কালীপুজোই ছিল কলকাতার মস্তানদের ক্ষমতা দেখানোর রঙিন মঞ্চ
Kalipuja of Kolkata Mastan Goons : উত্তমকুমার, অমিতাভ বচ্চন, রাজেশ খান্না, বিনোদ খান্না, জিতেন্দ্র, আশা ভোঁশলে, আর ডি বর্মন, বাপি লাহিড়ী- কে আসেননি ফাটার পুজোয় মাচার শো করতে?
গুন্ডা, মস্তান কী মাফিয়া বা ডন - গোলাপকে যে নামেই ডাকি না কেন, সে সুগন্ধই ছড়াবে।
অভিধান বলছে, হিন্দি ‘গুন্ডা’ শব্দটির অর্থ দুর্বৃত্ত বা জবরদস্তি করা যার স্বভাব। ইংরেজি ‘মাফিয়া’ বলতে অপরাধীদের গোপন সংগঠন বোঝায়, যারা অপরাধ সংগঠিত করে, যার জন্ম উনিশ শতকের শুরুতে, ইতালির এক দ্বীপ সিসিলিতে। যাদের নিয়ে মারিও পুজো তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘গডফাদার’ লিখেছিলেন আর ওই একই নামে হলিউডের ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা এ যাবৎ মাফিয়া ঘরানার জনপ্রিয়তম সিনেমাটি করেন এবং ইংরেজি ‘ডন’ হল সেই পরিবারের (অপরাধীদের সম্প্রদায়) প্রধান, যে পরিবার বেঁচে আছে অপরাধ সংগঠিত করে। এই চারটি শব্দের মধ্যে ‘মস্তান’ শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে। মস্ত + আন (ফার্সি) মস্তান অর্থ ঐশী প্রেমে মত্ত বা ঐশী ভাবে উন্মত্ত প্রেমিক। সেই শব্দটি কী করে আমাদের বাংলায় সমাজে ত্রাস সৃষ্টিকারী একটি মানুষের পরিচয় হয়ে দাঁড়াল কে জানে। এর উত্তর ভাষাতাত্ত্বিকরাই দিতে পারবেন।
আমাদের বাংলায় এই শব্দগুলো এত ব্যবহৃত যে, এদের বাংলা শব্দ বলে ভুল হয় মাঝে মাঝে। আর গুন্ডাকে আমরা যতই ভয় পাই না কেন বা শব্দটি ভদ্রসমাজে ঘৃণ্য হলেও, একসময় বাঙালি একান্নবর্তী পরিবারের সবচেয়ে দামাল পুত্র সন্তানটির আদর করে ডাকনাম ‘গুন্ডা’ দেওয়ার রেওয়াজ ছিল, এমনকী ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া ছেলের ডাকনাম বাবা ‘ডন’ রেখেছেন, এরকমও দেখেছি।
কালীপুজোর সঙ্গে কলকাতা বা মফসসল শহরের মস্তানদের একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এই প্রসঙ্গে কিছু বলার আগে প্রাচীন যুগের মস্তান অর্থাৎ ডাকাতদের কালীপুজোর ইতিহাসের দিকে একটু তাকানো যাক। কালীপুজোর আরেক নাম শক্তির আরাধনা, তাই কি শক্তি অর্জনের উদ্দেশ্যে সেই প্রাচীনকালে ডাকাতরা কালীপুজো (শক্তির আরাধনা) করত? সেইসব কালীকে ডাকাতে কালী বলা হতো এবং নাগরিক সমাজে আজও সেইসব কালীরা মান্যতা পেয়ে আসছেন। অবশ্য ডাকাতদের কালীপুজো করার আরেকটি কারণ হলো, হত্যা ও লুঠের মতো ‘পাপ’ কাজ করতে যাওয়ার আগে ডাকাতরা নিজেদের মা কালীর চরণে সমর্পণ করতেন, যাতে পাপের বোঝা কমে।
আরও পড়ুন- কেউ মদ্যপান করে উন্মত্ত, কেউ গৃহস্থের সামনে অপ্রকাশ্য! কালীতন্ত্রে কালীর নানা রূপ
দক্ষিণ কলকাতার পূর্ণদাস রোডে আছে মনোহর ডাকাতের ছানা কালীর মন্দির, যে রাস্তার আগে নাম ছিল মনোহরপুকুর রোড। এখন একটা অংশ মনোহরপুকুর রোড অন্যটি পূর্ণ দাস। মনোহর বাগদি ওরফে মনোহর ডাকাতের নামেই এই রাস্তা, এখানেই ছিল তাঁর পুকুর, তিনি ছিলেন দক্ষিণ কলকাতার ত্রাস। তখন সবে সবে পলাশীর যুদ্ধ শেষ হয়েছে। এই কলকাতার অধিকাংশ অঞ্চলই ছিল গভীর জঙ্গল। মাঝ দিয়ে গেছে আদি গঙ্গার নদীপথ। বাঘ, সাপের ভয়ের সঙ্গে ছিল মনোহর ডাকাতের ভয়। কিছু দর্শনার্থী এই পথে কালীঘাট মন্দির যেতেন। এছাড়া বণিকেরা দল বেঁধে যাতায়াত করত। রাতে ফিরতি পথে তাঁরা মনোহরের দলবলের কবলে পড়তেন। বিশেষত ধনী লোকেদেরই টাকা পয়সা লুঠ করত মনোহর। তখন এই মন্দির হয়নি। সবটাই জঙ্গল। বাইরে যে ছোট্ট লাল শিব মন্দির এখন, ওই স্থানেই একদা কষ্টি পাথরের মায়ের পুজো করতেন মনোহর। মনোহরের পূজিতা সেই মূর্তিই আজও মন্দিরে অধিষ্ঠাত্রী। মনোহর এই মূর্তি ডাকাতি করতে যাওয়ার সময়ে পাশের পাতকুয়োয় দড়ি বেঁধে ফেলে দিয়ে যেতেন। নরবলির জন্য মনোহর বেছে নিতেন সমাজের সেইসব ধনী লোকেদের, যারা গরিবদের শোষণ করতেন। ছোট্ট কালী তাই তিনি ছানা কালী।
কলকাতায় এরকম আরও কিছু ডাকাতে কালীর মন্দির আছে যেগুলি বিখ্যাত। হুগলী জেলার বাসিন্দা হিসেবে আমাদের জেলার কয়েকটি ডাকাতে কালীর কথা বলতে পারি। সিঙ্গুরের পুরুষোত্তমপুরে অবস্থিত সাড়ে পাঁচশো বছরের প্রাচীন ডাকাত কালী। সরস্বতী নদীর তীরে মহারাজ সিংহবাহুর রাজধানী এই সিংহপুর আজ সিঙ্গুর। রাজনৈতিক কারণে সিঙ্গুর বহুল প্রচারিত, কিন্তু বহু আগে থেকেই সিঙ্গুর বিখ্যাত এই ডাকাত কালীর জন্য। গগন সর্দার নামে এক ডাকাত এই কালী প্রতিষ্ঠা করেন। এখানেও প্রতি অমাবস্যায় নরবলি হতো।
হুগলির মগরার কাছে ভীষণাকৃতি ডাকাত কালীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাবু বিশ্বম্ভর ওরফে বিশে ডাকাতের নাম। অত্যাচারী জমিদারদের শায়েস্তা করতে বিশ্বম্ভর বাবু ডাকাতের দল তৈরি করে নিয়মিত ডাকাতি করতেন। তাঁর নাম বিশু থেকে হয়ে যায় বিশে ডাকাত লোকমুখে, গরিবের সাহায্য করায় লোকাল রবিনহুডের খ্যাতি পেয়েছিলেন। বিশে ডাকাত সুলক্ষণযুক্ত ব্যক্তিকে বলি দিয়ে কালীপুজো করতেন। সুলক্ষণযুক্ত ব্যক্তি মানে গ্রামের অত্যাচারী জমিদার বা মোক্তারকে বা নায়েবকে বলি দিতেন মায়ের পায়ে। বিশে ডাকাতের কালী আরাধনায় মদ আর পাঁঠার মাংস আবশ্যিক ছিল। মায়ের ভোগের মাংস রান্না হতো পেঁয়াজ রসুন ব্যতীত গোলমরিচ আর ঘি দিয়ে। গ্রামের সমস্ত মানুষকে পাত পেড়ে পাঁঠার মাংস খাওয়াতেন বিশ্বম্ভর বাবু ওরফে বিশে ডাকাত।
ত্রিবেণীর বাসুদেবপুরে রঘু ডাকাতের কালীও বিখ্যাত। কথিত আছে গঙ্গা পেরিয়ে হালিশহরে ডাকাতি করতে গিয়ে রামপ্রসাদকে রাতের বেলা রাস্তায় পেয়ে তাকেই বলি দেবার জন্য রঘু প্রস্তুত। রামপ্রসাদ রঘুর কাছে সময় চায় মায়ের কাছে শেষবার একটি গান নিবেদন করার। রঘু অনুমতি দিলে রামপ্রসাদ তাঁর সেই বিখ্যাত গান ‘তিলেক দাঁড়া ওরে শমন/ বদন ভ’রে মাকে ডাকি/ আমার বিপদকালে ব্রহ্মময়ী/ আসেন কি না আসেন দেখি’ গাওয়া শুরু করলে, রঘু দেখে হাঁড়িকাঠে স্বয়ং কালী মাথা পেতে বসে আছেন। আতঙ্কিত রঘু ক্ষমা চেয়ে রামপ্রসাদকে ছেড়ে দেয়।
আরও পড়ুন- বোমাবাজি থেকে কালীপুজো! রূপোলি পর্দার থেকেও বেশি আকর্ষণীয় বাস্তবের ‘ফাটাকেষ্ট’
এই তো গেল ডাকাতদের কালীর কথা, এবার আসি কলকাতার মস্তানদের কালীপুজো প্রসঙ্গে। রাজনৈতিক মস্তানির যে প্রতিফলন আর টক্কর একসময়ে দেখা যেত বিভিন্ন কালীপুজো ঘিরে, তা-ও এখন লুপ্ত। আর দেখা যায় না রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক ‘দাদা’দের কালীপুজো ঘিরে দাপট৷
মস্তানদের কালীপুজোর মধ্যে প্রথমেই বলতে হয় কৃষ্ণচন্দ্র দত্তর কালীপুজোর কথা। কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত বললে যাঁকে কেউ চিনবেন না, কিন্তু ফাটাকেষ্ট (মুখে বসন্তরোগের একাধিক ক্ষতচিহ্নের জন্য ওই নাম) বললে আবালবৃদ্ধবনিতা তাঁকে এক ডাকে চিনত। মধ্য কলকাতার কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটের নবযুবক সঙ্ঘের কালীপুজো – এইসব সরকারি তথ্যের ধাঁধায় না ঘুরে এক কথায় ফাটাকেষ্টর কালীপুজো। সরকারি পরিবহন দপ্তরে নাকি ড্রাইভার হিসেবে চাকরিও করতেন, যেদিন প্রথম চাকরিতে যোগ দেন, সেই দিনই প্রথম ও শেষ অফিস যাওয়া।
মাইনে, বলা বাহুল্য, বাড়িতে এসে লোকে দিয়ে যেত। একসময় কলকাতার কালীপুজোর অন্যতম আকর্ষণ ছিল ফাটাকেষ্টর কালীপুজো, সারা শহর ভেঙে পড়ত ফাটার কালী দেখতে। উত্তমকুমার, অমিতাভ বচ্চন, রাজেশ খান্না, বিনোদ খান্না, জিতেন্দ্র, আশা ভোঁশলে, আর ডি বর্মন, বাপি লাহিড়ী- কে আসেননি ফাটার পুজোয় মাচার শো করতে? একবার কালীপুজোর সময় সাধক সীতারামদাস ওঙ্কারনাথ ঠাকুর কাশী থেকে কলকাতায় এসেছিলেন, মধ্য কলকাতায় উঠেছিলেন কেশব সেন স্ট্রিটের কাছে এক শিষ্যর বাড়ি। ফাটাকেষ্ট সেই বাড়ি থেকে তাঁকে কাঁধে তুলে নিয়ে এসেছিলেন পুজো মণ্ডপে। ফাটার কালীর ভাসানের সময় ১০৮টি আলোর গেট ও ১০৮ ব্যান্ডপার্টি নিয়ে যাওয়া হতো৷
ফাটাকেষ্ট সম্পর্কে যে প্রবাদপ্রতিম কাহিনিটি আমরা কৈশোরে শুনেছিলাম সেটি এইরকম: কেশব সেন স্ট্রিট আর বিধান সরণির সংযোগস্থলে বাটা কোম্পানির একটি বড় শো-রুম আছে, যা লোক মুখে কলেজ স্ট্রিট বাটা নামে খ্যাত। ফাটাকেষ্ট সদলবলে সেই দোকানে চাঁদা চাইতে গেছেন। ভুল বললাম, চাঁদা তিনি চাইতেন না, বিলে চাঁদার অঙ্ক লিখে দিয়ে দিতেন এবং দাতা বিনা বাক্যব্যয়ে সেই অঙ্কটি দিয়ে দিত। তো বাটার দোকানে কেষ্টবাবুর অনুচর চাঁদার বিলটি ম্যানেজারের হাতে দিয়েছে। ম্যানেজার অন্য জায়গা থেকে বদলি হয়ে মাত্র কয়েকদিন এসেছেন, এলাকার হালহকিকত জানেন না। টাকার অঙ্ক দেখে ম্যানেজার বলেন, এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। উত্তরে ফাটাকেষ্ট বলেন: পরশু দিনের মধ্যে টাকাটা ক্লাবে পাঠিয়ে দেবেন, নইলে বাইরে সাইনবোর্ডে ‘ব’ সরিয়ে ‘ফ’ লিখে দেব।
পাশের পাড়া আমহার্স্ট স্ট্রিটে সোমেন মিত্র বা ছোড়দার পুজোও জাঁকজমকে কম যেত না। ফাটাকেষ্টর পুজোর সঙ্গে সোমেন মিত্রর ৮০ বছরের পুরোনো পুজোর কম্পিটিশন চলত। কিন্তু ফাটা ছিলেন প্রকৃতই লেজেন্ড, নইলে তাঁর নামে সিনেমা হয়! এই ফাটার পুজোর সঙ্গে টক্কর দিত বেহালার জেমস লং সরণির শঙ্কর পাইকের কালীপুজো, যিনি একসময় ছিলেন সমগ্র বেহালার বেতাজ বাদশা। তাঁর পুজোর ফিতে কাটতে কলকাতায় হাজির হতেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটার সনৎ জয়সূর্য থেকে শুরু করে বলিউডের সইফ আলি খান বা শক্তি কাপুর।
আরও পড়ুন- ‘কালীর বেটা’ কমলাকান্ত একই সঙ্গে সন্ন্যাসী ও প্রেমিক
বউবাজারে বিপ্লবী অনুকূলচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি। এই বাড়িতেই থাকতেন ওঁর ভাইপো কলকাতার বিখ্যাত গোপাল পাঁঠা। পুরো নাম গোপালচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। পাঁঠার দোকান থাকার জন্য এই নাম। আর সেই দোকানের ভিতরে ছিল ছোট মা কালীর মূর্তি আর বিরাট খাঁড়া, যা রোজই পুজো করতেন গোপাল। এ জিনিস কলকাতায় ছিল বিরল। তাঁকে সমঝে চলতেন বিধান রায়, সিদ্ধার্থ রায়ের মতো মুখ্যমন্ত্রীরা।
এই গোপালেরই ডানহাত ছিলেন ভানু বোস। ক্রিক রোয়ের ভানু বোসের কালীপুজোও বিখ্যাত ছিল। ওখানে শ্যামল রেস্তঁরা ছিল ভানুবাবুর অফিস। ওখান থেকেই রাজাবাজার, শিয়ালদহ, মুচিপাড়া থেকে একেবারে মৌললির মোড় পর্যন্ত ছিল তাঁর শাসনাধীন এলাকা। কালীপুজোর পর প্রতি বছর পাড়ায় জলসার আয়োজন করতেন। বাংলা ও বম্বের হেন বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ছিলেন না, যিনি ভানুবাবুর জলসায় আসেননি। স্থানীয় এবং বহিরাগত অসংখ্য মধ্যবিত্তের বিনোদন। নিখরচায়। উইদাউট টিকিট।
সত্তরের দশকের গোড়া থেকে আশির দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি ছিলেন উত্তর কলকাতার ত্রাস। তাঁর নামের সঙ্গে জুড়ে খুন, ওয়াগান ব্রেকিং থেকে মারধর, রাজনৈতিক সন্ত্রাস, নকশালদের পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ার বিস্তর অভিযোগ। সেই হেমেন মণ্ডল গৌরীবাড়ি থেকে প্রায় সমস্ত উত্তর কলকাতা শাসন করতেন। করতেন বিরাট জাঁকজমক করে কালীপুজো। এই হেমেন কালীপুজোয় দুঃস্থদের শীতবস্ত্র বিতরণের সঙ্গে বাজিও বিতরণ করতেন।
আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে দক্ষিণে উত্থান হয় শ্মশান স্বপনের। ১৯৯২ সালে সত্যজিৎ রায়ের শেষকৃত্যের সময় কেওড়াতলা শ্মশানে উপস্থিত তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বি কে সাহাকে পূর্ব ঘনিষ্ঠতার সুত্রে ‘সাহাদা’ বলে সম্বোধন করায় সেই কমিশনারকেই সরে যেতে হয়েছিল পদ থেকে। জানা গিয়েছিল, শ্মশান স্বপন কীভাবে কেওড়াতলা-সহ দক্ষিণ কলকাতার বিরাট এক অঞ্চল শাসন করে। শ্মশানের উল্টোদিকের শ্মশানকালীর পুজোটি স্বপনেরই পুজো ছিল। কালীপুজোর রাতে সেখানে নাকি সত্যিই ‘রাঙাজবা কম্পিটিশন’ হতো। পাঠক, এই প্রতিযোগিতা সম্পর্কে বিশদে লেখা আছে নবারুণ ভট্টাচার্যের ‘কাঙাল মালসাট’ উপন্যাসের ২০০৩ সালের সংস্করণের ৫২–৫৩ পৃষ্ঠায়, কৌতুহল মেটাতে দেখে নেবেন বা যাঁরা পড়েছেন তাঁদের কাছ থেকে জেনে নেবেন।
বেলেঘাটায় ছিলেন রতন ঘোষ বা বেলঘরিয়ায় ইনু মিত্র। এঁরা কালীপুজো করতেন কিনা জানি না।
গঙ্গা পেরিয়ে হাওড়ায় এলে সেটা নব পাঁজার এলাকা। হাওড়ার লোহালক্করের কারখানা থেকে বেরনো টন টন লোহার ছাঁট বা স্ক্র্যাপ, চালু ভাষায় ‘বাবরি’র লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসার পুরোটাই নব পাঁজার কন্ট্রোলে চলত। নব পাঁজা বিরাট কালীপুজো করত, পুজোর পরের দিন সন্ধেয় আলোর বাজি পোড়ানোর শো হতো। কালীপুজো আর জলসা— এই দুটো ছিল কলকাতার মস্তানদের পাওয়ার শো করার অন্যতম পদ্ধতি। সেই কালী থাকলেও সেই কাল আর নেই। শেষ হলো, কলকাতা ও হাওড়ার মস্তানদের কালীপুজোর ডাউন মেমোরি লেনে হাঁটা।