হাসিনাশাহির অবসান চেয়ে ফের মৃত্যু! কোন পথে এগোচ্ছে ঢাকার লং মার্চ?
Bangladesh Long March: যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় ব্যাপক পুলিশ নেমেছে। সাঁজোয়া যানও দেখা গেছে। সেখানে সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই ৩ জন মারা গেছেন।
বাংলাদেশ নতুন করে উত্তপ্ত। হাসিনাশাহীর অবসান চাইছে বাংলাদেশের বিপুল অংশের মানুষ। এত কম সময়ে এত সাধারণ মানুষের মৃত্যু, মুক্তিযুদ্ধের পর আর দেখেনি পড়শি দেশ। রবিবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। বাংলাদেশ জুড়ে এই নতুন করে হানাহানিতে প্রাণ গিয়েছে প্রায় ১০০ জনের। মানিকগঞ্জে রবিবার আহত হয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতা তায়েবুর রহমান ওরফে টিপু। রাতেই ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এই অবস্থাতেই সোমবার ঢাকার উদ্দেশ্যে লং মার্চের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আর সোমবার আবারও সাধারণ মানুষের মিছিলে কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়েছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রবিবার সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের অদূরে মানরা এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও জনতার সঙ্গে যোগ দেন বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও। সাড়ে ১১টা নাগাদ বিক্ষোভকারীরা মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ট্রাফিক বক্সসহ কয়েকটি জায়গায় ভাঙচুর করেন। এরপরই পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। তাতে আন্দোলনকারীদের বেশ কয়েকজন আহত হন। আন্দোলনকারীরা কিছুটা পিছু হটলেই যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করেন। তাঁদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন। দুই পক্ষের সংঘর্ষেই আওয়ামী লীগের নেতা তায়েবুর রহমানের মাথায় আঘাত লাগে।
আরও পড়ুন- ঢাকা কাঁপাবে আম জনতার লং মার্চ! আরও নির্মম মৃত্যু, হিংসা দেখতে হবে বাংলাদেশকে?
সোমবারই আবার টোটাল ইন্টারনেট শাটডাউনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাত দিনের মাথায় ফের রবিবার ফোর–জি নেটওয়ার্ক বন্ধ করা হয়। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত ফোর-জি নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকবে বাংলাদেশজুড়ে। বন্ধ আছে ফেসবুক, টিকটক, টেলিগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া পরিষেবাও।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ কর্মসূচির পর সোমবার লং মার্চের ডাক দেওয়া হয়। রবিবারই কেবল এই হিংসায় ১০১ জনের প্রাণ গেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যে লংমার্চ মঙ্গলবার হওয়ার কথা ছিল তা সোমবারই করার কথা জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে সকাল ১০টা নাগাদ ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জড়ো হন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা। পুলিশ তাদের সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছুঁড়ে সরিয়ে দেয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েরও কিছু পড়ুয়া রবিবার রাতেই শহিদ মিনারে অবস্থান শুরু করলে, রাতেই পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পড়ুয়ারা পালিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে আশ্রয় নেন।
আরও পড়ুন- নতুন করে মৃত্যু মিছিল বাংলাদেশ! “ছাত্র নয়, সব সন্ত্রাসবাদী”, কেন বলছেন হাসিনা?
চানখারপুল দিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আসা আন্দোলনকারীদের চানখারপুল মোড়েই পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছুঁড়ে সরিয়ে দেয়। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকায় হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় মেনেছেন। এই মানুষদের ঠেকাতে যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় ব্যাপক পুলিশ নেমেছে। সাঁজোয়া যানও দেখা গেছে। সেখানে সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই ৩ জন মারা গেছেন। ঢাকার সায়েন্স ল্যাব এলাকায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে, পাল্টা ধাওয়া করে বিক্ষোভকারীরাও।
নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড ও শিমরাইল এলাকা অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারীরা। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মহাসড়কে অবস্থান শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। রামপুরা বিজ্রের কাছ থেকে পুলিশ এসে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সোমবার বেলা তিনটেয় জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন। অন্তত বেলা ৩টে পর্যন্ত জনসাধারণকে হিংসতা পরিহার করে ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ সরকার।