ছুরির বদলে কলম, এক চোখ হারিয়ে রুশদির লেখা বইয়ের প্রচ্ছদই কাঁপিয়ে দিল বিশ্বকে
Salman Rushdie Book 'Knife' : ছুরি দিয়ে কোপানো, এক চোখের দৃষ্টি হারানো, বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করবে এই বই।
একটি বই। শুধু একটি বই লিখে বারেবারে মৃত্যুকে ডেকে এনেছিলেন তিনি। জীবনের ১৩ টা বছর কাটিয়েছেন ছদ্মনামে। ২০২২ সালে নিউইয়র্কে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে যখন বক্তৃতা দিতে উঠেছেন, মঞ্চের উপর উঠে তাঁকে কুপিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতী। ১০ থেকে ১৫ বার ছুরি দিয়ে তাঁর ঘাড়ের কাছে কোপানো হয়েছিল, রক্তাক্ত লেখক লুটিয়ে পড়েছিলেন মাটিতে। তারপর জীবন নিয়ে সে এক উথালপাথাল! প্রাণ বেঁচেছে, তবে চোখ গিয়েছে! এক চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন লেখক। আর সেই এক চোখ দিয়ে যে বিশ্বকে বিশ্লেষণ তিনি করলেন, তা লিখলেন আবার। লিখলেন Knife: Meditations After an Attempted Murder! আবার একটি বই, শুধু প্রচ্ছদ দিয়েই নাড়িয়ে দিল গোটা বিশ্বকে। সলমান রুশদি তাঁর সেই ছুরিকাহত হওয়ার বিষয়ে যে স্মৃতিকথা লিখলেন তা আগামী বছরের ১৬ এপ্রিল প্রকাশিত হবে, জানিয়েছে পেঙ্গুইন র্যান্ডম হাউজ।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ-আমেরিকান লেখক সলমান রুশদি গত জুন মাসে হে সাহিত্য উৎসবেই জানিয়েছিলেন একটি নতুন বই লিখছেন তিনি। বলেছিলেন, কয়েকশ' পাতার অপেক্ষাকৃত ছোট বই হবে সেটি। রুশদি বলেন, "বিশ্বের সহজতম লিখিত বই এটা নয়। এটি এমন একটি বই যা লেখার জন্য আমাকে অতীতে যেতে হবে। আমি সত্যিই এমন কোনও একটি উপন্যাস লেখা শুরু করতে পারি না যার সঙ্গে এর কোনও যোগই নেই।" রুশদি আরও বলেছিলেন, এই বইটি লেখা তাঁর দরকার ছিল। যা ঘটেছিল সেই কথা লিখতেই হতো তাঁকে। শিল্পই হিংসার জবাব দেওয়ার অন্যতম উপায়।
নাইফ: মেডিটেশনস আফটার অ্যাটেম্পটেড মার্ডার সলমান রুশদির বেঁচে থাকার লড়াইয়ের অংশটিই তুলে ধরবে। ছুরি দিয়ে কোপানো, এক চোখের দৃষ্টি হারানো, বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করবে এই বই। পেঙ্গুইন র্যান্ডম হাউজের সিইও নীহার মালব্যর মতে, রুশদির এই নতুন বই অচিন্তনীয় বিষয়কে বোঝানোর জন্য শব্দের সম্মিলিত শক্তির এক অনুস্মারক৷
আরও পড়ুন- মাত্র দু’পাতা পড়েই রুশদিকে খুনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে!
৭৬ বছর বয়সি রুশদির মিডনাইটস চিলড্রেন এবং দ্য স্যাটানিক ভার্সেস বইদু'টির কথা সকলেই জানেন। অনেকেই জানেন দ্য স্যাটানিক ভার্সেসের জন্য আজীবন এক মৃত্যুর আশঙ্কা তাড়া করে গিয়েছে তাঁকে। ২০১২ সালে আরও একটি স্মৃতিকথা লিখেছিলেন রুশদি। দ্য স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশের পরে বারবার খুনের হুমকি, মাথার দাম ধার্য হওয়া, ছদ্মনামে বাঁচার সময়কালই লিখেছিলেন তিনি তাঁর ওই বইতে। রুশদির সাম্প্রতিক উপন্যাস ভিক্টরি সিটি, এই বছরের শুরুতেই প্রকাশিত হয়েছিল, তবে এটি ২০২২ সালের সেই হামলার আগে লেখা হয়েছিল। গত বছরের ঘটনার পর নাইফ-ই তাঁর লেখা প্রথম বই।
১৯৪৭-এর ১৯ জুন ব্রিটিশ ভারতের বোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে জন্ম সলমন রুশদির। ১৯৮১-তে প্রকাশ হয় ভারতের পটভূমিকায় লেখা 'মিডনাইটস চিলড্রেন'। ভারতের স্বাধীনতা, দেশভাগ-সেসবের পটভূমিকায় লেখা এই ম্যাজিক রিয়েল গদ্যই তাঁকে এনে দেয় বুকার পুরস্কার। সাতবার বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন তিনি। 'মিডনাইটস চিলড্রেন' উপন্যাসটি দু'বার 'বুকার অফ বুকার্স' জিতেছে: একবার ১৯৯৩ সালে এবং আবার ২০০৮ সালে।
১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর জীবনের বিতর্কিত উপন্যাস 'দি স্যাটানিক ভার্সেস'। বিতর্ক মূলত শুরু হয় ইসলামিক দেশগুলির মধ্যে। ইসলামিক দেশগুলির মতে কোরানের বিভিন্ন পংক্তি এবং নবী মহম্মদের জীবনের কাহিনিকে নাকি বিকৃত করেছেন রুশদি। এই বই লেখার 'অপরাধে'ই ১৯৮৯ সালে ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা রুহোল্লা খোমেইনি রুশদির নামে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন। রুশদির মাথার দাম ধার্য হয় প্রায় ৩০ লক্ষ ডলার। এই বইয়ের জন্যই ২০২২ সালেও তাঁকে ছুরি দিয়ে কোপানো হয়। প্রতিটা কোপ লিখেছেন রুশদি, লিখেছেন ছুরি ধার কীভাবে তাঁকে বাঁচিয়ে দিয়েছে, কীভাবে তিনি ফের লিখেছেন। ছুরির মুখের সামনে কলম তুলে দাঁড়িয়েছেন।