ঔরঙ্গজেবের প্রিয় পদ, কী ভাবে এত জনপ্রিয় হল তড়কা?

Tadka Daal : মহাভারত থেকে মুঘল হেঁশেল হয়ে অবশেষে আধুনিক ধাবা রেস্তোরাঁ, চমকে দেবে তড়কার ইতিহাস

ঝুপড়ি দোকান হোক বা বড় কোনও নামজাদা রেস্তোরাঁ, অথবা রাতের খাবারের ঘরোয়া মেনু, সবেতেই দেদার চল তড়কার। রুটির সঙ্গে তড়কার যেন এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। মূলত উত্তর ভারতের খাবার হলেও নিজের স্বাদ যশে ক্রমেই এই পদ ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের সর্বত্র। ধরুন কোথাও ঘুরতে গেছেন, খাবারের দোকানে গিয়ে আর কিছু পান আর নাই পান রুটি তড়কা অবশ্যই পাবেন। পাঞ্জাবীদের মধ্যে খাবারের চল সবচেয়ে বেশি। তবে সেক্ষেত্রে বেশিরভাগ জনই নিরামিষ তড়কা পছন্দ করেন। কিন্তু সামগ্রিক ভারতের নিরিখে বিচার করলে বর্তমানে সবথেকে বেশি চল ডিম তড়কার। তবে আধুনিক খাবারের যুগে এতেও খানিক পরিবর্তন এসেছে। চিকেন, মটন অথবা পনির দিয়েও তৈরি হচ্ছে তড়কা।

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কেবল ভারতের অন্যত্র নয়, খোদ বাঙালি বাড়ির হেঁশেলেও জনপ্রিয় খাবার হিসেবে প্রচলিত তড়কা। মূলত দল জাতীয় পদ এটি। জানেন ভারতে ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছিল তড়কা খাওয়ার চল?

আরও পড়ুন - ‘লুচি’ নামের আসল রহস্য কী? জানেন কীভাবে জন্ম হল এই জনপ্রিয় খাবারের?

ডাল জাতীয় পদের সঙ্গে ভারতীয়দের যোগ বহুকালের। কেবল রুটি বলে নয় লুচি পরোটা অথবা ভাতের সাথে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের ডাল খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে। মুগ, মুসু, ছোলা, মটর, বিউলি প্রভৃতি আলাদা আলাদা ধরনের ডাল পাওয়া যায় এ দেশে। প্রতিটি ডাল রান্না ধরনও হয় আলাদা। ভাতের সাথে সঙ্গত করে মুগ, মসুর, বিউলি ইত্যাদি আবার লুচি, পরোটার সাথে ছোলার ডালের স্বাদ সবথেকে বেশি জমে। তড়কা অবশ্য তৈরি করা হয় অন্য ধরনের একটি ডাল দিয়ে। বাংলায় যাকে বলা হয় মুগকড়াই।আবার বহু জায়গায় তড়কা তৈরিতে মুগ এবং মসুর বা বিউলির একসঙ্গে মিশিয়ে রান্না করা হয়।

সময়টা 303 খ্রিস্টপূর্বাব্দ। প্রাচীন খাবারের তথ্য অনুযায়ী সে যুগে, একটি বিয়ে বাড়িতে প্রথম পরিবেশন করা হয়েছিল এই পদ। যদিও এই প্রাচীন পথটি সঙ্গে ইতিহাস ছাড়াও জড়িয়ে রয়েছে আরো অনেক মজাদার তথ্য, আসুন জেনে নেওয়া যাক সেইসব।

এই পদ রান্নার সময় প্রথমে ডাল সেদ্ধ করে নেওয়া হয়, পরে হলুদ, নুন-সহ নানান মশলা যোগ করা হয়। কেউ কেউ আবার রান্নার সময় টমেটো, কুঁচি করে কাটা আদা, পিঁয়াজ এবং রসুনও যোগ করেন। সেদ্ধ ডালের সঙ্গে নানা মশলা দিয়ে টেম্পারিং করা হয়। উত্তর ভারতে, হিং, জিরে, কাঁচা লঙ্কা, আদা এবং রসুন দিয়ে তৈরি করা হয় তড়কা। দক্ষিণ ভারতে অবশ্য শুকনো লাললঙ্কা, সরিষার বীজ, কারি পাতা এবং রসুন দেওয়া হয়। আর বাংলায় ব্যবহার করা হয় কাসুরি মেথি।

আরও পড়ুন - সঙ্গে তড়কা অথবা সামান্য আচার, ব্যাস! জানেন কীভাবে ভারতে জনপ্রিয় হয়ে উঠল তন্দুরি রুটি?

আজকাল ঘরোয়া পথ হিসেবে জনপ্রিয়তা পেল একসময় কেবল আচার অনুষ্ঠানে বিশেষ পদ হিসেবেই রেওয়াজ ছিল তড়কা খাওয়ার। মুঘল আমলে একে পাঁচমেল ডাল বলা হতো। এটি মুঘলদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় পদ। এই পাঁচমেল ডাল হল পাঁচ ধরনের ডালের মিশ্রণ যেমন মুগ, ছোলা, বিউলি, মসুর এবং অড়হর ডাল। কথিত আছে, পঞ্চমেল ডাল ছিল যোধা বাঈয়েরও প্রিয়। তিনি নিরামিষভোজী ছিলেন তাই সেযুগে মুঘল হেঁশেলে নিরামিষ পদ হিসেবে খুবই জনপ্রিয় ছিল এই খাবার। এমনকী ঔরঙ্গজেবের মতো বিশিষ্ট নিরামিষভোজীর পাতেও নিয়মিত পড়ত এই পাঁচমেল ডাল।

এখানেই শেষ নয় মুঘল আমলের পাশাপাশি মহাভারতে উল্লেখ ছিল এই বিশেষ ধরনের ডালের। ইতিহাস মতে মহাকাব্যেই প্রথম উল্লেখ মেলে পদের। তারপর তা ছড়িয়ে পড়ে ভারতীয় রাজাদের পাক ঘরে। মহাভারতের বিরাট পর্বে উল্লেখ আছে, ভীম যখন রাজা বিরাটের রান্নাঘরে বাবুর্চি হিসেবে ছদ্মবেশে ছিলেন সেই সময়ে, তিনি পাঁচটি ডালের মিশ্রণ দিয়ে এই রান্না করেন। মাটির পাত্রের মধ্যে পাঁচ রকমের ডাল মিশিয়ে ধীরে ধীরে পঞ্চরত্ন ডাল তৈরি হয়। পরে সেই দল থেকেই আরও পরিবর্তনে ভারতীয় হেঁশেলে পাকাপাকি জায়গা করে নেয় তড়কা।

More Articles