শোনেননি বাবার বারণ, কথা দিয়েছিলেন 'ফিরে আসব', নেপাল দুর্ঘটনায় মৃত বিমানসেবিকার পরিবারে হাহাকার
Nepal Plane Crash Airhostess Oshin Ale Magar : সমস্ত পৃথিবীটাই তাঁর কাছে অন্ধকার। আর আসবে না মেয়ে, আর আনন্দ উদযাপনে অংশ নেবে না।
চারিদিকে ছড়িয়ে আছে ধ্বংসস্তূপ। জামা, ব্যাগ, বিমানের ভাঙা টুকরো। ঝলসে গিয়েছে আশেপাশের ঘাস, লতাপাতা। সেদিকেই তাকিয়ে পাথর হয়ে বসেছিলেন মোহন আলে মাগার। তাঁর পরিচয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসার। বিমানের ভাঙা টুকরোগুলোর দিকে তাকিয়েই রয়েছেন অনেকক্ষণ ধরে। বারবার বলছেন, বারণ করেছিলাম ওকে। বারবার বারণ করেছিলাম। বলেছিলাম, এখন যাস না। পরিবারের সঙ্গে একটু থাক। কিন্তু কথা শুনল না। থেকে থেকেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠছেন মোহন মাগার। খানিক আগেই তাঁর মেয়ের দেহ শনাক্ত করে এসেছেন তিনি। ওশিন আলে মাগার, নেপালের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় যিনি ছাই হয়ে গিয়েছেন। আর উৎসবে, অনুষ্ঠানে বাড়ি ফিরবেন না তিনি।
নেপালের চিৎওয়ান জেলার বাসিন্দা এই মাগার পরিবার। সেখান থেকেই বড় হয়ে ওঠা ওশিনের। বাবাকে দেখেছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কাজ করতে। তিনিও কিছু একটা করবেন, নিজের পায়ে দাঁড়াবেন এমনটাই স্বপ্ন ছিল। নেপালের অক্সফোর্ড কলেজে পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষার জন্য ওশিন চলে যান ভারতে। তারপর নেপালে ফিরে এসে কাঠমান্ডুর সাহারা এয়ার হোস্টেস অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন। তখন মনের মধ্যে বিমানসেবিকা হওয়ার ইচ্ছে তৈরি হয়ে গিয়েছে। তারপর বিগত দুই বছর ধরে ইয়েতি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ওশিন আলে মাগার।
আরও পড়ুন : ১৬ বছরের ব্যবধান, স্বামীর মতোই শেষ পরিণতি! নিয়তিই মিলিয়ে দিল নেপালের বিমান দুর্ঘটনার পাইলটকে
মকর সংক্রান্তি কেবল ভারতে নয়, নেপালেও পালন করা হয়। নেপালে অবশ্য এর নাম মাঘে সংক্রান্তি। কাজের সূত্রে কাঠমান্ডুতেই থাকেন ওশিন। দু’বছর আগেই তাঁর বিয়ে হয়েছে। কর্মসূত্রে ওশিনের স্বামী থাকেন বিলেতে। বেশ কয়েক মাস আগে মা বাবাকে নিজের কাঠমান্ডুর বাড়িতে নিয়ে আসেন ওশিন। ১৫ জানুয়ারি, রবিবার গোটা এলাকার মতো মাগার পরিবারেও মাঘে সংক্রান্তি উদযাপন হবে। সেই সময়ই তৈরি হয়ে কাজে বেরনোর প্রস্তুতি নেন। উৎসবের এমন শুভ মুহূর্তে কাজে যেতেই হবে? বাবা মোহন আলে মাগার বারণ করেন মেয়েকে। একটা দিন অন্তত পরিবারের সঙ্গে কাটাও! বারবার বারণ করেছিলেন মোহন মাগার।
কিন্তু মেয়ে ওশিন কথা শোনেননি। কাজে যে যেতেই হবে! তবে বাবার হাত ধরে কথা দিয়েছিলেন, মাত্র দুটি ফ্লাইটে থাকবেন তিনি। ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে ডিউটি শেষ করার পর রাতেই ফিরে আসবেন বাড়ি। ওশিন কথা দিয়েছিলেন, রাতে ফিরেই মাঘে সংক্রান্তির উদযাপনে অংশ নেবেন। পরিবার, মা-বাবা, ভাই বোনদের সঙ্গে থাকবেন।
আরও পড়ুন : বিমান টুকরো টুকরো হয়ে ৬৮ জনের মৃত্যু! কেন বারবার দুর্ঘটনার মাশুল গুনছেন নেপালের আম জনতা?
কিন্তু সেই কথা আর পূরণ হল না। ওইদিন সকালেই পোখরায় ভেঙে পড়ে ইয়েতি এয়ারলাইন্সের বিমান। ৬৮ জনের মৃত্যুর খবর এখনও অবধি পাওয়া গিয়েছে। সেই দলেই আছেন ওশিন আলে মাগার। মেয়ের দেহ শনাক্ত করেন মোহন মাগার। তখন থেকেই পাথর হয়ে আছেন তিনি। মাঘে সংক্রান্তির প্রস্তুতির সময়ই ভেসে আসে দুর্ঘটনা সংবাদ। তারপর থেকে সমস্ত পৃথিবীটাই তাঁর কাছে অন্ধকার। আর আসবে না মেয়ে, আর আনন্দ উদযাপনে অংশ নেবে না। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদেই চলেছেন মোহন মাগার।