শীতে ভোর ৪ টে থেকে ৬ টার মধ্যেই ঘটে বেশিরভাগ হার্ট অ্যাটাক! কীভাবে আটকাবেন?

Winter Heart Attacks: প্রচণ্ড ঠান্ডায় যেহেতু খুব একটা তেষ্টা পায় না তাই অনেকেই পর্যাপ্ত জল খান না এবং নিজেকে সঠিক মাত্রায় হাইড্রেট করেন না।

শৈত্য প্রবাহে কাবু দেশের অনেক অংশই, বিশেষ করে উত্তর ভারত। শুধু তো অস্বাভাবিক শৈত্যপ্রবাহ নয়, শীত ডেকে আনছে মৃত্যুও! শুধুমাত্র উত্তর প্রদেশের কানপুরেই হার্ট এবং ব্রেন স্ট্রোকে ৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। কানপুরের লক্ষ্মীপত সিংহানিয়া ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওলজি অ্যান্ড কার্ডিয়াক সার্জারির তথ্য বলছে, গত সপ্তাহে ৭২৩ জন হৃদরোগী হাসপাতালের জরুরি এবং বহির্বিভাগে এসেছিলেন। শীতে প্রতিবারই বেড়ে যায় হার্ট অ্যাটাক এবং কোল্ড স্ট্রোক। কোনও রকম আভাস ছাড়াই বন্ধ হয়ে যেতে পারে হৃদস্পন্দন, হঠাৎ।

সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট আসলে কী?

হঠাৎ হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক সিস্টেমের ত্রুটি ঘটলে এবং বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ঘটে। এতে হৃৎপিণ্ড বিপজ্জনকভাবে দ্রুত স্পন্দিত হতে থাকে যার ফলে শরীরের ভেন্ট্রিকলগুলি কাঁপতে পারে। এই ঘটনাটিকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ভেন্ট্রিকুলার ফাইব্রিলেশন। যখন এমনটা ঘটে তখন হার্ট পর্যাপ্ত অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পাম্প করতে পারে না। ফলে শরীরের বাকি অংশে রক্ত পৌঁছয় না। লক্ষণ দেখা দেওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুও ঘটতে পারে ওই ব্যক্তির।

শীতের সকালে হার্ট অ্যাটাক কেন ঘটে?

১। সার্কাডিয়ান ছন্দ: শরীরের সার্কাডিয়ান ছন্দে সমস্যা হতে পারে। এই নাম খটমটো হলেও আসলে ব্যাপারটা হলো যাকে আমরা সাধারণত আমাদের অভ্যন্তরীণ বডি ক্লক বলে থাকি। এটি আমাদের জেগে থাকা এবং ক্লান্তির সময় নিয়ন্ত্রণ করে। এটি সারা দিন ধরেই ওঠানামা করে। যদি শরীরের মধ্যে কিছু রাসায়নিক পদার্থ বেড়ে যায় তাহলে তার সাপেক্ষে এই ছন্দও ওঠানামা করে। যখন সার্কাডিয়ান ছন্দে সমস্যা হয়, তখন এই রাসায়নিকগুলির ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। গবেষকরা বলছেন, সকাল ৬.৩০ টার দিকে সার্কাডিয়ান সিস্টেম রক্তে PAI-1 কোশ বাড়ায়। এই কোশ রক্তের জমাট বাঁধা বন্ধ করে দেয়। রক্তে PAI-1 কোশ যত বেশি, রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি ততই বেশি যা হার্ট অ্যাটাকের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এটি সাধারণত ভোর ৪টে থেকে ৬ টার মধ্যেই ঘটে।

আরও পড়ুন- এই কনকনে শীতে প্রাণ কাড়ছে কোল্ড স্ট্রোক! কোন উপসর্গগুলি দেখলেই সতর্ক হবেন?

২। উচ্চ রক্তচাপ: শরীরের মূল অংশগুলিকে উষ্ণ রাখতে এবং হৃদপিণ্ডকে আরও রক্ত পাম্প করতে উত্তেজিত করতে রক্তনালীগুলি সংকুচিত হয়, যা রক্তচাপ বাড়ায়। যদি আপনার শরীর একটি নির্দিষ্ট রক্তচাপের পরিসরে অভ্যস্ত হয়, তবে বাহ্যিক উদ্দীপনায় সাড়া দিতে গিয়ে এটি অদ্ভুতভাবে ওঠানামা শুরু করে, ফলে সামঞ্জস্য নষ্ট হয়। তাই, যদি প্রতি মিনিটে আপনার হৃদস্পন্দন বা পালস রেট ওঠানামা করতে থাকে তাহলে ঠান্ডা আবহাওয়ায় বাইরে যাবেন না কোনওভাবেই। বাড়ির ভিতরে থাকুন এবং আরামদায়ক পশমের কাপড় পরুন।

৩। বায়ু দূষণ: বায়ুর মানের সূচক বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ৪৫০-এর বেশি মানেই শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় স্বাভাবিক বায়ু প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কণাগুলিই শ্বাসের মাধ্যমে আপনার দেহে ঢুকে যাচ্ছে। এটি রক্ত জমাট বাঁধিয়ে ফেলে। দূষক পদার্থ শরীরের টিস্যুতে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং প্লেটলেটগুলিও প্রদাহের সঙ্গে জুড়ে যায়, যার ফলে শ্বাসকষ্ট হয় এবং রক্ত জমাট বাঁধে।

৪। জল কম খাওয়া: অনেকেই বুঝতে পারেন না, কিন্তু প্রচণ্ড ঠান্ডায় যেহেতু খুব একটা তেষ্টা পায় না তাই অনেকেই পর্যাপ্ত জল খান না এবং নিজেকে সঠিক মাত্রায় হাইড্রেট করেন না। এর ফলে ডিহাইড্রেশনের গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়, রক্তের পরিমাণ কম হয়, রক্ত আঠালো হয়ে যায় এবং জমাট বাঁধার আশঙ্কা দেখা দেয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খান, কখনই অতিরিক্ত খাবেন না কারণ কম তাপমাত্রায় ঘামের অভাব মানেই ফুসফুসে অতিরিক্ত তরল জমা হতে পারে যা কার্ডিও-ভাস্কুলার সিস্টেমে চাপ ফেলতে পারে।

৫। সূর্যালোকের অভাব এবং ভিটামিন ডি হ্রাস: সূর্যালোকের অনুপস্থিতিতে আমাদের দেহ ভিটামিন ডি সংশ্লেষণ করতে পারে না। একটা পর্যায়ের পরে হৃদপিণ্ডে স্কার টিস্যু তৈরিতে বাধা পড়ে।

আরও পড়ুন- নাক ডাকিয়ে ঘুম মানেই সুখনিদ্রা নয়! মৃত্যুকে রোজ রাতে ডেকে আনছে আপনার ছোট্ট ভুলই

কীভাবে ঠেকাবেন হার্ট অ্যাটাক?

১। সপ্তাহে অন্তত একবার আপনার রক্তচাপ পরীক্ষা করান। সম্ভব হলে ২৪-ঘণ্টার বিভিন্ন সময় নিজের রক্তচাপের মাত্রা দেখতে পারেন৷

২। শীতে বাইরে যাওয়ার সময় সঠিক পোশাক পরুন।

৩। ঘরের বাইরে ব্যায়ামের বদলে বাড়ির ভিতরে ব্যায়াম করুন শীতে। ট্রেডমিল এবং যোগব্যায়াম করতে পারেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই তা করুন। বয়স্কদের ক্ষেত্রে ট্রেডমিলের তুলনায় স্ট্যাটিক সাইকেল চালানোই ভাল কার্ডিও-ভাস্কুলার ব্যায়াম। এতে হাঁটুতে কম চাপ পড়ে। সাইকেল চালালে হৃদরোগের হারও কমতে পারে।

৪। শীতকালীন চেক-আপ গ্রীষ্মকালের চেয়েও বেশি জরুরি, তাই কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ মেনে চলুন।

 

More Articles