টয়লেট ক্লিনার দিয়ে তৈরি হয় কোল্ড ড্রিঙ্কস! চমকে দেওয়া তথ্য জানাচ্ছে আসল সত্য
Truth of Cold Drinks: পেপসি কোম্পানি ১৯৬৪ সালে ডায়েট পেপসি বাজারে আনে এবং তাদের দেখাদেখি কোকাকোলাও ১৯৮২ সালে ডায়েট কোক তৈরি করে।
প্রচণ্ড তেষ্টা পাচ্ছে? তৃষিত নয়নের এখন কর্পোরেট চোখ, ডাবের জল, কলের জলে তার তেষ্টা মেটে না। কাঁচের পাল্লাওয়ালা ফ্রিজে সে কেবলই খুঁজে মরে কোকাকোলা, পেপসি, স্প্রাইট, লিমকা, নিতান্তই কিছু না পেলে মাজা! সফ্ট ড্রিঙ্কস দৈনন্দিন জীবনে এতই সহজলভ্য যে তা কখন যে জলের বোতলকে সরিয়ে নিজেকে স্থাপিয়াছে ইয়ত্তা মেলে না। গোটা বিশ্বে মাত্র দু’টি এমন দেশ আছে যেখানে কোকাকোলা পাওয়া যায় না। একটি হল উত্তর কোরিয়া এবং দ্বিতীয় হলো কিউবা। বাকি সব দেশেই সিনেমাহল থেকে ক্রিকেট ম্যাচ, কলেজ ক্যান্টিন থেকে বিয়ে বাড়ি, আট থেকে আশি কোল্ড ড্রিঙ্কস কোকাকোলা সবাই কমবেশি খেয়েই থাকেন। কোকাকোলার নিজস্ব অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেও উল্লেখ আছে যে প্রতিদিন প্রায় ১.৯ বিলিয়ন কোকাকোলার বোতল বিক্রি হয়।
এই সমস্ত সফ্ট ড্রিঙ্কস নিয়ে প্রতিদিনই বিভিন্ন গুজব কানে আসে, সেগুলো কতটা সত্যি বা কতটা মিথ্যা যাচাই করে নেওয়া যাক। অনেকেই বলেন, সফ্ট ড্রিঙ্কস আসলে টয়লেট ক্লিনার দিয়ে তৈরি! বাস্তবে এমনটা একেবারেই নয়। তাহলে এমন গুজব কী কারণে ছড়িয়েছে? কিছু অ্যাসিড আছে যা সফ্ট ড্রিঙ্কসে পাওয়া যায় আবার সেগুলি টয়লেট ক্লিনারেও পাওয়া যায়। কোল্ড ড্রিঙ্কসে যে অ্যাসিড থাকে সেটা সাইট্রিক অ্যাসিড এবং ফসফরিক অ্যাসিড। এর মধ্যে সাইট্রিক অ্যাসিড প্রাকৃতিকভাবেই পাওয়া যায় এবং ফসফরিক অ্যাসিড একটি বিশেষ ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করা হয়। এই সমস্ত অ্যাসিডগুলির একটি নির্দিষ্ট মাত্রা আছে খাদ্য ব্যবহারের জন্য। শুধু কোল্ড ড্রিঙ্কস নয়, বিভিন্ন খাদ্যবস্তু যেমন জ্যাম, কফি, বেকিং সোডা, প্রোটিন ড্রিঙ্কসেও পাবেন এই অ্যাসিড। এই দুটো অ্যাসিড টয়লেট ক্লিনার তৈরিতেও ব্যবহৃত। কিন্তু এই দু’টির তুলনা করা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ টয়লেট ক্লিনারে সবসময়ই আরও শক্তিশালী রাসায়নিক অ্যাসিডের ব্যবহার হয়ে থাকে, যেমন সোডিয়াম হাইপাক্লোরাইড, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ইত্যাদি।
শোনা যায়, টয়লেট ক্লিনার ও কোল্ড ড্রিঙ্কসের pH লেভেলও নাকি সমান হয়ে থাকে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, কোল্ড ড্রিঙ্কসের pH লেভেল ২.৫ এর আশেপাশে থাকে। আবার বেদানা ফলের pH লেভেল ২.৯, লেবুর pH লেভেল ১.৯ থেকে ২.০৬। সুতরাং একথা বলাইবাহুল্য যে pH লেভেল এই পরীক্ষার মাপকাঠি হওয়া কঠিন।
আরও পড়ুন- কতটা নিরাপদ আইটির চাকরি! চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল ফেসবুক, টুইটার, বাইজুস, হটস্টারের ছাঁটাই
আসলে এখানে অ্যাসিডিক পদার্থটি সমস্যার বিষয় না, ক্ষতিকারক বিষয়টি হলো কোল্ড ড্রিঙ্কসে থাকা অত্যাধিক চিনির পরিমাণ। একটি সাধারণ কোল্ড ড্রিঙ্কসের বোতলে প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ১৩.৮গ্রাম চিনি থাকে, অর্থাৎ একটি ৬০০ গ্রামের বোতলে ৮২.৮ গ্রাম চিনি! এত পরিমাণ চিনি যেকোনও সাধারণ মানুষের জন্যই ভীষণ ক্ষতিকারক। তাহলে এবার প্রশ্ন, একজন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সুগার গ্রহণের সঠিক পরিমাণ কত? শূন্য। হ্যাঁ শূন্য! কারণ এটি আসলে ‘অ্যাডেড সুগার’, প্রাকৃতিক সুগার নয়। আমরা নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার যেমন- দুধ, ফল থেকে যে সুগার গ্রহণ করে থাকি তার পরিমাণ ঠিক ততটাই যতটা আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজন। এত কিছুর পরেও আমরা সর্বাধিক ৩০ গ্রাম অ্যাডেড সুগার গ্রহণ করতে পারি। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে কোল্ড ড্রিঙ্কস আমাদের জন্য ঠিক কতটা ক্ষতিকারক। প্রতিদিন ক্রমাগত এইভাবে অত্যাধিক পরিমাণ অ্যাডেড সুগার পরবর্তীকালে সেই ব্যক্তিকে গাঁটে ব্যাথা, অকালবার্ধক্য, লিভারের ক্ষতি, টাইপ ২ ডায়বেটিসের মতোন বিভিন্ন কঠিন শারীরিক সমস্যার মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
এই ক্রমবর্ধমান সমস্যাকে নজরে রেখে, পেপসি কোম্পানি ১৯৬৪ সালে ডায়েট পেপসি বাজারে আনে এবং তাদের দেখাদেখি কোকাকোলাও ১৯৮২ সালে ডায়েট কোক তৈরি করে। এই দুই ডায়েট ড্রিঙ্কসে শূন্য মাত্রায় ক্যালোরি ও শূন্য মাত্রায় সুগার আছে বলে দাবি। কিন্তু এই ডায়েট ড্রিঙ্কসেও কৃত্রিম সুগার ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যেমন- আসপারটেম, স্যাচিরিন এবং সুক্রালোস। কিন্তু এই সকল কৃত্রিম সুগার নিয়েও অনেক বিতর্ক রয়েছে, অনেক পরীক্ষাতেই এই কৃত্রিম সুগার থেকে ক্যানসারের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। রিপোর্ট সামনে আসতেই নানা দেশ এই ডায়েট কোক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেয়।
আরও পড়ুন- ১৮ বছর ধরে বাস বিমানবন্দরেই! বাস্তবের ‘টার্মিনাল’ ম্যানের মৃত্যু অবাক করছে বিশ্বকে
কোল্ড ড্রিঙ্কসে অ্যাডেড সুগার ছাড়াও আরও একটি পদার্থ আছে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ ক্ষতিকারক। তা হল ক্যারামেল। সুগারকেই জ্বালিয়ে ক্যারামেল পাওয়া যায়, যা মানুষের শরীরে ৪ গ্রামের বেশি হলে বিষয়টা ভয়াবহ হয়ে ওঠে। এছাড়া যে সকল কমলা রঙের সফ্ট ড্রিঙ্কস আমরা ফ্রুট ড্রিঙ্কস হিসাবে ব্যবহার করে থাকি তা আদৌ ফল থেকে তৈরি নয়। এটি আসলে সফ্ট ড্রিঙ্কসে ব্যবহার হওয়া একটি সিন্থেটিক পদার্থ যা কোল্ড ড্রিঙ্কসে কমলা রং আনতে সাহায্য করে। এর নাম E-110 বা Sunset Yellow FCF।
আরেকটি উপাদান হলো E211 বা সোডিয়াম বেনজোএট। ২০০৫ সালে মার্কিন যুক্তিরাষ্ট্রের একটি বেসরকারি সংস্থা কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার করে রিপোর্ট দেয়। জানা যায়, কোল্ড ড্রিঙ্কসে বেঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। আর এই বেঞ্জিন আসলে গাড়ি থেকে বেরনো বাড়তি ধোঁয়া থেকে পাওয়া যায়। মূলত পেট্রোলকে জ্বালালে বেঞ্জিন নির্গত হয়। ২০০৮ সালে বিষয়টি যখন প্রকাশ্যে আসে, তখন পেপসি ও কোকাকোলার বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করা হয়। মজার বিষয় হল, এত কিছুর পরেও ভারতে আজও এই পদার্থগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে সফ্ট ড্রিঙ্কসের উৎপাদনে।
তাহলে মানুষ তেষ্টা মেটাতে খাবেটা কী? এমন কোন পানীয় আছে যাতে কোনও ক্ষতিকারক উপাদান নেই? এই অবস্থায় অনেকেই ফলের রসকেই বিকল্প হিসেবে তুলে ধরবেন। কিন্তু ভয় এখানেও সামান্য আছেই। ফলের রসে কোনও কৃত্রিম বা অত্যাধিক রাসায়নিক পদার্থ নেই কিন্তু অত্যাধিক চিনি আমরা ফল থেকেও পেতে পারি যা মোটেই স্বাস্থ্যের পক্ষে উপযোগী নয়। সুতরাং হাতে রইল জল! একমাত্র পানীয় যা আমরা নির্দ্বিধায়, যেমন মন চায় খেতে পারি। সঠিক পরিমাণ জল লিভারের সমস্যাও দূর করেই, ত্বক ও স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।