এখনই ৪০ ছুঁইছুঁই পারদ! ঠিক কবে থেকে এমন অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হতে শুরু করল বাংলা?

Weather Update : তাপের কামড়ে বেহাল জনজীবন, আরও ভয়াল ইঙ্গিতের আশঙ্কায় কাঁপছে গোটা বাংলা

কার্যতই অসহ্য হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি। তাপের কামড়ে নাজেহাল গোটা বাংলা। ঘরের মধ্যেই যেন আগুন ছুটছে! আর বাইরে বেরোলে তো কথাই নেই, মুহূর্তের মধ্যেই জ্বর যাচ্ছে শরীর। ক্যালেন্ডার মেনে গ্রীষ্মকালের শুরু হতে এখনও দিন কয়েক দেরি। বৈশাখ নয়, চৈত্র মাসেই মাত্রা ছড়াচ্ছে পরিস্থিতি। পশ্চিমের জেলাগুলোয় ইতিমধ্যেই পারদ ছুঁয়েছে ৪০ ডিগ্রি। ৩৮ ডিগ্রি পেরিয়েছে কলকাতার তাপমাত্রাও। মালদহ সহ উত্তরবঙ্গের একাধিক জায়গার পরিস্থিতিও সমান বেহাল। এখানেই শেষ নয়, আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, আগামী কয়েক দিনে সারা দেশ জুড়েই আরও বাড়বে তাপমাত্রা।

আজ থেকে বছর কয়েক আগেও এমন পরিস্থিতি ছিল না বাংলায়। গরম পড়ত ঠিকই তবে তার প্রকোপ এমন ছিল না যে চৈত্রের শেষেই এই অবস্থা হয়! প্রসঙ্গত, কলকাতায় শেষ বৃষ্টি হয়েছে ১ এপ্রিল। বিগত ৯ দিন ধরে কলকাতায় একফোঁটাও বৃষ্টির দেখা নেই। দেখা মেলেনি কালবৈশাখী ঝড়েরও। আগামী পাঁচদিনও কলকাতায় বৃষ্টির দেখা মিলবে না বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। আপাতত কালবৈশাখীও হবে না দক্ষিণবঙ্গে। বেশ কিছু জায়গায় খুব দ্রুত ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে ফেলবে পারদের গ্রাফ। তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে জেলায় জেলায়।

আরও পড়ুন - রাজস্থানে অভাবনীয় তুষারপাত! কলকাতায় শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা?

কিন্তু ঠিক কবে থেকে এমন বদলে যেতে শুরু করল বাংলার ছবিটা? কেনোই না এমন পরিবর্তনের শুরু? অবশ্য শুধু বাংলা নয়, সারা বিশ্বেই দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে গড় তাপমাত্রা। আর এই তাপমাত্রা বাড়ার বিরূপ প্রভাব পড়ছে প্রকৃতি, জীব ও উদ্ভিদ জগত সহ মানব জীবনেও। কিন্তু কেন বাড়ছে তাপমাত্রা? এমন প্রশ্নই এখন বিশ্ব-সমস্যা বা ‘গ্লোবাল ইস্যু’র মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বেশ কিছুদিন ধরেই এই মাত্রা ছাড়া তাপ বৃদ্ধির কারণ নিয়ে নিয়ত গবেষণা চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’র গডার্ড ইনস্টিটিউট নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই তাপ বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করছে। তাদের গবেষণা থেকেই জানা যাচ্ছে, প্রতিবছর পূর্ববর্তী বছরের রেকর্ড ভেঙে বেড়েই চলেছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা। ১৮৮০ সালে তাপমাত্রা সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতি আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে দেখা গেছে যে, প্রতি বছরই বেড়েছে পারদের পরিমাণ।

বিশেষত ২০০০ সালের পর থেকে এই পরিস্থিতি এতটাই চরমভাবে বদল হতে শুরু করেছে যে গবেষকরাও একে গভীর আশঙ্কাজনক বলে দাগিয়ে দিয়েছেন। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়কালে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে প্রায় ৩ ইঞ্চি পর্যন্ত।

টিম ফলগার নামে এক বিজ্ঞানী ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক’ জার্নালে প্রকাশিত এক লেখায় জানাচ্ছেন, স্বাভাবিকভাবে আমরা ঠিক যতটা ধারণা করছি তার থেকে অনেকটা বেশি হারেই বাড়ছে তাপমাত্রার পরিমাণ। শুধু তাই নয় এইমাত্র ছাড়া পারদের বৃদ্ধি অ্যান্টার্কটিকা ও গ্রিনল্যান্ডের মতো শীতল অঞ্চলের বরফ গলাতেও শুরু করেছে দ্রুত। ফলে সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে হুমকি স্বরুপ।

একদিকে শিল্প বিপ্লবের হাত ধরে তৈরি হওয়া আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার অন্যদিকে বর্তমান বদলে যাওয়ার সময়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে লাগাম ছাড়া বন জঙ্গল হ্রাস, এ দুই যেন দ্বৈত চাপ সৃষ্টি করেছে পরিবেশের ওপর। এমনকী আশঙ্কা করা হচ্ছে, অতি- যান্ত্রিকীকরণের কুপ্রভাবে এবং পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য বিনষ্টের কারণে চলতি একুশ শতকেই বৈশ্বিক তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির শীর্ষবিন্দু স্পর্শ করবে।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সম্পাদিত প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বলা হয়েছিল, বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। কোনোভাবেই যেন পৃথিবীর তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম না করে সেটা নিশ্চিত করতেই হবে। এরও আগে ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত ‘কিয়োটো প্রটোকল’-এ বৈশ্বিক তাপমাত্রা সীমিত রাখার অঙ্গীকার করা হয়।

আরও পড়ুন - হুবহ পুরীর আদল এবার বাংলাতেই! কী কী থাকছে দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের অন্দরে?

যদিও বাস্তব ছবিটা সম্পূর্ণ অন্য। যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর। দেখে নেওয়া যাক ঠিক কোন কোন নেতিবাচক প্রভাব এই ভাবে বদলে দিচ্ছে তাপমাত্রা?

১. উন্নত দেশগুলিতে জ্বালানি পোড়ানো তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

২. এছাড়াও কলকারখানার দূষিত বায়ু বায়ুমন্ডলের সাথে মিশে প্রকৃতিতে বিরুপ আবহাওয়ার সৃষ্টি করছে। ওজন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যার ফলে খুব সহজেই সূর্যের অতি ক্ষতিকারক রশ্মির প্রভাব পৃথিবীতে এসে পড়ছে।

৩.এসবের পাশাপাশি বেড়েছে আধুনিক যান্ত্রিকীকরণের প্রভাব। ঘরে ঘরে এখন বৈদ্যুতিক যন্ত্রের চল, যার ক্ষতিকর প্রভাব মিশছে বাতাসে। সব মিলিয়ে যেন দিন দিন অগ্নিগর্ভে পরিণত হচ্ছে সামগ্রিক পরিবেশ।

৪. বর্তমান সময়ে হাইরাইজ তৈরির জন্য লাগাম ছাড়া গাছ কাটা, নদী ভরাট চলছে অবাধে। অগ্রগতির এই মাতাল পরিস্থিতি দিনের শেষে মরণ কামড় বসাচ্ছে বায়ুমন্ডলের ওপর যার ফল স্ব রূপ ভোগান্তি নেমে আসছে প্রকৃতিতে। মাত্রা ছড়াচ্ছে গরম। অচিরেই কঠিনতর হয়ে উঠছে আমাদের বেঁচে থাকার সহজ পথ। উন্নতি নিশ্চয়ই প্রয়োজন তবে তার ক্ষতিকর প্রভাব যদি আমাদের বেঁচে থাকাকে ব্যাহত করে তবে তো মুশকিল! তাই পরিস্থিতি বদলের জন্য সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা। মানুষের সচেতন দৃষ্টিভঙ্গিই পারে পরিস্থিতি ফের বদলের প্রধান সূচক হয়ে উঠতে।

More Articles