লাগাতার ৭ দিন মাটির নীচে কফিনবন্দি! তারপর যা হল ইউটিউবারের সঙ্গে...

Buried alive in a coffin: গা ছমছমে কফিনের ভিতর সাত দিন একটানা থাকা, তা-ও আবার জ্যান্ত অবস্থায়! সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছেন ইউটিউবার মিস্টার বিস্ট।

কফিন মানেই মৃতদের গন্তব্য। জীবিত মানুষের সেখানে আনাগোনা থাকার কথা নয়। কাজেই কফিন বা কবরস্থান নিয়ে অনেকের মধ্যেই একটু গা ছমছমে ব্যাপার থাকে। আর সেই গা ছমছমে কফিনের ভিতর সাত দিন একটানা থাকা, তা-ও আবার জ্যান্ত অবস্থায়! কী ভাবছেন, এ এক্কেবারে অসম্ভব কাণ্ড। তবে সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছেন এক ইউটিউবার।

এখন জমানা ইউটিউবারদেরই। প্রচার ও ভিউয়ের জন্য ইউটিউবারেরা কী না করেন। বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ কারবার করে, সেগুলি নিজেদের চ্যানেলে প্রকাশ করেন তারা। যা দেখতে জড়ো হন লক্ষ লক্ষ ভক্ত। সেসব দেখে তাঁরা অনুপ্রাণীত হন। ঠিক তেমনই একটি ডেয়ার নিয়ে বসেছিলেন জিমি ডোনাল্ডসন নামে ওই ইউটিউবার। বাঞ্জি জাম্পিং, আকাশ থেকে প্যারাসুট বেঁধে লাফ কিংবা অতল সমুদ্রে স্কুবা ডাইভিংয়ের থেকেও ভয়ঙ্কর সেই কাজ। সম্প্রতি জিমি ঠিক করেন, সাত দিন টানা একটি কফিনে থাকবেন। না, যে সে কফিন নয়। সেই কফিনটিকে তালা বন্ধ করে সমাহিত করা হবে মাটির নিচে। যেমনটা করা হয়ে থাকে মৃতদেহের ক্ষেত্রে আর কি!

বেশ জনপ্রিয় ইউটিউবার জিমি। তাঁর সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা প্রায় ২১২ মিলিয়নের কাছাকাছি। সেই সব ভক্তদের সামনে নিজের এই ভয়ঙ্করতম স্টান্টটির কথা ঘোষণাও করে দেন জিমি। কিন্তু মাটির তলায় কফিনবন্দি অবস্থায় থাকা কি আর মুখের কথা নাকি। মাটির নিচে অক্সিজেন পাওয়া মুশকিল। তার পর মাটি চাপা কফিনে তা থাকা তো আরওই মুশকিল। ফলে সহজ ছিল না মোটেই এই কাজটি।

আরও পড়ুন: জলেস্থলে অবাধ বিচরণ! দেখা মিলল পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম পাখির

কোথায় কবে তিনি এ ই দুঃসাহসিক কাজটি করেন, তা জানা যায়নি। তবে ক্যামেরার সামনেই গোটা ঘটনাটি ঘটিয়ে ফেলেন ইউটিউব দুনিয়ার সেনসেশন জিমি। সেই কবরে ঢুকে পড়ার আগে জিমি জানান, আপাতত আগামী ৭ দিনের জন্য এই কফিনের কাছেই নিজের জীবন সঁপে দিলেন। তবে শুনতে যতটা জলভাত মনে হচ্ছে,গোটা ব্যাপারটা কিন্তু আদতেই তা ছিল না।

কফিনে থাকাকালীন সময়টা যতটা সম্ভব ঘুমিয়ে থাকার পরিকল্পনা ছিল জিমির। সেটাই ছিল কৌশল। যত বেশি ঘুমোতে পারবেন, তত সময় দ্রুত কাটবে। কিন্তু অনন্ত অন্ধকারের মধ্যে ঘুম কি আর তত সহজে আসে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম চিন্তা চেপে ধরেছে। একেকসময় হতাশায়, কান্নায় ভেঙে পড়তেও দেখা যায় জিমিকে।

YouTuber MrBeast spends 50 hours buried alive in coffin

 

অথচ তার কাছে কবরে সব কিছুই ছিল। যে কবরটিতে শোয়ানো হয়েছিল জিমিকে, সেটি ছিল নানা ধরনের সুবিধাযুক্ত। খাবার, জল ও নানা প্রয়োজনীয় জিনিসে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছিল কফিন। ভিডিও রেকর্ড করার জন্য় ছিল ক্যামেরাও। পাশাপাশি অক্সিজেনের ঘাটতিতে যাতে কোনওরকম অসুবিধায় না পড়েন তিনি, ছিল সেই ব্যবস্থাও। তবে যা ছিল, তা ছিল শুধুই বেঁচে থাকার প্রয়োজন মেটানোর মতো। বিনোদনের কোনও ব্যবস্থাই ছিল না সেখানে। জিমি ও তাঁর টিম আগেই নিশ্চিত করেছিল, কবরটি যাতে পুরোপুরি মাটির নিচে থাকে। সে জন্য খনন যন্ত্র ব্যবহার করে প্রায় ২০ হাজার পাউন্ড মাটি খুঁড়ে তার নিচে রাখা হয়েছিল কফিনটিকে। খুঁড়ে তোলা মাটি দিয়ে ভালো করে ঢেকে দেওয়া হয় জিমির কফিনটিকে।

YouTuber MrBeast spends 50 hours buried alive in coffin

 

 

মাটির নিচে সমস্ত সুবিধা ছিল বটে। তবে সেখান থেকে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কথা বলা বা যোগাযোগের রাস্তা ছিল না তাঁর কাছে। তবে সব সময় যে তাঁকে শুয়েই থাকতে হয়েছে তা কিন্তু নয়। কফিনটিতে উঠে দাঁড়াবার জায়গা না থাকলেও সোজা হয়ে বসার যথেষ্ট জায়গা ছিল। ফলে ইচ্ছামতো বসে-শুয়ে সময় কাটাতে পেরেছেন জিমি।

তবে সময় যত এগোতে লাগল, ততই কঠিন হতে লাগল পরিস্থিতি। চার নম্বর দিনে পড়তে না পড়তেই অসহ্যবোধ হতে থাকে জিমির। তাঁর খানি মনে হতে থাকে যে সে খুবই ক্লান্ত। এদিকে কোনওমতেই ঘুমোতে পারছেন না। কান্না পেত তাঁর। অথচ কেন কাঁদছেন, বলা কঠিন। জিমি জানান, এ যেন সম্পূর্ণ অন্যরকম এক অনুভূতি। এর আগে এমনটা অনুভব করেননি কখনও। অবশেষে ফুরায় দুঃসহ সে সব দিন।

YouTuber MrBeast spends 50 hours buried alive in coffin

কবর থেকে যখন তুলে আনা হল জিমিকে, তখন তাঁকে স্বাগত জানাতে হাজির ছিলেন তাঁর অজস্র বন্ধু ও অনুগামী। তাঁরা একটি ব্যানার দিয়ে স্বাগত জানান তাঁকে। ভয়ঙ্কর এই স্টান্টের পরে অবশ্য জিমির সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে আরও অনেক। এমনিতেই ইউটিউবার হিসেবে তার জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। ইউটিউব থেকে তাঁর আয়ও ছিল বেশ চোখে পড়ার মতোই। আপাতত জিমিই বিশ্বের সর্ববৃহৎ ইন্ডিভিজুয়াল ইউটিউব ক্রিয়েটর। ২৫৩ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার নিয়ে তার আগে রয়েছে একমাত্র ভারতীয় সঙ্গীত প্রযোজনা সংস্থা টি-সিরিজ।

কফিনে থেকে তিনি যে কাণ্ডটি ঘটিয়েছেম, তা তো তাঁর চ্যানেলে রয়েইছে। তাছাড়াও গোটা অভিজ্ঞতাটি বর্ণনা করে ১৮ মিনিটের একটি ভিডিও চ্যানেলে ছাড়েন জিমি। যা ইতিমধ্যেই দেখে ফেলেছে ৬৪ মিলিয়ন মানুষ।

আরও পড়ুন: সাপের বিষ দিয়ে কেন নেশা করেন মাদকাসক্তরা? বিজ্ঞান যা বলছে

জেমস স্টিফেন ডোনাল্ডসন। ডাকনাম জিমি। ইউটিউবে অবশ্য তিনি মিস্টার বিস্ট নামেই বেশি পরিচিত। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই ইউটিউব দুনিয়ায় দুর্দান্ত জনপ্রিয়তা পেয়েছেন এই মার্কিন যুবক। তার খ্যাতি এমন অদ্ভতুড়ে সব স্টান্ট ও কাণ্ডকারখানার জন্যই। সেখান থেকেই বিপুল অঙ্কের আয় করেন তিনি। ২০২১ সালে ইউটিউব থেকে জিমির আয় ছিল ৫৪ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। মাসে অন্তত ৫ মিলিয়ন ডলার তো আয় করেই ফেলেন তিনি। যা জিমিকে এনে ফেলেছে ফোর্বসের তালিকায়। ফোর্বস সূত্রের খবর, আপাতত বিশ্বের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন জিমি। কফিন-স্টান্টের পরে তার সেই জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করেছে ঝড়ের বেগে।

More Articles