সুইগি, জোমাটো কর্মীদের জন্য সুখবর! বঞ্চনা ঘোচাতে দেশকে দিশা দেখাল রাজস্থান
Social Security to Gig Workers: এমন বিল সম্ভবত বিশ্বে প্রথম। এর আগে পৃথিবীর কোনও দেশ, কোনও রাজ্য এমন বিল আনতে পেরেছে বলে মনে হয় না। এই বিল আনার পথে এগোনোর আগে বেশ কয়েকটি সমীক্ষা চালিয়েছে রাজস্থান সরকার।
পৃথিবীতে মানুষ যত বাড়ছে, তত কমছে শ্রমের দাম। একদিকে যত রাষ্ট্র সমস্ত কিছুকে বেসরকারি হাতে তুলে দিচ্ছে, ততই কমছে স্থায়ী জীবিকার অভাব। বেশিরভাগ বেসরকারি সংস্থাই জোর দিচ্ছে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে। যেসব কাজ মূলত শারীরিক শ্রমনির্ভর, সে সব ক্ষেত্রেই অস্থায়ী শ্রমিকের উপরই বেশি মাত্রায় নির্ভর করছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে।
করোনাকালীন সময় থেকে আমাদের অ্যাপনির্ভরতা বেড়েছে অনেক বেশি। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অ্যাপ পরিষেবাও। বেড়েছে কাজের সংখ্যা। কিন্তু জানলে অবাক হবেন, এই সব অ্যাপভিত্তিক পরিষেবার ক্ষেত্রে যাঁরা আমাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিভিন্ন জিনিসপত্র পৌঁছে দেন আমাদের দরজায়, তাঁরা প্রায় সকলেই চুক্তিভিত্তিক কর্মী। জোমাটো, সুইগি, আমাজন, ফ্লিপকার্ট, বিগবাস্কেট, ব্লিঙ্ক ইট বা ওলা, উবেরের মতো ক্যাব পরিষেবায় যারা কাজ করেন, তাঁরা বেশিরভাগই চুক্তিভিত্তিক এবং অস্থায়ী। অর্থাৎ কোনও স্থায়ী আয় বা চাকরির নিশ্চয়তা নেই তাঁদের।
আরও পড়ুন: ১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিককে পিষে মেরেছিল ট্রেন, রুটির টুকরোরা আজও জ্যান্ত
এই সব অসংরক্ষিত শ্রমিকদের জন্যই এবার সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভাবছে রাজস্থান সরকার। ইতিমধ্যেই তাঁদের সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি বিলও পাশ হয়েছে রাজস্থানের বিধানসভায়। সবচেয়ে মজার কথা, কোনও রকম বিতর্ক ছাড়াই রাজস্থান বিধানসভায় পাশ হল রাজস্থান প্ল্যাটফর্ম ভিত্তিক গিগ ওয়ার্কারস (রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার) বিল ২০২৩। যা কার্যত রেকর্ড।
সমস্ত গিগ ওয়ার্কারস অর্থাৎ অস্থায়ী চাকুরিজীবীদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই এই বিল। যার আওতায় রাজ্যের সমস্ত গিগ কর্মী ও এগ্রিগেটরদের রেজিস্ট্রেশন করাতে চায় সরকার। যার মাধ্যমে তাঁদের সুরক্ষা যেমন নিশ্চিত করা যাবে, তেমন ভাবেই তাঁদের কোনও অভিযোগ থাকলেও তা অতি সহজেই দায়ের করা যাবে। এর জন্য রাজস্থান প্ল্যাটফর্ম বেসড গিগ ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড নামে একটি দুই সদস্যের বোর্ড গড়া হবে। যেখানে এগ্রিগেটর ও গিগ কর্মী, দুই তরফেরই সদস্য থাকবে, যাদের নির্বাচন করবে সরকার খোদ। এর পাশাপাশি বোর্ডে থাকবেন দুই সরকারি কর্মীও। রাজ্যে খেটে খাওয়া সমস্ত গিগ কর্মী ও এগ্রিগেটরদের রেজিস্ট্রশন ঠিক মতো হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করবে ওই বোর্ড। এবার থেকে রাজ্য সরকারের কাছে মজুত থাকবে গিগ কর্মীদের সমস্ত তথ্য। এবং প্রত্যেক গিগ কর্মীর জন্য আলাদা আলাদা পরিচয় পত্র দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
ওই আইনেরই একটি অংশ হচ্ছে প্ল্যাটফর্ম বেসড গিগ ওয়ার্কার্স ফান্ড অ্যাম্জ ওয়েলফেয়ার ফি। কী সেটা? ওই আইনের আওতায় এগ্রিগেটরদের থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ওই ফান্ডে জমবে। ওই প্ল্যাটফর্মে নথিভুক্ত গিগ শ্রমিকের সম্পর্কিত প্রতিটি লেনদেনের ক্ষেত্রে এগ্রিগেটরদের থেকে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা ওই ফান্ডে গিয়ে জমা হবে। কোন হিসেবে ওই টাকা জমা করতে হবে, তা এখনও পরিষ্কার করে জানানো হয়নি অবশ্য। ওই বিলের আওতায় গিগ শ্রমিকেরা বিশেষ কিছু সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। তাঁদের উপর বঞ্চনা বা নিগ্রহের ঘটনা ঘটলে ওই বোর্ডের মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন তাঁরা। মিলবে সুবিচার।
রাজস্থানে আপাতত ক্ষমতায় কংগ্রেস। বহুদিন ধরেই অস্থায়ী গিগ শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার কথা ভেবে এমন পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে রাজস্থান সরকার। অবশেষে সেই ভাবনা বাস্তবায়িত হল। এগ্রিগেটররা নির্দিষ্ট সময়ে ওই টাকা ফান্ডে না দিতে না করতে পারলে দিতে হতে পারে জরিমানা। এমন নিয়মের কথাও বলা রয়েছে ওই বিলে। সেই জরিমানা ৫ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
আরও পড়ুন: উৎসবের আলোর ভিড়ে বঞ্চনার অন্ধকারে ডুবে রইলেন ডেলিভারি শ্রমিকরা
সমাজকর্মী নিখিল দে-র কথায়, এমন বিল সম্ভবত বিশ্বে প্রথম। এর আগে পৃথিবীর কোনও দেশ, কোনও রাজ্য এমন বিল আনতে পেরেছে বলে মনে হয় না। এই বিল আনার পথে এগোনোর আগে বেশ কয়েকটি সমীক্ষা চালিয়েছে রাজস্থান সরকার। রাজ্যের অস্থায়ী গিগ কর্মীদের সামাজিক পরিস্থিতি, অবস্থান নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করার পরই এই সিদ্ধানে এসে পৌঁছয় তারা। দেখা গিয়েছে রাজ্যের প্রায় ৫০ শতাংশ গিগ শ্রমিকদেরই কোনও রকম স্বাস্থ্যবিমা নেই। এমনকী সরকারি কোনও জীবনবিমার আওতাতেও পড়েন না তাঁরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভিনরাজ্যের বিভিন্ন অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজের জন্য যেতে বাধ্য হন গিগ শ্রমিকেরা। রাজস্থান থেকে পৌঁছে যান উত্তরপ্রদেশে, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে। রাজস্থানে অন্তত ৩ থেকে ৪ লক্ষ গিগ শ্রমিক রয়েছেন, যারা সামাজিক বহু সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। চুক্তিভিত্তিক হওয়ার কারণে তাঁদের দায় এড়ায় সংস্থাগুলিও। ওইসব গিগ শ্রমিকদেরই পাশে দাঁড়াতে চায় রাজস্থান সরকার।
ইতিমধ্যেই গিগ শ্রমিকদের কল্যাণে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে অশোক গেহলট সরকার। যা গত বাজেটেই ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল। আরও একগুচ্ছ পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এখন দেখার, বাদবাকি রাজ্যগুলিও রাজস্থানের দেখানো পথে কবে হাঁটে।