ফের তাজ্জব মধ্যবিত্ত! নতুন বছরেই বাজারে খোলনলচে বদলে আসছে টাটা ন্যানো?

Tata Nano Electric Vehicle: খুব শীঘ্রই টাটা মোটরস এই গাড়িটিকে ইলেকট্রিক অবতারে ফেরাতে চলেছে। ইতিমধ্যেই এর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে জোর কদমে।

টাটা ন্যানোর কথা হয়তো সকলেরই মনে রয়েছে। একটা সময় এই গাড়িটিকে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন দেখেছিলেন রতন টাটা। ভারতীয়দের এক লক্ষ টাকার মধ্যে গাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাংলায় এসেছিলেন তিনি। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দৌলতে সেই প্রকল্প শুরুও হয়েছিল। কিন্তু তারপর সেই প্রকল্পের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টাটা ন্যানোকে ঘিরে সিঙ্গুরের সেই আন্দোলন কেই বা ভুলতে পারে। বাংলার মানুষজনদের কাছে টাটা ন্যানো প্রজেক্ট যেন এক অপূর্ণ রূপকথার মতোই। দুই চাকা গাড়ির দামে ২০০৮ সালে আত্মপ্রকাশ করেছিল রতন টাটার এই ব্রেন চাইল্ড। সেই বছরই চার চাকা ছোট্ট এই গাড়িটি ভারতে নিজের স্বপ্নের দৌড় শুরু করে। খুব একটা সাফল্য যদিও কোনওদিনই পায়নি টাটা ন্যানো, তবে অনেক ভারতীয়কে নিজের গাড়ি কেনার সাধ পূরণ করতে দিয়েছিল এই ছোট্ট গাড়িটি। ২০১৮ সাল পর্যন্ত টাটা ন্যানোর উৎপাদন চলেছিল। কিন্তু এরপর টাটা মোটরস এই গাড়িটির প্রোডাকশন বন্ধ করে দেয়।

তবে দেশে এখন ইলেকট্রিক ভেহিকেলের রমরমা বাজার। সেই ইলেকট্রিক মার্কেটে ভারতকে নেতৃত্ব দিচ্ছে টাটা মোটরসও। সেই সুযোগে কাজে লাগিয়ে এবার সস্তায় টাটা ন্যানো ইলেকট্রিক গাড়ি নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছে টাটা মোটরস। একাধিক রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, খুব শীঘ্রই টাটা মোটরস এই গাড়িটিকে ইলেকট্রিক অবতারে ফেরাতে চলেছে। ইতিমধ্যেই এর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে জোর কদমে। সোশ্যাল মিডিয়াতে এখন একটি ছবি ঘোরাফেরা করছে যেখানে দেশের রাস্তায় টাটা ন্যানো ইলেকট্রিক ভেহিকেল টেস্টিংয়ের ছবি ধরা পড়েছে। সে ছবি কতটা সত্যি সেই নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে, তবে টাটা ন্যানো ইলেকট্রিক যে বাজারে আসবে সে নিয়ে আর বিশেষ কোনও শঙ্কা নেই।

আরও পড়ুন-অ্যান্টিলা ফেল! আম্বানির রাজপ্রাসাদকেও টেক্কা দেবে রতন টাটার এই বিলাসবহুল বাড়ি

এখনও পর্যন্ত দেশের এক নম্বর ইলেকট্রিক গাড়ির প্রস্তুতকারক সংস্থা টাটা মোটরস। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান থেকে জানা গিয়েছে, দেশে যে কয়টি ইলেকট্রিক ভেহিকেল বিক্রি হয় তার মধ্যে আশি শতাংশই টাটা মোটরসের। এই সংস্থার অধীনে নির্মাণ হয় Nexon EV, Tigor EV র মতো গাড়িগুলি। ভারতের এই ক্রমবর্ধমান ইভি সেগমেন্টের নেতৃত্বস্থানীয় জায়গায় এই মুহূর্তে অবস্থান করছে টাটা মোটরস। সেই কারণেই আরও কম দামি এবং বেশি দামি গাড়ি মিলিয়ে ভবিষ্যতে আরও কয়েকটি ইলেকট্রিক গাড়ি লঞ্চ করতে চলেছে টাটা মোটরস।

এই মুহূর্তে ইলেকট্রিক গাড়ির একটি নতুন ব্রিড জন্ম নিয়েছে সারা বিশ্বে। এই ব্রিডের নাম দেওয়া হয়েছে মাইক্রো ইভি। অল্প সময়ের মধ্যেই উপভোক্তা মহলে এই গাড়ি বেশ নজর কেড়েছে। এইমুহূর্তে চিনে এই ধরনের গাড়ির সব থেকে বেশি রমরমা বাজার রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, Hongguang মিনি ইভি এই মুহূর্তে চিনের সব থেকে বেশি বিক্রি হওয়া ইলেকট্রিক গাড়িগুলির মধ্যে একটি। এই ধরনের ছোট ইলেকট্রিক গাড়িতে থাকে দু'টি দরজা এবং থাকে দু'টি সিট। খুব সহজেই অলিগলি চষে বেড়ানোর জন্য এই গাড়ি অত্যন্ত ভালো।

ভারতীয় এরকম একটি গাড়ি সম্প্রতি লঞ্চ হয়েছে যার নাম দেওয়া হয়েছে PMV ইলেকট্রিক কার। এই গাড়ির দাম মাত্র ৪.৭৯ লক্ষ টাকা এবং এই দামে গাড়িটি ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত রেঞ্জ অফার করতে পারে। এছাড়াও জনপ্রিয় গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা মরিস গ্যারাজ বা MG তার AIR EV গাড়িটি খুব শীঘ্রই লঞ্চ করতে চলেছে ভারতে। শুধু তাই নয় আরও একগুচ্ছ স্টার্ট আপ পরবর্তীতে এই মাইক্রো ইভি সেগমেন্টকে আপন করে নেওয়ার চেষ্টায় রয়েছে। আর সেই সেগমেন্টেই হয়তো নতুন রূপে অবতীর্ণ হতে চলেছে টাটা মোটরসের টাটা ন্যানো ইভি।

আরও পড়ুন- ফোর্ড কোম্পানি এখন তাঁর দখলে, যেভাবে অপমানের যোগ্য জবাব দিলেন রতন টাটা

যদিও এর আগে টাটা মোটরস একাধিকবার বাজার চলতি ন্যানো গাড়িগুলিতে ইলেকট্রিক মোটর এবং ব্যাটারি প্রতিস্থাপন করে টেস্টিং করেছিল। তবে সেই সমস্ত ছিল প্রোটোটাইপ। শুধুমাত্র একটি গাড়ি তৈরি হয়েছিল সেই সেগমেন্টের উপর এবং যে গাড়ি তৈরি হয়েছিল সেটিও ছিল একটি পরিবর্তিত মডেল। তবে এবারে তার অন্যথা হতে চলেছে। সম্পূর্ণ একটি নতুন টাটা ন্যানো ইলেকট্রিক গাড়ি প্রস্তুত করতে চলেছে টাটা মোটরস। ডিজাইন হতে চলেছে অত্যাধুনিক। অর্থাৎ বলতে গেলে ইলেকট্রিক ভেহিকেল হিসেবে পুনর্জন্ম হতে চলেছে টাটা ন্যানোর।

২০২০ সালের এপ্রিলে BS6 নির্গমন বিধি চালু হবার ফলে ভারতের গাড়ির বাজার থেকে একাধিক মডেল বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল এবং এর মধ্যেই অন্যতম একটি মডেল ছিল এক সময়কার বহু আলোচিত এই টাটা ন্যানো। এক লাখি এই গাড়িটি একটা সময় বহু মধ্যবিত্ত মানুষের গ্যারেজ আলো করে রেখেছিল। সূত্রের খবর, টাটা মোটরস তাদের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিকে আবারও জীবন্ত করে তুলতে চলেছে। ২০১৮ সালে টাটা ন্যানোর উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ার পরবর্তীতে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। সেই সময় এই গাড়িতে ব্যবহার করা হতো ৬২৪ সিসি ক্ষমতা বিশিষ্ট টুইন সিলিন্ডার পেট্রোল ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিন থেকে ৩৮ বিএইচপি শক্তি এবং ৫১ ন্যানোমিটার টর্ক উৎপাদন হতো। যার স্পিড ম্যানুয়াল অথবা অটোমেটিক গিয়ার বক্সের মাধ্যমে পিছনের চাকায় শক্তি সঞ্চারিত হতো। তবে এবার টাটা ন্যানোতে আসবে অনেক পরিবর্তন। নতুন টাটা ন্যানো ইলেকট্রিক ভেহিকেলে আন্ডারপিনিং থেকে শুরু করে সাসপেনশন সেটআপ এবং টায়ারে বেশ কিছু বড় পরিবর্তন রাস্তায় চলেছে। শোনা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই তামিলনাড়ু সরকারের সঙ্গে এই নতুন টাটা ন্যানো ইলেকট্রিক ভেহিকেলের উৎপাদনের বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন টাটা গ্রুপের কর্ণধাররা।

যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তাহলে তামিলনাড়ুর মারাইমেলনানগর এলাকার অধিগ্রহণ করতে পারে টাটা ন্যানো। ইতিমধ্যেই তামিলনাড়ু সরকারের সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে কথা চলছে। তবে, টাটা মোটরসের তরফ থেকে যদিও এই বিষয় নিয়ে তেমন কোনও বার্তা এসে পৌঁছয়নি। প্রসঙ্গত, বর্তমানে টাটার ঝুলিতে চারটি ইলেকট্রিক গাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে - Nexon EV, Tigor EV, Tiago EV, Xpres-T। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যেই ভারতের রাস্তায় নামবে টাটা ন্যানো ইভি। এই গাড়িটি হতে চলেছে দেশের সবথেকে সস্তা ইলেকট্রিক ভেহিকেল। পাশাপাশি এও জানা গিয়েছে, নতুন প্রজন্মের এই ইলেকট্রিক গাড়িটিতে মিলবে ২০০ কিলোমিটারের রেঞ্জ। এখন দেখার, কবে নাগাদ এই টাটা ন্যানো ইলেকট্রিক ভেহিকেল ভারতের বাজারে এত প্রকাশ করে এবং এই গাড়ির দামই বা হয় কত।

 

More Articles