রক্ত-মাংস-কফ-শ্লেষ্মায় গড়া ফাঁপা সময়ের গল্প: যাহা বলিব সত্য বলিব

যাহা বলিব, সত্য বলিব: কারণ আখেরে তিনি 'সত্যি'টাই বলতে বসেছেন। পাঠক-প্রমোদের গুরুভার তাঁর নেই।  তাই তাঁকে যুধিষ্ঠিরের মতো  'ইতি গজ' বলতে হয় না। দৃপ্তকণ্ঠে মুখবন্ধের শেষে তিনি লিখে রাখেন 'ইতি কুঞ্জর'। 

মৃত অশ্বত্থামা যে হাতি, এ কথায় কোনও ভুল ছিল না। কিন্তু এই আপাত সত্য কিংবা মিথ্যের মাঝখানে মহাছলনার একটি কাঙ্খিত মায়াজাল রচনা করেছিলেন জ্যেষ্ঠপাণ্ডব যুধিষ্ঠির। যে মায়াজাল আসলে ঠিক করে দেবে মহাভারতের প্রতিটা চরিত্রের ভবিতব্য। যে পথ স্বর্গের হয়েও শেষপর্যন্ত ছুঁয়ে ফেলবেই নরকের দ্বার। পুতিগন্ধময় সেই নরক থেকে যাবে সারসত্য হয়ে। আসলে এই মায়াজালের নামই কি এক অর্থে জীবন নয়! যেখানে স্বর্গ-নরক, নৈতিক-অনৈতিক গুলিয়ে যায় বারবার। যেখানে আমরা প্রতিমুহূর্তে সত্যি বলি, যা মিথ্যের মতো শোনায়। আবার মিথ্যে দিয়ে বুনে তোলা প্রাসাদকে দেখায় অবিকল সত্যির মতো। অলোকপর্ণা তাঁর 'যাহা বলিব, সত্য বলিব' বইটিও মুখবন্ধ শুরু করেছেন সেই অশ্বত্থামাকে দিয়ে। যে সত্যিই হাতি ছিল না মহাদ্রোণের অনন্য পুত্র, তা বোঝা কঠিন। আসলে আমাদের জীবনের সত্যগুলো তো এমনই, যাদের লোকসমাজে আনতে গেলে পোশাক পরাতে হয়, সাজিয়ে তুলতে হয় যত্নে। আর মিথ্যেরা পেটের ভিতর ঢুকে ঠিকানা গুলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। অলোকপর্ণা বোনেন তেমন মায়াজালের গল্প, মায়াজাল ছেঁড়ার গল্প।

আরও পড়ুন: দেশভাগ, উদ্বাস্তু জীবন, যাদের ছবি ধরা রইল না ক্যামেরার লেন্সে

'যাহা বলিবেন সত্য বলিবেন'! এর তলায় থাকে লাল শালুতে মোড়া গীতা, পাশে সুবিচারের দাঁড়িপাল্লা হাতে চোখ বাঁধা সেই রমণী, আর তার নিচে ধরিত্রী, যা পাপে-তাপে আজকাল আর দ্বিধা হয় না সচরাচর। তাই মিথ্যে চলে, মিথ্যা হাঁটে, পোশাক পরে বাজার করে, দোকানে যায়, মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে কিনে আনে সবজি, মাসের কলাটা-মূলোটা। পুত্রস্নেহে অন্ধ ছিলেন ধৃতরাষ্ট্র, গান্ধারী সবটা দেখেও দেখেননি, সঞ্জয় সব দেখে ধারাভাষ্য করেছেন কেবল! এই তিনের মাঝেই বুঝি দোল খায় আম-জিন্দেগি। যে জিন্দেগির কথা কৌশলে লেখেন অলোকপর্ণা। 

কলমজীবীদের কেউ কেউ লেখেন লিখতে পারেন বলে। কেউ কেউ লিখেছেন, না লিখে থাকতে পারেননি বলে। অলোকপর্ণা যখন লেখেন, তাঁর লেখায় উঁকি মারে মাইলের পর মাইল পথ হেঁটে কাঁটাতার পেরিয়ে আসা সেই মাতামহ; ঘরদুয়ার-সংসারময় স্নেহচারা ফেলে আসা মাতামহী কিংবা স্টেশনে বউ-বাচ্চা নিয়ে মাথা গুঁজতে চাওয়া ঠাকুরদা। পায়ে পেরেকের দগদগে ক্ষতদাগ বাবা, সংসারে সদাব্যস্ত মায়ের মুখ পড়ে থাকে লেখার কাগজের উপরে। তাই অলোকপর্ণা লেখেন। সাদা-কালো মিথ্যা কথার শহরের লাল-নীল সংসারের মধ্যে নিত্য বসে থাকে যে শঠ, তাকে আপামরের সামনে তুলে এনে প্রশ্ন করতে চান 'উলঙ্গ রাজা'-র সেই শিশুটির মতোন। অলোকপর্ণা লেখেন সময়ের দলিল।

কেমন সে সময়? যৌবনের গৌরবময়তার কথা তিনি লেখেন না। ভবিষ্যতের গন্ধে মোড়া ফ্যান্টাসি, তা-ও নয়। নির্দিষ্ট দূরত্বে বসে চরিত্রদের নিরীক্ষণ করা ধাতে নেই তাঁর। তাই তিনি নেমে আসেন সোজা গল্পে। হয়ে ওঠেন চরিত্র। যাঁরা রক্ত-মাংস-কফ-শ্লেষ্মা দিয়ে গড়া। যাঁদের মহাকাব্যের 'রাম' বা মঙ্গলকাব্যের 'কালকেতু' হওয়ার দায় নেই, বরং 'ভাড়ুদত্ত'-এর মতোই তাঁরা ভীষণ রকম বাস্তব কিংবা অতিবাস্তব। 'মধ্যম তিনিই যিনি চলেন তফাতে'। কিন্তু সচেতন ভাবেই সেই মধ্যপন্থাকে লেখায় জায়গা দেননা অলোকপর্ণা। যা বলেন সত্য বলেন, ঋজুতার সঙ্গে বলেন।  সামঞ্জস্যহীন যা কিছু বেখাপ্পা, তাকেও তুলে আনেন নির্মম ভাবে। তাই 'যাহা বলিব, সত্য বলিব' পড়তে পড়তে পাঠক থমকে দাঁড়ায়, ভাবে, কুঞ্চিত হয় শব্দের মধ্যে আয়না দেখে ফেলে। তবু মোহগ্রস্তের মতো বারবার সেই শব্দ-আয়নার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়, মুখ দেখে। 

"চোখ বুজে ঘাসের মধ্যে পড়ে আছি। কী একটা পোকা আমার ডান পায়ের পাতায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
কী একটা পোকা মনের মধ্যে... " 

(আত্মহত্যা প্রসঙ্গে যা যা জানি / যাহা বলিব, সত্য বলিব)

এই পোকাই কি সেই পোকা নয়, যা সর্বক্ষণ মাথার ভিতর, হৃদয়ের ভিতরে কেটে চলেছে অবিরত, ঘুণ ধরিয়ে চলেছে সমাজের ভিতে! জীবন-মৃত্যুর বেড়াজালকে গুলিয়ে দিচ্ছে বারবার। জীবনানন্দ লেখেন-


"আমি তারে পারি না এড়াতে,
সে আমার হাত রাখে হাতে,
সব কাজ তুচ্ছ হয়—পণ্ড মনে হয়,
সব চিন্তা—প্রার্থনার সকল সময়
শূন্য মনে হয়,
শূন্য মনে হয়।"

(বোধ / নির্জন স্বাক্ষর)

আর সেই বোধের কাছে এক লহমায় পৌঁছে দেন গল্পকার। বুঝিয়ে দেন, মৃত্যু সম্পর্কিত আমাদের এই শোক আসলে কতখানি কৃত্রিম। কৈশোরে এক শিক্ষক ক্লাসের ফাঁকে  বলে বসেছিলেন জীবনের এক সারসত্য। এই যে মৃত্যু দেখে আমরা যে এত কাঁদি, শোকে পাথর হই, তা কি কেবল আত্মীয়বিয়োগের যন্ত্রণায়, নাকি নিজেদের সেই পরিণামের কথা ভেবে! তাই কি সিনেমায় মৃত্যুর দৃশ্য আমাদের কাঁদায়। যে জীবনদেবতার খোঁজ রবীন্দ্রনাথ করেন, তাঁর কাছে আর পৌঁছতে চান না আজকের গল্পকার। স্ট্র-য়ে জীবনরস টানতে টানতে শুষ্ক, কাষ্ঠ যে জীবন, তার সঙ্গে 'ফড়িংয়ের দোয়েলের' দেখা হবে না ভেবেই আত্মহননের পথ বেছে নিতে চান তাঁর গল্পের প্রোটাগনিস্ট। গাঁজাগাছটিও যে নকল, প্লাস্টিকের; সে কথা জানিয়ে বাড়িওয়ালা জিতেনের স্ত্রী তাঁকে আরও ঠেলে দেয় সেই জীবনবিচ্ছিন্নতার দিকে। এ বিচ্ছিন্নতা আসলে সময়ের উপহার। 'স্বাতীলেখা এবং অন্যান্যরা' গল্পের প্রধান চরিত্র স্বাতীলেখাও তাই জীবনের সৈকত থেকে ক্রমশ ছিটকে যেতে থাকেন। মৃত্যু কি শুধুই শরীরকেন্দ্রীক? প্রতিনিয়ত কি আমরা হেঁটে যাচ্ছি না আরও আরও মৃত্যুর দিকে, আরও ক্ষয়, আরও বিলয়ের দিকে। সেই বিষাদ, অবসন্ন বোধ ছুঁয়ে থাকে অলোকপর্ণার প্রতিটি গল্পকে। 

আধুনিক জীবনের যে ম্যালিগনেন্স, যে ঘা আমাদের প্রতিনিয়ত ছুঁয়ে ফেলছে, পচন ধরাচ্ছে। আর সেই সংক্রমণকেই চরম জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিল অতিমারি। শরীরে রোগ ঢুকেছে-বেরিয়েছে, প্রাণবায়ুও। কিন্তু করোনা যে সংক্রমণ আমাদের মানসিকতায় ঢুকিয়ে দিয়ে গিয়েছে, তা ভয়ঙ্কর। অতিমারি, লকডাউনের সেই দিনগুলোর ছায়া পড়ে থাকে তাই লেখায়। লকডাউনের ডায়েরি লেখেন গল্পকার। কুঁচকে যাওয়া হাতের গল্প, পাশাপাশি থেকে মানুষের দূরতম দ্বীপ হয়ে যাওয়ার গল্প এবং অস্তিত্বের এক ভয়াবহ নাস্তিকতার ছবি, তিনি ফুটিয়ে তোলেন তারিখে, তারিখে। স্মৃতি, সত্তা ও ভবিষ্যতের মধ্যে গড়ে তোলা সমস্ত সেতু ভেঙে পড়ে। মানুষ তলিয়ে যায় এক অস্তিত্বহীনতার সমুদ্রে, যেখানে গ্রাস করে ডিপ্রেশন, জড়িয়ে ধরে নেগেটিভিটি। মানুষ তবু লড়াই করে মুখোশহীন দিনের আশায়। কিন্তু লকডাউন উঠলেও মুখোশ কি খোলা হয় তাঁর আর! 'সংক্রমণ' গল্পে প্রশ্ন রেখে যান গল্পকার। 

পেশায় ইঞ্জিনিয়ার অলোকপর্ণার বড় হয়ে ওঠা নব ব্যারাকপুরে। অথচ মফসসলের গল্প বোনার তাগিদ সেই অর্থে তাঁর নেই। বরং মফসসলকে আলতো ছুঁয়েই তাঁর গল্প পৌঁছে যায় আরও বড় বিশ্বে। তাঁর গল্পে ঘটনার পারম্পর্য খুঁজতে বসলে পাঠক হতাশ হবেন। কারণ তিনি প্রেমের গল্প, জীবনের গল্প, বা ভূতের গল্প লিখতে বসেননি। তিনি সময়কে খোসা ছাড়িয়ে মেলে দেন তাঁর লেখায়। নগ্ন করে দেন তার অন্ধকার পিঠ, যা পড়ে পাঠক শিউরে ওঠেন, নিজের দিকে তাকাতে লজ্জা পান। আগেই বলেছি, তবু পাঠক বারবার ফিরে যান সেই শব্দ-আয়নার সামনে। দেখেন ক্ষতবিক্ষত, বিকৃত হয়ে যাওয়া মুখ। বাংলা সাহিত্যে বিশেষত ছোটগল্পের যে ধারায়, যে খাতে তিনি তাঁর গল্পদের বইয়ে নিয়ে চলেন, তার নজির মানিক, তারাশঙ্কর, বিভূতিভূষণে মিলবে না। বরং তাঁর লেখার সঙ্গে মোহিত চট্টোপাধ্যায় বা বাদল সরকারের অ্যাবসার্ড তথা উদ্ভট নাট্যআঙ্গিকের প্রভূত মিল। নিঃসন্দেহে তা মিলতে পারে কাফকা কিংবা কাম্যুর সঙ্গে। সেই ভাবে দেখতে গেলে বাংলা ছোটগল্পের ধারায় তাঁর পূর্বজ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে বোধহয় শুধু সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের নাম।  'নীরবতা কমলেশ হয়ে উঠেছে' গল্পে সেই ঋণ কিছুটা রেখে যান অলোকপর্ণা। মোহিতের 'কণ্ঠনালিতে সূর্য' নাটকে যেমন সূর্য গলায় আটকে যাওয়া লোকটি বলে বসেন, তাঁর  'পেটভর্তি ক্ষিধে নয়, হৃৎপিণ্ডভর্তি ক্ষিধে'।  তেমনই 'একদিন জিভ দিয়ে পৃথিবীকে চেটে দেবো' গল্পের নায়ক একদিন নিজের সন্তানকে খেয়ে ফেলেন খিদের চোটে, খেয়ে ফেলেন ভাইকেও। তারপর... তারপর পাঠককে এক চিরন্তন সত্যের কাছে পৌঁছে দেন গল্পকার। 

'যাহা বলিব সত্য বলিব' বইয়ের ছত্রে ছত্রে নানা অনুসঙ্গ ছেড়ে ছেড়ে যান অলোকপর্ণা। ছুঁয়ে যান ইতালিয়ান শিশুসাহিত্যিক কার্লো কলোডি থেকে অঞ্জন দত্ত, পুরাণ থেকে ইতিহাস, মণীন্দ্র গুপ্ত থেকে পিট সিগার। মহাকবি এলিয়ট সেসময় দাঁড়িয়ে একেছিলেন 'দ্য হলোম্যান'-এর ছবি।  মিলেনিয়ালসদের প্রতিনিধি অলোকপর্ণা লেখেন তাঁর সময়ের ফাঁপা মানবের কথা, তুলে ধরেন ফাঁপা সমাজের ছবি।

" মানুষটা চোখ বুজে মনে করে তার কাঁধ থেকে একটু আগে দোপট্টা ছিনিয়ে নেওয়া ছেলেটা ল্যাংটা।
একটু আগে তার হাতের ব্যাগ কেড়ে নেওয়া মহিলা ল্যাংটা।
তারও আগে যে বা যারা তাকে “ছেলেধরা” বলছিল, তারা প্রত্যেকে ছোটো আর
ল্যাংটো হয়ে গেছে। "  

(উলঙ্গ / যাহা বলিব, সত্য বলিব)

প্রতিটা গল্পের প্রতিটা মুহূর্ত, শব্দেরা যেন একেকটা থাপ্পড়, কষিয়ে দেয় সেই ফাঁপা সমাজের গালে। তাই 'সন্তোষ করের মাতৃপরিচয়' গল্পের শেষে পায়ের তলার একটা কাল্পনিক পা-কে সজোরে মাড়িয়ে দিতে থাকেন সন্তোষ। হাড় ভাঙার শব্দ ভারী শ্রুতিমধুর ঠেকে তাঁর মনে মনে। কিন্তু আদতে বাস্তবে কিছু বলতে পারেন না মায়ের বিরুদ্ধে 'অশ্লীল শব্দ' ব্যবহারকারী সেই যুবকটিকে। যেমন আমরাও পারি না। বেঠিকের মুখের উপরে 'বেঠিক' বলা হয়ে ওঠে না। বাড়িতে এসে টিভির পর্দার চ্যাট শো আমাদের রক্ত গরম করে। 'ঠুকে মারি' আর 'মুখে মারি'-র যুদ্ধে যে জয় 'মুখে মারি'-র বাঁধা, তা দেখিয়ে গিয়েছিলেন সুকুমার রায়। আর অস্ফুটে সেই বাক্যতে সায় দিয়ে যান গল্পকারও।

যৌনতা থেকে সমকাম, কোনও কিছু নিয়েই আলাদা কোনও ট্যাবু অলোকপর্ণার নেই। বরং যৌনতার ছককেও প্রতিমুহূর্তে তাঁর গল্পে ভাঙতে ভাঙতে যান গল্পকার। 'লতা, লতা' গল্পে যে যৌনতার দিকে আলো ফেলেছেন গল্পকার, সে আসলে এক অসুস্থ সমাজের দিকে ইঙ্গিত করে। তবু তাকে অ্যানাথেমা বলে দূরে ঠেলে দেন না লেখক। কারণ তিনি গোড়াতেই পাঠকের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন যা বলবেন তিনি সত্য বলবেন।  

"প্রথমে তারা মদ খায়। তারপর রুটি মাংসকে আত্মস্থ করে। তারপর একে অপরকে। এমনভাবে,- যেন রাজুই একটু আগে গিলে ফেলা রুমালি রুটির টুকরো। যেন মানস মুরগির খণ্ড খণ্ড গলার হার। মানস রাাজুকে চিবিয়ে খায়। রাজু মানসকে কামড়ে খেয়ে ফেলে। একে অপরকে হজম করতে বেশি সময়লাগে না তাদের। শেষ অবধি তেলচিটে বিছানায় রাজু আর মানসের ছিবড়ে ছড়িয়ে থাকে।" 

(একটি আপেল, একটু রাজু / যাহা বলিব, সত্য বলিব)         

আরও পড়ুন: হাঙর নদীর গ্রেনেড: সেলিনা হোসেনের কলমে নারীত্বের অনন্য আখ্যান

তবু এই সমস্ত লোভ, লালসা, পৃথিবীর পার্থিব সব পাপবোধের পরেও জেগে থাকে 'কস্তুরীগন্ধ'। সেই সুবাসের সন্ধানও দিয়ে যেতে চান গল্পকার। নরক সত্য, কিন্তু স্বর্গও।  মান্দাস প্রকাশিত 'যাহা বলিব সত্য বলিব' বইতে মোট ১৬টি গল্প রেখেছেন অলোকপর্ণা। ষোলোটি গল্পই মানুষের কথা বলে, বলে সমাজের কথা, তাঁর সংক্রমণ কিংবা মনঃস্তত্বের কথা। মানুষের যে পিঠ অসূর্যস্পর্শা, চাঁদের জ্যোৎস্না এসে পড়ে না যে দিকটিতে, সেই নির্বিকার, অন্ধকার পিঠের কথা জলের মতোন লেখেন গল্পকার। কারণ আখেরে তিনি 'সত্যি'টাই বলতে বসেছেন। পাঠক-প্রমোদের গুরুভার তাঁর নেই।  তাই তাঁকে যুধিষ্ঠিরের মতো  'ইতি গজ' বলতে হয় না। দৃপ্তকণ্ঠে মুখবন্ধের শেষে তিনি লিখে রাখেন 'ইতি কুঞ্জর'। 


বই: যাহা বলিব, সত্য বলিব
লেখক: অলোকপর্ণা
প্রকাশনা: মান্দাস
প্রচ্ছদ: চিরঞ্জিৎ সামন্ত
দাম: ২৫০/-

More Articles