চিকিৎসক নেই, ৪৮ ঘণ্টায় শিশু-সহ ৩৫ রোগীর মৃত্যু হাসপাতালে! দায় কার?

Maharashtra hospital deaths: হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে এখনও ভর্তি রয়েছেন একগুচ্ছ রোগী। এমনকী নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি রয়েছে ৬৭টি শিশু।

হাসপাতাল চলছে। কিন্তু চিকিৎসক অমিল। স্বাভাবিক ভাবেই মরছে রোগী। ৪৮ ঘণ্টায় অন্তত ৩৫ জন রোগীর মৃত্যু ঘটেছে মহারাষ্ট্রের নান্দেড়ে। তার মধ্যে ১৬টি কয়েকটি শিশুও রয়েছে। মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধন্দে রাজ্যপ্রশাসন। তবে কেউ কেউ মনে করছে হাসপাতালে চিকিৎসকের ঘাটতিই দায়ী এই বিপুল সংখ্যক রোগীমৃত্যুর জন্য।

স্বাভাবিক ভাবেই রুষ্ট প্রশাসন। ৪৮ ঘণ্টার মাথায় ৩৫টি রোগীমৃত্যু বলে কথা। ড. শঙ্কররাও চবন গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে রোগীমৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে লাফিয়ে। আর এ ঘটনা যে রাজ্য সরকারের কাছে খুব একটা সুখকর নয়, তা নতুন করে বলে দিতে হয় না। এই অবস্থায় হাসপাতাল পরিদর্শনে গেলেন শিবসেনা নেতা, সাংসদ হেমন্ত পাতিল। ক্ষুব্ধ নেতা ঝাঁটা তুলে দিলেন হাসপাতালের ডিনের হাতে। নির্দেশ দিলেন হাসপাতালের শৌচালয় পরিষ্কার করার। শুধু নির্দেশ দিয়েই ক্ষান্ত হলেন না। নিজের সামনে দাঁড়িয়ে হাসপাতালের ডিনকে দিয়ে শৌচালয় পরিষ্কার করালেন তিনি। জলের পাইপ, ঝাঁটা নিয়ে হাসপাতাল ডিনের শৌচালয় পরিষ্কারের ভিডিয়ো ভাইরাল হল সোশ্যাল মিডিয়ায়। যোগ্য শাস্তি হয়েছে ভেবে মনে মনে বেশ আরাম পেলেন নেটিজেন থেকে রাজ্যবাসী।

আরও পড়ুন: হু হু করে বাড়ছে সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম, শিশুকে নিরাপদ রাখতে এই নিয়ম মানতেই হবে

হাসপাতালের সমস্ত ডাক্তারদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়েরের দাবি জানিয়েছেন ওই বিজেপি সাংসদ। কিন্তু এই যে এতগুলো মৃত্যুর পিছনে কি শুধুই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা চিকিৎসকেরাই দায়ী। সরকারের কোনও দায়ই কি নেই! মেডিক্যাল এডুকেশন মিনিস্টার হাসান মাসরিফ অবশ্য হাসপাতাল পরিদর্শনের পরে জানান, রোগীমৃত্যুর জন্য দায়ী আদতে চিকিৎসক কম থাকাই। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই নতুন কোনও নিয়োগ হয়নি। যতদিন না তা হয়, চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসক নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তবে সেই পরিকল্পনা কতটা রূপায়ণের পথে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। শুধু শঙ্কররাও হাসপাতালেই নয়, আরও ১৪টি মৃত্যুর খবর মিলেছে মহারাষ্ট্রের সম্ভাজি নগরের গভর্মেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকেও। যদিও সেই হাসপাতালের সুপারিন্টেড ড. বিজয় কল্যানকর এই মৃত্যুর জন্য চিকিৎসকের ঘাটতি দায়ী নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

Nanded hospital death toll goes up to 35 including 16 infants

রাজ্যের দু-দুটি হাসপাতালে বিরাট সংখ্যক রোগীমৃত্যু নিয়ে কার্যতই বিপাকে সে রাজ্যের বিজেপি সমর্থিত একনাথ শিন্ডে সরকার। পর পর রোগীমৃত্যুর ঘটনায় দুটি হাসপাতাল থেকেই রিপোর্ট তলব করেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যপ্রতিমন্ত্রী ভারতী পওয়ার। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। নান্দেড়ের ওই হাসপাতালের ঘটনায় সরকারি তদন্ত ও পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডেও। দোষীদের ছাড় নয়, সাফ জানিয়েছেন তিনি।

Nanded hospital death toll goes up to 35 including 16 infants

যে হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় প্রাণ যাচ্ছে একাধিক রোগীর, যার মধ্যে রয়েছে শিশু থেকে শুরু করে সদ্যোজাতরাও, সেই হাসপাতালে ভালো ডাক্তার নিয়ে আসা তো দূরের, চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসক নিয়োগের কথা কেন ভাবছে সরকার, স্বাভাবিক অনেকেই ভ্রুকুঞ্চিত করেছেন ব্যাপারটি নিয়ে। যদি মেডিক্যাল এডুকেশন মন্ত্রী মাশরিফ জানান, চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসক আনার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত ডাক্তারদের হাসপাতালে আনার ভাবনাও ভাবছে সরকার। প্রয়োজন হলে, বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাহায্য নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। মাশরিফ আপও জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই নার্স ও নিকাশিকর্মী নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

Nanded hospital death toll goes up to 35 including 16 infants

শিন্ডে শিবিরের সাংসদ হেমন্ত পাতিল নান্দেড়ের হাসপাতাল দেখতে এসে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। হাসপাতালে যথাযথ সুস্বাস্থ্যব্যবস্থা বজায় রাখা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে হাসপাতালের ডিনকে কড়া শাস্তিও দেন তিনি। তাঁকে বাধ্য করা হাসপাতালের নোংরা পুতিগন্ধময় শৌচাগার পরিষ্কার করতে। চিৎকার করে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, সরকার কোটি কোটি টাকা ঢালছে হাসপাতালের পিছনে। আর মাসের পর মাস ধরে পরিষ্কার করা হচ্ছে না হাসপাতালের শৌচালয়। কর্তব্যে অবহেলার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও শাসান সাংসদ। আর তাতেই রেগে গিয়েছে মহারাষ্ট্রের রেসিডেন্ট চিকিৎসদের রাজ্য সংগঠন। হাসপাতালে পরের পর মৃত্যুর জন্য সরকারি পরিকাঠামোকেই দুষেছেন তারা। তাঁদের বক্তব্য, হাসপাতালে ডাক্তার না-থাকার দায় ডিনের নয়, বরং নিয়োগ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না সরকার। তার জেরেই একের পর এক মৃত্যু। পাশাপাশি রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়েও বড়সড় প্রশ্ন তুলেছে চিকিৎসকদের সংগঠনটি।

আরও পড়ুন: বিষাক্ত কাশির সিরাপে শিশুমৃত্যু! ভারতে মিলছে অবাধে, কীভাবে তিলে তিলে প্রাণ নেয় ‘ওষুধ’

স্বাভাবিক ভাবেই শিন্ডে শিবিরের এত ফাঁকটির সুযোগ নিতে ছাড়েনি উদ্ধব শিবিরও। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যসরকারে কড়া নিন্দা করেছে এনসিপিও। সম্ভাজি নগরের হাসপাতালটির রোগীমৃত্যুর তনন্তে গড়া হয়েছে তিন সদস্যের একটি কমিটিও। যত দ্রুত সম্ভব তাদের তদন্ত রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নান্দেড়ের হাসপাতালে নিহতদের মধ্যে ১৬টি শিশু রয়েছে, তার মধ্যে একটি যমজ সদ্যজাত ছিল বলেই জানা গিয়েছে। হাসপাতাল জুড়ে রোগীর আত্মীয়দের হাহাকার আর কান্না যেন বাতাস ভারী করে রেখেছে। হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে এখনও ভর্তি রয়েছেন একগুচ্ছ রোগী। এমনকী নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি রয়েছে ৬৭টি শিশু। আর তাদের রক্ষনাবেক্ষনের জন্য রয়েছে মাত্র ১২ জন নার্স। ফলে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। কবে হবে হাসপাতালে কর্মীনিয়োগ। সরকারের টনক নড়তে নড়তে রোগীমৃত্যুর সংখ্যাটা আকাশ ছুঁয়ে ফেলবে না তো, সেই চিন্তাটাই আপাতত ভাবাচ্ছে মহারাষ্ট্রকে।

 

More Articles