স্রেফ 'জয়েন্ট'-এর জন্যই সবাই উড়ে আসবে এখানে! কেন এই দেশে ভোটের বড় ইস্যু গাঁজা?
Cannabis Top Election Issue in This Nation : কোনও একটি দেশের নির্বাচনের অন্যতম বড় ইস্যু হিসেবে উঠে এসেছে গাঁজা, এটা কখনও শুনেছেন?
‘এক টানেতে যেমন তেমন, দুই টানেতে রুগী, তিন টানেতে রাজা উজির’-এর পর কী হয়, সেটা নিশ্চয়ই ‘অভিজ্ঞ’দের আর বলতে হবে না। বাংলার রাজনীতিতেও বিখ্যাত হয়ে আছে অনুব্রত মণ্ডলের সেই ডায়লগ, “দেখতে হবে কোনও নেশা করে কিনা, কোনও পাতা ফাতা খায় কিনা!” এই ‘পাতা’ কখনও ছিলিমে ঘোরে, কখনও কাগজের ‘জয়েন্ট’ হয়ে হাতে হাতে। যতই ব্যান করা হোক না কেন, গাঁজার নেশা যে এখনও লুকিয়ে চুরিয়ে অনেকেই করেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিশ্বের অনেক জায়গাতেই মারিজুয়ানা বা গাঁজা সেবন করা নিষেধ। পুলিশ প্রশাসনের নজরে পড়লেই সোজা শাস্তির ব্যবস্থা। আবার কিছু কিছু জায়গায় গাঁজাকে বিশেষভাবে চাষ করা হয়। সেখান থেকে নাকি ওষুধও তৈরি করা হয়! বিশ্বে এমন কিছু কোম্পানিও রয়েছে, যারা রীতিমতো মোটা মাইনে দিয়ে গাঁজার টেস্টার নিয়োগ করেন। সামান্য একটা পাতার যে এত মহিমা, কে আর জানত!
কিন্তু গাঁজার গল্প এখানেই শেষ নয়। ওপরের উদাহরণগুলি তো কমবেশি অনেকেই শুনেছেন। কিন্তু কোনও একটি দেশের নির্বাচনের অন্যতম বড় ইস্যু হিসেবে উঠে এসেছে গাঁজা, এটা কখনও শুনেছেন? ঠিক এমনটাই হয়েছে থাইল্যান্ডে। এই বছরেরই মে মাসে সেখানে নির্বাচন। ইতিমধ্যেই রাজনীতিবিদরা নিজেদের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এসব ইস্যু তো রয়েইছে। সেইসঙ্গে সামনে এসেছে গাঁজার ইস্যুও! আর তা নিয়েই রীতিমতো শোরগোল পড়েছে সেখানে।
গাঁজার সঙ্গে থাইল্যান্ডের সম্পর্ক রোদ আর মেঘের খেলার মতো। কখনও ভালো, আবার কখনও বেজায় মন্দ। এমনিতে গাঁজা নিয়ে খুব একটা নিষেধাজ্ঞা সেখানে নেই। যাতে সেই নিষেধাজ্ঞার বাঁধন আরও কড়া হয়, তারই চেষ্টায় আছে সরকার। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই থাইল্যান্ডের সংসদের শেষ অধিবেশন ছিল। সেখানে গাঁজার ব্যবহার নিয়ে একটি বিল আনা হয়। যদিও সেটা পাস করা যায়নি এখনও পর্যন্ত। কেন? কারণ, সামনেই বড় নির্বাচন। আর দেশের একটা বড় অংশের মানুষ চায়, গাঁজা সেবনের ওপর যেন কোনওরকম কড়া নিষেধাজ্ঞা না আসে। বড়সড় ডামাডোলের ভয়েই নির্বাচনের আগে সেই বিল পাস করা হয়নি।
আরও পড়ুন : ভরপুর গাঁজা খেলেই পকেটে ঢুকবে প্রায় ৮৮ লাখ টাকা! কোথায় রয়েছে এমন ‘স্বপ্নের’ চাকরি?
এ নিয়ে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ হয়েছে ফুকেটে। থাইল্যান্ডের এই দ্বীপটি এমনিতেই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। সম্প্রতি সেখানেই গাঁজার সমর্থনে ‘ফুকেট ক্যানাবিস অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি সংগঠনও তৈরি হয়েছে। তাদের বক্তব্য হল, গাঁজার ওপর কোনওভাবে কড়া নিষেধাজ্ঞা আনা যাবে না। এ নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিযোগিতারও আয়োজন করেছিল তারা। কী প্রতিযোগিতা? জয়েন্ট বানানোর প্রতিযোগিতা! যিনি যত তাড়াতাড়ি, একেবারে নিখুঁতভাবে গাঁজার জয়েন্ট বানাতে পারবেন, তিনিই পেয়ে যাবেন পুরস্কার। এই প্রতিযোগিতায় মাত্র ৪৩ সেকেন্ডে সেই কাজটি সুন্দরভাবে শেষ করে প্রথম হয়েছেন আতিভাত জানমুয়াংথাই। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১২ হাজার টাকা পুরস্কারও পেয়েছেন।
তবে এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের পেছনে ফুকেটের এই অ্যাসোসিয়েশনের একটি কারণও রয়েছে। এখানকার কর্তাদের বক্তব্য, গাঁজা নিয়ে আরও নরম হোক প্রশাসন। তাহলে দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকরা স্রেফ জয়েন্ট আর গাঁজার জন্যই থাইল্যান্ডে ভিড় জমাবেন। এর ফলে ট্যুরিজম খাতে আয়ও বাড়বে। ফলে দেশের জিডিপিও বাড়বে। এখন এই কথা কতটা শোনা হবে, সেটাই দেখার।