বয়স ১০২! বাংলার সবচেয়ে প্রাচীন সারিন্দা শিল্পীকে পদ্মশ্রী সম্মান দেশের

Padma Awards 2023: বাংলাদেশের শিল্পী ধুমাকান্ত রায়ের কাছ থেকে তিনি প্রথম সারিন্দা বাজানো শেখেন।

জলপাইগুড়ি জেলায় ময়নাগুড়ি ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম আমগুড়ি। সেই গ্রাম পঞ্চায়েত অধীনেই গ্রাম ধওলাগুড়িতে মঙ্গলাকান্তি রায়ের বাড়ি। বয়স ১০২! বাংলার শতবর্ষ প্রাচীন এই মানুষটি এবার পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত হতে চলেছেন। ১০২ বছর বয়সেও নিপুণ চলে হাত, সেই হাতে সারিন্দা বেজে ওঠে অনাবিল। সারিন্দার সুরে জগত মাতাতে পারেন তিন ছেলে আর চার মেয়ের বাবা মঙ্গলা কান্তি রায়। এই প্রবীণ শিল্পী এতকাল বিবিধ সম্মানই পেয়েছেন, কিন্তু অতটুকুই। সম্মান মিললেও আর্থিক কোনও উন্নতি হয়নি বলেই অভিযোগ শিল্পীর।

বাংলাদেশের শিল্পী ধুমাকান্ত রায়ের কাছ থেকে তিনি প্রথম সারিন্দা বাজানো শেখেন। প্রথম তাঁর কাছ থেকেই সারিন্দা কেনেনও। মঙ্গলাকান্তি পাঁচ বছর বয়স থেকেই এই যন্ত্র বাজাতে শেখেন। সারিন্দা দিয়ে তিনি মুরগির ডাকও হুবহু নকল করতে পারতেন, এখনও পাখির কলতান নিপুণভাবে ফুটে ওঠে তাঁর বাদ্যযন্ত্রে। উত্তরবঙ্গের ৫০০ বছরের প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র সারিন্দা বাজান এই শিল্পী। সারিন্দা বাদক হিসেবে নামডাকও বিপুল। ২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে বঙ্গরত্ন পুরস্কার গ্রহণ করেন বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বর্ষীয়ান লোকশিল্পী মঙ্গলাকান্তি। তারপর থেকে বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে ডাক পড়তে থাকে তাঁর। কিন্তু লকডাউনের সময় সরকারি অনুষ্ঠান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। সরকারি অনুষ্ঠান করতে পারলেই মিলত ১ হাজার টাকা। সবটাই বন্ধ হয়ে যায় টানা প্রায় দু'বছর।

আরও পড়ুন- বিশ্বের ৫ কোটি মানুষকে বাঁচিয়েছে নুন-চিনি জল! মরণোত্তর পদ্মবিভূষণে সম্মানিত দিলীপ মহলানবিশ

এখন গলা আর সেভাবে সঙ্গ দেয় না। বার্ধক্য জড়িত কারণে কানেও শুনতে পান না তিনি। ফলে এমনিতেও অনুষ্ঠানের ডাক আসা প্রায় বন্ধই। সারিন্দা শিল্পীর দিন গুজরান করাই এখন মূল লড়াই। পদ্মশ্রী পাচ্ছেন শুনে তাই স্বাভাবিকভাবেই খুশি শিল্পী মঙ্গলা। বিশেষ চাহিদা নেই, অসুখ বিসুখ ছাড়া দিন পেরিয়ে গেলেই তিনি নিশ্চিন্ত। রাজবংশী সমাজের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকা বাদ্যযন্ত্র সারিন্দাই তাঁর প্রাণভোমরা।

শুধু মঙ্গলা কান্তি রায়ই পদ্ম সম্মান না। টোটো ভাষা সংরক্ষণের জন্য ধনীরাম টোটোকেও পদ্মশ্রী প্রদান করছে ভারত সরকার। টোটো ভাষায় বর্তমানে ৩৭টি বর্ণমালা রয়েছে। ধনীরামই প্রথম টোটো ভাষায় একটি বই লেখেন। টোটো উপজাতির মানুষের সংখ্যা বর্তমানে হাতে গোনা। টোটো উপজাতির এই ভাষাও তাই মৃতপ্রায়। ইউনেসকোর লুপ্তপ্রায় ভাষার তালিকায় রয়েছে এই ভাষাটি। ৫৭ বছর বয়সি ভাষা সংরক্ষক ধনীরামকে এবার পদ্ম সম্মানে ভূষিত করছে কেন্দ্র। পাশাপাশি বাংলার প্রীতিকণা গোস্বামীও পাচ্ছেন পদ্মশ্রী সম্মান। ওআরএস-এর জন্য মরণোত্তর পদ্মবিভূষণ পাচ্ছেন চিকিৎসক দিলীপ মহলানবিশও। এই বছর মোট ৬ জনকে পদ্মবিভূষণ, ৯ জনকে পদ্মভূষণ ও ৯১ জনকে পদ্মশ্রী সম্মান দেওয়া হচ্ছে।

More Articles