ডিজিটাল ভারতে সাইবার জালিয়াতির বাড়বাড়ন্ত, দেশের নয়া জামতাড়া এবার ভরতপুর

পড়াশোনা করেও বাজারে চাকরি নেই। অথচ প্রযুক্তির বাড়বাড়ন্তের কোনও অভাব নেই। সেই সুযোগটা নিয়েই নিজেদের কাজের জায়গা নিজেরাঅ করে নিয়েছিল ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া এলাকার একদল ছেলেপুলে। তারা হয়ে উঠেছিল কুখ্যাত জামতাড়া গ্যাং। প্রতারণার জগতে নয়া ত্রাস যাকে বলে। ক্রমাগত দেশের ফিশিং ক্যাপিটলে পরিণত হল জামতাড়া। আজও সাইবার প্রতারণার সমার্থক বোধহয় এই জামতাড়া শব্দটি। তবে দিনে দিনে জামতাড়ার সেই চক্র সক্রিয় হয়েছে গোটা দেশ জুড়ে। ডিজিটাল ভারতে সাইবার অপরাধ আর নতুন কোনও বিষয় নয়। ফি দিন কোনও না কোনও জায়গা থেকে সাইবার অপরাধের অভিযোগ উঠছে তো উঠছেই। ফলে জামতাড়া গ্যাং যে আর জামাতাড়াতেই সীমাবদ্ধ নেই শুধু সেটা বলাই যেতে পারে। আর খুব শিগগিরই জামতাড়ার সেই মুকুট রাজস্থান আর উত্তরপ্রদেশ কাড়ল বলে।

সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) কানপুর অনুমোদিত সংস্থা ফিউচার ক্রাইম রিসার্চ ফাউন্ডেশন (এফসিআরএফ)-এর সমীক্ষা রিপোর্টে। যেখানে দেখা গিয়েছে, ভারতের নয়া জামতাড়া এখন রাজস্থানের ভরতপুর ও উত্তরপ্রদেশের মথুরা। ভারতে ঘটে চলা সাইবার অপরাধগুলির নিরিখে সেরা দশটি জেলার তালিকা তৈরি করেছে সমীক্ষাকারী সংস্থাটি। সেই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারতপুর। সেখানে সাইবার অপরাধের হার ১৮ শতাংশ। ১২ শতাংশ অপরাধের হার নিয়ে তালিকায় দ্বিতীয় মথুরা। এরপরে রয়েছে  হরিয়ানার নুহ (১১%), ঝাড়খণ্ডের দেওঘর (১০%), ঝাড়খণ্ডের জামতারা (৯.৬%), হরিয়ানার গুরুগ্রাম (৮.১%), রাজস্থানের আলওয়ার (৫.১%), ঝাড়খণ্ডের বোকারো (২.৪%), ঝাড়খণ্ডের কর্মাটাঁর (২.৪%) ও এবং গিরিডি (২.৩%)। গোটা দেশে যে পরিমাণ সাইবার অপরাধ নথিভুক্ত হয়, তার ৮০ শতাংশই সংঘটিত হয়েছে এই রাজ্যগুলিতে।

আরও পড়ুন: শহর জুড়ে আধার জালিয়াতি, কী ভাবে বাঁচাবেন আপনার সঞ্চয়?

দেশ ডিজিটাল হয়েছে। পেটে ভাত থাক না থাক, হাতে প্রায় প্রত্য়েকের একটি করে স্মার্টফোন আলবাত রয়েছে। সেই ফোন থেকেই আমরা সেরে ফেলি শপিং থেকে ব্যাঙ্কিং। দুনিয়া এখন বন্দি ওই মুঠোফোনেই। যন্ত্রের সঙ্গেই আসে যন্ত্রণা, আর সেই যন্ত্রণার মতোই দুনিয়া জুড়ে ছায়া ফেলছে সাইবার অপরাধ। বহু দূরে বসে আপনার মোবাইল থেকে লুঠ হয়ে যাচ্ছে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য থেকে শুরু করে আপনার কষ্টোপোর্জিত টাকা। কখনও বোকা বানিয়ে ওটিপি চেয়ে, কখনও বা আপনার মোবাইলের অ্যাকসেস হাতিয়ে চলছে ডাকাতি। যত বজ্র আঁটুনি, তত ফাঁক ফোকর খুঁজে চলছে প্রতারণা। একটা সময় জামতাড়া কিংবা নুহ ছিল এই ধরনের প্রতারণার রাজধানী। আর এখন ওই সব জেলাগুলিকে পিছনে ফেলে এখন সাইবার প্রতারণার নিরিখে একেবারে পয়লা নম্বরে উঠে আসছে ভারতপুর ও মথুরা।

Move over Jamtara! Bharatpur is now the new cybercrime hotspot in India

ওই দশ জেলার নাম তালিকায় থাকলেও গোটা দেশ জুড়েই কিন্তু এই ধরনের সাইবার প্রতারণা বাড়ছে। কিন্তু ওই জেলাগুলিতে মাত্রা ছাড়িয়েছে এই ধরনের অপরাধ। কিন্তু কেন এই সব জেলাগুলি সাইবার অপরাধের মুখ হয়ে উঠছে দিনে দিনে? তার কারণ খুঁজতে নামলে হাতে উঠে আসবে একগুচ্ছ কারণ। তার মধ্যে যেমন রয়েছে ভৌগোলিক কারণ, তেমনই রয়েছে অর্থনৈতিক অবস্থা, সাইবারসুরক্ষাগত পরিকাঠামোর অভাব এবং সবচেয়ে বড় কথা যথেষ্ট ডিজিটাল সাক্ষরতার অভাব রয়েছে এই জায়গাগুলিতে। আর সেই সুযোগটা নিয়েই এই সমস্ত জেলাগুলি বাড়ছে সাইবার অপরাধীদের বাড়বাড়ন্ত। প্রায় প্রতিদিন নতুন নতুন পন্থা খুঁজে বের করেছে তারা।

Move over Jamtara! Bharatpur is now the new cybercrime hotspot in India

 

ডিজিটাল ভারতে আমাদের প্রায় প্রতিটি পরিচয়পত্র একটি অন্যটির সঙ্গে জোড়া। ইতিমধ্যেই আধারের সঙ্গে ভোটার থেকে প্যান সমস্তটাই এক সূত্রে বাঁধা। এদিকে আধার ছাড়া ব্যাঙ্কের কোনও কাজ আজকের দিনে সম্ভব নয়। ফলে এই সমস্ত তথ্যগুলির যে কোনও একটা হাতাতে পারলেই কেল্লা ফতে। আর সেই সুবিধাটাই নিচ্ছে হ্যাকারেরা। তার উপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন টুল ব্যবহার করে আরওই সহজ হয়ে যাচ্ছে এই ধরনের হ্যাকিংয়ের কাজ। দিন কয়েক আগেই আমরা দেখেছি দেশ জুড়ে কীভাবে বাড়ছে আধার-প্রতারণা। আধার এনেবল পেমেন্ট সিস্টেম (AePS)-এর মাধ্যমে লুঠ হয়ে যাচ্ছে মানুষের টাকা। শুধুমাত্র বায়োমেট্রিক ব্যবহার করে টাকা লেনদেনের সুযোগ দেয় এই পরিষেবা। সেই বায়োমেট্রিক হাতিয়ে ওটিপি ছাড়াই টাকা হাপিস করে দেওয়া হচ্ছে অ্যাকাউন্ট থেকে।

আরও পড়ুন: ভারতীয়দের তথ্য হাতিয়ে চড়া দামে বিক্রি! কোন ‘ষড়যন্ত্রের’ আভাস দিচ্ছে চ্যাটজিপিটি?

ইতিমধ্যেই সাইবার অপরাধ রুখতে একাধিক পদক্ষেপ করেছে পুলিশ। তবে বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, মানুষের সতর্ক থাকা ছাড়া এই সাইবার অপরাধ রোখার কোনও রাস্তা নেই। কারণ প্রযুক্তি যত এগোচ্ছে, সাইবার সুরক্ষা যত কড়া হচ্ছে, ততই তার ফাঁকতাল খুঁজে বের করছে সাইবার অপরাধীরা। জামতাড়া থেকে ভরতপুর হয়ে দেশে সাইবার অপরাধের এই ভয়ঙ্কর চক্র দিনকে দিন যেভাবে ফুলে ফেঁপে উঠছে, তা কার্যত যেন রক্তবীজের ঝাড়। ফলে  বিপদ এড়াতে সচেতনতা ছাড়া কোনও বাঁচার পথ নেই।

 

 

More Articles