মনে করাচ্ছে আমফান, ঠিক কোথায় কতটা তাণ্ডব চালালো মোকা?

Cyclone Mocha : ঠিক কোথায় কোথায় তাণ্ডব চালাল প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোকা? পরিস্থিতি এখন কেমন?

আবহবিদদের পূর্বাভাস ছিল বিপর্যস্ত হবে পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু অভিমুখ বদলে ঘূর্ণিঝড় মোকা অবশেষে শনিবার ল্যান্ডফল করল সাইক্লোন মোকা। রবিবার বেলা ১১ টা নাগাদ মোকার ল্যান্ডফল শুরু হয়। সাড়ে বারোটা নাগাদ বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আছড়ে পড়ে মোকা। প্রথম থেকেই ঘূর্ণিঝড়ের টার্গেট ছিল বাংলাদেশ সংলগ্ন অঞ্চল। যদিও উৎপন্ন হওয়ার পর বেশ কিছু বার অভিমুখ বদলেছে এই ঝড়। এদিন ল্যান্ডফলের সময় ঝড়ের গতিবেগ ছিল ১৮০-২১০ কিমি। এর ফলে বাংলাদেশ এবং মায়ানমারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ।

রবিবার বেলা ১১ টা নাগাদ প্রবল গতি নিয়ে মায়ানমারের সিতওয়া উপকূলে আছড়ে পড়ে সুপার সাইক্লোন ‘মোকা’। ঝড়ের দাপট বাড়তে থাকে।  ল্যান্ডফলের সময় মোকার সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২১০ কিলোমিটার। মায়ানমারের সামরিক তথ্য দফতরের তরফে জানানো হয়, ঝড়ে সিতওয়া, কিয়াউকপিউ ও গওয়া শহরে বাড়িঘর, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, মোবাইল ফোন টাওয়ার, নৌকা ও ল্যাম্পপোস্ট প্রভৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইয়াঙ্গুন থেকে প্রায় ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত কোকো দ্বীপপুঞ্জের ক্রীড়া ভবনগুলোর ছাদও ভেঙে পড়ে। সরকারি হিসেব বলছে, বাড়ির ছাদ ভেঙে মৃত্যুও হয়েছে ৪ জনের।

বাংলাদেশকেও ছাড় দেয়নি বিধ্বংসী মোকা। সবথেকে বেশি আঘাত হেনেছে কক্সবাজারের ওপর। আগে থেকে সতর্কবার্তা ছিল ঠিকই, তবুও শেষ মুহূর্তে ঝড়ের গতিবেগ এতটাই বেড়ে যায় যে পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যেতে থাকে। জানা যায়, জরুরি পরিস্থিতিতে কক্সবাজারে প্রায় ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়। কক্সবাজারের রাস্তাঘাট ছিল একেবারে জনশূন্য। বেশ কিছু ক্যামেরা ফুটেজে ধরা পড়েছে সেই দৃশ্য।  বাংলাদেশের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, মোকার জেরে সেইন্ট মার্টিন দ্বীপের মাঝরপাড়া, কোনারপাড়া, গলাচিপা, দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়ায় অন্তত ৩৪০টি ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছে।

আরও পড়ুন - গতি বেড়ে ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটার! ঠিক কোথায় কোথায় তাণ্ডব চালাবে মোকা?

এদিন টানা প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে ঝড়ের বিধ্বংসী ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া। বাংলাদেশ এবং মায়ানমার ছাড়াও মোকার প্রভাব কম হলেও পড়েছে সীমান্তের এপারেও। যদিও বিপরীতমুখী বেগ বা অ্যান্টিসাইক্লোনিক সার্কুলেশনের কারণে বিপদ থেকে বেঁচে যায় বাংলা। তবে মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, মণিপুর ও দক্ষিণ অসমের কিছু অংশে  ঝড়বৃষ্টি হয়। প্রবল ধ্বংসলীলার সম্মুখীন হতে না হলেও বিচ্ছিন্ন থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস মেনে বৃষ্টি হয়েছে এসব জায়গায়।বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের  আকাশ সকাল থেকেই ছিল পরিষ্কার। কেবল উপকূলের জেলাগুলিতে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে খবর।

বঙ্গোপসাগরে মে মাস মানেই ঘূর্ণিঝড়ের অশনি সংকেত। যশ, ইয়াশের পর এবার বিধ্বংসী মোকা। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ সামাল দিয়ে উঠতে ঠিক কতটা সময় লাগবে এখনও নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারেনি বাংলাদেশ এবং মায়ানমার সরকার। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি পড়েছে রোহিঙ্গারাও। একেই জীবন যথেষ্ট কঠিন ছিল তাদের, তার ওপর এমন প্রাকৃতিক আঘাত ঠিক কীভাবে সামলে উঠতে পারবে, এখন দেখার সেটাই। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মাধ্যমেও আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ এবং মায়ানমার সরকার। আজ সকালে ঝড় কাটিয়ে, নতুন সূর্য উঠেছে ঠিকই তবে গতকালের স্মৃতি এখনও ঘা হয়ে বিধছে সকলেরই।

More Articles