এক টাকার পাঠশালা! দুর্নীতির রাজ্যে আলো দেখাচ্ছে অভিনব এই স্কুল

এক টাকা মাসোহারাতে ১৭ বছর ধরে চলছে ডিসেরগড়ের এই প্রাথমিক স্কুল। শুধুমাত্র গরিব পরিবারের বাচ্চাদের পঠনপাঠন করিয়ে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর উদ্দেশ্যে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই প্রাইমারি স্কুল।

এক টাকার পাঠশালা! করোনা মহামারীতে স্কুলছুট হওয়া পড়ুয়াদের কীভাবে ফের স্কুলমুখী করা যায়, এই চিন্তায় যখন জেরবার শিক্ষাবিদরা, অভিনব বিকল্পের সন্ধান দিল ডিসেরগড়। মহামারীর জেরে প্রায় প্রায় ২ বছর স্কুল বন্ধ থাকায় প্রায় ধসে গিয়েছে তথাকথিত ‘প্রান্তিক’ অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা। অনলাইন শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হাজারো পড়ুয়ার ক্ষেত্রে তাই স্কুলছুট হয়ে যাওয়াই ছিল ভবিতব্য। স্কুল খুললেও, সব স্বাভাবিক ছন্দে ফিরলেও এই বাচ্চাদের ফের স্কুলমুখী করাটা বড় চ্যালেঞ্জ। পিছিয়ে পড়া এই শিশুদের শিক্ষা যাতে না কোনওভাবেই না আটকায়, সে জন্যই শুরু হয় এই ‘এক টাকার পাঠশালা’। ডিসেরগড়ের পথেই হেঁটেছে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া।

আরও পড়ুন- সংস্কৃত থেকে রামায়ণ অনুবাদ করেছিলেন এই মুসলিম মহিলা! কেমন ছিলেন মুঘল যুগের প্রভাবশালী নারীরা?

এক টাকা মাসোহারাতে ১৭ বছর ধরে চলছে ডিসেরগড়ের এই প্রাথমিক স্কুল। পশ্চিম বর্ধমানের ডিসেরগড়ে শুধুমাত্র গরিব পরিবারের বাচ্চাদের পঠনপাঠন করিয়ে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর উদ্দেশ্যে ২০০৫ সালে কুলটি থানার ডিসেরগড়ের পীরস্থানের কাছে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই প্রাইমারি স্কুল। স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াসিম আখতার কুরেসি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিকাশ প্রসাদ জানান, এলাকায় প্রচুর দুঃস্থ পরিবারের বাস। এই পরিবারের বাচ্চারা ঠিকমতো বই, খাতা, পেন কিনতেও পারে না। তাই স্কুলই থেকে পড়ুয়াদের বিনামূল্যে বই-খাতা-কলম দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় পুজোর সময় জামাকাপড়ও দেওয়া হয়।

সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত এই বিশেষ স্কুলে পড়াবার পর ছাত্রছাত্রীদের অন্য স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় স্কুলেরই খরচায়। এক টাকা মাসিক বেতন নেওয়া হয় শুধুমাত্র পড়ুয়াদের অভিভাবকদের সন্তুষ্টির জন্য এবং আইনের কিছু নিয়মের কারণে।

আরও পড়ুন- সত্যিই রয়েছে রক্তচোষারা! গলায় কাস্তে বাঁধা মহিলা ‘ভ্যাম্পায়ারের’ কঙ্কাল ঘিরে ঘনাচ্ছে রহস্য

এই পথেই হেঁটে হাবড়ার এক নম্বর ব্লকের কুমড়া গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার টুনিঘাটায় বছর তিনেক আগে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে প্রথম শুরু হয় ‘এক টাকার পাঠশালা’। এই পাঠশালায় বেশির ভাগ শিশুই ছিল পাড়ুই সম্প্রদায়ের মানুষ, যাঁদের পরিবারের মূল রোজগারের ক্ষেত্র মাছ ধরা। পরিবারের সঙ্গে এই শিশুরাও মাছ ধরতে বেরিয়ে পড়ত স্থানীয় বিলে। পাশাপাশি অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেও চলত দিন। এই ছেলেমেয়েদের স্কুলমুখী করতে ১৮ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে শুরু হয় এই বিশেষ পাঠশালার। বর্তমানে পাঠশালায় ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা ৭৬। পড়ানোর জন্য এগিয়ে এসেছেন এলাকারই কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষিকা। শিশুদের মায়েদেরকেও সাক্ষর করে তোলার চেষ্টা চলছে। পড়াশোনা ফাঁকে সাধ্যমতো জামা কাপড়, ব্যাগ, টিফিন দেওয়ার পাশাপাশি আবৃত্তি, তবলা, নাচ, গান, ছবি আঁকাও শেখানো হয় এক টাকার এই পাঠশালায়।

More Articles