মানুষের মতো গোনা অসম্ভব! কীভাবে গভীর জঙ্গলে গোনা হয় বাঘের সংখ্যা?

50 Years of Project Tiger : ১৯৭৩ সালে যখন বিষয়টা প্রথম শুরু হয়, বনকর্মীরা বাঘের পায়ের ছাপ শনাক্ত করতে কাঁচ এবং মাখনের কাগজ ব্যবহার করতেন।

ভারতে এই মুহূর্তে ঠিক কতগুলি বাঘ আছে? জানা যাবে রবিবার অর্থাৎ ৯ এপ্রিল। দেশে বাঘের সংখ্যার নতুন এক গণনা পাওয়া যাবে কারণ এই রবিবারই দেশের ব্যাঘ্র প্রকল্পের ৫০ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতে বাঘের সংখ্যার সর্বশেষ পরিসংখ্যান প্রকাশ করবেন। ভারতে অর্ধ-শতাব্দী ব্যাপী এই সংরক্ষণ অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে দেশে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে। জঙ্গলের বাস্তুতন্ত্রের শীর্ষে রয়েছে শিকারী বাঘ। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বাঘের ভূমিকা যে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, বলার অপেক্ষা রাখে না। ভারতে বাঘের বংশ বিলুপ্তির মুখে পড়ায়, তাদের সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৭৩ সালে দেশে প্রজেক্ট টাইগার শুরু হয়। গত ৫০ বছরে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৮ সালের শেষ ব্যাঘ্রশুমারি অনুযায়ী ভারতে ২,৪৬১টি বাঘ ছিল। কিন্তু বাঘ তো আর মানুষ নয় যে বাড়ি গিয়ে গিয়ে খাতায় কলমে সংসার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে। বাঘের সংখ্যা জিজ্ঞসা করতে গিয়ে মানুষের সংখ্যাই কমে যেতে পারে। তাহলে কীভাবে বাঘের সংখ্যা গণনা করা হয়?

কীভাবে বাঘ গণনা করা হয়?

বাঘের সংখ্যা গোনা মোটেও সহজ প্রক্রিয়া নয়। ১৯৭৩ সালে যখন বিষয়টা প্রথম শুরু হয়, বনকর্মীরা বাঘের পায়ের ছাপ শনাক্ত করতে কাঁচ এবং মাখনের কাগজ ব্যবহার করতেন। প্রতিটি বাঘের পায়ের ছাপ আলাদা। খানিকটা মানুষের আঙুলের ছাপের মতো। সুতরাং এই পায়ের ছাপই বাঘ গোনার সহজতম উপায়। রেঞ্জাররা পায়ের চিহ্নগুলির ছাপ এঁকে নেন বাটার পেপারের উপর এবং ভবিষ্যতে সেই নির্দিষ্ট বাঘটিকে ট্র্যাক করার জন্য ওই ছাপটিরই ব্যবহার করা হয়। তবে বিষয়টা এতও সহজ নয়। একটি বাঘ যখন দাঁড়িয়ে থাকে, বিশ্রাম নেয় বা দৌড়য় তখন পায়ের ছাপগুলি আলাদা আলাদা হয় ফলে তা এই গণনা প্রক্রিয়ায় অসঙ্গতির সৃষ্টি করে।

আরও পড়ুন- তিন বছরে সর্বোচ্চ, মাত্র দু’মাসেই মৃত ২৬! ভারতের মাটিতে ফের সংকটে ‘বাঘমামা’র অস্তিত্ব?

দীর্ঘকাল ধরে চেষ্টা চালিয়ে এখন বাঘ গোনার বিষয়টি একটি পরিসংখ্যান পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে। বনকর্মীরা ক্যাপচার-মার্ক-অ্যান্ড-রিক্যাপচার পদ্ধতির দিকে ঝুঁকেছেন, যা মূলত একটি নমুনার ভিত্তিতে জনসংখ্যা অনুমান করতে ব্যবহৃত হয়।

নর্দার্ন অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটির মতে, এই ক্যাপচার-মার্ক-অ্যান্ড-রিক্যাপচার পদ্ধতিটি হচ্ছে, অল্প সংখ্যক বাঘকে ধরে তাদের উপর একটি সামান্য চিহ্ন স্থাপন করে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে আবার বাঘের অন্য একটি ছোট গোষ্ঠীকে ধরে কতজনের দেহে চিহ্ন মিলছে তা রেকর্ড করা হয়৷ ছোট জনসংখ্যায়, চিহ্নিত করা বাঘেদের পুনরুদ্ধার করার সম্ভাবনা বেশি। বৃহৎ জনসংখ্যায় এই সম্ভাবনা অত্যন্ত কম৷

ক্যামেরার ফাঁদের মাধ্যমে গণনা

টাইগার রিজার্ভ এবং জাতীয় উদ্যানগুলিতে ওই এলাকার দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ জুড়ে বাঘের ছবি তুলে বাঘের জনসংখ্যা অনুমান করতে ক্যামেরা ট্র্যাপ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে প্রতি বাঘের ছবি তোলা হয় যাতে তাদের গায়ের ডোরাকাটা দাগ দেখে তাদের শনাক্ত করা যায়। পায়ের ছাপের মতোই, বাঘের শরীরে ডোরাকাটা দাগটিও ভিন্ন ভিন্ন হয়। বাঘের সঠিক সংখ্যা জানতে শিকার, আবাসস্থল এবং নৃতাত্ত্বিক বিষয়গুলির পাশপাশিই বাঘের ছবি তুলে সংখ্যা গণনা করা হয়।

আরও পড়ুন- প্রথমবার মহিলাদের খেলা, বাঘকে চুমু! গ্রেট বেঙ্গল সার্কাসের নেপথ্যে ছিলেন এই বাঙালিই

ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটির মতে, ক্যামেরা ট্র্যাপগুলি এমন জায়গায় স্থাপন করা হয় যেখানে বাঘ প্রায়ই দেখা যায়, যেমন পশুর চলাচলের পথ, নালা, নদীর ধার এবং গাড়ির রাস্তা। পরিবেশের মধ্যে মিশিয়ে আর বাঘের থেকে লুকিয়ে রাখার জন্য ক্যামেরাগুলি বাঘের হাঁটুর উচ্চতায় স্থাপন করা হয়। ক্যামেরা ফাঁদ সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় স্থাপন করা হয়, বাঘের ঠিক দু'পাশে।

ব্যাঘ্র গণনার জন্য ভারতকে পাঁচটি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে - গাঙ্গেয় সমভূমি, মধ্য ভারত এবং পূর্ব ঘাট, পশ্চিম ঘাট, উত্তর পূর্ব পাহাড় এবং ব্রহ্মপুত্র প্লাবন সমভূমি এবং সুন্দরবন। ২০১৮ সালের গণনার সময়, ১৪১ টি জায়গায় ২৬,৮৩৮টি ক্যামেরা ট্র্যাপ সহ মোট ৩৮১,৪০০ বর্গ কিমি এলাকা সমীক্ষা করা হয়েছিল। বাঘের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি কারণ ক্যামেরা ফাঁদগুলি শুধুমাত্র সংরক্ষিত এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে। বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই তারা জাতীয় উদ্যানের সীমা ছাড়িয়ে বেরিয়ে আসে যেখানে ক্যামেরা বসানো নেই।

 

More Articles