মফসসলের অলক্ষ্মী-ছাপ
Tales of Olaxmis: আস্তে আস্তে বুঝছিলাম নিজের ইচ্ছায় বাঁচতে গেলে অলক্ষ্মী হতে হয়। আমি আস্তে আস্তে চিনতে শিখছিলাম আমাকে। আমার চারপাশের অলক্ষ্মীদের।
আর পাঁচটা মফসসলে মধ্যবিত্ত বাঙালি মেয়ের মতোই আমার বড়ো হয়ে ওঠা। তাই লক্ষ্মী মেয়ে হওয়ার ট্রেনিং পুরোদস্তুর ছোটোবেলা থেকে চালু হয়ে গিয়েছিল স্বাভাবিক ভাবেই। ক্লাস থ্রি অবধি নিয়ম করে গরমের ছুটির সময় আমায় ন্যাড়া করে দেওয়া হতো। ট্যাঁ ফোঁ না-করে যে যে বছর ন্যাড়া হয়ে যেতাম, সেই সন্ধ্যায় লক্ষ্মী মেয়ে হিসাবে পুরস্কার জুটতো গোল্ডস্পট। সারা বছর জুড়ে আর এক চুমুক ঠান্ডা পানীয় বরাদ্দ ছিল না আমার জন্য। তাই বুঝে গিয়েছিলাম লক্ষ্মী হলে ভালোই উপঢৌকন জোটে। তবু মানুষ তো, তাই প্রতি বছর লক্ষ্মী মেয়ের মতো ন্যাড়া হতে চাইতাম না। হাত-পা শক্ত করে ঘাড় গোঁজ করে বসে থাকতাম। কিছুতেই ‘কাট অ্যান্ড কাট’ সেলুনের উপেনদার কাছে যাব না সারা বছর ধরে নিয়মিত নারকেল তেল- সপ্তাহান্তে সাবান- আর কদাচিৎ শ্যাম্পুর যত্নে লালিত হওয়া চুল কাটাতে। এই অবস্থায় যা যা দিয়ে আমার প্রতিরোধ ভাঙার চেষ্টা হত সেগুলো হল: “ তুই তো লক্ষ্মী মেয়ে। তুই এমন করছিস!” লক্ষ্মী মেয়েরা এমন করে না।”, “লক্ষ্মী মেয়ে এখন চল। সন্ধ্যায় গোল্ডস্পট পাবি তাহলে”, “এতক্ষণ ধরে জেদ ধরে আছিস! ফাজলামো পেয়েছিস?”, “কী অসভ্য মেয়ে রে! দুপুর গড়াতে চললো। স্নান হবে কখন? খাওয়া হবে কখন? অলক্ষ্মী কোথাকার!”। শেষের বাক্যে সাধারণত কাজ হতো। অসভ্য, বাঁদর, শয়তান সবকিছু হওয়া ততটা অপমানের নয়, যতখানি অপমান লুকিয়ে থাকতো অলক্ষ্মী বলে দেগে দেওয়ায়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বার্ষিক ন্যাড়া হওয়ার দিন ফুরলো ,লক্ষ্মী মেয়ের চুল বড় থাকতে হয়--- এই নিয়মে।
ফার্স্ট ইয়ারে পড়াকালীন ন্যাড়া মাথার লিজা রে-কে ‘ওয়াটার’ সিনেমায় দেখে ন্যাড়া হওয়ার সাধ জাগলো আবার। মার্চ মাস তখন। তখন আর উপেনদা আমার চুল কাটে না, দুর্গাপূজা আর সরস্বতী পূজার ঠিক আগে আগে যাই ‘রিগ্যাল’ পার্লারে। পার্লারের মালকিন রুবি মাসি ‘সানন্দা’ পড়তে পড়তে দেখভাল করতো। বেলমুণ্ডি লিজা রে’র প্রেমে পড়ে ন্যাড়া হওয়ার জন্য ,মার্চ মাসে পার্লারে যাওয়ার জন্য বাড়িতে মা-বাপের কাছে যে টাকা চাওয়া যায় না, এইটুকু অর্থনৈতিক আক্কেল আমার ছিলো । বাড়িতে বলাও যাবে না যে ন্যাড়া হতে যাচ্ছি। আবার ন্যাড়া হয়ে গেলে খুবই গালিগালাজ করলেও মা-বাবা যে বাড়ি থেকে বের করতে পারবে না এইটুকু ভরসা ততদিনে জন্মে গেছে। ভূগোল টিউশনের সেই মাসের টাকাটা আমি স্যারকে আর দিলাম না। সোজা বাংলায়: মেরে দিলাম। টিউশনির টাকা মেরে ফুরফুরে মেজাজে গেলাম ‘রিগ্যালে’। “পুরো ন্যাড়া করে দাও”--- গলায় ‘তসলিমা কনফিডেন্স’ এনে বলেছিলাম নমিতাকে। ‘সানন্দা’ থেকে চোখ নামিয়ে ঠান্ডা গলায় রুবি মাসি বললো, “তুমি অনিতা’দির মেয়ে না? মা জানে? অমন লক্ষ্মীমন্ত মায়ের মেয়ে হয়ে এমন বেয়াদব অলক্ষ্মীর মতো ইচ্ছে হয় কেমন করে! মায়ের পারমিশন নিয়ে তারপর আসবে।“ ছোটোবেলা চোখের সামনে ফ্ল্যাশ হয়েছিল। আস্তে আস্তে বুঝছিলাম নিজের ইচ্ছায় বাঁচতে গেলে অলক্ষ্মী হতে হয়। পড়তে পড়তে ভার্জিনিয়া উলফ, সিমন দ্য বোভেঁয়া, জুলিয়া ক্রিস্টেভা, আদ্রেঁ রিচ, চন্দ্রা তালপাঁড়ে মোহান্তিরা ঢুকে পড়ছিলেন আমার জীবনে। আমি আস্তে আস্তে চিনতে শিখছিলাম আমাকে। আমার চারপাশের অলক্ষ্মীদের। তাদেরই ভিতর তিনজনের কিসসা রইলো এখানে।
আরও পড়ুন: বিধবার কামনায় ব্রাত্য ধন দৌলত, ঐশ্বর্য! লক্ষ্মীপুজোয় আজও একঘরে ‘স্বামীহীনা’রা
আসো তো ভাই, লসাগু গসাগু শিখাই তোমারে
ফুলমালা সরকার। আমার দিদা, মায়ের মা। মেয়েরা দিদার কাছ থেকে কত কিছু পায়! রাশভারী নামের সব গয়না, লুপ্তপ্রায় প্রজাতির শাড়ি, হারাতে বসা রান্নার রেসিপি, লুকোনো প্রেম নিয়ে লেখা কবিতার ডায়েরি- আরও কত কী! মানছি যে এক মেয়ে কোলে নিয়ে, আরেক মেয়ের হাতে ধরে, বর আরেকখান বিয়ে করে ফেলেছে কিনা এই বুক ঢিবঢিব নিয়ে উনিশশো আটষট্টিতে যে নমঃশুদ্দুরের বেটি ঢাকা থেকে ছয় রাত খালিপায়ে হেঁটে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ইন্ডিয়ায় এসে ডুয়ার্সের আপলচাঁদ জঙ্গলের নিকটবর্তী মাটিতে থাকতে বাধ্য হল, তার কাছ থেকে এইসব দাবি করা বাড়াবাড়ি। কিন্তু তা বলে একজন দিদা নিজের নাতনিকে আহ্লাদ করবে না! নাতনি দিদার বাড়ি গেলে ভালো-মন্দ রেঁধে খাওয়াবে না! ঘুমের সময় চুলে হাত বুলাতে বুলাতে রূপকথার গল্প শোনাবে না! নাতনির জন্য আচার বানাবে না! রোদে বড়ি শুকোবে না! ফুলমালা দেবীর এইসবে মন ছিল না কোনওকালেই। তার ভালোবাসার এক্সপ্রেশন ছিল: “আসো তো ভাই, লসাগু গসাগু শিখাই তোমারে।” ক্লাস সিক্স অবধি গুরুচাঁদ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত ইস্কুলে পড়াশোনা করা, ঘরামির ঘরের বউ আমার দিদার ধারণা ছিল সুদকষা, শুভঙ্করী, ঐকিক নিয়ম এইসব শিখলেই পৃথিবী সহজ হয়ে আসে। পারমুটেশন-কম্বিনেশন, সেট, প্রব্যাবলিটি যে দুনিয়ায় আছে তাই আর জানতে পারেনি ফুলমালা। তার পাটিগণিতের নিয়ম দিয়ে জীবনকে বুঝতে গিয়ে হিসাব মেলাতে পারেনি। একটা ভালোবাসাহীন বিয়ে, পুত্রসন্তান না-থাকার জন্য লাঞ্ছনা, ডুয়ার্সকে কখনওই ভালোবাসতে না পারার সমীকরণ শেষে ফুলমালা কেবল আমায় লসাগু শিখিয়ে এস্কেপ রুট খুঁজতো। আর বাড়ি, ঘর, নাতি-নাতনি এইসবেও যখন কাজ হত না ডুয়ার্সের বুক চিরে যাওয়া রেললাইন ধরে হাঁটা দিত দুপুর-দুপুর। কয়েক ঘন্টা কেউ খেয়ালও করতো না যে ফুলমালা নেই। সন্ধ্যার মুখে তুলসীতলায় বাতি দেওয়ার সময় হলে বাড়ির লোকজনের মনে হত কোথায় গেল ফুলমালা? টর্চ , লাঠি, হ্যারিকেন হাতে রেললাইন ধরে ওদলাবাড়ি থেকে বাগরাকোট হাঁটা দিত কিছু লোক। লিস নদী পেরিয়ে, চা-বাগানে বেশিরভাগ সময় খুঁজে পাওয়া যেত দিদাকে। কলকাতা যাওয়ার জন্য হাঁটা দিয়েছিলেন। কলকাতায় ভাই আছে। কলকাতা থেকে হাসনাবাদ অনেক কাছে। আবার ওদলাবাড়ি ফিরতে হত ফুলমালাকে। সন্ধ্যা পেরিয়ে পিদিম জ্বালাতে হতো তুলসীতলায়। ফিসফিস করে পাশের বাড়ির বৃদ্ধা তার পুত্রবধূকে বলছে, “এ বরাবরেরই অলক্ষ্মী। গোটা বাড়িকে জ্বালায়।"
কী বলেছিলে ডোনা’দি শ্বশুর’কে?
“ও একটা পাগল! নিজের ছেলেকে ছেড়ে থাকতে পারবে আর ওই মুসলার বাচ্চাকাচ্চাগুলোকে ছাড়তে পারবে না!”, সেই বিস্ময় সারাজীবন আর কাটিয়ে উঠতে পারেননি ব্যারিস্টার ব্রজগোপাল পাঠক। আমার সঙ্গে ব্রজগোপালবাবুর কোনওদিন দেখা হয়নি। চাকরিসূত্রে আমি চিনতাম ননীবালা মিশ্রকে। রিটায়েরমেন্টের মুখে ননীবালা তখন। খাতায় কলমে বয়স ষাটের কাছাকাছি, কিন্তু শরীর জানে ননীবালা তখন আটষট্টি। সাদা ধবধবে চুল। চুলের সাথে ম্যাচিং করে শাড়ি পরে আসতেন। ডাকনাম ডোনা। মাদার-টিচার পোস্টে চাকরিতে ঢুকেছিলেন উনিশো সত্তরের শুরুর দিকে। চাকরিতে ঢোকার সময় ননীবালার ব্যক্তিগত জীবনের সিভি ছিল উথালপাথালের। সুরেন্দ্রনাথ মিশ্রের দ্বিতীয়া কন্যা কুমারী ননীবালা মিশ্রের সহিত ধুমধাম করিয়া বিবাহ সম্পন্ন হইয়াছিল ব্রজগোপাল পাঠকের জেষ্ঠ্যপুত্র শ্রী ভাস্কর পাঠকের। বিবাহের নিমন্ত্রণ পত্রের ভাষা ত্যাগ করিয়া ননীবালা ও ভাস্কর যদ্যপি সহবাস প্রারম্ভ করিলেন , ভাস্করের পোষালো না। ভাস্করের ডাকসাইটে সুন্দরী বউ ছাড়া ফোটো তুলতে ভীষণ মানে লাগতো। বাতি নিবিয়ে দিলে বউয়ের মুখ দেখতে হয় না বলেই, ননীবালা বছর ঘুরতে পোয়াতি হয়ে গেল এবং যথাসময়ে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিল। এদিকে ভাস্করের তো পার্ফেক্ট পিকচার তখনও তোলা সম্ভব হচ্ছে না। নিয়মিত গঞ্জনা শুনতে শুনতে ননীবালা ছেলেকে কাঁখে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে এল। ব্রজগোপালের বাড়িও ননীবালাকে ফেরাবার তোড়জোড় না করে ভাস্করের পাশে ফোটো-পার্ফেক্ট বউ খুঁজতে লাগলো। ননীবালা ছয় মাসের ট্রেনিং করে মাদার-টিচার পোস্টে ঢুকে পড়ল কমলাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সব ছাত্র মুসলমান। তাদের যত্ন নিতে হয়। কেউ প্যান্টে পেচ্ছাপ-পায়খানা করে ফেললে প্যান্ট পাল্টে দিতে হয়। বমি করে দিলে যত্ন করে বমি পরিস্কার করে জামা পাল্টে দিতে হয়। ছাত্রছাত্রীদের ওজন মাসে মাসে নিয়ে খাতা মেনটেন করতে হয়। পাঁচ বছর পর ননীবালার ছুটির হিসাব কষে দেখা গিয়েছিল কোনও মেডিক্যাল নেই, সি এল প্রথম বছর তিনটে, দ্বিতীয় বছর দুটি, তৃতীয় , চতুর্থ ও পঞ্চম বছর যথাক্রমে এক, এক, শূন্য। এদিকে পাঁচ বছরে ব্রজগোপাল বাবুর ছেলের বিয়ে হয়েছে, ফোটো তুলে ভাস্কর মোটামুটি সন্তুষ্ট, কিন্তু কোনও সন্তান না হওয়ায় ব্রজগোপাল বাবু ননীবালাকে সন্তানসহ ফিরিয়ে নিয়ে যেতে কাকুতিমিনতি শুরু করলেন সুরেন্দ্রনাথবাবুর কাছে। ননীবালা কিছুতেই রাজি হলো না। ব্রজগোপাল বাবু আগে ফিউড্যাল, পরে শিক্ষিত। তাই প্রশাসন ও আদালতকে কাজে লাগিয়ে ননীবালার সন্তানের দখল নিতে বেগ পেতে হলো না। মা ছাড়া ছেলে তো খারাপ থাকে খুব। জ্বরে ভোগে, মুষড়ে থাকে। ব্রজগোপাল আবার নতজানু হলেন ননীবালার কাছে। ঘর বন্ধ করে বোঝাতে চাইলেন অনেক কিছু। থমথমে মুখে বেরিয়ে এলেন। ননীবালা শাড়ি পরতে লাগল রোজকার মতো ইস্কুল যাওয়ার জন্য। কিছুতেই ফিরে গেল না ব্রজগোপালের বাড়িতে। অনেক অনেক বছর এই গল্পগুলো শুনতে শুনতে আমি ননীবালাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, “কী বলেছিলে ডোনাদি শ্বশুরকে?” “কিছু বলি নাই। থাপ্পড় উঠিয়েছিলাম। তা দেখেই ব্যারিস্টার সাহেব দরজা খুলে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গিয়েছিলেন”, পানে চুন লাগাতে লাগাতে নির্লিপ্ত ভাবে বলেছিলো ননীবালা। স্টোভে চা বসাতে বসাতে ফিকফিক করে হেসে আমাদের সবিতাদি বলেছিলো, “আসলে ডোনাদির স্বভাব চরিত্র ছোটোবেলা থেকেই একদম লক্ষ্মীছাড়া। নিজের বাবাকেও তো নাম ধরে ডাকতো ছোটোবেলায়।“
আরও পড়ুন:ম্রিয়মান পটুয়া গান! লোকসংস্কৃতির অন্তর্জলিযাত্রায় লক্ষ্মীর পট, পাঁচালির গান
তা-ও মানতাম যদি ক্যারমটা প্রফেশনাল সার্কিটে খেলতো
“এই ভর সন্ধ্যায় কোন ভদ্রবাড়ির বউ ক্যারম পেটায়!” রোজকার এই প্রশ্নে কান না-দিয়ে ক্যারম পিটাতে পিটাতে ষাট পার করে ফেললো আমার মায়ের বান্ধবী অদ্রিজা হালদার, আমার অদ্রিজামাসি। রাঁধতে পারে দুর্দান্ত, মশারি টাঙ্গাতে, ঘরের পর্দা পাল্টাতে আলসেমি আসে, দুনিয়া-জাহান ওলটপালট হয়ে গেলেও কোনও না কোনও সঙ্গী জুটিয়ে রোজ সন্ধ্যায় দুই দান ক্যারম খেলেন। বিয়ের পর পর এই ক্যারম নিয়ে অশান্তি চরমে উঠতো। কোন ভদ্র-বাঙালি-শিক্ষিত বাড়িই বা বাইরে থেকে ছেলেপুলে জুটিয়ে এনে দুই রাউন্ড ক্যারম খেলা রোজ সন্ধ্যাবেলা নিতে পারবে? এর চেয়ে বাঙালি বাড়ির বউ যদি ডিপ্রেশনে ভুগে ভুগে নার্ভের ওষুধ খায়, সেটাই কাম্য। কিন্তু অদ্রিজা মাসির বাঙালির সংস্কৃতির কথা মাথায় রাখা দূরে থাক, নিজের বরের অফিস ফেরতা চায়ের কথাও মাথায় রাখার দায় ছিল না। ইস্কুল থেকে ফিরে চা বানিয়ে শ্বশুর-শাশুড়িকে খাইয়ে, রান্নার লোকের হাতে রান্নাঘর পুরোটা সঁপে দিয়ে অর্জুনের পাখির চোখ দেখার মতো বোর্ডে ক্যারমের ঘুঁটি দেখতে শুরু করত। দুই রাউন্ড খেলে উঠে আবার নিত্যকার কাজে লেগে পড়ত। এই তিরিশ বছরে অদ্রিজামাসির ক্যারম বোর্ডের সাথীরা সবসময় ভ্যারিয়েবল হয়েছে, ক্যারমবোর্ড পাল্টেছে, এমনকি অনলাইন ক্যারমেও অদ্রিজা মাসি নিজেকে অভ্যস্ত করেছে, ধ্রুবক থেকেছে শুধু ক্যারমের প্রতি টান। “ তা-ও মানতাম যদি ক্যারমটা প্রফেশনাল সার্কিটে খেলতো”, আক্ষেপ করে প্রায়ই বলেন তুতুনমেসো, অদ্রিজা মাসির বর। “তুমি ক্রিকেট দেখাটা দিয়ে কী অর্জন করেছো শুনি?”- অদ্রিজামাসির এহেন প্রশ্নে ঢোঁক গিলে মানে মানে সরে পড়েন তুতুনমেসো। একবার নাকি অদ্রিজামাসির শাশুড়ি ক্যারম নিয়ে এত অশান্তি করেছিলেন যে অদ্রিজামাসি বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিল কয়েক মাসের জন্য। পরদিনই বিকালের আগে তুতুনমেসোদের বাড়িতে এসে হাজির অদ্রিজামাসির ভাই। সকলে চিন্তিত। অদ্রিজামাসি যা ঢিট চারশো আটানব্বই দিতে ঢোঁক গিলবে না একবারও। শাড়ি , সার্টিফিকেট এগুলোও নিতে আসতে পারে। “দিদির ক্যারমবোর্ডটা নিয়ে যেতে বলেছে, আমাদের বাড়িরটা ফুলে গেছে তাই…” । “ওই অলক্ষ্মী ক্যারমপিটানি যাতে এই বাড়িতে পা না-দেয়”, হুঙ্কার ছেড়েছিলেন অদ্রিজা মাসির শাশুড়ি। দুই মাস পর তাঁর নিজের হাঁটু রিপ্লেসমেন্ট- এ’কথা ভুলে গিয়েছিলেন তখন।