চাঁদ নয়, মহাকাশচারী রাকেশ শর্মাকে কী বলেছিলেন ইন্দিরা?

Indira Gandhi Conversation with Rakesh Sharma: চাঁদ-জয়ের সাফল্য মনে করিয়ে দিয়েছে ১৯৮৪ সালের সেই ২ এপ্রিল দিনটির কথা। যেদিন ভারতীয় নভোশ্চর হিসেবে প্রথমবার মহাকাশে পা রেখেছিলেন রাকেশ শর্মা।

১৯৮৪ সালের ২ এপ্রিল। আরও একটা গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে ভারতের ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছিল দিনটা। যেমন জায়গা করে নিল ২৩ অগস্ট, ২০২৩ -র সন্ধে। চাঁদের মাটিতে প্রথমবার পা রাখল ভারত। চাঁদ জয়ের নিরিখে আমরা চতুর্থ। আমাদের আগে চাঁদের মাটিতে পা রেখেছে শুধুমাত্র আমেরিকা, রাশিয়া ও চিন। তবে তারা কেউ চাঁদের দক্ষিণ মেরু জয় করেনি। সেই হিসেবে ভারত প্রথম দেশ।

আরও পড়ুন: হলিউড সিনেমার অর্ধেক খরচে ভারতের পকেটে চাঁদ!

কিন্তু কালকের এই জয়ের সূচনাপর্ব কিন্তু হয়ে গিয়েছিল আরও অনেক আগে। ১৯৬০ সালে গির্জার জমির উপরে সেই যে গড়ে উঠল রকেট স্পেস সেন্টার , সেদিনই বোধহয় একের পর এক জয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে ফেলেছিল ভারত। সেই ভিত্তিপ্রস্তরের উপরেই সাফল্য এসেছে বারবার। ব্যর্থতাও এসেছে। তবু ব্যর্থতার বইয়ের পাতা থেকে সাফল্য খুঁজে আনতে কোনওদিন পিছপা হননি এ দেশের বিজ্ঞানীরা। আর সে জন্যই বোধহয় শেষমেশ সাফল্যের মুখ দেখেছে তৃতীয় চন্দ্রাভিযান। বৃথা যায়নি ইসরোর কয়েক হাজার বিজ্ঞানী, গবেষক, ইঞ্জিনিয়ারের এত এত দিনের পরিশ্রম। তবে এই সাফল্য মনে করিয়ে দিয়েছে ১৯৮৪ সালের সেই ২ এপ্রিল দিনটির কথা।

কী হয়েছিল সেদিন? ভারতের পালকে এসে আলো করে বসেছিল আরও এক স্বীকৃতি। সেই প্রথম। মহাকাশে পৌঁছে গেল মানুষ। ভারতের প্রথম মহাকাশচারী হিসেবে মহাশূন্যে পা দিলেন স্কোয়াড্রন লিডার রাকেশ শর্মা। প্রায় চার দশক আগে ভারত ও রাশিয়া যৌথভাবে সেই অভিযান করেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের সুয়াজ টি-১১-এর অংশ হিসেবেই মহাকাশে পা রাখলেন রাকেশ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাশিয়ার অন্য নভোশ্চরেরা। সেইবার মোট ৭ দিন ২১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ছিলেন রাকেশরা মহাকাশ।

সেটা ছিল কার্যত এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এক যুগ্ম টেলিভিশন কনফারেন্সে মহাকাশযানে থাকা অভিযাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। মূল উদ্দেশ্য যদিও রাকেশের সঙ্গে কথা বলা। সেই কথোপকথনের গোড়াতেই মহাকাশচারীদের শুভেচ্ছা জানান ইন্দিরা। সেই কণ্ঠে গর্ব ফুটে উঠছে প্রতি মুহর্তে। হবে না-ই বা কেন! প্রথমবার মহাকাশ জয় করলেন এক ভারতীয়। সে মুহূর্ত যদি গর্বের না হয়, তা হলে আর কী-ই বা হবে। শুভেচ্ছা জানানো হলে, ইন্দিরা গান্ধী রাকেশের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দিলেন একটি প্রশ্ন। গলায় ঝরছে উত্তেজনা, মুখ উজ্জ্বল। রাকেশ শর্মাকে প্রশ্ন করলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী! এ যেন এক চিরাচরিত প্রশ্ন। কেমন লাগছে মহাকাশ থেকে ভারতকে, আমাদের দেশকে। সেদিন রাকেশের বুদ্ধিদীপ্ত উত্তরে সেদিন মুগ্ধ হয়েছিল গোটা দেশ। কবি ইকবালের লাইন ধার করে রাকেশ বললেন 'সারে জাঁহা সে আচ্ছা'।

 


নিজের দেশ যে 'সকল দেশের সেরা' তা আর নতুন কি! কিন্তু সেদিন রাকেশের ওই জবাব তৈরি করেছিল এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছিল দেশের প্রথম নভোশ্চরের। ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে রাকেশ শর্মার ওই ভিডিও আজও সযত্নে রক্ষিত রয়েছে। চন্দ্রযানের এমন বিপুল সাফল্যের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় বারবার ভেসেছে সেই কথোপকথনের অংশ। কংগ্রেসের টুইটার হ্যান্ডেল থেকেও শেয়ার করা হয়েছে সেই ভিডিও। সেদিনের সাফল্যের সঙ্গে বুধবারের সাফল্যকে কোথায় যেন মিলিয়ে দেখেছে মানুষ।

আরও পড়ুন:চাঁদের মাটিতে ভারতীয় তেরঙার ছবি আঁকা দিয়ে শুরু, এবার কী করবে প্রজ্ঞান?

বিজ্ঞানের অগ্রগতি সেদিন মানুষকে পৌঁছে দিয়েছিল দুর্জ্ঞেয় মহাকাশে। আর এবার সোজা চাঁদ ছুঁয়ে ফেলল ভারত। তবে আপাতত উপগ্রহ পাঠানো হয়েছে চাঁদে। তবে সেখানেই থামা ন, খুব শিগগিরই যে চাঁদে পৌঁছে যাবে মানুষ, সে ব্যাপারেও সন্দেহ নেই। ইতিমধ্যেই সেই ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে আপাতত চাঁদের মাটি থেকে চন্দ্রযানের রোভার প্রজ্ঞান ঠিক কী কী খবর নিয়ে আসে, তা জানার অপেক্ষায় গোটা দেশ তথা বিশ্ব।

More Articles