রাতদিন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে নাছোড় গানের কলি! কীভাবে তাড়াবেন গান-পোকা?

Earworms: রাস্তাঘাটে, কাজের ফাঁকে হয়তো কানে এসেছিল গানের একটি বা দু'টি কলি। আর অমনি সর্বনাশ। সে গানের বিশেষ অংশখানা সোজা গিয়ে সিঁধিয়ে গেল আপনার মাথায়। এক্কেবারে বিনা নিমন্ত্রণে।

গান ভালোবেসে গান। গান ভালোবেসে শোনেনও। কিন্তু এই ভালোবেসে শোনা আর ভালোবেসে গাওয়ার মাঝখানে পড়ে থাকে মাথা থেকে বের করতে না পারা নাছোড় গানের কলি। 'গুনগুন গুঞ্জে আমার এ কী গুঞ্জরণ!' সেই গুঞ্জরণ মাঝে মধ্যে নিজের কাছেই হয়ে ওঠে অসহ্য। ঠিক যেন প্রাক্তন প্রেম, যত ভোলার চেষ্টা, তত রক্তক্ষরণ। এদিকে রাস্তাঘাটে, ডাক্তারখানায়, অফিসের কাজে, এমনকী শ্রাদ্ধবাড়িতেও গুনগুনিয়ে ফেলছেন সেই গান। কখনও কখনও নিজের অজান্তেই চড়ে যাচ্ছে সুরও।

সে গান হয়তো আপনি সচেতন ভাবে ভালোবেসেই শুনেছিলেন। কখনও বা সম্পূর্ণ উল্টোটাই। রাস্তাঘাটে, কাজের ফাঁকে হয়তো কানে এসেছিল গানের একটি বা দু'টি কলি। আর অমনি সর্বনাশ। সে গানের বিশেষ অংশখানা সোজা গিয়ে সিঁধিয়ে গেল আপনার মাথায়। এক্কেবারে বিনা নিমন্ত্রণে। যতদিন না পর্যন্ত গান বেরোতে চাইছে, ততদিন আপনার দু-হাত বাঁধা। ধরেই নিন, আপাতত এই গুনগুনানি আপনার ভবিতব্য। কিন্তু কখনও ভেবেছেন কি কেন এমন হয়! কেন চেনা-অচেনা গানের কথা, গানের সুর ফিরে ফিরে মনে আসে? কেন তাকে ঝেড়ে ফেলা যায় না সহজে?

আরও পড়ুন: আইপিএল মানেই গ্যালারি জুড়ে সেই ভেঁপুর মিউজিক! বিখ্যাত সুরটির পেছনে রয়েছে কোন ইতিহাস?

বিজ্ঞানের ভাষায় গালভরা একটি নামও রয়েছে এই সমস্যার। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, একে বলা হয় ইনভলেন্টারি মিউজিক্যাল ইমেজারি বা INMI। ডাক নাম ইয়ারওয়ার্ম, কেউ কেউ আবার ব্রেনওয়ার্ম বা স্ট্রাক সং সিন্ড্রোম বলেও ডেকে থাকেন একে। শুনলে বড়সড় কঠিন ব্যাধির মতো শোনালেও খুবই সহজ সমস্য়া এটি একটি। ফি দিন এমন গানপোকার কবলে পড়ি আমরা। একটি গান আসে, অন্য গান যায়। আবার তার জায়গা দখল করে বসে নয়া গানের কলি।

তবে যে কোনও গানের ক্ষেত্রেই যে এমনটা হয় তা কিন্তু নয়। তার জন্য গানের ভিতর থাকতে হয় বিশেষ কয়েকটা গুণ। ইদানীং তো প্রায়শই কোনও না কোনও গানকে ভাইরাল হতে দেখি আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায়। তার পিছনেও কিন্তু আদতে থাকে এই ইনভলেন্টারি মিউজিক্যাল ইমেজারির কারিকুরির। কোন গান ভাইরাল হবে আর কোন গান হবে না, তা কিন্তু আদতে ঠিক করে দেয় গানের অন্দরের কিছু গুণই। যা একনিমেষে পেরিয়ে ফেলে ভাষা, সময়, আঞ্চলিকতার গণ্ডি। শ্রীলঙ্কার ভাষায় লেখা 'মানিকে মাগে হিথে' হোক বা পাকিস্তানের গান 'পাসুরি', সবকটি ভাইরাল হয়ে যাওয়া গানের পিছনেই আসলে রয়েছে ওই 'ক্যাচি ফ্যাক্টর'-টিই। এমনকী 'কাঁচা বাদাম'-এর মতো তথাকথিত মোটা দাগের গানের বেদম হিট হওয়ার পিছনেও কিন্তু কাজ করেছে সেই কারণগুলিই।

বিশেষজ্ঞেরা সেই সব কারণের মধ্য সবার প্রথমে রেখেছেন গানের মাত্রা বা তালকেই। অনেক সময় দেখা যায়, দ্রুত লয়ের গান বেশি তাড়াতাড়ি জনপ্রিয়তা পায়। তবে শুধু তালই নয়, গানের সুর এবং লিরিক্স বা কথাও অনেক সময় এর জন্য দায়ী। অনেকসময়ই দেখা যায়, সম্পূর্ণ অচেনা একটা গান প্রথম বার শুনেই তার তালে নেচে ফেললেন দিব্যি। কখনও কখনও নিজের অজান্তেই দুলে উঠল কোমর কিংবা নেচে উঠল পা। তার অন্যতম কারণ হল, আপনার কাজের ছন্দের সঙ্গে গানের সুর বা তালের ছন্দের হঠাৎ করে মিলে যাওয়া। সেই গানের আর 'আপনার' হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগে না। কখনও কখনও আবার গানের মধ্যেকার আবেগ বা অনভূতি তার সুর বা কথা দিয়ে এমনভাবে আমাদের ছোঁয়, যে গানটি বসে যায় মনের মণিকোঠায় কিংবা মাথায়। অর্থাৎ সেই বিশেষ গান বা গানগুলি এক নিমেষেই পূরণ করে ফেলে ইয়ারওয়ার্ম হয়ে ওঠার সমস্ত শর্ত। আর সেসব গান জনপ্রিয়ও হয় তাড়াতাড়ি।

এমন তো অনেক সময়েই হয়, একটাই গান বারবার শুনে যাচ্ছেন। দিনে রাতে লুপে। তবু সেই গানের প্রতি ভালোলাগা কমছে না এতটুকু। অনেক সময়েই এই ভালোলাগা কয়েক মিনিট, কয়েক ঘণ্টা, কয়েক দিন এমনকী কয়েক মাস পর্যন্ত চলতে পারে। একই কথা খাটে ইয়ারওয়ার্ম বা এই গানের পোকার ক্ষেত্রেও। এই কানের এবং গানের পোকাও আমাদের মাথায় থেকে যেতে পারে কয়েক ঘণ্টা, কয়েক দিন এমনকী কয়েক মাস পর্যন্ত। তবে সবসময়েই যে কানের পোকা প্রাণের পোকাও হবে, তার তো কথা নেই। অনেক সময় অপছন্দের গানও মাথায় ঢুকে বসে থাকে গোঁয়ারের মতো। কীভাবে নিষ্কৃতি পাবেন এমন কানের পোকার হাত থেকে?

 

হ্যাঁ, বিশেষজ্ঞদের কাছে রয়েছে তারও দাওয়াই। মগজে জবরদখল নেওয়া গানকে সরাতে সম্পূর্ণ অন্য ধরনের গান শুনে দেখুন। যাতে পুরনো ইয়ারওয়ার্মকে হঠিয়ে পোকা হয়ে উঠতে পারে নতুন কোনও গান। বিশেষজ্ঞরা বাতলেছেন আরও একটি উপায়। যে গানটা নাছোড় হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে মাথায়, সময় করে বসে শুনে ফেলুন সেই গানটা আরও একবার। একবার নাহলে বারকতক। পুরনো গানের পোকা থেকে রেহাই পেতে এ উপায় নাকি অব্যর্থ। এখানেই শেষ নয়। আরও একটি সহজ সমাধান বাতলেছেন কেউ কেউ। চুইংগাম নাকি হতে পারে এই কানপোকার হাত থেকে বাঁচার একটি পথ। মাথায় গানের সুর কিলবিল করলে একটি চুইংগাম নিয়ে চিবোতে থাকুন। আমাদের চোয়ালের মাসলের নড়াচড়া নাকি ইয়ারওয়ার্ম তাড়ানোর ক্ষেত্রে বড়সড় সাহায্য় করতে পারে।

আরও পড়ুন:বিয়ে বাড়িতে ব্যাপক ডিজে! যে কোনও মুহূর্তে হার্ট অ্যাটাক কাড়বে আপনার প্রাণ

তবে ইয়ারওয়ার্ম নিয়ে কিন্তু বিশেষ ভাবনাচিন্তা করারও কিছু নেই। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, সাধারণ ভাবে চব্বিশ ঘণ্টার বেশি মাথায় ঘুরপাক খায় না কোনও একটি বিশেষ গানের কলি। ব্যতিক্রম অবশ্য আছে। তবে যদি অনেকদিন পর্যন্ত একই গানের কলি বনবন করতে থাকে মাথায়, সেক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই ব্রেন ডিজঅর্ডারের লক্ষণ হতে পারে এই INMI। তবে এমন ঘটনা বিরলতম। আমাদের চারপাশে সারাদিন কত কিছু ঘটতেই থাকে। খবরের কাগজ বা চ্যালেন খুললেই খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি নয়তো দুর্নীতির খবর। সেখানে গান তো আসলে আমাদের অবসরের সঙ্গী, কখনও কখনও একাকিত্বের দোসর , কখনও আবার মলমও। ফলে অনেক সময়ই মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া গানের কলি আসলে আমাদের আনন্দই দেয়। সত্যি কথা বলতে, সেসব অহেতুক, অবাঞ্ছিতর থেকে কিন্তু গান-পোকা ভালো। ফলে গান ভালোবেসে গান, এবং গুনগুনও করুন।

More Articles