মায়াবতীর জমানা শেষ! বিজেপিকে হারিয়ে দলিত রাজনীতির বাঁক বদলাচ্ছেন চন্দ্রশেখর আজাদ

Chandrashekhar Azad: সারা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে বিজেপির দুঃখজনক ফলাফলের মধ্যে চন্দ্রশেখরের এই জয় বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

উত্তরপ্রদেশের দলিত রাজনীতিতে বেশ কিছুকাল ধরেই তিনি প্রাসঙ্গিক। লড়েছেন বুক ঠুকে, গুলি খেয়েছেন। দলিত সত্ত্বাকে অপমান নয়, গর্বের নাম করে তুলতে চেয়েছেন চন্দ্রশেখর আজাদ। এবারের লোকসভা নির্বাচনে তাঁর জয় উত্তরপ্রদেশে এক বিশাল চমক। দলিত নেতা এবং আজাদ সমাজ পার্টির (কাঁশি রাম) প্রার্থী চন্দ্রশেখর আজাদ উত্তরপ্রদেশের নাগিনা লোকসভা কেন্দ্রে হারিয়ে দিয়েছেন বিজেপিকে। সারা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে বিজেপির দুঃখজনক ফলাফলের মধ্যে চন্দ্রশেখরের এই জয় বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ১.৫ লক্ষেরও বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন তিনি, হারিয়েছেন বিজেপির ওম কুমারকে।

চন্দ্রশেখর আজাদ পেয়েছেন ৫,১২,৫৫২টি ভোট, আর ওম কুমার পেয়েছেন ৩,৬১,০৭৯টি ভোট। সমাজবাদী পার্টির মনোজ কুমার এই আসনে ছিলেন ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী। তিনি পেয়েছেন ১,০২,৩৭৪টি ভোট এবং বহুজন সমাজ পার্টির প্রার্থী সুরেন্দ্র পাল সিং পেয়েছেন মাত্র ১৩,২৭২টি ভোট।

আরও পড়ুন- উত্তরপ্রদেশে যোগী বনাম রাবণ, কে এই দলিত নেতা চন্দ্রশেখর আজাদ?

২০১৯ সালে বহুজন সমাজ পার্টির গিরিশ চন্দ্র এই আসনটি জিতেছিলেন। তিনি সেবার বিজেপির প্রার্থী যশবন্ত সিংকে ১,৬৬,৮৩২ ভোটে হারিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে এই আসনটিতে বিজেপি জিতেছিল এবং ২০০৯ সালে আসনটি জেতে সমাজবাদী পার্টি।

২০১৫ সালে ভীম আর্মি গঠন করেন চন্দ্রশেখর। আনুষ্ঠানিকভাবে ভীম আর্মি ভারত একতা মিশন নামে পরিচিত ছিল এই সংগঠন। এই সংগঠনটির লক্ষ্যই ছিল দলিতদের অধিকারের জন্য লড়াই করা। দেশে সংঘটিত বেশ কয়েকটি দলিত আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন চন্দ্রশেখর আজাদ।

২০২০ সালের মার্চ মাসে রাজনৈতিক দল আজাদ সমাজ পার্টি গঠন করেছিলেন আজাদ এবং এসপি, বিএসপি, কংগ্রেস এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দলের বেশ কয়েকজন নেতা এই দলে যোগ দিয়েছিলেন।

 

নাগিনা লোকসভা আসনটি তৈরি হয় ২০০৮ সালে। কেন্দ্রটি তপশিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত আসন। এই আসনে প্রায় ২১ শতাংশ এসসি ভোটার রয়েছেন। মুসলিম ভোটার রয়েছেন ৫০ শতাংশেরও বেশি। নাগিনা লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে আছে পাঁচটি বিধানসভা, যার মধ্যে তিনটি বর্তমানে এসপি বিধায়কদের দখলে এবং দু'টি বিজেপির দখলে।

বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোটে শামিল হননি চন্দ্রশেখর। নিজের দল, আজাদ সমাজ পার্টির (কাঁশি রাম) টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। আজাদের জয় উত্তরপ্রদেশের দলিত রাজনীতিতে কি মায়াবতীর দাপটের অবসান? প্রশ্নটা নিছক নয় কারণ, বহুজন সমাজ পার্টি দীর্ঘদিন ধরে এই রাজ্য তথা সংসদে দলিতদের প্রতিনিধিত্ব করে এসেছে। এবারের নির্বাচনে একটিও আসন জিততে পারেনি মায়াবতীর দল।

আরও পড়ুন- মায়াবতীর বিশ্বাসঘাতকতায় পড়ে যায় সরকার, যে অভাবনীয় প্রতিশোধ নিয়েছিলেন বাজপেয়ী…

রামের রাজ্যে নিজেকে 'রাবণ' নামে ডাকতে পছন্দ করেন চন্দ্রশেখর আজাদ। ২০১৭ সালে আজাদ শিরোনামে উঠে আসেন। তাঁর সংগঠন, ভীম আর্মিকে উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরে হিংসার জন্য দায়ী করা হয়। সেই বছরেরই মে মাসে, উচ্চবর্ণের দ্বারা দলিতদের বাড়িতে হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী ভীম আর্মি এবং অন্যান্য দলিত সংগঠনগুলি আর পুলিশের মধ্যে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ ওঠে, আজাদকে এই হিংসায় উস্কানি দিয়েছেন। কঠোর জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জেল খেটেছেন এই নেতা।

মুক্তি পাওয়ার পর দলিত রাজনীতিতে আরও আগ্রাসীভাবে ফেরন আজাদ। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের শেষের দিকে এবং ২০২০ সালের গোড়ার দিকে দেশব্যাপী বিক্ষোভের অন্যতম বিশিষ্ট মুখ হয়ে উঠে আসেন তিনি।

More Articles