পুলওয়ামা বিস্ফোরণের মাস্টারমাইন্ড? ইমরানের কাঁটা নয়া পাক সেনাপ্রধানের আসল পরিচয় জানুন
Pakistan New Army in Chief: জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার পরিবর্তে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হতে চলেছেন জেনারেল আসিম মুনির আহমেদ। কী তাঁর পরিচয়?
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির কথা নিশ্চয়ই সবার স্মরণে আছে। ভালোবাসার এমন দিন লাল হয়েছিল ঠিকই; তবে গোলাপে নয়, রক্তে। ভূস্বর্গ কাশ্মীর দেখেছিল ৪০ জন ভারতীয় সিআরপিএফ জওয়ানের মরদেহ। দেখেছিল আরও একটি আত্মঘাতী হামলার পরিণাম। পুলওয়ামার সেই ঘটনা আজও ভারতের ক্যালেন্ডারে কালো দাগ কেটে গিয়েছে। সেই ঘটনার সাড়ে তিন বছর অতিক্রম হয়ে গিয়েছে। আজ, ২০২২-এর নভেম্বর মাসে দাঁড়িয়ে হঠাৎ সেই হামলার ঘটনা মনে করা কেন? কারণ, আজ বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বরেই নতুন সেনাপ্রধানের নাম ঘোষণা করল পাকিস্তান। জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার পরিবর্তে সেই জায়গায় বসতে চলেছেন জেনারেল আসিম মুনির আহমেদ। সেই অসীম মুনির, যার নাম ২০১৯-র পুলওয়ামা হামলার সময় উঠে এসেছিল। অভিযোগ, তিনিই নাকি হামলার অন্যতম মস্তিস্ক ছিলেন। হামলার পর পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াও নাকি তিনিই ঠিক করেছিলেন। আপাতত, নতুন সেনাপ্রধানের অভিষেকের দিকেই তাকিয়ে আছে ভারত সরকার। তটস্থ সমস্ত মন্ত্রক। তাহলে কি এটাই ছিল আসিম মুনিরের ‘পুরস্কার’? প্রশ্ন উঠছে অনেকের মনেই।
আরও পড়ুন : ইমরানই প্রথম নন, যেভাবে বারবার প্রাণঘাতী হামলার শিকার হয়েছেন প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীরা
বিশদে আসার আগে একবার আসিম মুনিরের দিকে একটু আলোকপাত করা যাক। ১৯৮৬ সালে পাকিস্তানের মাংলার অফিসার্স ট্রেনিং স্কুলের মাধ্যমে তাঁর সেনাবাহিনীর যাত্রা শুরু। প্রশিক্ষণের পর একটু একটু করে মাঠে নামা শুরু। নিয়মমাফিক তাঁর পদোন্নতিও ঘটতে থাকে। প্রায় ৩৬ বছরের সেনা অফিসারের কেরিয়ারে ঘাত প্রতিঘাত অনেক এসেছে। সেটাই স্বাভাবিক। ভারত ও পাকিস্তান – দুই দেশের সেনাদের ক্ষেত্রেই এই কথা সত্য। তার উপর নিজের সেনা কেরিয়ারে পাকিস্তান রাষ্ট্রের তরফ থেকে বিস্তর পুরস্কারও জুটেছে। ২০১৮ সালে আসিম মুনির পেয়েছেন হিলাল-ই-ইমতিয়াজ(মিলিটারি) সম্মান, যা পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার।
আরও পড়ুন : পাকিস্তান মানেই দুর্নীতি! ইমরান খানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ যে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে
তবে ভারতের দিক থেকে বিষয়টি একটু অন্যরকম। ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর। পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের(Inter Services Intelligence) ২৩ তম ডিরেক্টর জেনারেল হন আসিম মুনির আহমেদ। অবশ্য তারও দু’বছর আগে থেকে তিনি মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। উল্লেখ্য, আসিম মুনির যখন আইএসআইয়ের প্রধান হন, তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদে ইমরান খান। ২০১৯ সালের ১৬ জুন আইএসআই প্রধানের পদ থেকে সরে যান মুনির। তার মাত্র কয়েকমাস আগেই ঘটে গিয়েছে পুলওয়ামার সেই ভয়াবহ ঘটনা।
২০১৯-এর ১৪ ফেব্রুয়ারির আগে কাশ্মীর দেখে নিয়েছে উরির সেনাঘাঁটিতে হামলা এবং ১৯ জন জওয়ানের মৃত্যু। তার পরেই ভারত সরকার ও ভারতীয় সেনাবাহিনী পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সার্জিকাল স্ট্রাইক করে। এরপর আসে ২০১৯-এর ওই দিনটি। ভারতীয় সেনার একটা কনভয় জম্মু শ্রীনগর জাতীয় সড়ক ধরে কাচ্ছিল। পুলওয়ামার লিথাপোরা গ্রামে হঠাৎই একটি চারচাকার গাড়ি ধেয়ে আসে কনভয়ের দিকে। বাকিটা কেবল রক্ত, ধোঁয়া, বারুদ আর ৪০ জওয়ানের পরিবারের কান্নায় ভরা। নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন উঠে যায়। স্বাভাবিকভাবেই হামলার পর নজর যায় পাকিস্তানের দিকে। অন্যদিকে, জইশ-ই-মহম্মদও হামলার দায় স্বীকার করে। তবুও পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের দিক থেকে সন্দেহের চোখ সরেনি ভারতের।
আরও পড়ুন : ভারত পাকিস্তানের চেয়ে ভাল, কেন মনে করছেন ইমরান খান?
সেই সময় আইএসআইয়ের শীর্ষ পদে রয়েছেন আসিম মুনির। অভিযোগ, পুলওয়ামায় হামলা চালানো, তার রুটম্যাপ সমস্ত কিছুর অন্যতম মাথা ছিলেন তিনিই। পাশাপাশি হামলার পর পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া কী হবে, দেশের নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থা কীরকম হবে, সেটাও আসিম মুনিরই নাকি ঠিক করেছিলেন। ভারতীয় সেনার উচ্চপদস্থ অফিসারদের বক্তব্য ছিল, এই হামলা জইশ-ই-মহম্মদ গোষ্ঠী কিছুতেই একা করতে পারে না। হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে তথ্যপ্রমাণ, অস্ত্র ইত্যাদি পরীক্ষা করেও সেই ইঙ্গিতই পাওয়া গিয়েছে। পাক গুপ্তচর সংস্থা এবং তার প্রধান সাহায্য না করলে এই কাজ হতে পারে না।
সেই সেনা অফিসার, জেনারেল আসিম মুনির এখন পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান। আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে তিনি নতুন দায়িত্ব নেবেন। বর্তমান পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নিজে তাঁর নাম সামনে আনেন। তারপরই এমন ঘোষণা। এরপরই নড়েচড়ে বসেছে ভারত। কারণ, পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পাশাপাশি নতুন সেনাপ্রধানের নিয়োগও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে পারে। তাঁর মস্তস্কপ্রসূত সিদ্ধান্তের দিকে কড়া নজর থাকে সবার; বিশেষ করে ভারতের। আর এখন সেই জায়গায় আসিম মুনিরের অবস্থান কি পুলওয়ামা হামলার ‘পুরস্কার’? সেনাবাহিনীর অনেক অফিসারই কিন্তু তেমনটাই মনে করছেন। অবশ্য এর পাশাপাশি আরও একটা কারণ উঠে আসছে। আসিম মুনির যখন আইএসআই প্রধান হন, তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সিংহাসনে ইমরান খান। প্রাক্তন পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ ক্ষমতায়। সেই সময় থেকেই ইমরান আর আসিম মুনিরের দ্বন্দ্ব। সরকার বিরোধী চক্রান্তের অভিযোগ এনে তাঁকে আইএসআইয়ের প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান। তারপর থেকেই সম্পর্কটা আদায়-কাঁচকলায়। কয়েকদিন আগেই ইমরান খান গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁর দল এবং তিনি সেই ইস্যুতে যথেষ্ট হাওয়া গরম করছেন। তেমন পরিস্থিতিতে আসিম মুনিরকে সেনাপ্রধান করা কি শাহবাজ শরিফের ‘মাস্টারস্ট্রোক’? অন্তত পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় রাজনীতির আঙিনায় এই সম্ভাবনাকে ফেলে দিচ্ছে না কেউ। আপাতত কোন দিকে যায় পরিস্থিতি, সেনাপ্রধানের পদ থেকে কী পরিকল্পনা নেন আসিম মুনির আহমেদ, সেটাই এখন দরকার।