জোম্যাটো, সুইগির ডেলিভারি কর্মীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী? স্তম্ভিত করবে সমীক্ষা...
Zomato Swiggy Delivery Partners: শিক্ষাগত যোগ্যতা ঢের বেশি এমন কর্মীর হার ৩৯.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
এককালে বিধান রায়, মানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষিত বেকার যুবকদের বলেছিলেন ট্যাক্সি চালাতে। এখন মুখ্যমন্ত্রী চপ সহ তেলেভাজাকে শিল্প বলে ভাবাতে চান, কুটিরশিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে চান। আশেপাশে তাকালে খুব স্পষ্ট দেখা যাবে সম্প্রতি, এই বিগত পাঁচ থেকে সাত বছরে ঠিক কোন কোন ক্ষেত্রে শ্রমিক বেড়েছে। প্রতি তিন পাড়া অন্তর মোড়ের মাথায় পিঠে ব্যাগ নেওয়া, লাল জামা পরা জটলা প্রমাণ করে প্রতিবছর পাশ করে বেরনো ছাত্রদের গন্তব্য কী? একটু আলোকপ্রাপ্ত-সুবিধাপ্রাপ্তরা দেশের অন্য রাজ্যে যেতে সিকিবারও ভাবছেন না। যারা যেতে পারছেন না তাদের ঠিকানা হয়ে উঠছে জোম্যাটো বা সুইগি। হাড়ভাঙা পরিশ্রম আর বঞ্চনা হয়ে উঠছে ভবিতব্য। এই যে যারা দুয়ারে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন, এই ডেলিভারি শ্রমিকরা মোট কত পরিমাণে আছেন দেশে?একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, Zomato এবং Swiggy-র মতো প্ল্যাটফর্মগুলিতে এই মুহূর্তে ৭০০,০০০ থেকে ১ মিলিয়ন খাদ্য সরবরাহকারী কর্মী রয়েছেন, চাহিদার মরশুম অনুযায়ী এই সংখ্যা পরিবর্তিত হয়। আর এই কর্মীদের একটা বড় অংশই গ্র্যাজুয়েট!
দেশ জুড়ে ফুড ডেলিভারি এক্সিকিউটিভদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশির পড়াশোনার যোগ্যতা তাদের কাজের যোগ্যতার থেকে ঢের বেশি। অর্থাৎ নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতা মাফিক কাজ তারা পাননি। যে কাজটি করছেন তাতে এই শিক্ষা না হলেও চলত। ন্যাশনাল কাউন্সিল অব অ্যাপ্লাইড ইকোনমিক রিসার্চের (NCAER) একটি গবেষণা বলছে, এই ডেলিভারি কর্মীদের স্নাতক ডিগ্রি রয়েছে। ৯২৪ জন ফুড ডেলিভারি শ্রমিকের সমীক্ষা করে দেখা গেছে ছোট শহরগুলিতে কাজের তুলনায় অতিরিক্ত যোগ্য ডেলিভারি কর্মীদের অংশ বেড়েছে ব্যাপক হারে। শিক্ষাগত যোগ্যতা ঢের বেশি এমন কর্মীর হার ৩৯.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে ১২.৫ শতাংশের কারিগরি এবং বৃত্তিমূলক ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা রয়েছে।
আরও পড়ুন- ঠাকুমা, কাকিমাই বিজনেস পার্টনার! চাকরি ছেড়ে হোম ডেলিভারি করে কোটি টাকা আয়?
গবেষকরা বলছেন, তারা দেখেছেন যে এই ফুড ডেলিভারির কাজে আসার আগে এই শ্রমিকদের কাছে নানাবিধ কাজের সুযোগ ছিল বাবা অনেকেই নানা কাজে যুক্তও ছিলেন। হিসাবরক্ষক, গাড়ি চালক, কারিগর, ব্যবসায়ী, ক্যাশিয়ার, শেফ, সব ধরনের মানুষ ছিলেন। একজন ব্যক্তি তো একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রধানও ছিলেন।
পিরিওডিক লেবার ফোর্স সার্ভে (PLFS) ২০২১-২২ অনুযায়ী, এই শ্রমিকরা তাদের সমসাময়িক অন্যদের থেকে (প্রতি মাসে ২২,৪৯৪ টাকা) থেকে এই পদে (প্রতি মাসে ২০,৭৪৪ টাকা) কম উপার্জন করেছে। সমসাময়িক অন্যদের উচ্চ মাধ্যমিক অবধি শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স সকলেরই ১৮ থেকে ৩৫ এর মধ্যে। এই ডেলিভারি কর্মীরা তাদের সমসাময়িকদের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি কাজ করে এবং তাদের থেকে ৮ শতাংশ কম উপার্জন করে।
আরও পড়ুন- সুইগি, জোমাটো কর্মীদের জন্য সুখবর! বঞ্চনা ঘোচাতে দেশকে দিশা দেখাল রাজস্থান
ওই গবেষণা বলছে, এই ডেলিভারি এক্সিকিউটিভদের প্রকৃত মজুরি ২০২২ সালে প্রতি মাসে ১১ শতাংশ কমে ১১,৯৬৩ টাকা হয়েছে। ২০১৯ সালের মাইনে থেকে এটি অত্যন্ত কম জ্বালানির বাড়তে থাকা খরচ এবং মূল্যস্ফীতির কারণে।
প্রকৃত আয় হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষার পরে আপনার হাতে যে উপার্জন থাকছে, সেটি। নামমাত্র আয় বুঝিয়ে দিচ্ছে মুদ্রাস্ফীতির হারের পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য তো দূর অস্ত, কোনও সম্পর্কই নেই। দেশের অর্থনীতি চলছে এক পথে, শ্রমিকদের আয় তার থেকে যোজন দূরে। ফুড ডেলিভারি কর্মীদের এই সামান্য আয় ২০২২ সালে ৪ শতাংশ বেড়ে ২০,০২৬ টাকা হয়েছে। ২০১৯ সালে প্রতি মাসে এই টাকার পরিমাণ ছিল ১৯,২৩৯ টাকা। মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে তো বটেই শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গেও এই আয়ের কোনও মিল নেই। একজন গ্র্যাজুয়েট পড়ুয়া যে চাকরির এবং মাইনের প্রত্যাশা করতে পারেন তার শিক্ষার জন্য তা নেই। শুধু রাজ্যে না, দেশের একটা বড় অংশ জুড়েই নেই। কয়েকটি রাজ্যে কয়েকটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্র ছাড়া যোগ্যতা অনুযায়ী আয়ের ধারণাটিই নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। এমবিএ চায়েওয়ালা, বা গ্র্যাজুয়েট পাইস হোটেলকে যতই জনপ্রিয় করে তোলা হোক না, মাথায় রাখতে হবে ব্যাতিক্রম নিয়মকেই প্রমাণ করে।