ডেলিভারি কর্মীর অসভ্যতা! জোম্যাটোয় খাবার অর্ডার করে শিউরে ওঠা অভিজ্ঞতা মহিলার

Zomato Food Delivery: যিনি ডেলিভারি দিতে এসেছিলেন তাঁর নাম শ্বেতাং জোশী। এই ডেলিভারি এজেন্ট বারবার তাঁর নিজের পায়ের দিকে ইশারা করে দেখাতে চাইছিলেন যে তিনি আঘাত পেয়েছেন।

অনলাইনে বাড়িতে বসে খাবার আনিয়ে নেওয়ার সুযোগ ব্যবহার করেননি, এই সময়ে এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। বিশেষ করে একা থাকেন যারা, বা বাড়িতে থেকেই কাজ করেন যারা, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সুবিধাটা নিয়ে থাকেন। অথচ কতটা নিরাপদ একজন ফুড ডেলিভারি এজেন্টের থেকে খাবার নেওয়া? বিশেষ করে একা মহিলাদের ক্ষেত্রে? কোনও দুর্যোগের সময়, বৃষ্টিতে বা অসুস্থতায় অ্যাপের মাধ্যমে খাবার আনিয়ে নিতে গিয়ে বিপদে কি পড়েননি কোনও মহিলা? সাম্প্রতিক একজন মহিলার অভিজ্ঞতা স্তব্ধ করে দেয়। আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে ক্ষুব্ধ সারা দেশই। মেয়েদের রাত দখলের আন্দোলন চলছে। আর এমন রাতেই মেয়েদের বিপদ ঠিক কোথায় কোথায় ঘাপটি মেরে থাকতে পারে অপ্রত্যাশিতভাবে, সেই শিউরে ওঠা অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন আহমেদাবাদের এক মহিলা। জোম্যাটোর ডেলিভারি এজেন্ট যৌন হেনস্থা করেছেন তাঁকে, অদ্ভুত সেই হেনস্থা!

আহমেদাবাদে প্রবল বৃষ্টি চলছে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার গভীর রাতে কফি অর্ডার করেন এক মহিলা। এমন তুমুল বর্ষণে ডেলিভারিতে দেরি হচ্ছিল স্বাভাবিকভাবেই। তাতে অসুবিধা ছিলও না। পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ওই মহিলা অপেক্ষাই করছিলেন। অবশেষে ওই ডেলিভারি কর্মী মহিলার অর্ডার নিয়ে হাজিরও হন। তারপর যা ঘটে, তা অপ্রত্যাশিত! ওই মহিলা নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ডেলিভারি দিতে এসে ওই কর্মী দেরি হওয়ার জন্য ক্রমাগত ক্ষমা চাইছিলেন। হাসতে হাসতে এতবার ক্ষমা চান ওই কর্মী যে বিষয়টা অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে মহিলার কাছে। এমন বর্ষণের রাত, সারা দেশেই অদ্ভুত ভয়ের পরিস্থিতি- এই সবের কথা মাথায় আসাতে আরও অস্বস্তি বেড়ে যায়। তাও ওই মহিলা বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেওয়ারই চেষ্টা করেন।

আরও পড়ুন- আরজি কর হত্যা: যে প্রশ্নগুলি রয়েই গেল

তিনি জানিয়েছেন, যিনি ডেলিভারি দিতে এসেছিলেন তাঁর নাম শ্বেতাং জোশী। এই ডেলিভারি এজেন্ট বারবার তাঁর নিজের পায়ের দিকে ইশারা করে দেখাতে চাইছিলেন যে তিনি আঘাত পেয়েছেন। পায়ের কোথায় আঘাত লেগেছে তা দেখতে ওই মহিলা নিজের মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালান। মহিলার অভিযোগ, তিনি দেখতে পান ওই ডেলিভারি কর্মী নিজের যৌনাঙ্গ উন্মুক্ত করে রেখেছেন। অভিযোগ, ওই অবস্থাতেই হাসতে হাসতে ডেলিভারি কর্মী মহিলাকে বলতে থাকেন, "ম্যাম, প্লিজ হেল্প কর দো"!

 

মহিলা জানিয়েছেন, তিনি অবিলম্বে ঘটনাটি জোম্যাটোকে জানান কিন্তু কোম্পানি যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তা আরও অসংবেদনশীল। সংস্থার তরফে যে মহিলা ফোন ধরেন, তিনি জানান, তারা দুই পক্ষের পরিস্থিতিই শুনবেন। অর্থাৎ অভিযোগকারিণী এবং ডেলিভারি পার্টনারের বয়ান শুনবেন তারা। মহিলা লিখছেন, "রাত ১ টার সময় কেউ কেনই বা বিপদে না পড়লে জোম্যাটোর কাস্টমার কেয়ারে ফোন করবে? না আমি টাকা ফেরত চাইছি না অন্য কিছু চাইছি! আমি শুধু চেয়েছিলাম অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কিন্তু একজন মহিলা হয়েও যেভাবে 'অপেক্ষা করতে' বলা হয় সেই আচরণ অত্যন্ত বিরক্তিকর।"

এমনকী এই বিষয়ে পরবর্তীতে জোম্যাটো আর কল ব্যাকও করেনি। ফলে জরুরি পরিস্থিতিতে বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করা কতটা অনিরাপদ একজন মহিলার কাছে, এই প্রশ্ন উঠছেই। বহুক্ষেত্রেই হয়তো অনেক মহিলাই এমন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন অথচ অভিযোগ না জানিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছেন। পরে অবশ্য ওই মহিলা জানান, জোম্যাটো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করে। ডেলিভারি কর্মীর কাজ গিয়েছে এবং তাঁর লাইসেন্সও বাতিল করা হয়েছে। যদিও এই ঘটনায় আরও অনিরাপদ বোধ করছেন তিনি। এই ধরনের অ্যাপের কর্মীরা ক্রেতার বাড়ির ঠিকানায় যেহেতু খাবার পৌঁছে দেন, ফলে কখনও সেই ঠিকানাতে আবারও বিপদ এসে হাজির হতেই পারে। সংস্থা নিজের মতো পদক্ষেপ করে শাস্তির বন্দোবস্ত করবে ঠিকই কিন্তু তাতে মহিলার নিরাপত্তার প্রশ্নটি ধামাচাপাই পড়ে যাবে। রাত দখল তো দূর অস্ত! একা বাড়িতে নিজের পছন্দের খাবার খাওয়ার নিরাপত্তাটুকুও নেই একজন মহিলার এই দেশে!

More Articles