মা-বাবা দুজনেই সাফাইকর্মী, জীবনযুদ্ধে যেভাবে লড়াই জারি রেখেছিল ইউটিউবার অমিত মন্ডল

Youtuber Amit Mondal : ইউটিউব দুনিয়ায় পরিচিত নাম অমিত মন্ডল। মাত্র ২২ বছরেই বাংলার অন্যতম কনটেন্ট ক্রিয়েটরের জায়গা দখল করে নেন তিনি।

প্রতিবন্ধকতাকে কোনও দিনই বিশেষ পাত্তা দেয়নি সে, হাঁটা চলা করতে না পারলেও জীবনের স্বপ্নের পথে চলার হদিশ খুঁজে নিয়েছিল নিজের দমেই। কিন্তু ভাগ্য এবারও বিমুখ করল তাঁকে, সময়ের অনেক আগেই আকস্মিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন জনপ্রিয় ইউটিউবার অমিত মন্ডল। এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

ইউটিউব দুনিয়ায় পরিচিত নাম অমিত মন্ডল। মাত্র ২২ বছরেই বাংলার অন্যতম কনটেন্ট ক্রিয়েটরের জায়গা দখল করে নেন তিনি। ফ্রেজারগঞ্জের শিবপুর জংশনের বাসিন্দা এই পরিবার। বাবা মা দুজনেই ছিলেন পেশায় সাফাইকর্মী। এমনিতেই অভাবের সংসার, তার ওপর আবার জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী ছেলে অমিত। তাই বাড়তি হিসেবে যোগ হয়েছিল ছেলের দায়িত্ব। তবুও হাল ছাড়েননি তাঁরা। কষ্ট করেও চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন ছেলের পড়াশোনা। অমিতও ছোট থেকে দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে করতে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিল এই সফরটা। তাই ঘুরে দাঁড়ানোর একটা জেদ মনের মধ্যে ছিল তাঁরও।

আরও পড়ুন - বিকল্পের সন্ধানে যুবরা! প্রতি ঘরে একজন ইউটিউবার, ভারতেই রয়েছে ইউটিউবারদের আস্ত গ্রাম

ফ্রেজারগঞ্জের অমিতের পড়াশোনা শুরু সরস্বতী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার পর বাড়ির কাছেই কৃষ্ণপ্রসাদ আদর্শ বিদ্যাপীঠে পড়াশোনা করেন তিনি। গৃহ শিক্ষক রাখার ক্ষমতা ছিল না পরিবারের, অমিত নিজের চেষ্টায় উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ভর্তি হন নামখানা কলেজে। তার পর ইতিহাসে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন শিবানী মণ্ডল মহাবিদ্যালয়ে। উচ্চ শিক্ষায় আরও এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। যদিও অকালেই সেই স্বপ্নে চড়া পড়ল। সম্প্রতি একটি দুর্ঘটনার জেরে অকালে প্রাণ হারালেন অমিত মন্ডল। জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার বিকেলের দিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুন্সিরহাট এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন অমিত মণ্ডল। এক স্কুটার দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন তিনি। এরপর তাঁকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু, সেখানে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তড়িঘড়ি SSKM হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসকদের শত চেষ্টা সত্ত্বেও শেষ রক্ষা হয়নি। SSKM-এই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

অমিত মন্ডল, ইউটিউব চ্যানেলে এখন জ্বলজ্বল করছে মুখটা। তাঁর জীবন যুদ্ধের সবটুকু খতিয়ান সেখানে এখনও সযত্নে রয়েছে। নেই কেবল অমিত মন্ডল নামের তরতাজা ছেলেটি। ইউটিউবে ৩০৭ হাজার সাবস্ক্রাইবার ছিল অমিতের চ্যানেলে। সকাল থেকে রাত অবধি তাঁর জীবনের নানা কিছু, তাঁর মা কীভাবে অমিতের দেখভাল করছে ইত্যাদি থেকে শুরু করে কলেজের ফ্রেসার্স অনুষ্ঠান সব কিছুই ভিডিওর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন তিনি ওই চ্যানেলে। প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে যে পড়শিরা ভবিষ্যত চিন্তায় হাহুতাশ করতেন, তাঁদের সামনে উদাহরণ হয়ে উঠেছিল ফ্রেজারগঞ্জের অমিত মন্ডল। রোজগার করে পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছিল সে। এমনকী শখ করে কিনেছিল একটা আইফোন। কার্যত ছেঁড়া কাঁথায় শুয়েই লাখ টাকার স্বপ্ন সত্যিই করেছিল সে।কিন্তু দিন বদলের শুরুতেই যবনিকা টেনে দিল ভাগ্য। একমাত্র রোজগেরে ছেলেকে হারিয়ে আবারও অথৈ জলে অমিত মণ্ডলের পরিবার।

More Articles