মেসি না হল্যান্ড, ব্যালন ডি’অরের সেরার সেরা খেতাব ছিনিয়ে নেবেন ফুটবলের কোন জাদুকর?

Ballon d'Or 2023: এই তিরিশ জনের মধ্যে থেকে কে ছিনিয়ে নেন সেরার খেতাব, সেটাই এখন দেখার। ফুটবলভক্তেরা সিআর সেভেন-কে মিস করলেও প্রত্যাশার শীর্ষে রয়েছেন মেসি এবং আর্লি হল্যান্ড।

ভক্তদের মুখ ম্লান। ইউরোপীয় ফুটবলের মূল ধারা ছিটকে গিয়েছেন তিনি আগেই। এবার ব্যালন ডি’অরের প্রাথমিক তালিকা থেকেও বাদ পড়লেন তাঁদের প্রিয় সিআর-সেভেন। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো না থাকলেও লড়াইয়ে প্রত্যাশিত ভাবেই রয়েছেন লিওনেল মেসি ও আর্লিং হল্যান্ড। বর্ষসেরা ফুটবলারের লড়াইয়ে তাঁদের সঙ্গে আছেন কিলিয়ান এমবাপে, রবের্ত লেভানদোভস্কি, ভিনিসিউস জুনিয়রের মতো ফুটবল তারকারাও।

২০২৩ সালের ব্যালন ডি’অর জয়ের লড়াইয়ে থাকা ৩০ জনের তালিকা বুধবার রাতেই প্রকাশ করেছে ফুটবল সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’। গতবারের বিজয়ী করিম বেনজেমাও আছেন তালিকায়।

ইতিমধ্যেই এই পুরস্কার সাতবার জিতেছেন মেসি, যা কার্যত রেকর্ড। অথচ সেই মেসিই গত বছর ৩০ জনের তালিকাতেও ছিলেন না। ২০০৫ সালের পর তার কেরিয়ারে প্রথম বার ঘটেছিল এমন ঘটনা। তবে এবার তেমনটা ঘটেনি। সম্ভাব্য বিজয়ীদের অন্যতম আপাতত আর্জেন্টিনার এই মহাতারকাই।

গত মরসুমে জাতীয় দল ও ক্লাবের হয়ে সব চেয়ে সফল ছিলেন মেসিই। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবশ্যই তাঁর কাতারে বিশ্বকাপ জয়। ৩৬ বছরের খরা কাটিয়ে আর্জেন্টিনাকে ফের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ জিতিয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব অবশ্যই যাবে এই সাবেক বার্সেলোনা তারকার কাঁধেই। ফ্রান্সের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ফাইনালে জোড়া গোল-সহ মোট ৭টি গোল দিয়েছেন মেসি। জিতেছেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব ‘গোল্ডেন বল।’গত মার্চে তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ছেলেদের আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করে ফেলেছেন মেসি।

আরও পড়ুন: এই গ্রীষ্মেই বার্সেলোনায় ফিরতে চলেছেন মেসি? তবে তার আগে মানতে হবে এই শর্তগুলো

পিএসজির জার্সিতে নিজের সেরা ছন্দে না থাকলেও টানা দ্বিতীয়বারের মতো লিগ ওয়ানের শিরোপা জিতে নেন মেসি। প্যারিসের দলটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বিদায় নিয়েছিল শেষ ষোলো থেকে। ইউরোপ সেরার মঞ্চে মেসি ৭টি ম্যাচে নিজে মোট চারটি গোল করেছেন, তাঁর সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন চারটি গোল। পিএসজি ছেড়ে এই মরসুমে তিনি যোগ দেন মেজর সকার লিগের দল ইন্টার মায়ামিতে।

হলান্ডের জন্য গত বছরটা ছিল স্বপ্নময়। ম্যানচেস্টার সিটির ‘ট্রেবল’ জয়ে তার অবদান ছিল মনে রাখার মতো। এই মরসুমেই ম্যাঞ্চেস্টার সিটিতে যোগ দিয়ে ইংলিশ ফুটবলে ঝড় তোলেন নরওয়ের এই স্ট্রাইকার। লিগে ৩৭ ম্যাচে গোলের মুখ দেখেছেন ৩৬ বার। ভেঙে দিয়েছেনন ৩৮ ম্যাচের লিগে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে ৮টি গোলও করান তিনি।

ম্যাঞ্চেস্টার সিটির চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পথচলাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল হলান্ডের। ১১ ম্যাচে গোল করেছেন মোট ১২টি। আর এত সব কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর ইতিমধ্যেই উয়েফা বর্ষসেরা ফুটবলারের খেতাবর জিতে নিয়েছেন এই তরুণ তুর্কি।

তার মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে ব্যালন ডি’অরের কাউন্টডাউন। সব ঠিকঠাক থাকলে, আগামী ৩০ অক্টোবর প্যারিসে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঘোষণা করা হবে এ বছরের বিজয়ীর নাম।

ব্যালন ডি’অর খেতাব দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মে বেশ কিছু অদলবদল এসেছে গত বছরেই। আগে ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে পুরো বছরের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নেওয়া হত। তবে সেই রীতি পাল্টেছে। এখন বিবেচনায় ধরা হয় ইউরোপিয়ান ফুটবলের একটি গোটা মরসুমকে (আগস্ট থেকে জুলাই)। সেই ১৯৫৬ সাল থেকে চলে আসছে এই পুরস্কার।

কে কে রয়েছেন এ বছরের তালিকায়?

হ্যারি কেইন (টটেনহ্যাম হটস্পার/বায়ার্ন মিউনিখ),
ভিক্টর ওসিমহেন (নাপোলি),
লুকা মদ্রিচ (রিয়াল মাদ্রিদ),
কিম মিন-জায়ে (নাপোলি/বায়ার্ন মিউনিখ),
কিলিয়ান এমবাপে (পিএসজি),
রবের্ত লেভানদোভস্কি (বার্সেলোনা),
লাউতারো মার্তিনেস (ইন্টার মিলান),
লিওনেল মেসি (পিএসজি/ইন্টার মায়ামি),
অঁতোয়ান গ্রিজমান (আতলেতিকো মাদ্রিদ),
রদ্রি (ম্যানচেস্টার সিটি),
ভিনিসিউস জুনিয়র (রিয়াল মাদ্রিদ),
ইয়াসিন বোনো (সেভিয়া/আল হিলাল),
হুলিয়ান আলভারেস (ম্যানচেস্টার সিটি),
ইলকাই গিনদোয়ান (ম্যানচেস্টার সিটি/বার্সেলোনা),
মার্টিন ওডেগোর (আর্সেনাল),
আর্লিং হলান্ড (ম্যানচেস্টার সিটি),
নিকোলো বারেল্লা (ইন্টার মিলান),
রুবেন দিয়াস (ম্যানচেস্টার সিটি),
এমিলিয়ানো মার্তিনেস (অ্যাস্টন ভিলা),
খাভিচা কাভারাৎসখেলিয়া (নাপোলি),
বের্নার্দো সিলভা (ম্যানচেস্টার সিটি),
কেভিন ডে ব্রুইনে (ম্যানচেস্টার সিটি),
রন্দাল কোলো মুয়ানি (আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট/পিএসজি),
বুকায়ো সাকা (আর্সেনাল),
জুড বেলিংহ্যাম (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড/রিয়াল মাদ্রিদ),
মোহামেদ সালাহ (লিভারপুল),
জামাল মুসিয়ালা (বায়ার্ন মিউনিখ),
করিম বেনজেমা (রিয়াল মাদ্রিদ/আল ইত্তিহাদ),
আন্দে ওনানা (ইন্টার মিলান/ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড),
ইয়োস্কো গাভারদিওল (লাইপজিগ/ম্যানচেস্টার সিটি)

আরও পড়ুন: পেনাল্টি শ্যুটআউটে নাচ! স্নায়ুর লড়াইয়ে কীভাবে এমবাপেদের পিছনে ফেললেন এমি মার্তিনেজ?

এই তিরিশ জনের মধ্যে থেকে কে ছিনিয়ে নেন সেরার খেতাব, সেটাই এখন দেখার। ফুটবলভক্তেরা সিআর সেভেন-কে মিস করলেও প্রত্যাশার শীর্ষে রয়েছেন মেসি এবং আর্লি হল্যান্ড। বিশ্বকাপ ফাইনালে জয় না এলেও পায়ের জাদুতে সকলকে মুগ্ধ করেছিলেন ফ্রান্সের হয়ে খেলা এমবাপে। তাঁকেও সম্ভাব্যের তালিকায় রাখতে ভুলছেন না ফুটবলপ্রেমীরা। তবে শেষ পর্যন্ত সেরার সেরা শিরোপা ছিনিয়ে নেন কোন বাজিগর, তার দিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।

More Articles