বিলুপ্তির ৭০ বছর পর ফের ভারতের মাটিতে এক ডজন চিতা, ভারসাম্য রক্ষায় যে পদক্ষেপ করল ভারত

12 cheetahs at kuno National park : ভারতীয় বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চিতাদের আজই কুনো ন্যাশনাল পার্কে নিয়ে আসা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে ট্যুইটার বার্তায়।

ভারতে আজ প্রায় ৭০ বছর ধরে নেই হয়ে যাওয়া পশুদের আবারও সংরক্ষণের পথে হাঁটছে সরকার। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে দুবার বেশ কিছু সংখ্যায় চিতা আনা হল মধ্যপ্রদেশের কুনো ন্যাশনাল পার্কে। এর আগে নামিবিয়া থেকে আটটি চিতা আনা হয়েছিল এখানে। আজ সেই তালিকায় জুড়তে চলেছে আরও এক ডজন চিতা। ভারতীয় বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চিতাদের আজই কুনো ন্যাশনাল পার্কে নিয়ে আসা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে ট্যুইটার বার্তায়।

এখানেই শেষ নয় আগামী পাঁচ বছরে বিভিন্ন ধাপে মোট পঞ্চাশটি চিতাবাঘ নামিবিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এ দেশে নিয়ে আসা হবে বলেই জানানো হয়েছে। একটা সময় এদেশেও চিতাদের সংখ্যা নেহাৎ কম ছিল না। পরবর্তীতে জলবায়ু পরিবর্তন এবং আরও বেশ কিছু কারণের জেরে আজ প্রায় সত্তর বছর হল বিলুপ্তির তালিকায় এরা। এখন দেশের হাতে গোনা কয়েকটি চিড়িয়াখানার খাঁচা ছাড়া আর দেখা যেত না চিতাকে। তাই এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতেই আবারও নতুন করে এ দেশকে চিতাদের বাসযোগ্য করে তোলার সফর শুরু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব বলেন, ‘আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ১২টি চিতাকে ভারতে আনা হচ্ছে। ভারতীয় বায়ুসেনার গ্যালাক্সি গ্লোবমাস্টার C17-এ ১২টি চিতা দেশে আনা হচ্ছে। ১৯৫২ সালে ভারত সরকার চিতাদের বিলুপ্ত ঘোষণা করেছিল’।

আরও পড়ুন - আরও ১০০ চিতা আসছে ভারতে! কেন এই চিতা আনার হিড়িক পড়ল দেশে?

এই বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বন বিভাগও একটি দীর্ঘ টুইটার থ্রেড শেয়ার করেছে, যাতে বলা হয়েছে, “১২টি চিতা আফ্রিকা ভারতে আসতে চলেছে, আগামী আট থেকে ১০ বছরের জন্য বার্ষিক আরও ১২টি করে চিতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে।” জানা গিয়েছে, এই বারোটি চিতার মধ্যে পাঁচটি মহিলা এবং সাতটি পুরুষ। একটি আইএএফ C-17 গ্লোবমাস্টার বিমান 12টি চিতা বহন করে এমপির গোয়ালিয়রে অবতরণ করেছে। আরও জানা গিয়েছে, কাস্টমস এবং অন্যান্য ছাড়পত্রের পরে, তাদের M-17 চপারে সকাল 11 টার দিকে কুনো জাতীয় উদ্যানে নিয়ে যাওয়া হবে।

ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। এই প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকা দেশটি চিতার মেটা-জনসংখ্যা সম্প্রসারণের উদ্যোগের অংশ হিসাবে চিতাকে ভারতে স্থানান্তর করবে এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীদের পুনঃপ্রবর্তন করছে বলেই সূত্রের খবর।

আরও পড়ুন - সুন্দরবনে কত বাড়ল বাঘের সংখ্যা, গণনায় উঠে আসবে যে তথ্য

ট্যুইটার বার্তায় জানা গিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চিতাগুলিকে কুনো ন্যাশনাল পার্কে আনার পরে, তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে এবং তারপরে তাদের এক মাসের জন্য কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। সমস্ত চিতার গলায় রেডিও কলার লাগানো হবে বলেও জানা গিয়েছে। পাশাপাশি স্যাটেলাইট অভসারভেশনে রাখা হবে চিতাগুলিকে। সূত্রের খবর, এই ১২টি দক্ষিণ আফ্রিকান চিতা যেগুলি এদেশে পাঠানো হবে বলে নির্ধারণ করা হয়েছিল সেগুলিকে গত ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে ‘বিচ্ছিন্ন’ করেই রাখা হয়েছিল, যাতে নতুন দেশের নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। জানা যায়, আন্তর্জাতিক চিতা বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক এবং বন কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি পরামর্শমূলক কর্মশালা আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি কুনোতে অনুষ্ঠিত হবে।

ভারতে চিতা বিলুপ্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয় বেশ কিছু বছর আগে থেকেই। ২০০৯ সালে প্রথম আফ্রিকান চিতা আমার পরিকল্পনা করা হয় যদিও তার বাস্তবায়নে এক দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছিল। ২০২১ সালে নভেম্বর মাসের চিতা প্রবর্তনের পরিকল্পনা করা হলেও করোনা মহামারীর কারণে আবারও পিছিয়ে যায় কাজ। অবশেষে শুরু হল এই প্রক্রিয়া। আবারও ভারতে চিতাদের চরাচর নিয়ে এখন আশাবাদী দেশের বন বিভাগ।

More Articles