নিয়মিত পর্নোগ্রাফি দেখার অভ্যাস শুকিয়ে দিচ্ছে দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই অংশটি?

Pea Brain Problem: পর্নের আসক্তির কারণে কিছু মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে জড়িয়ে পড়তে শুরু করেন- কর্মক্ষেত্রে বা জনসমক্ষে পর্ন দেখতে শুরু করেন।

অত্যধিক হস্তমৈথুনের বিপদ, স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেটের 'আসক্তি' নিয়ে ভয়াবহ নানা গল্পকথা হামেশাই শোনা যায়। তবে সত্যিই কি স্মার্টফোন এবং পর্ন আসক্তি একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত? অনেকে নৈতিকতার সঙ্গে বিষয়টি জুড়ে ফেলেন ঠিকই, তবে সেসবের বাইরে গিয়ে খুব বেশি পর্ন দেখার অভ্যাস আসলে আপনার মস্তিষ্ককে সঙ্কুচিত করতে পারে! এর নেপথ্যে রয়েছে বাস্তব বিজ্ঞান। ইরোটিকার সঙ্গে মস্তিষ্কের ধূসর কোশগুলির সম্পর্ক আসলে কী?

মস্তিষ্কের উপর পর্নোগ্রাফির প্রভাব

২০১৪ সালে JAMA সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত একটি গবেষণা সত্যিই মস্তিষ্কের উপর পর্নোগ্রাফির প্রভাব নিয়ে অদ্ভুত এক বিষয় প্রকাশ্যে এনেছে। গবেষক সিমোন কুন এবং জার্গেন গ্যালিন্যাট ৬৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের উপর এই সমীক্ষাটি চালান এবং ওই পুরুষদের মস্তিষ্কের স্ক্যান করার আগে তাদের পর্নোগ্রাফির অভ্যাস সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। কেন শুধুমাত্র পুরুষদেরই এই সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হলো? গবেষকদের যুক্তি, মেয়েদের থেকে পুরুষরাই অল্প বয়সে পর্নোগ্রাফির সংস্পর্শে আসে। বেশি পর্নোগ্রাফি দেখে এবং মহিলাদের তুলনায় পুরুষদেরই বেশি সমস্যায় পড়তে হয়।

৬৪ জন পুরুষের এই দলটি জানিয়েছে, প্রতি সপ্তাহে ৪.০৯ ঘণ্টা তারা পর্নোগ্রাফিক বিষয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তবে অনেক বৈচিত্র ছিল। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২১ জনকে 'ইন্টারনেটে যৌন আসক্তির ঝুঁকিতে' পড়া হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু মস্তিষ্কের স্ক্যানের ফলাফলে বিষয়গুলো আরও আকর্ষণীয় হতে শুরু করে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, পুরুষরা যারা সবচেয়ে বেশি সময় পর্ন দেখেন তাদের ডান স্ট্রাইটামে কম ধূসর পদার্থ থাকে। পর্নোগ্রাফি আসক্ত এই পুরুষদের বাম স্ট্রাইটাম কার্যকরীভাবে কম সক্রিয়ও হয়। এই পুরুষদের ডান স্ট্রাইটাম এবং বাম ডোরসোলেটারাল প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের মধ্যে কম সংযোগ দেখা গিয়েছে। এই সাইট্রামের ভূমিকা কী আমাদের মস্তিষ্কে?

আরও পড়ুন- ছোটদের মধ্যেও দিনকে দিন বাড়ছে ‘নীল ছবি’ দেখার নেশা! চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল গবেষণায়

স্ট্রাইটামের বেশ কয়েকটি ভূমিকা রয়েছে, তবে এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক যেটি সেটি হচ্ছে, এটি মস্তিষ্কের 'রিওয়ার্ড সার্কিট্রি'তে ভূমিকা পালন করে এবং এর ফলে আসক্তির সঙ্গে বিষয়টি জড়িত বলে মনে করা হয়। গবেষকদের অনুমান, পর্ন দেখার সঙ্গে আসক্তিমূলক আচরণের সম্পর্ক রয়েছে এবং তাই রিওয়ার্ড নেটওয়ার্কে পরিবর্তন দেখা গিয়েছে এই পুরুষদের। গবেষকরা বলছেন, নিয়মিত পর্নোগ্রাফি দেখার ফলে ঘন ঘন মস্তিষ্কের কাঠামোর হ্রাস ঘটতে পারে।

কিছু ব্যক্তির মস্তিষ্কের স্বাভাবিক পার্থক্য তাদের পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্ত করে তোলে। কারণ পর্নের মধ্যে তারা 'রিওয়ার্ড' খুঁজতে থাকেন। মূলত, যা কিছু মানুষ প্রায়শই করে তা তাদের মস্তিষ্কের গঠন এবং কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের আগে থেকেই সাবধানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছিল এবং তারা সকলেই শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ছিল।

সুতরাং, ঘন ঘন পর্নোগ্রাফি দেখার পরে যদি এই পুরুষদের উপর তেমন কোনও খারাপ প্রভাব না পড়ে এবং যদি পর্নাসক্তি তাদের মস্তিষ্কের কোনও পার্থক্য ঘটিয়েছে কিনা তা নিশ্চিতভাবে না বলা যায় তাহলে কি আদৌ পর্নোগ্রাফির আসক্তি নিয়ে আমাদের চিন্তা করা উচিত?

আপনি কি পর্নে আসক্ত হতে পারেন?

অনেক মানুষই নিশ্চিত যে, পর্ন আসক্তি একটি বাস্তব সমস্যা এবং ধামাচাপা পড়া সমস্যা। কেউ কেউ পর্নোগ্রাফি সম্পূর্ণ পরিহারের জন্য অনলাইন 'নো ফ্যাপ’-এর অংশ হিসেবে হস্তমৈথুন বিরোধী আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। যদিও সাম্প্রতিক একটি গবেষণায়, এই অভ্যাসের কিছু উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক দিক পাওয়া গেছে।

ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের একটি সংস্থার মতে, পর্নোগ্রাফি আপনার যৌনতা এবং রোমান্টিক জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। পর্নের আসক্তির কারণে কিছু মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে জড়িয়ে পড়তে শুরু করেন- কর্মক্ষেত্রে বা জনসমক্ষে পর্ন দেখতে শুরু করেন।

আরও পড়ুন- বিখ্যাত সব ছবি, ভাস্কর্যে পুরুষাঙ্গের আকার এত ছোট কেন? চমকে উঠবেন কারণ জেনে

পর্নোগ্রাফি এমন একটি বিষয় যা অনেকে উপভোগ করেন এবং এটি পুরোপুরি এক সুস্থ জীবনধারার অংশ হতে পারে। পর্নোগ্রাফির অভ্যাস হয়ে গেলে তা আপনার সম্পর্ক বা অন্যান্য কার্যকলাপে হস্তক্ষেপ করতে পারে। তখন চিকিৎসকদের সাহায্য নিতেই হবে। কিন্তু সত্যিই কি পর্নোগ্রাফিকে 'আসক্তি' বলা যেতে পারে?

মনোবিজ্ঞান এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এই নিয়ে বিতর্ক চলেই আসছে। পর্নোগ্রাফি আসক্তি বর্তমানে আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা তথাকথিত যৌন আসক্তির মতো এক স্বতন্ত্র মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাধি হিসাবে স্বীকৃত নয়। যৌনতাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে কম্পালসিভ সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার ডিসঅর্ডার বা CSBD, যার মধ্যে পর্নোগ্রাফি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

তার মানে এই নয় যে, অত্যধিক পর্ন দেখলে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পড়বে না। ২০২১ সালের একটি সমীক্ষা বিশেষত কলেজ ছাত্রদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর পর্নের প্রভাবের দিকে নজর দিয়েছে। ফলাফল বলছে পর্নোগ্রাফি দেখা এবং নেতিবাচক মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। ২০২২ সালের একটি পর্যালোচনাতে যৌনতা এবং পর্নের আসক্তির সঙ্গে মস্তিষ্কের সার্কিটের জড়িত থাকার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফি ২১ শতকের জীবনের অনিবার্য অংশ। তবে কীভাবে তা আসক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝতে মনোবিজ্ঞানীরা এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পর্নোগ্রাফি সত্যিই মস্তিষ্কের আকার ছোট করে দেয় কিনা তা জানতে আরও বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

More Articles