ছয়টি ফ্ল্যাট, ক্রেতা ১২৫ জন! যে ভয়াবহ জালিয়াতির কবলে পড়তে পারেন আপনিও

Khardah Flat Fraud : একটিই চারতলা বিল্ডিং। তাতে ছয়টি ফ্ল্যাট রয়েছে। অথচ থাকবেন ১২৫ জন!

একটিই চারতলা বিল্ডিং। তাতে ছয়টি ফ্ল্যাট রয়েছে। অথচ থাকবেন ১২৫ জন! না পরিবারের সদস্য সংখ্যা নয়, ওই ছয়টি ফ্ল্যাট বিক্রিই করা হয়েছে ১২৫ জন ক্রেতাকে! এই ১২৫ জন ক্রেতাই আবার একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে গৃহঋণ নিয়েছিলেন। পরে কেউই মাসিক কিস্তিতে এই পরিশোধ করতেও পারেননি৷ একসঙ্গে এতজনের এই ঋণ খেলাপের বিষয়টি চোখে আসতেই প্রথম সন্দেহের শুরু।

কলকাতার থিয়েটার রোডের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের অভিযোগের ভিত্তি কলকাতা পুলিশ বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছে। প্রতারণার অভিযোগে এখনও অবধি আটজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। ওই ব্যাঙ্কটিই ঋণ মঞ্জুর করেছিল। ওই ফ্ল্যাটের যৌথ মালিক এবং এই গোটা ঘটনার মাস্টারমাইন্ড বলে যাকে সন্দেহ করা হচ্ছে সেই মহিলা অবশ্য নিখোঁজ।

ওই বিল্ডিংটিতে আসলে মোট ১২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ফ্ল্যাটগুলি খড়দায় অবস্থিত। পুলিশ বলছে, যে ব্যাঙ্ক অভিযোগ দায়ের করেছে তারা দেখেছে যে ১২টি ফ্ল্যাটের মধ্যে অন্ততপক্ষে ছয়টি ফ্ল্যাটই আসল নথিপত্র ব্যবহার করে ১২৫ জন ক্রেতার কাছে বিক্রি করা হয়েছে। এই ক্রেতারা নিজেদের আসল কেওয়াইসি নথি ব্যবহার করে একই ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখা থেকে ঋণ নিতেন। ব্যাঙ্ক ঋণ মঞ্জুর করলেই ব্যাঙ্কের নিয়ম অনুযায়ী সেই ঋণের টাকা ফ্ল্যাটের ডেভেলপারকে দেবে। সেই ডেভেলপার আবার সেই একই ফ্ল্যাট অন্য ক্রেতার কাছে বিক্রি করছেন যিনি আবার প্রকৃত কেওয়াইসি নথি ব্যবহার করে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেবেন। তবে এক্ষেত্রে সম্পত্তির নামধাম এবং সম্পত্তির আকার আয়তন পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। ফলে যে ব্যাঙ্ক ঋণ দিচ্ছে সেই ব্যাঙ্ক বুঝতেই পারেনি যে একই সম্পত্তির জন্য বিভিন্ন ক্রেতা ঋণ নিচ্ছেন।

আরও পড়ুন- “দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজ্য…” পশ্চিমবঙ্গ নয়, রাহুলের ন্যায় যাত্রার নিশানায় যে রাজ্য

এখনও পর্যন্ত তদন্ত চালিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কটি ডেভেলপার এবং অন্যান্য সহযোগীদের সাহায্যে ছয়টি ফ্ল্যাটের জন্য ঋণ নিয়ে এবং ঋণ খেলাপি করে প্রায় ১.১২ কোটি টাকার প্রতারণা করেছে। নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোনও ব্যক্তি গৃহঋণ নিয়ে তা ফেরত দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে একটি নির্দিষ্ট সময় এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক নোটিশ দেওয়ার পরে যিনি ঋণ নিয়েছেন ব্যাঙ্ক তাঁর সেই সম্পত্তির দখল নিতে নেয়। এই ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক এমনটা করতে পারছে না কারণ একাধিক ক্রেতা যারা এই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন তারা তো আসলে একই সম্পত্তির জন্য অন্য ব্যাঙ্ক থেকে গৃহঋণ নিয়েছেন৷

একই সম্পত্তির জন্য একাধিক ব্যাঙ্ক থেকে গৃহঋণ নিলে সেই সম্পত্তিতে কোনও ব্যাঙ্কের দখল কমে আসে কারণ সমস্ত ব্যাঙ্কেরই এটিতে সমান দাবি রয়েছে। তাই ক্রেতারা ঋণ খেলাপ করলেও ব্যাঙ্ক ওই ফ্ল্যাটগুলির দখল নিতে পারেনি।

যে আটজন ব্যক্তিকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা ডেভেলপার এবং ভুয়ো ক্রেতাদের নিয়ে গঠিত একটি বড় র‌্যাকেটের অংশ বলেই অভিযোগ। এরা একই সম্পত্তির জন্য গৃহঋণ নিতে আসল কেওয়াইসি নথি ব্যবহার করছে এবং ডেভেলপারকে ঋণ পাইয়ে দিচ্ছে।

More Articles