আলোর উৎসবে শব্দদানবের তাণ্ডবে কাঁপল দীপাবলির কলকাতা

Decibel demon's data footprint on Diwali at Kolkata: রাত দশটার পর শব্দসীমা যেখানে ৪৫ ডেসিবেলের মধ্যে থাকা দরকার, বহুক্ষেত্রেই তা লঙ্ঘিত হয়েছে। এমনকী হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকাতেও ভাঙা হয়েছে নিয়ম।

দীপাবলি আলোর উৎসব। যে যেমন করে পারে, নিজের চৌহদ্দিকে আলোকময় করে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু আলোয় সাজানোর ফাঁকে কীভাবে যেন কালীপুজো বা দীপাবলির ঠিক পরের দু-একদিনের আকাশ-বাতাসকে আমরা ভরিয়ে তুলি নানাবিধ দূষণে। এ বছরের দীপাবলিও তার ব্যতিক্রম ছিল না।

দূষণের এই ভয়াবহ প্রকোপ যে কেবল দিল্লিতেই তা কিন্তু নয়। খোদ কলকাতার বুকেই বাতাসের গুণগতমান খুব একটা প্রশংসা করার মতো নয়। প্রতিবছরই দিওয়ালির পর সেই খারাপের মাত্রাটা চড়তে থাকে আরও কয়েক গুণ। একা বায়ুদূষণে রক্ষে নেই, শব্দাসুর দোসর। এ বছর আবার এ রাজ্যে শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা বেড়েছে। ফলে এ বারের কালীপুজো ও দিওয়ালি জুড়ে ভালোই খেল দেখিয়েছে আতসবাজি ও শব্দবাজির যুগলবন্দি।

আরও পড়ুন: অযোধ্যায় দীপাবলি উৎসবে প্রদীপের অবশিষ্ট তেল নিতে কাড়াকাড়ি, যোগীরাজ্যের ‘অচ্ছে দিন’ আসলে এই?

এ বছর সুপ্রিম কোর্টের তরফে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল বাজি পোড়ানোর। শুধু শীর্ষ আদালতই নয়, একই অবস্থান নিয়েছিল রাজ্য সরকারও। রাত দশটার পরে বাজি পোড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। কলকাতার সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের তরফে জানানো হয়েছে, এসব নির্দেশকে তুড়ি মেরে উড়িয়েই তিলোত্তমার বুকে রাত দশটার পরেও সব ধরনের বাজি ফেটেছে দেদার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাঝরাতেই দেদার শব্দবাজির প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে বলেই জানিয়েছে পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড।

বেশ কয়েকটি জায়গায় শব্দের মাত্রা রেকর্ড করেছিল তারা। তার ভিত্তিতেই একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, উত্তর কলকাতাক বাগবাজার এলাকায় সকাল সাড়ে ১২টা থেকেই শব্দবাজির দাপাদাপি লক্ষ্য করা গিয়েছে। সেখানে ওই ভরদুপুরে শব্দের মাত্রা ছিল ৮৮.৯ ডেসিবেলের কাছাকাছি। রাত দশটার সময় তা থমকে ছিল ৭৬-এ। ইএম বাইপাস সংলগ্ন দক্ষিণ কলকাতার পাটুলি এলাকায় কালীপুজোর দিন মধ্যরাতে শব্দের মাত্রা ছিল ৬৮.১ ডেসিবেল।

রাত দশটার পর শব্দসীমা যেখানে ৪৫ ডেসিবেলের মধ্যে থাকা দরকার, বহুক্ষেত্রেই তা লঙ্ঘিত হয়েছে। এমনকী হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকাতেও ভাঙা হয়েছে নিয়ম। হাসপাতাল এলাকাগুলিতে 'সাইলেন্ট জোন' হিসেবে ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল আগেই। যার অর্থ হাসপাতালের ১০০ মিটারের মধ্যে এলাকায় মাইক বাজানো বা বাজি ফাটানো একেবারে নিষিদ্ধ। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য় করা হয়েছে বহু জায়গাতেই। উত্তর কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় সন্ধে সাড়ে আটটা নাগাদ শব্দমাত্রা ছিল ৬১.২ ডেসিবস। রাত দশটার পরেও ছিল ৬২.৬ ডেসিবল। রাত যত বাড়ে, শব্দের মাত্রাও বাড়ে। মধ্যরাতে ছিল ৬৩.৩ ডেসিবল। এসএসকেএম হাসপাতাল এলাকাতেও শব্দমাত্রা ৫১.৪ থেকে ৫১.৫ ডেসিবেলের মধ্যে ছিল। অথচ হাসপাতাল চত্বরগুলিতে রাতে অনুমোদিত শব্দের মাত্রা বেঁধে দেওয়া ছিল ৪০ ডেসিবেলে।

 

দক্ষিণ কলকাতার টলিগঞ্জ ও কসবার মতো এলাকায় শব্দের মাত্রা ছিল কালীপুজোর সন্ধেয় ৮৪.৫ থেকে ৮২ ডেসিবেলের মধ্যে। রাত বাড়লেও সেই শব্দমাত্রার বিশেষ তারতম্য দেখা যায়নি। তারাতলা এলাকা অবশ্য ছিল এর মধ্যে ব্যতিক্রম। বিকেল থেকেই ওই এলাকা ছিল বেশ শান্ত। বিকেল থেকেই শব্দের মাত্রা ঘোরাফেরা করেছে ৪৮ ডেসিবেলের মধ্যে। দীপাবলির রাতে কলকাতার সর্বোচ্চ শব্দমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৯৮.৩ ডেসিবেল। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার, কলকাতার বেশিরভাগ স্টেশনেই সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ হয়েছে রাত ১টা থেকে ২টোর মধ্যে। কেন্দ্রীয় পরিবেশ দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, রাত দশটা থেকে এগোরোটার এই সময়টার চেয়ে বেশি বাজি ফেটেছে রাত একটার পরেই।

আরও পড়ুন:ধোঁয়াটে ক্রিক রো-র ঝলমলে জলসা! কলকাতা কাঁপাত মস্তান ভানু বোসের কালীপুজো

শব্দের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন বহু এলাকার মানুষই। এখনও পর্যন্ত দীপাবলির রাতে ৪০টি অভিযোগ জমা পড়েছে কলকাতার বুকে। বেশিরভাগ অভিযোগই রাত দশটার পরে উচ্চগ্রামে মাইক বাজানো ও বাজি পোড়ানো নিয়ে। তেমনটাই জানিয়েছেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড। গ্রিন প্ল্যাটফর্ম তথা সবুজ মঞ্চের কাছে কম করে হলেও ২০টি অভিযোগ জমা হয়েছে। রাত দশটার পরে শব্দের উৎপাত নিয়েই অভিযোগ মূলত। সবুজ মঞ্চের চেয়ারম্যান নব দত্ত জানান, শুধুমাত্র বাজি নয়, লাউড স্পিকার কালীপুজোর রাতের শব্দদানবের উৎপাতকে বাড়িয়ে তুলেছে আরও কয়েকগুণ। যা মোটেও কাঙ্ক্ষিত ছিল না আদপেই।

More Articles