মশার কামড় প্রতি আট আনা! যেভাবে ম্যালেরিয়ার উৎস খুঁজেছিলেন রোনাল্ড রস
Malaria Ronald Ross: নিজের ঘরের দেওয়ালে একটি অন্য ধরনের মশা দেখতে পান তিনি। এই মশাগুলি বেঙ্গালুরুতে দেখা মশার থেকে একেবারেই আলাদা ছিল
এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আমরা জানি ম্যালেরিয়া কেন হয়, কীভাবে ছড়ায়। কিন্তু আজ থেকে প্রায় দেড় শতক আগে, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এই ম্যালেরিয়া মহামারী আকার ধারণ করেছিল ভারতবর্ষে। ম্যালেরিয়ার ওষুধ তো দূর অস্ত; ম্যালেরিয়া কীভাবে ছড়ায়, সেটাই তখনও আবিষ্কার হয়নি। অজানা জ্বরেই উজাড় হয়ে যেত গ্রামের পর গ্রাম, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পরত অসংখ্য মানুষ। এসবের মাঝে সেই সময়, ভারতের বুকে বসেই এক চিকিৎসক আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন এই ম্যালেরিয়ার উৎস খোঁজার। বারবার নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন এবং প্রতিবারই অসফল হন। একাধিকবার বিফল হওয়ার পর হতাশায় যখন গবেষণা ছেড়ে দেবেন ঠিক করেছেন, তখন মিলল সমাধান সূত্র।
১৮৯৫ সালের শেষ দিকে মাদ্রাজে পা রাখেন এই ব্রিটিশ চিকিৎসক। বর্তমানে যেরকম আইএএস, তখনকার দিনে খানিক সেই রকমই একটি চাকরি ছিল আইএমএস বা ইন্ডিয়ান মেডিকেল সার্ভিস। ইন্ডিয়ান মেডিকেল সার্ভিসের দৌলতেই মাদ্রাজে পোস্টিং হয়ে আসেন এই ডাক্তার। মাদ্রাজের আর্দ্র আবহাওয়া মশার জন্য আদর্শ। মশাবাহিত রোগের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল মাদ্রাজ। সেই সময় কোনও ডাক্তারই চাইতেন না মাদ্রাজে চাকরি করতে। যথারীতি, কয়েক বছর পর সেই ডাক্তারের কাছেও আসে বদলির সুযোগ। তাঁর বদলি নির্ধারিত হয় রাজপুতানায় (আজকের রাজস্থান)। শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে রাজস্থানে মশার উপদ্রব তেমন নেই। সাধারণ মানুষ হলে স্বাভাবিকভাবেই মাদ্রাজ ছেড়ে রাজস্থানের মতো তুলনামূলক নিরাপদ জায়গায় যেতে চাইতেন। তবে এই ব্যক্তি ছিলেন একটু আলাদা। আইএমএসের তরফে বদলির নির্দেশ আসতেই বেঁকে বসেন তিনি। মাদ্রাজ কিছুতেই ছাড়বেন না। শেষপর্যন্ত আইএমএস রাজি না হওয়ায় চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। নেপথ্যে তাঁর মশা প্রেম এবং গবেষণা। কয়েক বছর পর মশা নিয়ে নিজের গবেষণার কারণেই নোবেল পান তিনি। তিনি রোনাল্ড রস।
আরও পড়ুন- হুহু করে বাড়ছে ডেঙ্গি ম্যালেরিয়া, কী ভাবে সতর্ক হবেন?
১৮৫৭ সালের ১৬ মে, ভারতের আলমোড়া শহরে জন্ম হয় রোনাল্ড রসের। তাঁর বাবা ব্রিটিশ সেনার উচ্চপদে কর্মরত ছিলেন। মাত্র ৮ বছর বয়সে তাঁকে পড়াশোনার জন্য লন্ডন পাঠিয়ে দেওয়া হয়। লন্ডনে নিজের প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করে, ট্রপিকাল মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন রোনাল্ড রস। এরপর ১৮৮১ সালে আইএমএস পরীক্ষা পাশ করে ডাক্তার হয়ে ভারতে ফিরে আসেন তিনি। প্রথমে বর্মা এবং তারপর আন্দামানে পোস্টিংয়ের পর, ১৮৮৩ সালে বেঙ্গালুরুতে পোস্টিং হয় তাঁর। বেঙ্গালুরুতে পোস্টিং হওয়ার পর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় লক্ষ্য করেন রস। বেঙ্গালুরুতে তিনি যে বাড়িটিতে থাকতেন সেখানে মশার উপদ্রব ছিল প্রচণ্ড। সেই এলাকার অন্যান্য বাড়িগুলির থেকে উপদ্রব একটু বেশিই ছিল। কারণ খুঁজতে গিয়ে রস একদিন দেখেন, তাঁর ঘরের জানালার নিচে একটি টবের মধ্যে জল জমে রয়েছে। সেই জলের মধ্যে তিনি মশার লার্ভা লক্ষ্য করেন। সেই টবের জমা জল ফেলে দিতেই কয়েক দিনের মধ্যে মশার উপদ্রব একেবারেই কমে যায়। রোনাল্ড রস বুঝতে পারেন, জমা জলেই মশা বংশবিস্তার করে। তিনি তৎক্ষণাৎ এই ঘটনার কথা নিজের ঊর্ধ্বতনদের জানান। তবে তাঁরা রসের কথায় বিশেষ আমল দেননি।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে লাভ হচ্ছে না দেখে রোনাল্ড রস যোগাযোগ করেন প্যাট্রিক ম্যানসনের সঙ্গে। এই প্যাট্রিক ম্যানসনকে 'ট্রপিকাল মেডিসিনের জনক' বলা হয়। রসের সব কথা শুনে ম্যানসন তাঁকে মশাবাহিত রোগের উপর গবেষণা করার পরামর্শ দেন। ভারতের আবহাওয়া মশা এবং মশাবাহিত রোগের উপর গবেষণা করার জন্য সর্বোত্তম। এই সময় বেঙ্গালুরুর মিলিটারি হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন রোনাল্ড রস। সেখানে রস দেখতে পান, অনেক রোগীই কোনও এক অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। রোনাল্ড রস সন্দেহ করেন যে এটি ম্যালেরিয়া। কিন্তু ম্যালেরিয়া কেন এবং কীভাবে ছড়ায়, এই প্রশ্নের উত্তর অধরাই ছিল এখনও। অতঃপর বেঙ্গালুরুর সেই মিলিটারি হাসপাতাল থেকেই শুরু হয় ম্যালেরিয়া নিয়ে রোনাল্ড রসের গবেষণা।
বেশ কয়েক বছর প্রাথমিক গবেষণা করার পর ম্যালেরিয়া নিয়ে নিজের প্রথম হাইপোথিসিস প্রকাশিত করেন রোনাল্ড রস। সেই হাইপোথিসিসে রস জানান, ম্যালেরিয়া আসলে মলের মাধ্যমে ছড়ায়। মলের সংক্রমণের কারণে এই রোগটি ছড়ায়। রসের এই হাইপোথিসিস প্রকাশ করার কয়েক সপ্তাহ পর, ফ্রেঞ্চ চিকিৎসক চার্লস আলফানসো লেভরেনও ম্যালেরিয়া নিয়ে নিজের গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এই গবেষণাপত্রে লেভরেন দাবি করেন, ম্যালেরিয়া মল দিয়ে ছড়ায় না বরং মাটিতে বসবাসকারী এক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। লেভরেনের গবেষণাপত্র পড়ে কয়েকজন ম্যালেরিয়া রোগীর রক্ত পরীক্ষা করেন রোনাল্ড রস। কিন্তু সেখানে কোনও পরজীবী বা ব্যাকটেরিয়া খুঁজে পাননি তিনি। অর্থাৎ লেভরেনের গবেষণাপত্রটি সঠিক নয়। এরপর নিজের গবেষণার খুঁটিনাটি সব জানিয়ে প্যাট্রিক ম্যানসনকে সবিস্তারে একটি চিঠি লেখেন রস। প্রত্যুত্তরে প্যাট্রিক ম্যানসন নিজস্ব একটি থিয়োরি জানিয়ে চিঠি লেখেন রসকে।
রোনাল্ড রসকে মশাবাহিত রোগের উপর গবেষণা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন ম্যানসনই। প্যাট্রিক ম্যানসন একপ্রকার নিশ্চিত ছিলেন যে, ম্যালেরিয়ার নেপথ্য কারণ মশা। এই ধারণার উপর ভিত্তি করে রসকে একটি থিয়োরি দেন ম্যানসন। মশা রোগটি কীভাবে ছড়ায়, তা নির্ধারণ করাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ম্যানসন নিজের চিঠিতে লেখেন, ম্যালেরিয়ার জীবাণু আসলে মশার মাধ্যমেই ছড়ায়। মশা কোনও ম্যালেরিয়ার রোগীকে কামড়ালে সেই জীবাণু মশার মধ্যে চলে আসে। পরবর্তীকালে মশা ডিম পাড়লে, জলের মাধ্যমে সেই ডিম যদি মানুষের পেটে যায় তাহলে ম্যালেরিয়া হতে পারে। ম্যানসনের এই চিঠি পড়ে সম্পূর্ণ নতুন দিক খুলে যায় রসের সামনে। নিজের গবেষণার কাজ নতুনভাবে শুরু করেন তিনি। রোনাল্ড রসের কাছে প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল মিলিটারি হাসপাতালের সকল ম্যালেরিয়া রোগীকে মশার কামড় খাওয়ানো। বাধ্য হয়ে কামড় প্রতি আট আনা দিয়ে রোগীদের রাজি করান রোনাল্ড রস। প্রায় কুড়িজনকে মশার কামড় খাইয়ে সেই মশাগুলিকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন রস। পরীক্ষা করে তিনি জানতে পারেন সত্যিই মশাগুলির দেহে ম্যালেরিয়ার জীবাণু প্রবেশ করেছে। এরপর মশাগুলিকে জলের বোতলে ঢুকিয়ে কয়েকদিন রেখে সেই জল চারজনকে খেতে দেন। প্রত্যেকেই জলটি খান এবং সম্পূর্ণ সুস্থ থাকেন। কারও দেহেই ম্যালেরিয়ার কোনও লক্ষণ দেখতে না পেয়ে রস বুঝতে পারেন যে ম্যানসনের থিয়োরিটিও সম্পূর্ণ সঠিক নয়।
আরও কয়েকদিন গবেষণা চালানোর পর ম্যালেরিয়া নিয়ে আরেকটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন রোনাল্ড রস। তিনি মনে করতেন, মশা লালারসের মাধ্যমে ম্যালেরিয়া ছড়ায়। এই ধারণা আদৌ সঠিক কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য সেই পুরনো নীতিতে ফিরে গেলেন রস। মশার কামড় খাও এবং আট আনা নাও- নীতি। এবার ম্যালেরিয়া রোগীকে কামড়ানোর পর সাধারণ সুস্থ মানুষকেও সেই মশার কামড় খাওয়ালেন রস। কিন্তু এবারও বিফল হলেন। মশার কামড় খেলেও কারও মধ্যেই কোনও পরিবর্তন এল না কিংবা ম্যালেরিয়ার কোনও লক্ষণ দেখা গেল না। রক্ত পরীক্ষাতেও ম্যালেরিয়ার জীবাণু ধরা পড়ল না। আসলে রসের দোষ না। তিনি নিজের পরীক্ষার জন্য কিউলেক্স প্রজাতির মশা বেছেছিলেন। এই ধরনের মশার কোনও রোগ বহন ক্ষমতা থাকে না সাধারণত।
এরপর নিজের গবেষণার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে গবেষণা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন রোনাল্ড রস। কিন্তু অপেক্ষা করেছিল অন্য এক রাস্তা! ১৮৯৫ সালের শেষ দিকে বেঙ্গালুরু থেকে মাদ্রাজে বদলি হয়ে যান রস। সেখানে নিজের ঘরের দেওয়ালে একটি অন্য ধরনের মশা দেখতে পান তিনি। এই মশাগুলি বেঙ্গালুরুতে দেখা মশার থেকে একেবারেই আলাদা ছিল। এই মশাগুলি নিজেদের ডানা নিচু করে রাখত। এছাড়াও এদের গায়ের রঙ এবং ডানার আকৃতি সামান্য আলাদা ছিল সাধারণ মশার থেকে। অন্য ধরনের মশা দেখেই রসের মনে আশার সঞ্চার হয়। স্থানীয় এক ম্যালেরিয়া রোগীকে তিনি এই নতুন প্রজাতির মশার কামড় খাওয়ান। মশার রক্ত পরীক্ষা করে দেখেন সেখানে ম্যালেরিয়ার জীবাণু রয়েছে। এরপর এক সুস্থ ব্যক্তিকে আট আনা দিয়ে ওই মশার কামড় খাওয়ান রস। এবার সেই ব্যক্তির রক্ত পরীক্ষা করতেই কেল্লাফতে! মশার কামড় খাওয়ার পর অসুস্থ না হলেও খুব সামান্য পরিমাণে ম্যালেরিয়ার জীবাণু পাওয়া যায় ওই ব্যক্তির রক্তে। মাদ্রাজে রস যে মশাগুলি দেখেছিলেন, সেগুলো আসলে ছিল অ্যানোফিলিস প্রজাতির মশা। এই মশাগুলির রোগবহন ক্ষমতা রয়েছে। এরপর রোনাল্ড রস এই একই পরীক্ষা আরও কয়েকজন স্থানীয় মানুষের উপর করেন। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই পরিণাম এক। প্রায় দেড় দশক ধরে চালিয়ে আসা গবেষণার ফল অবশেষে হাতেনাতে পান রোনাল্ড রস।
আরও পড়ুন- নারীশ্রমের মূল্য নিয়ে অমূল্য কাজ! নোবেল-অর্থনীতি মঞ্চের কুর্নিশ সেই ক্লদিয়া গোল্ডিনকে
১৮৯৭ সালের অগাস্ট মাসে নিজের গবেষণা নিয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন লিখে জনপ্রিয় বিজ্ঞান পত্রিকা নেচারে পাঠিয়ে দেন রোনাল্ডো রস। সেই প্রতিবেদন নেচারে প্রকাশিত হলে বৈজ্ঞানিক এবং চিকিৎসক জগতে খ্যাতি পান রোনাল্ড রস। কিন্তু কয়েক মাস পরেই বিনা মেঘে বজ্রপাত! মাদ্রাজ থেকে বদলি করে তাঁকে রাজপুতানা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রথমে ইস্তফার হুমকি দিলেও, কাজ না হওয়ায় একপ্রকার নিমরাজি হয়েই রাজপুতানা চলে যান তিনি। এখানে থাকার সময় তিনি আবিষ্কার করেন, ম্যালেরিয়া শুধু মানুষদেরই নয় পশু-পাখিরও হয়। সবার প্রথম তিনি একটি পায়রার উপর এই পরীক্ষাটি করেন এবং সফল হন। ফের তিনি সবিস্তারে একটি প্রতিবেদন লিখে নেচার পত্রিকায় পাঠিয়ে দেন। এসবের মাঝেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের রোষের মুখে পড়েন রোনাল্ড রস। ১৮৯৮ সালের জুলাই মাসে আইএমএস থেকে রসকে কড়া বার্তা দিয়ে জানানো হয় ম্যালেরিয়া নিয়ে গবেষণা বন্ধ করতে। নচেৎ কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় কর্তৃপক্ষের তরফে। তবে কোনও 'কড়া ব্যবস্থা'-র অপেক্ষা না করেই নিজের ইস্তফা পত্র আইএমএসে পাঠিয়ে দেন রোনাল্ড রস। সেই ইস্তফা পত্রে রস লিখেছিলেন,
"এটা আপনাদের দুর্ভাগ্য যে আপনাদের এই সম্মানীয় সংস্থায় যারা শীর্ষ পদে রয়েছেন তারা কেউই কাজ জানেন না। উপরন্তু যারা কাজ করতে চাইছেন তাদের উপর ছড়ি ঘোরান। সেহেতু আমার পক্ষে আর এই চাকরি করা সম্ভব নয়।"
একইসঙ্গে এক স্থানীয় সংবাদপত্রে তিনি জানান, “কলম্বাসকে আমেরিকা পৌঁছনোর ঠিক আগের মুহূর্তে যদি সুমেরু পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাঁর যে অবস্থা হবে, আমার অবস্থাও সেরকমই।”
১৮৯৮ সালের অগাস্ট মাসে, পাকাপাকিভাবে ভারতের পাঠ চুকিয়ে লন্ডন ফিরে যান রোনাল্ড রস। তবে নিজের গবেষণা থামিয়ে রাখেননি। বেশ কিছু বিত্তবান ব্যবসায়ীর আর্থিক সাহায্যে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত গবেষণার কাজ চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। এমনকী লন্ডন ফিরে ম্যালেরিয়া সংক্রান্ত সচেতনতা গড়তে বিশেষ মস্কিউটো স্কোয়াড (Mosquito Squad) তৈরি করেন রোনাল্ড রস। এই স্কোয়াড তৈরির পর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে ম্যালেরিয়া নির্মূল করতে উদ্যোগী হন তিনি। ১৯০২ সালে সুয়েজ খাল নির্মাণের সময় কয়েক হাজার কর্মী ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হন। খবর পেয়ে রোনাল্ড রস সেখানে যান এবং সাফাই অভিযান শুরু করেন। যেখানে যা জমা জল ছিল সব ফেলে দিয়ে যাবতীয় চিকিৎসা শুরু করেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে মাত্র তিন বছরের মধ্যেই ম্যালেরিয়া শূন্য হয়ে যায় শ্রমিকদের সেই ক্যাম্প। পরবর্তীকালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্স, স্পেন, গ্রিস, পানামা প্রভৃতি দেশ ঘুরে ঘুরে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা করতে সাহায্য করেছিলেন তিনি। ম্যালেরিয়া কীভাবে ছড়ায়, এই পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য ১৯০২ সালে নোবেল পুরস্কার পান রোনাল্ড রস। ১৯৩২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন এই কালজয়ী চিকিৎসক।