কোন পরিবেশে বসে লিখতেন আগাথা ক্রিস্টি? বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিকের এই অভ্যাস অবাক করবে
Agatha Christie writing Habits: আগাথা ক্রিস্টি তার মাথায় লেখার কোনও প্লট এলেই লিখে রাখতেন নোটবুকে। এই নোটবইটি কাছছাড়া করতেন না মোটেও।
কাজ করার জন্য একটা গোছানো পরিবেশ দরকার। সকাল সকাল ধূপের গন্ধ মাখা, রৌদ্রনিকানো ঘরে বসে কাজ শুরু করার আমেজই আলাদা। অথবা সান্ধ্যকালীন মেজাজ হলে, হালকা হলুদ আলো। সঙ্গে কফির ধোঁয়া ওঠা কাপ, হালকা শব্দে বাজছে প্রিয় গানখানি, প্রিয়তম রাগ! এমন গোছানো পরিবেশ পেলে কাজ করেও আরাম। আর যদি না পান? তাহলে কি সমস্ত কাজই পণ্ডশ্রম? যদি এমন রৌদ্রজ্জ্বল অফিস ডেস্ক না পান, এমন সান্ধ্যকালীন বৈঠকি মেজাজ না পান তাহলে কি কাজে ইতি? বিশ্ববিখ্যাত এমন কত মানুষই তো আছেন যারা এমন পরিবেশের কথা ভাবতেও পারেননি। নোংরা এঁদো গলিতে বসে, ঘাড় গুঁজেই কেটে গিয়েছে দিন। আর তাঁদের মস্তিষ্ক প্রসব করেছে বিশ্বকাঁপানো সমস্ত সাহিত্য, ছবি, আন্দোলন! এমনই একজন মানুষ ছিলেন আগাথা ক্রিস্টি। বিশ্বাস করতেন, বলতেন, যেকোনও জায়গায় কাজ করতে শিখুন, শিখতেই হবে।
কাজে নামার আগে সঠিক পরিবেশ খুঁজে পেতেই হবে, ধারণাটা আসলে কর্মবিমুখ করে। আমেরিকান সুরকার মর্টন ফেল্ডম্যান বলতেন, অনেক বছর ধরে তিনি একটা কথা বলে বেড়াতেন। "আমি যদি একখানা আরামকেদারা খুঁজে পাই তবে আমি মোজার্টকেও পিছনে ফেলে দেব!” কোনও কিছু লেখার আগে সমারসেট মওঘম একটি ফাঁকা সাদা দেওালের দিকে তাকিয়ে রইতেন। তাঁর মনে হতো, অন্য যে কোনও দৃশ্য, ঘটনা তার সামনে এলে খুব বিভ্রান্ত হবেন তিনি। অন্য অনেক শিল্পী এবং লেখকদের অভিজ্ঞতা বলে, নিজেকে কাটিয়ে উঠতে হবেই।
আরও পড়ুন- অপরাধীর হাতেই রূপ পেল বিশ্বের সেরা গোয়েন্দা গল্প, আগাথা ক্রিস্টি যে কারণে অমর
১৮১০-এর দশকে হ্যাম্পশায়ারের চাউটনে জেন অস্টেন যখন সাহিত্যের মধ্যগগনে, কীভাবে লেখালিখি করতেন তিনি জানলে অবাক হতে হয়! মূলত পারিবারিক যে বসার ঘর, সেখানেই লেখালিখি সারতেন তিনি। প্রায়ই তাঁর মা তার কাছেই বসে সেলাই করতেন। এত লোকজন আসত, এত বাধা, বাধ্য হয়ে তিনি বাজে কাগজে লিখতে শুরু করেন যা সহজেই লুকিয়ে রাখা যেতে পারত। আগাথা ক্রিস্টি লিখেছেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে হরদম ঝামেলা লেগেই রইত! সাংবাদিকরা একটা বিষয় নিয়ে আবদার করতেন। ডেস্কে বসে লেখিকা লিখছেন, এমন একটা দৃশ্যের ছবি তুলবেনই তুলবেন! এ তো আচ্ছা ঝামেলা! ছবিটা তুলবেনই বা কোথায়! আগাথা ক্রিস্টির কাছে কোনও টেবিলই ছিল না! টাইপরাইটার টেবিলে রেখে যুত করে লেখালিখি করবেন, এমন পরিস্থিতিই ছিল না তার।
আগাথা ক্রিস্টি তার মাথায় লেখার কোনও প্লট এলেই লিখে রাখতেন নোটবুকে। এই নোটবইটি কাছছাড়া করতেন না মোটেও। লেবেল সহ নোটবুকগুলি যত্ন সহকারে গুছিয়ে রাখতেন। যদিও তিনি কোথায় কী লিখেছিলেন তা হারিয়ে ফেলতেন প্রায়ই কারণ ওই একই সময়ে হাফ ডজন নোটবুক ছিল তার। আগাথা তখন তাঁর প্লট নিয়ে ভাবতেন, ভাবতে ভাবতে এবং সংলাপ উচ্চস্বরে বলতে বলতে দীর্ঘ নির্জন পায়চারি করতেন। আগাথা বলতেন, রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই দুর্দান্ত সব ক্রাইম প্লট ভেবে ফেলতেন তিনি। পাশাপাশি খুঁটিয়ে পড়তেন খবর।
আরও পড়ুন- প্রচারের প্রলোভন সাহিত্যের জন্য মারাত্মক : মিলান কুন্দেরা
সত্যিই কি এইসব বাহ্যিক সমস্যা, শব্দের মধ্যে বসে নিবিড় কাজ করা, ভাবা সম্ভব? এই বিক্ষিপ্ততা থেকে নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা মিললেই কি মনসংযোগ করা সম্ভব? একটি সমীক্ষা সম্প্রতি বলছে, কিছু শব্দ, যেমন কোনও কফি শপে চলতে থাকা গুঞ্জন আপনার কাজে মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে বেশি। কিছু মানুষ যেমন নীরবে বা জীবনে অন্য কোনও অশান্তি থেকে মুক্ত হয়ে কাজ করতে ভালো পারেন, কিছুজনের আবার চরম অশান্ত পরিবেশই আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়ায়। সাংবাদিক রন রোজেনবাউম জোরে টিভি চালিয়ে যাবতীয় সৃজনশীল কাজ করেন। তিনি বলেন, কানের কাছে বা চারদিকে গাঁকগাঁক করে কোনও আওয়াজ হচ্ছে আর তার মধ্যে বসে তাঁকে নির্দিষ্ট কিছু করতে হচ্ছে, এর জন্য যে মনোযোগ দরকার তা আরও শক্তিশালী হয় প্রতিকূল পরিবেশে।
কিন্তু এখানে একটি বিষয় ভুলে গেলে চলবে না। নিখুঁত কর্মক্ষেত্র হলেই যে দক্ষ কাজ হবে এমন ভাবনা ভুল। কোনও 'নিখুঁত' রুটিন বা আচার মেনে চললেই যে আপনি মারকাটারি সৃজনশীল হয়ে উঠবেন এমন নয়। বিশেষ খাবার, বিশেষ স্নান, বিশেষ টেবিল, বিশেষ ল্যাপটপ, বিশেষ কাজের ঘর আপনাকে আরাম দিতে পারে ঠিকই, তবে শেষ কথা বলে প্রতিভা এবং কঠোর পরিশ্রমই। যে কোনও পরিস্থিতিকে নিজেকে রেখে নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকতে গেলে দুইটি বিষয়ই দরকার। পরিশ্রম আর জেদ! বাকিটা সহজ...