দুটি পদই দেওয়া হয় শেষ পাতে, জানেন আসলে কী তফাৎ ‘চাটনি’ এবং ‘অম্বল’-এর
Dessert item : বাঙালি বাড়িতে টক স্বাদের রয়েছে রকমফের। কেউ কেউ বলেন চাটনি, কেউ বলেন আচার আবার কোনও কোনও বাড়িতে ভাতের পাতে দেওয়া এই পদটিকে বলা হয় অম্বল। কিন্তু জানেন কেন এমন ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা হয় এই তিনটি পদকে?
মাছে ভাতে বাঙালির শেষ পাতে যেমন মিষ্টিমুখ জরুরি ঠিক তেমনই তার ঠিক আগেই পাতে একটু চাটনি না পড়লে খাওয়া দাওয়া যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ঘরোয়া খাওয়াদাওয়া থেকে শুরু করে নিমন্ত্রণ বাড়ির জমজমাট মেনু, সবেতেই চাটনির জায়গাটা বেশ পাকা। প্রথম পাতে তেতো আর শেষ পাতে টক, বাঙালির আহারের এই আদি অকৃত্রিম অভ্যাস আজও রয়ে গিয়েছে। তবে এই টক স্বাদের রয়েছে রকমফের। কেউ কেউ বলেন চাটনি, কেউ বলেন আচার আবার কোনও কোনও বাড়িতে ভাতের পাতে দেওয়া এই পদটিকে বলা হয় অম্বল। কিন্তু কেন এমন ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা হয় একে? জানেন কি স্বাদে কতটা তফাৎ হয় এই তিনটি পদের?
যদিও আচারের সঙ্গে বাকি দুটি পদের তফাৎ অনেকেই জানেন। আচার যে শুধু টক মিষ্টি স্বাদের হয় এমন নয়, ঝাল স্বাদের আচারও বাঙালি বাড়িতে বহুল প্রচলিত। মূলত বিহারী সংস্কৃতির হাত ধরে এই ঝাল আচার খাওয়ার রেওয়াজ বাংলায় ঢুকে পড়ে। আজকাল কোনও মেলায় গেলে প্রায়ই দেখা যায় আচারের স্টল। আম, আমড়া, তেঁতুল এসবের সঙ্গে সেখানে কাচের বয়ামে করে থরে থরে সাজানো থাকে লঙ্কা, রসুন অথবা এঁচোড়ের আচারও। অর্থাৎ আচার হল দীর্ঘদিন রেখে দেওয়া যায় এমন একটি পদ যা ভাতের পাতে নয়, বরং যে কোনও সময় ঘুরতে ফিরতে খাওয়ার চল দেখা যায়।
আরও পড়ুন - দু’হাজার বছরের পুরনো হলঘরে সাদা মোজাইক! ইতালির এই ইতিহাস জানলে অবাক হবেন আপনিও
কিন্তু চাটনি আর অম্বল এই দুটোই বাঙালি বাড়িতে ভাতের সঙ্গে শেষ পাতে পরিবেশন করা হয়। কেউ কেউ আবার অম্বল না বলে কেবল ‘টক’ শব্দটিও ব্যবহার করে থাকেন। বাঙালি বাড়িতে মাছের টক অথবা বড়ার টক খাওয়ার চলও অনেকদিনের। এই টকই হল আসলে অম্বল। আর চাটনি বলতে মূলত নিরামিষ পদকে বোঝায়। আম, তেঁতুল, আমড়া অথবা টমেটো ইত্যাদি দিয়ে তৈরি হয় চাটনি, যাতে টক স্বাদের তুলনায় মিষ্টির পাল্লাটাই থাকে ভারী। অন্যদিকে অম্বল বা টকের ক্ষেত্রে টক স্বাদের প্রভাব বেশি থাকে। অম্ল থেকেই এসেছে অম্বল শব্দটি। এছাড়াও আমিষ নিরামিষ নিয়েও রয়েছে তফাৎ। চাটনি কখনওই আমিষ পদ হিসেবে রান্না করা হয় না, কিন্তু অম্বল না টক যেহেতু মাছ দিয়েই করা হয় তাই সেটি কিছু ক্ষেত্রে আমিষ পদ হিসেবেও বিবেচ্য হয়।
অন্যদিকে, টক অথবা অম্বল হল বাঙালি বাড়ির নিজস্ব রান্না, কিন্তু চাটনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রাঁধা হয়। আরও একটি পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় এই দুটি পদের। ‘চাটনি’ শব্দ আসলে এসেছে চেটে খাওয়া যায় এমন, এই থেকে। অর্থাৎ চাটনি এমন পদ যা চেটে চেটে খেতে হয়। অপরদিকে অম্বল বা টকের ক্ষেত্রে সে বালাই নেই। জলের মতো চুমুক দিয়ে অথবা ভাতে মেখে খাওয়া যায়। অর্থাৎ সোজা ভাবে বলতে গেলে চাটনি সাধারণত তুলনামূলকভাবে জেলির মতো থকথকে হয়, সেখানে অম্বল বা টক হয় ঝোলের মতো পাতলা। তবে স্বাদ অথবা নামের পার্থক্যে বিশেষ কিছুই এসে যায় না বাঙালির, আসল বিষয়টি হল ভোজনের পরিতৃপ্তি। তাই শেষ পাতে পছন্দসই টক স্বাদ জিভে ঠেকিয়েই আসল সুখ।