তিন বছরে সর্বোচ্চ, মাত্র দু'মাসেই মৃত ২৬! ভারতের মাটিতে ফের সংকটে 'বাঘমামা'র অস্তিত্ব?

Tiger Death India : এই কয়েক দিনেই গোটা দেশে ২৬টি বাঘ মারা গিয়েছে! যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই পরিসংখ্যানেই প্রমাদ গুনছেন পরিবেশবিদরা।

চিড়িয়াখানা হোক বা সুন্দরবন – ঘুরতে গেলে আট থেকে আশির আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু থাকে একজনই। গুপি-বাঘার ভাষায় ‘তিনি’ হলেন বাঘমামা। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। হলুদ শরীরের ওপর কালো ডোরাকাটা দাগ, ওই চোখের দিকে তাকালেই যেন হাড়হিম হয়ে যায়। ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারির শেষে দাঁড়িয়ে ফের একবার হাড়হিম হওয়ার জোগাড় গোটা ভারতের। নতুন বছরের সবে দুটো মাস কেটেছে। এই কয়েক দিনেই গোটা দেশে ২৬টি বাঘ মারা গিয়েছে! যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর এই পরিসংখ্যানেই প্রমাদ গুনছে পরিবেশবিদরা।

এমনিতেই ভারতে বাঘের সংখ্যা কমতির দিকে। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে বাঁচানোর জন্য বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন উদ্যোগও নেওয়া হয়। সরকারি ও বেসরকারি – দুই তরফের প্রচেষ্টায় বাঘের সংখ্যা বাড়তেও শুরু করে। চোরাশিকার যাতে না হয়, সেদিকেও কড়া নজরদারি শুরু হয়। কিন্তু বাঘের মৃত্যুর হার নিয়ে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান সেই উদ্যোগে ফের একবার দাগ ফেলে দিল। কপালে ভাঁজ বাড়ল প্রশাসনের।

আরও পড়ুন : বদ্ধ বাথরুমে চিতাবাঘের সামনে বেকায়দায় কুকুর, তারপর? যে ঘটনায় বিস্মিত সোশ্যাল মিডিয়া

ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি বা NTCA-র সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, ২০২৩-র জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারি – এই দুই মাসেই ২৬টি বাঘ মারা গিয়েছে। যার মধ্যে সবথেকে বেশি সংখ্যক বাঘ মারা গিয়েছে মধ্যপ্রদেশে (৯টি)। এছাড়াও মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, কর্ণাটক, উত্তরাখণ্ড, আসাম ও কেরালায়ও বাঘের দেহ পাওয়া গিয়েছে। NTCA বলছে, গত তিন বছরের পরিসংখ্যানের মধ্যে সর্বোচ্চ বাঘ মারা গিয়েছে এবছর। এই সময়ের হিসেবে ২০২১-এ ২০টি ও ২০২২-এ ১৬টি বাঘ মারা গিয়েছিল। অর্থাৎ এক কথায়, এই মৃত্যুর সংখ্যা একটু হলেও কমছিল। জন্মহারও বাড়ছিল। ২০২৩-এ এসে সেই সংখ্যাটা ফের বেড়ে যাওয়ায় চিন্তায় বিজ্ঞানীরা।

বাঘের মৃত্যুর হার যে একটু হলেও কমছিল, সেটা সামগ্রিক ছবি দেখলেও স্পষ্ট। ২০২১ সালে যেখানে মোট ১২৭টি বাঘ মারা গিয়েছিল, সেখানে ২০২২-এ সেই সংখ্যাটি দাঁড়ায় ১১৬-তে। এই বছর সেই সংখ্যা আরও কমার আশা করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু ২০২৩-র প্রথম দু’মাসের পরিসংখ্যানে চিন্তা যে বাড়ল, তা বলাই যায়।

কিন্তু এই মৃত্যুর কারণ কী? NTCA-র বক্তব্য, স্বাভাবিক কারণে, অর্থাৎ রোগ কিংবা বয়সজনিত কারণে বেশকিছু বাঘের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু আরও দুটি কারণকেও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। প্রথমটি চোরাশিকার। পুলিশের নজর এড়িয়ে, গোপনে এখনও চোরাশিকার হওয়ার সন্দেহ করছে NTCA। দ্বিতীয়ত, জায়গা দখলের লড়াই। জঙ্গলের একটি নির্দিষ্ট এলাকার দখল কে নেবে, এটা নিয়ে বাঘেদের লড়াই চলতে থাকে। শুধু বাঘ কেন, যে কোনও জন্তুরই অন্যতম চরিত্র এটা। দখল নেওয়ার জন্য পরস্পরকে আক্রমণও করা হয়। এই লড়াইয়ের সময়ই বেশকিছু বাঘ গুরুতরভাবে আহত হয়ে যায়। পরে সেই জখমের জন্যই বাঘটি মারা যায়।

আরও পড়ুন : গঙ্গাসাগরে ঢুকে পড়ল জোড়া বাঘ, হাত মেলানোর পাশাপাশি সেলফির বন্যা, ব্যাপারটা কী?

আরও একটি কারণের দিকে আঙুল তুলেছে NTCA। সেটি হল আমাদের ক্রমবর্ধমান নগর সভ্যতা। শুধু নগর কেন, গ্রাম, মফস্বলের এলাকাও ক্রমশ বিস্তারলাভ করছে। ভারতের জনসংখ্যা বাড়ায় সেই কোপ এসে পড়ছে জঙ্গলে। ফলে বন্য জন্তুর স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হচ্ছে। খাবারের সন্ধানে মাঝেমধ্যেই লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে বাঘ। সেখান থেকেই মানুষ আর বাঘের ‘যুদ্ধ’। ফলাফল? কখনও মানুষের মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে, কখনও বাঘের। কখনও বাঘকে আক্রমণ করা, কখনও খাবারে বিষ মিশিয়ে দেওয়া – এখনও ‘ট্র্যাডিশন চলিতেছে’। আপাতত এই ব্যাপারটিকে কমানোই অন্যতম উদ্যোগ প্রশাসনের।

More Articles