স্ফিংক্সের নীচে কী রয়েছে? প্রকাশ্যে এলে বদলে যাবে বিশ্বের বোঝাপড়া!
Sphinx Mystery: লাখো অনুসন্ধানের পরেও এমন কোনও গহ্বর পাওয়া যায়নি যা হল অব রেকর্ডস হতে পারে।
মাথাটা মানুষের, দেহটা সিংহের! তাও আবার যে সে মানুষের না। ফ্যারাও খাফ্রের। ধূ ধূ মরুভূমির মধ্যে বসে আছে বিশালাকার এক সিংহদেহী মানুষ, অথবা মানুষ মুখো সিংহ। শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে গিজার এই সুবিশাল স্ফিংক্স রহস্যের ছদ্মনাম হয়েই থেকেছে। বিশালাকার এই অদ্ভুতদর্শন পাথরের মূর্তি ঘিরে জন্ম নিয়েছে একের পর এক তত্ত্ব। মিশরীয়দের নানা রীতি, অভ্যাস ঘিরে রহস্য জন্মানোই স্বাভাবিক, মমি থেকে শুরু করে পিরামিড, বিচিত্র সব দেবদেবী, আশ্চর্য সাংকেতিক লিপি- সবটাই নেশার মতো টানে মানুষকে। এই স্ফিংক্স তৈরি হলো কেন? কী লুকিয়ে রাখা আছে এই বিশাল মূর্তির নীচে? গবেষকদের অনেকেরই ধারণা স্ফিংক্সের রহস্য প্রকাশ্যে এলে মিশরীয়দের নানা রীতি, নানা প্রথা ও নানা জ্ঞানের হদিশ মিলবে। এই হদিশ বদলে দিতে পারে সভ্যতার ইতিহাসও!
তাই স্বাভাবিকভাবেই রহস্য ও কিংবদন্তি মিলে তৈরি হয়েছে নানা তত্ত্ব, তবে সব তত্ত্বই যে খাঁটি বৈজ্ঞানিক তা না। কিছু ছদ্ম-বৈজ্ঞানিক এবং ষড়যন্ত্রের তত্ত্বও রয়েছে। প্রাচীন মিশরকে ঘিরে এমনই এক তত্ত্ব হচ্ছে 'স্ফিংক্স ওয়াটার ইরোশন হাইপোথিসিস'। এই তত্ত্ব বলছে, আমরা যা ভাবি, ফিংক্স আসলে তার চেয়ে ঢের বুড়ো। খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৭০০০ বছরেরও আগে নাকি তৈরি হয়েছিল এই মূর্তি। খটকা জাগে। কারণ আমরা জানি, মিশরীয় সভ্যতার বয়স মোটামুটি ৩,০০০ বছরের আশেপাশে। কিন্তু স্ফিংক্স আরও প্রাচীন। কীভাবে? এই তত্ত্বের নেপথ্যে থাকা গবেষকরা বলছেন, স্ফিংক্সের গায়ে আবহাওয়াজনিত ব্যাপক ক্ষয় দেখা দিয়েছে। যার মধ্যে একটি ক্ষয় থেকে সাফ বোঝা যায় দীর্ঘ দীর্ঘকাল ধরে চলা বর্ষাকালের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে এই মূর্তিকে। এটি নির্দেশ করে যে, ১২,০০০ বা ১০,০০০ থেকে প্রায় ৫,০০০ বছর আগে কোনও বর্ষাকালের আগে বা সেই বর্ষা চলাকালীনই নির্মিত হয়েছিল এই মূর্তি। যাইহোক, আবহাওয়ার অন্যান্য ক্ষয়কাজ, নীল নদের বয়ে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট ক্ষয়কে মাথায় রেখে আনুমানিকভাবে বলা যায় স্ফিংক্সের প্রকৃত বয়স প্রায় ৪,৫০০ বছর। স্ফিংসের মুখটি ফ্যারাও খাফ্রের সঙ্গে মেলে। তিনি বেঁচেছিলেন ২৬০৩ থেকে ২৫৭৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।
আরও পড়ুন- নুন দিয়ে দেহ শুকনোর পর কী এমন মাখানো হতো দেহে? অবশেষে ফাঁস মমি তৈরির রহস্য
স্ফিংক্স সম্পর্কে এক প্রমাণহীন কিংবদন্তি হচ্ছে, এর নীচে চাপা রয়েছে একটি 'হল অব রেকর্ডস'। যেখানে এই প্রাচীন সভ্যতা নিজের যাবতীয় নথিপত্রের ভাণ্ডার লুকিয়ে রেখেছে। প্রাচীন মিশরীয় জ্ঞানের আকর ধারণ করে রয়েছে স্ফিংক্সের নিচের এই গুপ্ত কুঠুরি। কিন্তু প্রমাণ কই? এই হল অব রেকর্ডসের দাবি প্রথম করেন আমেরিকার এডগার কায়েস। তিনি নিজেকে এক মহাযাজকের পুনর্জন্ম বলেই দাবি করেন, থাকেন আটলান্টিস দ্বীপে। কায়েসের মতে, হল অব রেকর্ডসে যাওয়ার একটি প্রবেশদ্বার স্ফিংক্সের সামনের ডান পাঞ্জার নীচে অবস্থিত।
সত্যিই যদি থেকে থাকে, অস্তিত্বের প্রমাণ নেই কেন? স্ফিংক্সে প্রাকৃতিক গহ্বর, গর্ত এবং গুপ্ত দরজাও মিলেছে। স্ফিংক্সের মাথার শীর্ষে একটি বড় গর্তও মিলেছে। সম্ভবত মেরামতির জন্য তা ব্যবহার করা হতো। কিন্তু লাখো অনুসন্ধানের পরেও এমন কোনও গহ্বর পাওয়া যায়নি যা হল অব রেকর্ডস হতে পারে। প্রাচীন মিশরের চাঁদের দেবতা, হার্মিস ট্রিসমেগিস্টোস তাঁর রহস্যময় জ্ঞানের একটি গ্রন্থাগারের কথা উল্লেখ করেছিলেন। কায়েস সেই কিংবদন্তির কথাই বলেছেন যে স্ফিংক্সের পাঞ্জাগুলির নীচে একটি গোলকধাঁধা রয়েছে যা রহস্যময় হল অব রেকর্ডসের দিকে নিয়ে যায়। এই হল অব রেকর্ডসে রসায়ন, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত, জাদুবিদ্যা এবং ওষুধের সমস্ত প্রয়োজনীয় জ্ঞান সংরক্ষণ করে রাখা আছে।
আরও পড়ুন- মৃত্যুর পরেও মেলেনি কবর! কীভাবে আত্মহত্যা করেছিলেন রহস্যময়ী ক্লিওপেট্রা?
সাক্কারার তেটির পিরামিডের সমাধি কক্ষগুলি এই সত্যে সিলমোহর দেয় যে, ফ্যারাওদের তাঁদের মৃত্যুর পর সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল। মিশরের হায়ারোগ্লিফিক বার্তার পাঠোদ্ধার করে রাজাদের স্বর্গে যাওয়া এবং পরবর্তী পৃথিবীতে তাঁদের শাসনের কথা বলা আছে। তাহলে সমাধিতে জ্ঞানের গ্রন্থাগার থাকতেই হবে। এমন এক রহস্যময় জায়গা যেখানে আর অন্য কেউ কোনওদিন প্রবেশ করতে পারবে না। সেই জ্ঞান ফ্যারাওদের সঙ্গেই থেকে যাবে!
বছর ৩০ আগে, আমেরিকার গবেষকরা কায়েসের অনুমানের ভিত্তিতে স্ফিংক্সের থাবাতে ড্রিল করে সাত মিটার গভীর গর্ত খোঁড়ে। স্মৃতিস্তম্ভটির ব্যাপক ক্ষতি হয় তাতে কিন্তু যে সুড়ঙ্গের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল তা মেলেনি। সিসমিক রিডিংয়ে ইঙ্গিত মেলে যে স্ফিংক্সের নীচে কক্ষ ছিল কিন্তু সেগুলি প্রাকৃতিকভাবে গঠিত গহ্বর বলেই প্রমাণিত হয়। পরে মিশরীয় কর্তৃপক্ষ স্ফিংক্সে আর কোনও বিস্ফোরণ বা খনন নিষিদ্ধ করে। ফলে কায়েসের তত্ত্বের সত্যতা আদৌ ছিল কিনা, এটি সত্যিই গল্পকথা নাকি বাস্তবতা, তা স্ফিংক্সের পাথুরে ধাঁধাতেই রয়ে গিয়েছে।