তৃণমূলের সঙ্গে বাংলায় জোট? সিপিএমের চরম সিদ্ধান্তে বিপাকে 'ইন্ডিয়া'
No CPIM-TMC Tie Up : সিপিএম গত সপ্তাহে ইন্ডিয়া সমন্বয় কমিটির বৈঠকেও যোগ দেয়নি। ১৪ সদস্যের প্যানেলে একটি আসন এখনও খালিই রাখা হয়েছে।
দশের লাঠি, একের বোঝা! প্রবাদ বদলে যেতে কতক্ষণ? দশজনের কাছেও যে লাঠি আসলে বোঝাই, তা ইন্ডিয়া জোটকে না দেখলে বোঝা যেত না! কথা ছিল, দশে (এক্ষেত্রে ২৬) মিলে বিজেপির বিরোধিতা করা হবে। বিজেপি-আরএসএস শক্তিকে হারাতে দুনিয়ার বিরোধী এক হও বলে ডাক দিয়েছিলেন নেতারা। বিরোধীরা এক হলেন, কিন্তু একমত হলেন না। ইন্ডিয়া নাম নিয়ে মোদির হাত থেকে দেশ বাঁচানোর লড়াই শুরুর আগেই বনিবনাই হচ্ছে না শরিক দলগুলির। যে দল নিজ নিজ রাজ্যে যুযুধান তারা কীভাবেই বা লোকসভার খাতিরে একজোট হয়ে ভোটে লড়তে পারে? সেই প্রশ্নটাই বাস্তব হতে চলেছে। সিপিআইএম সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলা এবং কেরলে এই জোটের হয়ে একসঙ্গে লড়াই সম্ভব না। বাংলায় তৃণমূল আর কেরলে কংগ্রেসের সঙ্গে বনিবনা নৈব নৈব চ! শুধু তাই নয়, বিজেপি-বিরোধী ফ্রন্টের সমন্বয় সভায় কোনও প্রতিনিধির নাম না রাখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে লাল দল।
সিপিএমের সূত্র বলছে, বাংলায় বিজেপি এবং তৃণমূল দুইয়ের থেকেই দূরত্ব বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। কারণ এরাজ্যে সিপিএম বারেবারেই বলে এসেছে যাহা বিজেপি তাহাই তৃণমূল! তাহলে দেশে বিজেপিকে ঠেকাতে কী করে ছদ্মবেশী গেরুয়া তৃণমূলের সঙ্গে জোট সম্ভব? দিল্লিতে সিপিএমের পলিটব্যুরোর বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিরোধী ভোট ভাগ করতেই নাকি এই 'কৌশল'। অথচ এই ঘটনাতেই সাফ হয়ে যাচ্ছে বিরোধী জোটের ত্রুটিগুলি আসলে কোথায়? কেন সত্যিই, যত মত তার লাখো পথ। যে পথেরা আসলে কোনওদিনই মেলে না, রাজনীতিতে তো নয়ই। আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচনে বিজেপিকে হারানোর লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই যে সম্ভব না, প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে বারেবারেই।
আরও পড়ুন- বাংলায় সিপিএম তৃণমূল জোট সম্ভব? INDIA যা ঠিক করল…
অন্যদিকে, সিপিএম গত সপ্তাহে ইন্ডিয়া সমন্বয় কমিটির বৈঠকেও যোগ দেয়নি। ১৪ সদস্যের প্যানেলে একটি আসন এখনও খালিই রাখা হয়েছে। এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী করবেন? বামপন্থীদের সঙ্গে একই মঞ্চ, একই রাজ্যে আসন ভাগাভাগির মতো গলার কাঁটা তাঁর বেরিয়ে গেছে, কিন্তু জোটে তিনি কী করবেন?
পলিটব্যুরোর বিবৃতি বলছে, "পলিটব্যুরো ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চরিত্র, সংবিধান, গণতন্ত্র এবং জনগণের মৌলিক অধিকার এবং নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষার প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করার জন্য ইন্ডিয়া জোটের আরও একত্রীকরণ এবং সম্প্রসারণের জন্য কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এর জন্য বিজেপিকে অবশ্যই কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্যের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ থেকে দূরে রাখতেই হবে। পলিটব্যুরো এই প্রচেষ্টাগুলিকে আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।" কিন্তু জোটেরই একটি দলের সঙ্গে যেখানে আদর্শগত সংঘাত এত প্রবল, সেখানে এমন সিদ্ধান্তে বিজেপিই কি হালে পানি পাবে না?
সিপিআইএম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সঙ্গে জোট করবে কিনা এই জটিল প্রশ্নটি জুলাই মাসে ইন্ডিয়া (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স) নামে গঠিত বিরোধী জোটকে প্রথম থেকেই ভাবিয়েছিল। ঠিক এমনই আরেকটি জটিল প্রশ্ন হচ্ছে কংগ্রেস বনাম আম আদমি পার্টির দ্বন্দ্ব। সিপিএম নিজেদের জায়গা জানিয়ে দিয়েছে, আম আদমিও যদি পঞ্জাবে, দিল্লিতে একই পন্থা নেয় তাহলে এই জোটের ভেতরের জটিল সমীকরণ ভোট টানতে আদৌ পারবে কিনা প্রশ্ন উঠছেই। ব্যুমেরাং হয়ে বিজেপির হাতই মজবুত না হয়ে যায়, এমন শঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।