শিখতেন স্বামী বিবেকানন্দও, কেমন আছে বাঙালির কুস্তির আখড়াগুলো?
অসিতবাবুর আরও দাবি, তাঁরা হাল ছাড়ছেন না। টোকিও অলিম্পিক্সে স্বর্ণপদক জয়ের পর থেকে তিনি এবং কুস্তিগিররা আবারও নতুন উৎসাহে লড়াইয়ে নেমে পড়েছেন।
প্রতিদিন ভোরবেলা ফুলের বাজার এবং কলকাতার বিখ্যাত হাওড়া ব্রিজের মধ্যবর্তী ঘাটে, আপনি ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় শৈলিতে একদল পুরুষের প্রশিক্ষণ এবং কুস্তি দেখতে পাবেন তাঁদের সকালের রুটিনে প্রায় চার ঘণ্টা ব্যয় করে কেউ ব্যায়াম এবং স্ট্রেচিং করছেন, কেউ মুগুর ভাঁজছেন, আবার কেউ বা ডন বৈঠক দিচ্ছেন। তারপর কুস্তি লড়াই এবং অবশেষে হুগলি নদীতে আনুষ্ঠানিক স্নান। এইভাবেই চলে আসছে তাঁদের জীবনযাত্রা, তাঁরা বাংলার কুস্তিগির।
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে কুস্তি এবং মল্লযুদ্ধর এক দীর্ঘ এবং জটিল ইতিহাস রয়েছে। এর অনেক ঐতিহ্যগত ধরন, যার মধ্যে রয়েছে টিকে থাকা, দলগত কুস্তি ইত্যাদি। মহাভারতের কুস্তিগির ভীমের অসীম সাহস আর বাহুবলের কথা অজানা নয়। মল্লযোদ্ধা ভীম এবং জরাসন্ধের মধ্যে সংঘর্ষের বর্ণনা আজও উপভোগ্য। আধুনিক কুস্তির ইতিহাসের জনপ্রিয়তা শুরু হয় উনিশ শতকে, এই খেলাটি কুড়ি শতকের দিকে অসাধারণ জনপ্রিয়তা পায়। দুইয়ের দশকে, ক্রীড়া প্রতিযোগিতার একটি ফর্ম হিসেবে কুস্তি দেখানো হয়, যা এখন পেশাদার কুস্তি হিসেবে পরিচিত। আমাদের মহাকাব্যে কুস্তি ‘মল্লযুদ্ধ’ হিসেবে পরিচিত। মল্লযুদ্ধে শুধু পুরুষ নয়, মহিলাদেরও অংশগ্রহণ ছিল। ভারতে প্রথম কুস্তি চর্চা শুরু হয় বরোদাতে। মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের উদ্যোগে ১৮৯২-'৯৪ সালে প্রথম বিশ্ব কুস্তি প্রতিযোগিতা শুরু হয় এবং সেখানে জিতে করিম বক্স বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কুস্তিগিরের খেতাব লাভ করেন।
বলাই বাহুল্য, বাংলাতেও এর প্রভাব কম ছিল না। কিন্তু তা মধ্যবিত্ত বাঙালি হিন্দু সমাজের মধ্যে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেনি। তখনও পর্যন্ত কুস্তিকে পাঞ্জাবি মুসলমানদের একচেটিয়া বলে মনে করা হত। বিংশ শতাব্দীর দুই ও তিনের দশকে প্রধানত গোবর গুহর সাফল্যেই মধ্যবিত্ত বাঙালি হিন্দু সমাজের মধ্যে কুস্তির প্রচলন হয়। ব্রিটিশ শাসনের শেষ পর্বে কলকাতা-সহ বাংলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছিল কুস্তির আখড়া বা ব্যায়ামাগার। বাংলার বিপ্লবী দল তাদের শরীরচর্চার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে নতুন করে এই খেলার অনুশীলন শুরু করেন। দেশাত্মবোধকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে ‘অনুশীলন সমিতি’। সেখানে শরীরচর্চা এবং আত্মরক্ষার প্রয়োজনে কুস্তির আখড়া তৈরি হয়। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতেও নিয়মিত কুস্তিচর্চার প্রচলন ছিল। রবীন্দ্রনাথের ‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, "ভোরে অন্ধকার থাকিতে উঠিয়া লংটি পরিয়া প্রথমেই এক কানা পালোয়ানের সঙ্গে কুস্তি করিতে হইত। তাহার পরে সেই মাটি মাখা শরীরের উপরে জামা পরিয়া পদার্থবিদ্যা, মেঘনাদবধ কাব্য, জ্যামিতি, গণিত, ইতিহাস, ভূগোল শিখিতে হইত।"
আরও পড়ুন: আসলে কলকাতার বয়স কত? যে ইতিহাস ছিল আড়ালে
মাঠে নামার আগে একটা ফর্ম দেওয়া হলো। তাতে কিছু তথ্য লিখতে হবে। যতীন্দ্রচরণ গুহ চিমটি মেরে কাগজটুকু নিলেন, একে একে লিখতে শুরু করলেন- ওজন: ২৩০ পাউন্ড। গলা: ২০ ইঞ্চি। হাতের গোছা: ১৫ ইঞ্চি। কব্জি: পৌনে ৯ ইঞ্চি, বুক: ৫০ ইঞ্চি, বুক (ফোলালে) ৫২ ইঞ্চি, ঊরু: ৩৩ ইঞ্চি, পায়ের ডিম: সাড়ে ১৮ ইঞ্চি। শরীরের এমন বর্ণনা দেখেই যে কেউ ভাবতে পারেন, এ তো বিদেশি কোনও বডিবিল্ডার! না, তিনি একজন বাঙালি কুস্তিগির। বাংলায় কুস্তির জয়জয়কার আন্তর্জাতিক স্তরে, বা বলা যায় বিশ্বের দরবারে বাঙালির মুখোজ্জ্বল করার দায়ভার যিনি নিয়েছিলেন, তাঁর নাম না করলেই নয়, তিনি হলেন গোবর গুহ (যা ব্রিটিশ কালে গুহ থেকে গোহ হয়), তার প্রকৃত নাম যতীন্দ্রচরণ গুহ। তাঁর হাত ধরেই বাংলায় কুস্তির প্রবেশ। গোবর গোহের জন্ম ১৮৯২ সালের ১৩ মার্চ, এক দোলপূর্ণিমার দিনে কলকাতার মসজিদবাড়ি স্ট্রিটের এই বিখ্যাত কুস্তিগির পরিবারে। ছোটবেলায় তাঁর নাদুসনুদুস চেহারা দেখে পিতামহ অম্বুবাবু তাঁকে রসিকতা করে ‘গোবরের ড্যালা’ বলতেন। সেই থেকে তাঁর ডাকনাম হয় গোবর। গোবর গুহর পিতামহের পিতামহ শিবচরণ গুহ আধুনিক বাংলাদেশের প্রথম আখড়াটি স্থাপন করেন হোগোলকুঁড়িয়ায়। বর্তমান শোভাবাজার মসজিদবাড়ি স্ট্রীটে। তাঁর পিতামহ অম্বিকাচরণ গুহ-কে বাংলাদেশে আখড়া সংস্কৃতির পথিকৃৎ বলে মনে করা হয়। পিতা রামচরণ গুহ এবং কাকা ক্ষেত্রমোহন গুহ বা খেতুবাবুও ছিলেন নামকরা কুস্তিগির। প্রথম জীবনে তাঁদের কাছেই কুস্তির প্রাথমিক শিক্ষা নিয়েছিলেন গোবর গুহ। স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী ব্রহ্মানন্দ ও বাঘাযতীন, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, মান্না দে প্রমুখ আসতেন তাঁর আখড়ায় কুস্তি শিখতে। পরবর্তীকালে তাঁদেরই আখড়াতে কর্মরত বিখ্যাত কুস্তিগির খোলসা চৌবে ও রহমানি পালোয়ানের কাছে তাঁর অনুশীলন শুরু হয়। তাঁর কুস্তির ইতিহাস শুনলে বোঝা যায়, একজন বাঙালি কীভাবে আমেরিকার মাটিতে ধরাশায়ী করেছেন তাবড় শ্বেতাঙ্গ কুস্তিগিরদের। এহেন মানুষটিকে নিয়েই সে-সময় আমেরিকায় মস্ত স্টোরি বেরোল ‘ক্যানসাস সিটি পোস্ট’ পত্রিকায় এই হেডিং-সহ: “Invasion of ‘Hindu Menace’ breeds fear among madmen.” হিন্দু আক্রমণে কুস্তিগিররা থরহরিকম্প।
১৯১০ সালে ১৮ বছর বয়সে লন্ডনে জন বুল সোসাইটি আয়োজিত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের অন্যতম প্রতিনিধি নির্বাচিত হন গোবর গুহ। ১৯১২ সালে দ্বিতীয়বার ইউরোপ ভ্রমণের সময় তিনি স্কটল্যান্ডের শ্রেষ্ঠ কুস্তিগির ক্যাম্পবেলকে পরাজিত করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে গোবর গুহ ১৯২০ সালে সান ফ্রানসিসকো-তে বিশ্ব পেশাদার কুস্তি প্রতিযোগিতায় তৎকালীন লাইট হেভিওয়েট বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অ্যাড সান্টেলকে পরাজিত করেন। ১৯৪৪ সালে গোবর গুহ পেশাদার কুস্তি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
গোবর ভারতীয় কুস্তিকে বিশ্বের দরবারে এক উচ্চ স্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন। কথিত ছিল, তিনি খাবারের সঙ্গে সোনা আর রূপোর গুঁড়ো মিশিয়ে খেতেন গায়ের জোর বাড়ানোর জন্য! বিষয়টি নিয়ে আমেরিকান সাংবাদিকরা লেখালেখিও করেছেন। তিনি ভারতীয় কুস্তির রীতিতে বহু নতুন প্যাঁচের উদ্ভাবন করেন। তাঁর উদ্ভাবিত ধোঁকা, টিব্বি, গাধানেট, ঢাক, টাং, পাট, ধোবা পাট, কুল্লা, রদ্দা, নেলসন ইত্যাদি ভারতীয় কুস্তি রীতিতে সংযোজিত হয়। তাঁর সর্বাধিক প্রচলিত পদ্ধতি হল রদ্দা। গোবর গুহর আখড়ায় কুস্তি করতে আসা ব্যায়ামবীরদের মধ্যে রয়েছেন নীলমণি দাস, বিষ্ণুচরণ ঘোষ, মনোহর আইচ, মনোতোষ রায়। প্রত্যেকেই আসতেন তাঁর আখড়ায়। ১৯৫২ অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ-জয়ী কুস্তিগির খাশাবা দাদাসাহেব যাদব গোবর গুহর আখড়াতেই কুস্তির পাঠ নিয়েছিলেন। গোবর গুহর ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন বনমালী ঘোষ, জ্যোতিষচরণ ঘোষ ও বিশ্বনাথ দত্ত।
এই গেল অতীতের কুস্তির ইতিহাস। বর্তমান কালের দিকে তাকালে দেখা যায়, কলকাতা শহরের ঐতিহ্যশালী আখড়াগুলো আর আগের মতো নেই। ঐতিহ্যপূর্ণ গোবর গোহর আখড়ায় এখন আর জিম ছাড়া কিছু হয় না। অথচ গত জাতীয় ক্রীড়াতেও বাংলা কুস্তিতে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। বর্তমানে সর্বভারতীয় কুস্তি সংস্থার সহ-সভাপতি, রাজ্য কুস্তি সংস্থার সচিব অসিত সাহা জানালেন, “কলকাতার অধিকাংশ আখড়ার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেলেও এখনও টিকে আছে বড়বাজার তারাসুন্দরী পার্ক, জোড়াবাগান, প্রসন্নকুমার ঘাটের মতো কয়েকটি আখড়া। মুর্শিদাবাদ, জলপাইগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের কয়েকটি আখড়া বাংলার কুস্তিকে এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে। যদিও অনুশীলন ছাড়া এই সব মাটির আখড়ায় প্রতিযোগিতা সংগঠিত করা যায় না। বাংলায় প্রচুর স্টেডিয়াম নির্মাণ হয়েছে, কিন্তু যে খেলা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পদক তুলে আনছে, তার স্থান নেই সেখানে।” তাঁর আরও মত, "কুস্তিগিরদের চাকরি আর আগের মতো নেই বলে অনেকেই কুস্তি ছেড়ে অন্য পেশার সাথে যুক্ত হচ্ছেন।" এ-দেশের কুস্তির পথপ্রদর্শক গোবর গোহ তাঁর শেষ জীবনে হয়তো জানতেই পারেননি সময়ের সঙ্গে বদল ঘটেছে বিশ্ব কুস্তির ধরনে, ব্যাকরণে, নিয়মকানুনেও। বর্তমানে মল্লবীর আর জিমন্যাস্টদের চেহারা খুব আলাদা কিছু নয়। আগেকার সুবিশাল খাবারের থালায় থরে থরে সাজানো প্রচুর খাবারের বদলে এখন নিয়ন্ত্রিত পরিমিত খাবার। তিন ঘণ্টার ম্যারাথন কুস্তির বদলে মাত্র ৬ মিনিটের লড়াই। পয়েন্টের বিচারে এখন জয়-পরাজয়ের নিষ্পত্তি।
কলকাতার বুকে অবস্থিত এক কুস্তি আখড়ার গুরুজির থেকে জানা যায়, "কুস্তিগিরদের জন্য সরকারি সমর্থনের ইতিহাস আছে; এমনকী, জাতীয় স্তরের পঞ্চম স্তরের কুস্তিগিরকেও সরকারি রেলে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হবে। এটি অলিম্পিক মান প্রতিযোগিতার প্রতিশ্রুতির অংশ। প্রকৃতপক্ষে, মিশ্র মার্শাল আর্টের কিছু অনুশীলনকারী আখড়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে, কারণ এর আরও ভারসাম্যপূর্ণ শাসনব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রীয় সমর্থনের সুযোগ রয়েছে। তবে, উদ্বেগ রয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যের সমর্থন অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক কম।"
সম্প্রতি ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর মুক্তি পেয়েছে ‘গোলন্দাজ’, সেই ছবিতে অভিনেতা দেবকে কুস্তি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন জাতীয় স্তরের প্রাক্তন কুস্তিগির শুভদীপ ভৌমিক। পেশায় তিনি অটোচালক; টালিগঞ্জের রাস্তায় সবাই তাঁকে ‘সানি’ বলে চেনে। তাঁর কথায়, স্বপ্ন ছিল, চেয়ারে বসে চাকরি করবেন। পূরণ হয়নি। বেছে নিতে হয়েছে অটোচালকের আসন। স্বপ্ন ছিল, দেশের হয়ে কুস্তি লড়বেন আন্তর্জাতিক আসরে। পূরণ হয়নি, হবেও না। জাতীয় স্তরে গিয়েই থামাতে হয়েছে লড়াই। স্বপ্ন ছিল, এরিনার চারপাশে থাকা সমর্থকদের উল্লাসের মধ্যে কুস্তি লড়বেন। পূরণ হয়নি। টালিগঞ্জ-যাদবপুর রুটের অটোচালক সানি তাই ‘গোলন্দাজ’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য নায়ক দেবকে কুস্তির প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। হারিয়ে যেতে বসা ভালো নামটা শেষবার কুস্তির সার্টিফিকেটে লেখা হয়েছিল ২০১৮ সালে। করোনাকালের আগে সেটাই ছিল শেষ রাজ্য-স্তরের প্রতিযোগিতা। সেবার প্রথম হয়েছিলেন সানি। রাজ্য-সেরা সানি একবার জাতীয় স্তরে লড়েছেন বাংলার হয়ে। তবে মেডেল আসেনি। পঞ্চম হয়েছিলেন। সানি বললেন, "কুস্তি আমি ভুলতে পারিনি। আসলে এই খেলা এমনই যে শরীর আর মন তার সঙ্গে মিশে যায়। ছেড়ে থাকা যায় না। এখন কয়েকটা জায়গায় কোচিং করাই।" সানি আরও বলেন, "কুস্তিতে এখন কোনও সুযোগ নেই, তা বলাই বাহুল্য। রেলেও আর সেভাবে নিয়োগ হয় না। আসলে কুস্তি চালিয়ে যেতে অনেক খরচ। ঘি, মাখন, ডিম থেকে ফল, ফুড সাপ্লিমেন্ট লাগে নিয়মিত। কোচিং নেওয়ারও খরচ অনেক। সেইসব টানার জন্যই চাকরিটা আমি সাপোর্ট হিসেবে চেয়েছিলাম, হয়নি। এখন অটো চালিয়ে যে রোজগার হয় তাতে কুস্তি নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখা আর সম্ভব নয়।" কুস্তির প্যাঁচপয়জার ধোবি পছাড়, ধোপার মতো করে প্রতিপক্ষকে আছাড় মারা; সব মন দিয়ে শিখেছিলেন সানি। নায়কের সঙ্গে ক্যামেরার সামনে কুস্তিও লড়েছেন। কিন্তু বারবার স্বপ্ন দেখে ধাক্কা খাওয়া সানি এখন খুবই সতর্ক। মুখে ‘বেশ আছি’ বললেও মনের মধ্যে যে তাঁর দুঃখ জমে আছে, তা বুঝতে বাকি থাকে না।
ভবিষ্যতের কথা হয়তো হলফ করে বলা যায় না কিন্তু এটা বলতেই হয় যে, গোবরবাবু বেঁচে থাকলে হয়তো বাংলার মাটি থেকেই অলিম্পিক্সের স্বর্ণপদক আসত। কুস্তির ইতিহাসে গোবরবাবুর গুরুত্ব কতখানি, তা মাপা সম্ভব নয়। গোবরবাবুর বন্ধু, বিজ্ঞানী ও এসরাজ বাজিয়ে সত্যেন্দ্রনাথ বসু তাঁর ‘গোবরস্মরণে’ গ্রন্থে বলেছেন, "সত্যিই তো, এত বড় মল্ল বাংলায় তো আর হল না। শেষ বয়সে এটাই বড় আফসোস রয়ে গেল তাঁর। জুডো, ক্যারাটের শখ হল বাঙালি ছেলে-ছোকরাদের মধ্যে, কিন্তু ডন-কুস্তির হাল ধরল না কেউ।" অসিতবাবুর আরও দাবি, তাঁরা হাল ছাড়ছেন না। টোকিও অলিম্পিক্সে স্বর্ণপদক জয়ের পর থেকে তিনি এবং কুস্তিগিররা আবারও নতুন উৎসাহে লড়াইয়ে নেমে পড়েছেন। তাঁদের আশা, সরকারি সুনজর পাবে একসময়ে জনপ্রিয়তার শিখরে থাকা এই কুস্তি।