বাবাকে বাঁচাতে মাত্র ১৭ বছরেই অঙ্গদান! দেশের সর্বকনিষ্ঠ অঙ্গদাত্রী হিসেবে যে নজির দেবনন্দার

Youngest Organ Donor in India : আর কেউ আসুক বা না আসুক, সে আসবে। বাবাকে বাঁচাতে নিজের লিভারের অংশ দান করবে সে।

মাত্র ১৭ বছরের ফুটফুটে এক কিশোরী। স্কুলে যায়, মন দিয়ে পড়াশোনা করে। সেই কিশোরীর দিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছে গোটা ভারত। তাঁর ‘কীর্তি’ দেখে অনেকেই প্রশংসা করছেন, অনেকে দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করছেন। বাবা জটিল রোগে অসুস্থ, যে করেই হোক তাঁকে বাঁচাতেই হবে। এই পণ নিয়েই অসাধ্য সাধন করে ফেলল ১৭ বছরের দেবনন্দা। এই বয়সেই বাবাকে বাঁচাতে নিজের অঙ্গদান করল সে। সমস্ত বাধা পেরিয়ে সেই কাজে এখন সফল। তৈরি করল বিশেষ নজিরও। দেশের সর্বকনিষ্ঠ অঙ্গদাত্রী হিসেবে নাম লিখিয়ে ফেলল দেবনন্দা।

ত্রিশূর স্যাকরেড হার্ট কনভেন্টের ছাত্রী দেবনন্দা। তার বাবা প্রতীশ ত্রিশূরেই একটি ক্যাফে চালান। দিব্যি চলছিল সবকিছু। তার মধ্যেই নেমে এল বিপদ। একটু একটু করে অসুস্থ হয়ে পড়লেন প্রতীশ। ডাক্তার বললেন, তাঁর পায়ে জল জমছে। চিকিৎসা করাতে হবে। সেই চিকিৎসা করাতে গিয়ে ধরা পড়ল আরও একটি রোগ। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর দেখা গেল, ৪৮ বছর বয়সি প্রতীশের লিভার খারাপ অবস্থায় আছে। সেখানে দেখা দিয়েছে জটিল একটি রোগ। বেশি দেরি করলে সেখান থেকে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা শরীরে।

আরও পড়ুন : হার্ট, লিভার, ফুসফুস অথবা কিডনি, মৃত ব্যক্তির অঙ্গেই জীবনমুখী হাজার হাজার রোগী

এক লহমায় জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেল। ডাক্তাররা বললেন, যত দ্রুত সম্ভব লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে। না হলে বাঁচানো যাবে না প্রতীশকে। কিন্তু একটার পর একটা দিন কেটে গেল, উপযুক্ত অঙ্গদাতার দেখা পাওয়া গেল না। কেউ সেভাবে এগিয়ে এল না। শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল ১৭ বছরের দেবনন্দা। আর কেউ আসুক বা না আসুক, সে আসবে। বাবাকে বাঁচাতে নিজের লিভারের অংশ দান করবে সে।

কিন্তু এখানেই দেখা গেল মুশকিল। ১৯৯৪ সালে অঙ্গ প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত বিষয়ে একটি আইন পাশ করা হয়েছিল ভারতে। সেই আইন অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ ১৮ বছর না হওয়া অবধি কেউ অঙ্গদান করতে পারবে না। এখানেই আটকে যাচ্ছিল দেবনন্দা। কিন্তু হার মানতে যে সে শেখেনি! সে লড়বে, তার বাবার জন্য প্রাণপণে লড়বে। সোজা কেরল হাইকোর্টে চলে গেল দেবনন্দা। জাস্টিস ভিজি অরুণের সিঙ্গল বেঞ্চের কাছে নিজের আবেদন রাখল। দেখাল, এর আগেও ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। একটি বিশেষ ক্ষেত্রে অপ্রাপ্তবয়স্ককে অনুমোদন দিয়েছিল আদালত। এখানেও তার বাবার জন্য উপযুক্ত অঙ্গদাতা কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এই ক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়া হোক।

আরও পড়ুন : শিক্ষায় এগিয়ে মেয়েরা, তাও কেন এই রাজ্যে কোনও মহিলাই ভোট পান না নির্বাচনে?

দেবনন্দার আবেদন ও যুক্তি শুনে শেষমেশ ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিল কেরল হাইকোর্ট। দেবনন্দার এই লড়াই, এই মনের জোরে রীতিমতো প্রভাবিত হয়ে পড়েন বিচারপতি অরুণ। ১৭ বছরের মেয়েটির এই সাহসকে কুর্নিশ জানান তিনি। দেবনন্দাও জিম করে, পর্যাপ্ত খাবার খেয়ে নিজেকে সুস্থ সবল করে তোলে। তারপর ৯ ফেব্রুয়ারি আসে সেই দিন। আলুভার রাজাগিরি হাসপাতালে দেবনন্দার অস্ত্রোপচার করা হয়। দেবনন্দার লিভারের একটি অংশ তার বাবা, প্রতীশের শরীরে বসবে। মেয়ের এমন লড়াই, সাহস দেখে চোখের জল ফেলছেন প্রতীশও। আরও উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, দেবনন্দার অপারেশনের জন্য একটা টাকাও নেয়নি রাজাগিরি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ! দেশের সর্বকনিষ্ঠ অঙ্গদাত্রী বলে কথা! তার লড়াইকে কুর্নিশ না জানালে তো অন্যায় হবে! 

More Articles