ভয়াবহ সঙ্কটে বাংলার ৮৬% পুরুষ! কোলে ল্যাপটপ রেখে ডেকে আনছেন মারাত্মক ঝুঁকি
Sperm Count: ২০১৮ থেকে ২০২১ সালে বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় চিকিৎসা করানোর পুরুষের সংখ্যা বাংলায় সর্বাধিক।
সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে পুরুষ এবং নারী দু'জনেরই স্বাস্থ্যবান হওয়া জরুরি। তবে আধুনিক জীবনযাত্রায় নারী-পুরুষ দু'জনেই বিবিধ যৌন সমস্যার সম্মুখীন হন। রিপোর্ট বলছে, প্রতি ছয় জন দম্পতির মধ্যে একজন বন্ধ্যাত্বের শিকার। পাশাপাশি প্রত্যেক তিনজন পুরুষের মধ্যে একজন প্রজননজনিত সমস্যায় ভুগছে। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, সারা পৃথিবীতে প্রায় ৬০ থেকে ৮০ মিলিয়ন মানুষ বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় ভুক্তভোগী। এর মধ্যে অর্ধেকই পুরুষ। পুরুষদের মধ্যে নানা কারণে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে। মূলত বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কম যাওয়া এবং যৌনাঙ্গের নানা সমস্যার কারণে বন্ধ্যাত্ব দেখা যায়। মারাত্মক তথ্য সামনে এসেছে দেশব্যাপী এক সমীক্ষা থেকেই। সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে,বাংলায় ৮৬ শতাংশ পুরুষের বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি রয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২১ সালে বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় চিকিৎসা করানোর পুরুষের সংখ্যা বাংলায় সর্বাধিক। তাই আগেভাগেই সচেতন হওয়া জরুরি। পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব দেখা যায় ঠিক কোন কোন কারণে?
১. ক্রোমোজোমঘটিত রোগ
ক্রোমোজোম ঘটিত বিভিন্ন রোগ যেমন ক্লাইন, ফিল্টার সিন্ড্রোমের কারণে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যেতে থাকে এবং ফলস্বরূপ বন্ধ্যাত্ব দেখা যায়।
২. ড্যারিকোসিন
এটি এক ধরনের অণ্ডকোষের রোগ যার ফলে শুক্রাশয়ের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও অনেকক্ষণ ধরে সাইকেল চালানো, অতিরিক্ত তাপের কাছে বসে থাকার কারণেও শুক্রাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৩. অতিরিক্ত ফোন ও ল্যাপটপের ব্যবহার
পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব সংক্রান্ত সমস্যাগুলি সম্পর্কে গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে আমাদের যন্ত্র নির্ভর জীবনযাত্রা এর জন্য অনেকখানি দায়ী। রাতের পর রাত জেগে মোবাইল ঘাঁটা বা ল্যাপটপ কোলের উপর রেখে দীর্ঘক্ষণ ধরে কাজ করার কারণে পুরুষদের স্পার্ম কাউন্ট, স্পার্ম মোটিলিটি কমতে থাকে। এক্ষেত্রে স্পার্ম মোটিলিটি বলতে শুক্রাণুর একস্থান থেকে অন্যস্থানে চলাচল করার ক্ষমতাকে বোঝানো হয়েছে।
আরও পড়ুন- যৌন সংসর্গে অশনি সংকেত! এই মারণ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এড়াতে জানতেই হবে যে তথ্য
৪. ধূমপান ও মদ্যপান
আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জানিয়েছেন, অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান করলে পুরুষদের ফার্টিলিটি অনেকটাই কমে। ফলে এই ধরনের নেশা যত দ্রুত সম্ভব ছেড়ে দেওয়াই ভালো।
৫. পরিবেশ দূষণ
পরিবেশ দূষণের কারণে পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব ধীরে ধীরে মহামারীর আকার ধারণ করছে। শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে দূষিত বায়ু শরীরে প্রবেশ করায় পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে। এমনকি যৌনবাসনাও চলে যেতে পারে।
বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ
পুরুষদের মধ্যে বন্ধ্যাত্বের সবচেয়ে সুস্পষ্ট লক্ষণগুলি হল-
১. যৌন সঙ্গমে সমস্যা, স্বল্প পরিমাণে বীর্যপাত ছাড়াও অনেক পুরুষের যৌন ইচ্ছা একেবারে কমে যায়।
২. বারবার শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ
৩. অণ্ডকোষ এলাকায় জমাট পিন্ড বা ফোলা ভাব বা ব্যথা
৪. স্তনের অস্বাভাবিক বিকাশ
৫. গন্ধ গ্রহণে অক্ষমতা
৬. মুখ ও শরীরের ওপরের অংশ থেকে চুল কমে যাওয়া
পরীক্ষা
পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব চিহ্নিত করার জন্য বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা-
১. মেডিক্যাল হিস্ট্রি অ্যাসেসমেন্ট
এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের সমস্যা বোঝার জন্য রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত ইতিহাস ভালোভাবে যাচাই করে নেন। অতীতের দুর্ঘটনা, অসুস্থতা বা অস্ত্রোপচারের থেকে পরবর্তীকালে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে।
২. বীর্য বিশ্লেষণ
পুরুষদের বীর্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে শুক্রাণুর স্বাস্থ্য ও বিকাশের সম্ভাবনা সম্পর্কে নিশ্চিত ধারণা পাওয়া যায়। সাধারণত শুক্রাণুর সংখ্যা, আকার এবং গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়।
৩. জেনেটিক টেস্টিং
যদি বীর্য বিশ্লেষণ করে শুক্রাণুর সংখ্যা খুব কম পাওয়া যায় তবে এই পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যাওয়ার অর্থ হতে পারে সেই ব্যক্তি জেনেটিক সমস্যার কারণে বন্ধ্যাত্বের সম্মুখীন হয়েছে।
৪. হরমোন লেভেল রক্ত পরীক্ষা
হরমোন শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক যা শুক্রাণু উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া হরমোন যৌন মিলনের ইচ্ছা এবং ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করে। হরমোনের মাত্রা বেশি বা কম হওয়ার কারণে শুক্রাণুর উৎপাদন এবং যৌনতায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। পুরুষের শরীরের দু’টি হরমোন প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়, যা হল ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন এবং টেস্টোস্টেরন। এই পরিস্থিতিতে বন্ধ্যাত্ব শনাক্ত করার জন্য রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে পুরুষদের শরীরে উপস্থিত দুটো হরমোনের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়।
আরও পড়ুন- যৌনসুখে বাধা নয় কন্ডোম, চরম মুহূর্ত দীর্ঘ করতে কী টোটকা লুকোনো নিরোধে?
চিকিৎসা
বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা বেশ কয়েকটি উপায় করা যেতে পারে -
১. অস্ত্রোপচার
স্পার্ম বেরানোর পথে কোনও বাধা সৃষ্টি হলে তা ভাস ডিফারেন্স অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে স্বাভাবিক করা যেতে পারে। এছাড়া স্পার্ম রিট্রিভাল পদ্ধতির মাধ্যমে শুক্রাণু বের করা সম্ভব।
২. সংক্রমণের চিকিৎসা
যৌন নালির ভিতরে কোন সংক্রমণ থাকলে অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে তার চিকিৎসা করা সম্ভব।
৩. হরমোন থেরাপি
শরীরে প্রজননে সহায়তাকারী হরমোনের মাত্রা কম থাকলে ওষুধের মাধ্যম তা স্বাভাবিক করা সম্ভব।
৪. অনেকক্ষেত্রে জীবনধারার মান উন্নত করেও এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। সঠিক ডায়েট মেনে খাবার খেলে, নিয়মিত শরীরচর্চা করলে, দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যাপ্ত ঘুমের ফলে শরীর সুস্থ হয়ে ওঠে। যার ফলে বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যাও পর্যাপ্ত হয়।