লাদাখে চিনা টাওয়ার! ফের আগ্রাসনের ষড়যন্ত্র করছে চিন?
আবার ভারতীয় ভূখণ্ডে থাবা বসাতে চাইছে চিন! কয়েক সপ্তাহ আগেই ৭ ই এপ্রিল কেন্দ্রীয় শক্তি মন্ত্রী আর কে সিং দাবি করেছিলেন লাদাখের কাছে অবস্থিত পাওয়ার গ্রিড সিস্টেমের দখল নিতে চাইছে চিন। সে যাত্রায় ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তৎপরতা আটকে দিয়েছিল চাইনিজ হ্যাকারদের। তার ঠিক দুই সপ্তাহের মধ্যেই আবার চিনা আগ্রাসনের চিহ্ন মিলেছে লাদাখে।
ভারতের অন্দরে উঁকি দেওয়ার জন্য ভারতের একেবারে সীমান্তের মধ্যেই তিনটি মোবাইল টাওয়ার নির্মাণ করেছে চিন। লে জেলার চুশুল গ্রামের কাউন্সিলর কনচোক স্ত্যাঞ্জিনের বয়ানে উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই মোবাইল টাওয়ার নির্মাণ যে চিনের আগ্রাসনেরই প্রথম ধাপ তা বুঝতে পেরেই তৎপর হয়েছেন কনচোক। ভারত সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে এই বিষয়ে জানাতে ট্যুইটারকেই হাতিয়ার করেছেন কনচোক। গোটা বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ-সহ মোবাইল টাওয়ারের ছবি নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন তিনি। প্রসঙ্গত কিছু দিন আগেই প্যাংগং লেকের ওপর সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করেছে চিন। এরপর খোদ লাদাখের উষ্ণ প্রস্রবণের কাছে চিনা টাওয়ার বসানোয় স্বাভাবিক ভাবেই ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আরও পড়ুন-প্রশান্ত কিশোরের জিয়নকাঠির ছোঁয়ায় কি আদৌ প্রাণ ফিরবে কংগ্রেসের!
যে এলাকায় মোবাইল টাওয়ার গুলি বসানো হয়েছে সেটি বর্তমানে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে পরে। কিন্তু সেই এলাকায় কোনও 4G নেটওয়ার্কের পরিষেবা নেই। প্রশ্ন উঠেছে গোপনে ভারতীয় নাগরিকদের বিশেষ পরিষেবা পাইয়ে তাদের মোবাইল হ্যাক করার জন্যই কি এই পদক্ষেপ করেছে বেজিং?
কনচোক তাঁর টুইটে স্পষ্ট লিখেছেন, ‘ প্যাং গং লেকের কাছে সেতু নির্মাণ শেষ করেই ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যেই তিনটি মোবাইল টাওয়ার নির্মাণ করেছে চিন। এটা কি যথেষ্ট চিন্তার বিষয় নয়? আমার নির্বাচনী এলাকার ১১ টি গ্রামে কোথাও কোনও ৪ জি ইন্টারনেট পরিষেবা নেই। এমনকি আমাদের গ্রামের আশেপাশের গ্রামগুলিতে ও এখন ও ৪ জি নেটওয়ার্ক এসে পৌঁছয় নি। সেখানে এই টাওয়ারের উদ্দেশ্য কি?’
কনচোকের ধারণা, আসলে এইভাবেই ভারতের ভূখণ্ডে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায় বেজিং। এতদিন অবধি সীমান্ত আক্রমণে সীমাবদ্ধ থাকলে ও বর্তমানে ভারতের মাটিতে প্রযুক্তিগত অনুপ্রবেশের দিকেই নজর দিয়েছে চিন। এই প্রসঙ্গে কনচোক জানিয়েছেন, ‘এই টাওয়ারগুলি দিয়ে ড্রোনের মাধ্যমে ও ভারতীয় এলাকায় নজরদারি চালাতে পারে চিন। এই ব্যাপারে ভারত সরকারকে তৎপর হতে হবে। চিনকে আটকাতে ভারত কে ও উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। পাল্টা আক্রমণের রূপরেখা এখন থেকেই তৈরি করে রাখা জরুরি’।
কনচোকের দাবি উড়িয়ে দিতে পারেনি বিদেশ মন্ত্রকও। কিছুদিন আগেই ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে রিপোর্ট এসেছিল সাত রাজ্যের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী স্টেশনগুলিতে সাইবার হামলা চালিয়েছে চিনের হ্যাকাররা। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট বলছে এভাবেই ভারতের উত্তর ভাগের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিছিন্ন করে লাদাখ দখলের কৌশল নিয়েছে চিন। এমনকি এইভাবে ভারতের অভ্যন্তরীণ নানা তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার ও চেষ্টা চালাচ্ছে বেজিং। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে চিনা হ্যাকারদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য ও উঠে এসেছে অনুসন্ধানে। ‘শ্যাডোপ্যাড’ নামের একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করেই পাওয়ার গ্রিডে এই হামলা চালিয়েছিল চিন। এই ম্যালওয়ারটি আগে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কাজে ব্যবহার করত চিন। এই ডিভাইসগুলি দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান থেকে আমদানি করা হয়েছিল।কি
কিছুদিন আগেই ভারতে কূটনৈতিক সফরে এসেছিলেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। ২০২০ সালের এপ্রিলে লাদাখে নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনা অনুপ্রবেশের পর সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল ভারত ও চিনের। ওই ঘটনার পর এই প্রথম ভারতে এলেন কোনও চিনা প্রতিনিধি। সেখানে নয়াদিল্লিতে ভারত ও চিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি নিয়ে আলোচনায় বসেন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও চিনের বিদেশ মন্ত্রী। কিছুদিন আগেই মিউনিখ নিরাপত্তা সন্মেলনে ভারত- চিন সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন ভারতের বিদেশ মন্ত্রী। সেখান থেকে এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে খানিক বরফ গলার ইঙ্গিত মিললে ও লাদাখ সীমান্তে নতুন করে চিনা অনুপ্রবেশের সম্ভাবনায় সবটাই আবার বিশ বাঁও জলে।