সভ্যতার বিবর্তনবাদের দৃশ্য তুলে ধরে। জাদুঘর ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়। বিশ্বে কিছু জাদুঘর পাবেন, যেখানে নিজ দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করা হয়। আবার বেশ কিছু জাদুঘর আছে, যারা বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরে। জাদুঘর ইতিহাসকে জানার ক্ষেত্রে অন্যতম একটি উৎস। চলুন ঘুরে দেখা যাক বিশ্বনন্দিত সব জাদুঘরের আনাচকানাচ।

আরও পড়ুন: চামড়ার রং শেষ কথা নয়! বর্ণবাদকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যাঁরা শাসন করেছেন পৃথিবী

রিজকসমিউজিয়াম মিউজিয়াম (Rijksmuseum Museum)
ডাচ স্বর্ণযুগের চিত্রশিল্পের আবিশ্বাস্য সংগ্রহশালা এইটি। ডাচ পেন্টার জোহানিস ভার্মের এবং রেমব্রান্টের পেন্টিং রয়েছে এখানে। স্বাভাবিকভাবে বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না, কতটা সমৃদ্ধিশালী এই জাদুঘর। ২০১৩ সালে এই জাদুঘরের নানা সম্পদ পুনরুদ্ধার করা হয়। সেইসব মাস্টারপিস দর্শকদের দেখার জন্য সজ্জিত রয়েছে। এটি বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত আর্ট মিউজিয়াম। আম্পস্টারডামের মিউজিয়াম স্কোয়ারের মাঝখানে এর ঠিকানা। এখানে ৮০০০ চিত্রকলা এবং ইতিহাসের নিদর্শন প্রদর্শিত হয়। এখানে ডাচ শিল্পকলার অনুভূতি আপনাকে মুহূর্তে অন্য জগতে নিয়ে যাবে। ফলে ইতিহাস এবং শিল্পকে ছুঁয়ে দেখতে চাইলে আপনার ঠিকানা হতেই পারে এই মিউজিয়াম।

উফিজি গ্যালারি (Uffizi Gallery)
ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে অবস্থিত উফিজি গ্যালারি ইতালির ঐতিহ্যের বিশাল এক শিল্প সংগ্রহশালা। এখানে বিভিন্ন অঞ্চলের চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্য রয়েছে। এর প্রবেশদ্বার পার হতে না হতেই বিভিন্ন ভাস্কর্য চোখে পড়বে। পাথরে খোদাই করা সব ভাস্কর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। একে ইউরোপের রেনেসাঁর সংগ্রহশালা বলা হয়ে থাকে। এটি ইতালির বিখ্যাত শিল্প-জাদুঘরগুলোর একটি।

বিখ্যাত চিত্রকর মাইকেলএঞ্জেলো ও লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মতো বিখ্যাত সব ব্যক্তিদের চিত্রকর্ম রয়েছে এখানে। বিখ্যাত ভাস্কর বতিচেল্লির ‘বার্থ অব ভেনাস’ এবং ‘প্রিমাভেরা’-সহ অন্যান্য কালজয়ী ভাস্কর্য এখানে সংগৃহীত আছে। প্রতিবছর প্রায় ১.৯ মিলিয়ন পর্যটক এই মিউজিয়াম পরিদর্শনে আসেন।

ব্রিটিশ মিউজিয়াম (British Museum)
বিশ্বের প্রথম জাতীয় মিউজিয়াম। ব্রিটিশ মিউজিয়ামটি লন্ডনে অবস্থিত। এটি ১৭৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের ঐতিহাসিক নিদর্শন ও প্রত্নতাত্ত্বিক কর্ম এখানে স্থান পেয়েছে। এখানে প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ১৯৬ সালের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায়। এই মিউজিয়ামকে ইজিপশিয়ান ঐতিহ্যের এক বিরাট সংগ্রহশালা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাছাড়া ব্রিটিশদের ইতিহাসের বড় উৎস হিসেবে একে বিবেচনা করা হয়। এখানে সর্বমোট ৭০ লক্ষ সংগ্রহ রয়েছে । এই মিউজিয়ামে বছরে ৬০ লক্ষ দর্শনার্থী পরিদর্শন করেন। তবে এখানে ৪০ লক্ষ সংগ্রহ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। এটি লন্ডনের অন্যতম বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র।

মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম (Metropolitan Museum)
মেট্রোপলিটন মিউজিয়ামটি নিউইয়র্কে অবস্থিত। নিউইয়র্ক শহরের সবচেয়ে বড় আর্ট মিউজিয়াম। এটি ১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটিতে প্রায় ২০ লাখের বেশি দর্শনীয় বস্তু রয়েছে। যা সমগ্র বিশ্ব থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এখানে ইসলামিক, মিশরীয়, ইন্ডিয়ান ও গ্রিক কলা/সংস্কৃতি এবং ইউরোপের চিত্রশিল্পের নিদর্শন রয়েছে। এখানে প্রায় ৬০০০ বছরের মানব ইতিহাসের সন্নিবেশ করা হয়েছে। এই জাদুঘরে বিখ্যাত আদম ও ইভের মূর্তি রয়েছে, যা এটিকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা দিয়েছে। এই জাদুঘরটি এতই বড় যে, গোটা একটা দিনে এটি পরিদর্শন করা সম্ভব নয়। গত বছর দর্শনার্থীদের ভোটের মাধ্যমে এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় জাদুঘর হিসেবে বিশেষ মর্যাদা লাভ করে।

ল্যুভর মিউজিয়াম (Louvre Museum)
ল্যুভর মিউজিয়াম পৃথিবীর অন্যতম একটি বিখ্যাত মিউজিয়াম। প্রথম সারির জাদুঘরগুলোর তালিকা তৈরি করতে বলা হলে এটি নিঃসন্দেহে প্রথম দিকে স্থান পাবে। এই বিখ্যাত জাদুঘরটি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত। এই জাদুঘরকে আধুনিক ইউরোপের ইতিহাসের সংগ্রহশালা বলা যায়। এর সামনে কাচের পিরামিড এটিকে বহুমাত্রিকতা দান করেছে। এখানে গ্রিক, মিশরীয়, রোমান ও প্রাচ্যদেশীয় অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় বস্তুসমূহ হলো রেনাসাঁ আমলের নিদর্শনগুলি, যা এটিকে আরও বহুমাত্রিকতা দান করেছে। এখানে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির বিখ্যাত চিত্রকর্ম মোনালিসা-সহ রেমব্রান্ট, রুবেন্স ও টশিয়ানের বিখ্যাত সব সৃষ্টি স্থান পেয়েছে।

মাদাম তুসো মিউজিয়াম (Madame Tussaud Museum)
মাদাম তুসো মিউজিয়ামটি লন্ডনে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর বিখ্যাত মিউজিয়ামের মধ্যে অন্যতম। এটি প্রথমে ১৮৩১ সালে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় যাত্রা শুরু করে পরবর্তীতে ১৮৩৫ সালে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মিউজিয়ামটি বিখ্যাত হওয়ার প্রধান কারণ হলো বিভিন্ন বিখ্যাত মোমের মূর্তি/মমি সংরক্ষণ করা। এখানে অ্যারিস্টটল থেকে শুরু করে স্টিফেন হকিং, অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান পর্যন্ত সব কিংবদন্তির মোমের তৈরি প্রতিকৃতি রয়েছে। এটিরও নামকরণ করা হয় মাদাম তুসো নামে এক ব্যক্তির নামানুসারে।

কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়? পথিক এক জীবনে পথেই তার উত্তর খুঁজে পায়। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন ঐতিহাসিক জাদুঘরগুলোতে যে রহস্য লুকিয়ে রয়েছে, এক জীবনে তার নাগাল পাওয়া কি কোনও সন্ধিৎসু মনের পক্ষে সম্ভব?

More Articles