রক্ত নয়, শসা-গাজর খেতেন বাস্তবের 'ড্রাকুলা'?

Vegan Dracula Vlad the Impaler: মূল সাহিত্যে ড্রাকুলা চরিত্রটির নেপথ্যে রয়েছে ভ্লাদ দ্য ইম্পেলার।

ভ্যাম্পায়ার কি সত্যিই আছে? রক্তচোষা ড্রাকুলা! মানুষের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে আরেকদল মানুষ বা প্রাণী? রোদে বাঁচে না, রাত্তির হলেই বেরিয়ে পড়ে রক্তের সন্ধানে! ড্রাকুলা চরিত্রটি নিয়ে সাহিত্য, সিনেমা বিস্তর। ড্রাকুলা, অন্ধকারের রাজপুত্র, মৃতের ঈশ্বর! এই রহস্যময় চরিত্রটি মূলত ১৮৯৭ সালে আইরিশ লেখক ব্রাম স্টোকারের কল্পনা থেকে জেগে ওঠে সাহিত্যে। তবে মূল সাহিত্যে ড্রাকুলা চরিত্রটির নেপথ্যে রয়েছে ভ্লাদ দ্য ইম্পেলার। ইম্পেলার নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে ভালো লোক ছিলেন না মোটেও। মানে, গুচ্ছ দাতব্য কাজকর্ম করলে তো আর কাউকে 'দ্য ইম্পেলার' বলা ডাকা হবে না। তার নেপথ্যে থেকে যায় রক্ত ঝরানো সব ঘটনা। কিন্তু নতুন এক গবেষণা বলছে, ব্রাম স্টোকারের রক্তচোষা ড্রাকুলা চরিত্রটি ভ্লাদ দ্য ইম্পেলারের থেকে তৈরি হলেও ড্রাকুলা আদতে ছিল নিরামিষাশী!

ভ্লাদ দ্য ইম্পেলার আসলে কে? ১৫ শতকের রাজপুত্র তৃতীয় ভ্লাদ, রোমানিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে বাস করতেন। ভ্লাদ ছিলেন ওয়ালাচিয়ার শাসক। চরম অত্যাচারী এবং চরম হিংস্র! শত্রুদের বিরুদ্ধে তাঁর আক্রমণ আর অত্যাচারের মাত্রা জানলে গা গুলিয়ে উঠতে বাধ্য। অনুমান করা হয়, জীবদ্দশায় অন্তত ৮০,০০০ লোক মেরেছেন তিনি। এদের মধ্যে বেশিরভাগকেই মারতেন শূলে গেঁথে। কাহিনি বলে, এতটাই নৃশংস ছিলেন ভ্লাদ যে এই মানুষদের হত্যা করার সময়, শূলে চাপিয়ে যখন তারা যন্ত্রণায় চিৎকার করতে করতে মারা যাচ্ছে, তখন তাঁদের মাঝে বসেই তারিয়ে তারিয়ে খাবার খেতেন ভ্লাদ। কী খেতেন? পেয়ালা ভর্তি রক্ত? মাংস?

আরও পড়ুন- এটিই পৃথিবীর দীর্ঘতম মল! দৈর্ঘ্য-প্রস্থ জেনে হাঁ গবেষকরাও!

১৪৫৭ এবং ১৪৭৫ সালে ভ্লাদের লেখা তিনটি চিঠির রাসায়নিক বিশ্লেষণ করা হয়। সেই বিশ্লেষণ অনুসারে, ভ্লাদের এই ভয়ঙ্কর ভোজসভার জন্য কিন্তু কোনও প্রাণীদের হত্যা করা হয়নি। চিঠিগুলি ভ্লাদ লিখেছিলেন সিবিউ শহরের শাসক, টমাস আলটেমবার্গারকে। চিঠিতে কর সংগ্রহের মতো বিষয়পত্র নিয়েই মূলত আলোচনা করা হয়েছিল। ইথিলিন-ভিনাইল অ্যাসিটেট ব্যবহার করে ওই চিঠির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। এই পদ্ধতিতে প্রাচীন নথির কোনও ক্ষতি বা দূষণ হয় না।

চিঠি থেকে প্রোটিন অণুর হাজার হাজার টুকরো বের করা হয়েছিল। ৫০০ বছরেরও বেশি বয়স সেই প্রোটিনগুলির। গবেষকরা লিখেছেন, প্রায় ৫০০ টি পেপটাইড চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ১০০টি পেপটাইড অবশ্যই মানুষের। পেপটাইড হচ্ছে মূলত অ্যামাইনো অ্যাসিডের একটি চেন। পেপটাইডগুলি রক্তের প্রোটিনের সঙ্গে সম্পর্কিত বা শ্বাসযন্ত্রের সঙ্গে জড়িত প্রোটিন থেকে এসেছে। ওই সমস্ত নথিতে এই পেপটাইডের উপস্থিতি ছিল একেবারে নিশ্চিত। গবেষকরা ওই চিঠিগুলি খতিয়ে বিশ্লেষণ করে সিলিওপ্যাথিতে জড়িত প্রোটিনের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু পেপটাইড খুঁজে পান। সিলিওপ্যাথি একটি জেনেটিক রোগ। রেটিনার রোগ এবং প্রদাহজনক প্রক্রিয়ার লক্ষণও খুঁজে পাওয়া গিয়েছে ওই নথিতে।

আরও পড়ুন- স্তনবৃন্ত, কাটা জিভ দিয়ে বেল্ট, চেয়ার তৈরি- রাতের ঘুম কেড়েছে বীভৎসতম এই সিরিয়াল কিলাররা

গবেষকরা বলছেন, প্রোটিওমিক্স ডেটাকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা করে বিবেচনা করা যায় না। তবে এই চিঠি থেকে পাওয়া নমুনা বলছে, রক্ত না খেলেও রক্তের কান্না কেঁদেছেন ভ্লাদ ড্রাকুলা! অর্থাৎ ভ্লাদ হেমোলাক্রিয়ায় ভুগছিলেন। মজার বিষয় হচ্ছে, এই চিঠিগুলি বিশ্লেষণ করার সময় গবেষকরা দেখেন প্রাণিজ প্রোটিনের চিহ্নমাত্র নেই। এসিএস অ্যানালিটিক্যাল কেমিস্ট্রি জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণার গবেষক গ্লেব জিলবারস্টেইন টাইমসকে জানিয়েছেন, নমুনাগুলিতে শুধু উদ্ভিজ্জ প্রোটিনই মিলেছে। হয়তো, ভ্যাম্পায়ার ভেগান ছিলেন!

এত হিংস্র মানুষ, এত নৃশংস মানুষ শেষে কিনা নিরামিষাশী? গবেষকদের মতে, সেই সময়ে মাংস খুবই কম ছিল। হয়তো পছন্দসই মাংসের অভাব বা নিজের খারাপ স্বাস্থ্যের কারণেই মাংস থেকে দূরে ছিলেন ভ্লাদ। গবেষকরা আরও বলছেন, ভ্লাদের সময়কালে ইউরোপ ছিল অত্যন্ত শীতল। খাবারের প্রাচুর্য ছিল না সেখানে। এমনকী ইউরোপের অভিজাতদের মধ্যেও সেই সময়ে মাংস খাওয়া ছিল বেশ বিরল। সুতরাং ড্রাকুলা রক্তচোষা হলেও, বাস্তবের ড্রাকুলা বড়জোর গাজর, শসা, শাকপাতা খেয়েই উদরপূর্তি করতেন, বলাই যায়।

More Articles