আদৌ কি টিকায় নির্মূল হয় এই রোগ? কীভাবে মানব শরীরে প্রথম প্রবেশ করেছিল এইডস?

World AIDS Vaccine Day : AIDS সেরে যাবে? HIV-র ভ্যাকসিন আবিষ্কার, গবেষকদের এই দাবির নেপথ্যে লুকিয়ে আছে কোন সত্যি?

এইডস, মানব দেহে বাসা বাঁধা ভয়ংকর সংক্রামক রোগগুলির মধ্যে অন্যতম হল এটি। এই রোগের HIV ভাইরাস প্রথমেই শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে আঘাত করে। শুধু ক্যান্সার নয়, এইডসও এমন একটি ব্যাধি যা শরীরে একবার প্রবেশ করলে ধীরে ধীরে সমস্ত অঙ্গ বিকল করে দিতে থাকে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে নষ্ট করে দেয়। এমনকী এইডস-এ আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী এইডস আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ।

সময়টা ১৮০০ শতকের শেষ দিকে, মানুষের শরীরে প্রথম লক্ষণ মেলে এইডস-এর। কিন্তু কীভাবে এটি মানব দেহে প্রবেশ করল সেই বিষয়ে গবেষকদের দাবি, মধ্য আফ্রিকায় এক শিম্পাঞ্জির দেহে প্রথম খোঁজ মেলে HIV ভাইরাসের। তার পর সেখান থেকেই আসে মানবদেহে। এখানে উল্লেখ্য যে, এই মুহূর্তে এইচআইভি বা এইডসের কোন নিরাময় নেই এবং এই অবস্থার জন্য কোনও জেনেটিক চিকিৎসাও নেই।

আরও পড়ুন - অজান্তেই ধেয়ে আসছে মৃত্যু! কেন নীরবে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হচ্ছেন ডায়াবেটিস আক্রান্তরা

এইডস আসলে কী?

এইচআইভি হল এক ধরনের ভাইরাস। যার পুরো নাম হিউম্যান ইম্যুনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস। AIDS অর্থাৎ Acquired Immuno Deficiency Syndrome, যা এই HIV ভাইরাস থেকে সংক্রামিত হয়। এই রোগে আক্রান্ত মানুষকে এইচআইভি পজিটিভ (HIV+) বলা হয়। এই ভাইরাসের প্রধান কাজ হল, মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অকেজো করে ফেলা। এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তির ইমিউন সিস্টেম একেবারে দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে রোগীর শরীরে অন্যান্য রোগও সহজেই বাসা বাঁধতে পারে।

বিভিন্ন কারণে এইচআইভি ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে পারে, যেমন -

১. যৌন মিলন এই রোগ সংক্রমণ প্রধান কারণ। এই রোগে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির সঙ্গে কোনও একজন সুস্থ মানুষ যৌন মিলনে লিপ্ত হলে ছড়াতে পারে এইডস।

২. নেশার সময় একই সিরিঞ্জের মাধ্যমে অনেককে মাদক গ্রহণ করতে দেখা যায়। এর ফলে যদি একজনের শরীরে এইডস থেকে থেকে, তাহলে অজান্তেই তা অন্যদের শরীরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

৩. সংক্রমিত ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করা ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, অস্ত্রোপচারের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সুস্থ ব্যক্তির দেহে ব্যবহার করা হলে সেখান থেকে রোগ ছড়ায়।

৪. HIV আক্রান্তের মাড়ির ক্ষত ও দেহের ক্ষত থেকে নিঃসৃত লালা এবং রস থেকে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।

৫. এছাড়াও রক্ত, বীর্য, ভেজাইনাল সিক্রিয়েশন, অ্যানাল ফ্লুইড, ব্রেস্ট মিল্ক থেকেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে বলেই দাবি চিকিৎসকদের।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ প্রতি বছর ১৮ মে বিশ্ব এইডস ভ্যাকসিন দিবস বা এইচআইভি ভাইরাস অ্যাওয়ারনেস দিবস পালন করে। ১৮ মে পালিত হওয়া এই দিবসটির মূলে রয়েছে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন-এর দেওয়া এক ভাষণ। জানা যায়, ১৯৯৭ সালে ১৮ মে মরগ্যান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সভায় তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন বক্তৃতা দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি এই রোগ নির্মূল করার জন্য ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। ঠিক তার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৮ সালের ১৮ মে প্রথম বিশ্ব এইডস ভ্যাকসিন দিবস পালিত হয়। সেই থেকেই এই দিনটি প্রতি বছর পালিত হয়ে আসছে। এই দিনটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের মধ্যে এইচআইভি রোগ সংক্রমণ এবং এর টিকা ও চিকিৎসা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

আরও পড়ুন - অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছে পেটে, ফ্যাটি লিভার নয় তো! জানেন কোন কোন খাবার উপযুক্ত এই রোগে?

তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে আসতে পারে যুগান্তকারী সাফল্য আনতে একটি গবেষকদল নতুন এক ভ্যাকসিন তৈরি করেছে যা এইচআইভি-এইডস নিরাময় করতে পারে বলেই দাবি তাদের। টেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য জর্জ এস ওয়াইজ ফ্যাকাল্টি অফ লাইফ সায়েন্সেস-এর স্কুল অফ নিউরোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি এবং বায়োফিজিক্সের একটি দলের নেতৃত্বে আয়োজিত হয় এই বিশেষ গবেষণাটি। গবেষণায় উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাঁরা ইঞ্জিনিয়ারিং-টাইপ বি শ্বেত রক্তকণিকা দ্বারা তৈরি একটি একক ভ্যাকসিনের মাধ্যমে প্রাথমিক সাফল্য পেয়েছে যা এইচআইভি-নিরপেক্ষ অ্যান্টিবডি তৈরি করতে ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে। গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয় নেচার জার্নালে। পাশাপাশি গবেষকরা জানান, এটি এখনও কোনও চূড়ান্ত নিরাময়ের হদিশ দিতে পারেনি তবে চিকিৎসা এবং ইনজেকশনের মাধ্যমে ভাইরাসকে পরাস্ত করার দিশা দেখিয়েছে এই গবেষণা।

প্রসঙ্গত, এই বি কোষ হল এক ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা যা ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। বি কোষগুলি রক্ত ​​​​এবং লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমে যায় এবং সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে। যখন ইঞ্জিনিয়ারিং বি কোষগুলি ভাইরাসের মুখোমুখি হয়, তখন ভাইরাস তাদের সহজেই উদ্দীপিত করে যার জেরে কোষগুলি বিভাজিত হয়ে যায়। আর এটাই রোগ সংক্রমণের মূল কারণ। তবে আগামী দিনে এই গবেষণা এবং আবিষ্কৃত ফলাফল এইচআইভি সহ আরও বেশ কিছু সংক্রামক রোগ, যেগুলির চিকিৎসা নিয়ে মানুষের মধ্যে এখনও ধোঁয়াশা সম্পূর্ণ কাটেনি, তাদের নিরাময় সম্ভব বলেই আশার আলো দেখিয়েছেন গবেষকরা।

More Articles