ফের চিতা মৃত্যুর ঘটনা কুনোয়, অসুস্থতা নাকি অন্য কিছু, কেন অকালে মারা যেতে হল স্ত্রী চিতাটিকে?

Cheetah died: কুনোয় মৃত্যু স্ত্রী চিতার, প্রজননের সময় বাজেভাবে জখম হয় সে, কিন্তু কেন? ঠিক কী ঘটেছিল সেদিন?

চিতা বাঘ। পশুদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগামী। একটা সময় ভারতের অভয়ারণ্যে ছিল এদের অবাধ বিচরণ। যদিও সময়ের সঙ্গে বদল আসে পরিস্থিতিতে। ক্রমেই নেই হয়ে যাওয়া পশুদের তালিকায় জায়গা করে চিতারা। ভারতে চিতা বিলুপ্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয় বেশ কিছু বছর আগে থেকেই। ২০০৯ সালে প্রথম আফ্রিকান চিতা আনার পরিকল্পনা করা হয় যদিও তার বাস্তবায়নে প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে যায়। অতঃপর ২০২১ সালে নভেম্বর মাসে চিতা আনার পরিকল্পনা করা হলেও করোনা মহামারীর কারণে আবারও পিছিয়ে যায় কাজ। অবশেষে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হয় এই প্রক্রিয়া। আবারও ভারতে চিতাদের চরাচর নিয়ে আশাবাদী দেশের বন বিভাগ।

মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে বেশ কিছু সংখ্যায় চিতা আনা হয় মধ্যপ্রদেশের কুনো ন্যাশনাল পার্কে। এর আগে নামিবিয়া থেকে আটটি চিতা আনা হয়েছিল এখানে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সেই তালিকায় জুড়তে যায় আরও এক ডজন চিতা। ভারতীয় বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চিতাদের কুনো ন্যাশনাল পার্কে নিয়ে আসা হয়। এখানেই শেষ নয় আগামী পাঁচ বছরে বিভিন্ন ধাপে মোট পঞ্চাশটি চিতাবাঘ নামিবিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এ দেশে নিয়ে আসা হবে বলে জানানো হয়েছে ইতিমধ্যেই। একটা সময় এদেশেও চিতাদের সংখ্যা নেহাৎ কম ছিল না। পরবর্তীতে জলবায়ু পরিবর্তন এবং আরও বেশ কিছু কারণের জেরে আজ প্রায় সত্তর বছর হল বিলুপ্তির তালিকায় এরা। এখন দেশের হাতে গোনা কয়েকটি চিড়িয়াখানার খাঁচা ছাড়া আর দেখা যেত না চিতাকে। তাই এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতেই আবারও নতুন করে এ দেশকে চিতাদের বাসযোগ্য করে তোলার সফর শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন - ক্যান্সারের গন্ধ কেমন? মানুষের ক্যান্সার শুঁকে বলে দিতে পারে এই প্রাণীরা!

চিতাদের এদেশে নিয়ে আসার পর থেকে শিরোনামে থেকেছে তারা। তাদের পরিচর্যা থেকে শুরু করে জীবনযাপন সব নিয়ে আলোচনা চলেছে। এদিকে মাস ঘুরতে না ঘুরতেই প্রকাশ্যে আসে, কুনো ন্যাশনাল পার্কে জোড়া চিতা মৃত্যুর খবর। এত আড়ম্বর করে যে চিতা পুনর্বাসন প্রকল্পের আয়োজন করা হল, তাহলে তার মধ্যেই কোনও খাদ্য রয়ে গেল, কেন মাস ঘুরতে ঘুরতে মারা যেতে হল দুটি চিতাকে? এইসব প্রশ্নের উত্তর অবশ্য মধ্যপ্রদেশের কুনো পালপুর অরণ্যে আফ্রিকা থেকে আনা ২০টি চিতার মধ্যে ২টির মৃত্যুকে ‘স্বাভাবিক ঘটনা’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল সে দেশের ‘বন, মৎস্য ও পরিবেশ দফতরের’ রিপোর্টে।

ওই রিপোর্টে জানানো হয়, উন্মুক্ত প্রকৃতিতে মাংসাশী প্রাণীদের পুনর্স্থাপনের ক্ষেত্রে এই মৃত্যুর হার একেবারেই প্রত্যাশিত। গত ২৭ মার্চ কুনোয় প্রথম মৃত্যু হয়েছিল নামিবিয়া থেকে আনা ৫ বছরের স্ত্রী চিতা শাসার। এরপর ২৪ এপ্রিল মারা যায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা পুরুষ চিতা উদয়। মধ্যপ্রদেশ বনবিভাগের চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, কিডনিতে সংক্রমণের কারণে শাসার মৃত্যু হয়েছে। অন্য দিকে উদয়ের মৃত্যুর কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, ‘কার্ডিয়ো পালমোনারি ফেলিওর’-কে।

কিন্তু এই দুই মৃত্যুর পর সম্প্রতি ফের একটি চিতা মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। আবারও কী কারণে মারা গেল একটি চিতা সেই নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে উঠে আসে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এবার আর অসুস্থতা আসল কারণ নয়, সঙ্গমের সময় সংঘর্ষে মারা যায় চিতাটি। প্রসঙ্গত, এই নিয়ে তৃতীয় চিতা মারা গেল কুনো ন্যাশনাল পার্কে।

আরও পড়ুন - বিলুপ্তির ৭০ বছর পর ফের ভারতের মাটিতে এক ডজন চিতা, ভারসাম্য রক্ষায় যে পদক্ষেপ করল ভারত

সম্প্রতি মারা যাওয়া চিতাটির নাম দাক্ষা। এটি একটি মহিলা চিতাবাঘ। জানা যায়, পূর্ণবয়স্ক একট8 চিতার সঙ্গে সঙ্গমের সময় আরও একটি পুরুষ চিতার সংঘর্ষ বাঁধে। এ যেন এক্কেবারে ত্রিকোণ প্রেমের গল্প। দুই পুরুষ চিতা বায়ু ও অগ্নির মধ্যে সংঘর্ষ হয় এবং তার জেরেই জখম হয় দাক্ষা। ন্যাশনাল পার্কের আধিকারিকদের তরফে জানানো হয় গত মঙ্গলবার সকালে পার্কের মধ্যে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে পাওয়া যায় দাক্ষাকে। সঙ্গে সঙ্গেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হলেও বাঁচানো যায় না মহিলা চিতাটিকে। অতঃপর দুপুর বারোটা নাগাদ মারা যায় দাক্ষা।

কুনো জাতীয় উদ্যানে কার্যত চিতাদের গ্যাংওয়ার হয় মঙ্গলবার। মধ্য প্রদেশের চিফ কনজারভেটর জে এস চৌহান জানান, পুরুষ চিতার হিংস্রতাই মৃত্যুর আসল কারণ। অন্যদিকে বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের একাংশেরও দাবি, চিতাদের মধ্যে নাকি সঙ্গমের সময় এমন হিংস্র প্রবণতা আগেও বেশ কয়েকবার লক্ষ্য করা গেছে। তাই এটি নতুন কিছুই নয়। তবে এ নিয়ে আগামীতে আরও সতর্ক থাকতে হবে বনবিভাগকে।

More Articles