বাড়িতে বিড়াল আছে? গবেষণা বলছে, এই ভয়াবহ মানসিক রোগের শিকার হতে পারেন আপনি...

Pet Cat and Psychosis: নতুন গবেষণার লেখকরা শৈশবে বাড়িতে বিড়াল ছিল এমন ২,২০৬ জন প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।

বাড়িতে পোষা বেড়াল রয়েছে? মানসিক শান্তি পাবেন নিশ্চয়ই তবে মানসিক রোগেও পড়বেন অচিরেই! পোষা বিড়ালের সঙ্গে একই পরিবারে বেড়ে ওঠার ফলে পরবর্তী জীবনে জটিল মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে, তবে শুধুমাত্র পুরুষদের। নতুন এক সমীক্ষা অনুসারে, মানসিক এই অসুস্থতা হতে পারে টক্সোপ্লাজমোসিস গন্ডি নামক একটি সাধারণ পরজীবীর কারণে। বিড়ালের মলত্যাগের সংস্পর্শে আসা মানুষের মধ্যে এই সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

T. gondii পরজীবী এবং সাইকোসিসের মধ্যে যোগাযোগ নিয়ে বিগত বেশ কয়েক দশক ধরেই নানা বিতর্ক চলেছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এই পরজীবী দ্বারা সংক্রামিত ব্যক্তিদের মধ্যে স্কিজোফ্রেনিয়ার প্রকোপ বেড়েছে গেছে, অনেকেই অবশ্য এই ধরনের কোনও যোগসূত্র পাননি। কখনও কখনও রান্না না করা মাংস বা দূষিত পানীয় জলে এই পরজীবীর উপস্থিতি মেলে। এই পরজীবি সমস্ত গরম রক্তযুক্ত প্রাণীকেই সংক্রামিত করতে পারে এবং মানুষের মধ্যে এটি খুবই প্রচলিত।

আরও পড়ুন- কেন কুকুরের মতো বন্ধুত্বপূর্ণ নয় বেড়াল? কতটা রহস্যময় এই প্রাণী

বেশিরভাগ সংক্রামিত ব্যক্তিই কোনও উপসর্গ টের পান না, এমনকী জানেনও না যে তাদের দেহে পরজীবি ঢুকে রয়েছে। কিছু মানুষের জ্বর বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দেয়, যা মাঝারি থেকে গুরুতর জটিলতা তৈরি করতে পারে। গবেষণায় আরও দেখানো হয়েছে যে, বিড়াল আছে এমন পরিবারে বেড়ে ওঠা শিশুদেরও প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

সাইকিয়াট্রিক রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত নতুন গবেষণার লেখকরা শৈশবে বাড়িতে বিড়াল ছিল এমন ২,২০৬ জন প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। বিড়ালদের সঙ্গে সম্পর্ক এবং এই ব্যক্তিদের মানসিক স্বাস্থ্যের ইতিহাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন গবেষকরা। এই ব্যক্তিদের সাইকোসিসের অন্যান্য ঝুঁকি সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যেমন মাথায় আঘাত, ধূমপান এবং শৈশবে কতবার বাড়ি বদল হয়েছে ইত্যাদি।

শৈশবে বিড়ালের সঙ্গে কাটানো বড় বয়সে বৃহত্তর সাইকোসিসের ঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত ছিল, তবে নির্দিষ্ট কিছু কারণ ঘটে থাকলে তবেই। এমন পুরুষদের মধ্যে সাইকোসিসের ঝুঁকি দেখা গিয়েছে যাদের বাইরের বিড়াল ছিল পোষ্য। কিন্তু অবাক বিষয় হচ্ছে, মহিলা বা প্রাপ্তবয়স্করা, যারা বেশি বয়সে ঘরের বিড়ালকে পোষ্য করেছেন তাদের ক্ষেত্রে এমন কিছুই ঘটেনি।

গবেষকরা T. gondii অ্যান্টিবডির জন্য অংশগ্রহণকারীদের রক্ত বিশ্লেষণ করেননি, যার অর্থ তাঁরা নিশ্চিত হতে পারছেন না যে এই ঝুঁকিটি আদৌ পরজীবীর সঙ্গেই যুক্ত কিনা। তবে গবেষণার ফল বলছে, বিড়ালদের দেহে শুধুমাত্র সংক্রামিত ইঁদুর শিকারের মাধ্যমেই এই পরজীবিটি আসতে পারে। এই ধরনের শিকার স্পষ্টতই ঘরের বিড়ালদের তুলনায় বাইরের বিড়ালরা বেশি করে।

আরও পড়ুন- স্বপ্নে রেওয়াজ করে পাখিরা! জানেন, ঘুমিয়ে কী কী স্বপ্ন দেখে প্রাণীরা?

গবেষকরা আরও উল্লেখ করেছেন, শুধুমাত্র বিড়াল পুষলেই মনোরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে এমন না। যাদের মাথায় কখনও আঘাত লেগেছে, শৈশবে একাধিকবার বাড়ি বদল করতে হয়েছে এবং ইঁদুর শিকার করে এমন বিড়ালকে পোষ মানিয়েছে তাদের মধ্যে সাইকোটিক পর্বের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কেন যে শুধুমাত্র পুরুষরাই আক্রান্ত হন তার কোনও প্রমাণ মেলেনি। T. gondii যে মানসিক রোগের সঙ্গে যুক্ত করে এমন কোনও নিউরোবায়োলজিক্যাল মেকানিজমের প্রমাণও মেলেনি।

পূর্ববর্তী গবেষণায় বলা হয়েছিল, এই পরজীবিটি মাইক্রোগ্লিয়া নামক এক ধরনের মস্তিষ্কের কোশে সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং স্নায়বিক সংযোগের গঠনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এই প্রক্রিয়ারেই সম্ভব T. gondii মনকে প্রভাবিত করে। বিড়াল পোষা এবং সাইকোসিসের মধ্যে বিতর্ক তাই রয়েই যায়। T. gondii এর ঝুঁকি কমাতে অবশ্যই বিড়ালের লিটার ট্রে পরিষ্কার করার পরে হাত ভালোভাবে ধুয়ে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমানো উচিত।

More Articles