৫৮৩ জনের মৃত্যু, পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা, কী ঘটেছিল সেদিন?
Tenerife Air Disaster : আজ থেকে ৪৫ বছর আগে ৫৮৩ জন মানুষের মৃত্যু দেখেছিল বিশ্ব। ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল দুটি বিমান। আজও সেই ভয়াবহতায় শিউরে ওঠে সবাই।
“রানওয়ে জুড়ে পড়ে আছে শুধু কেউ নেই শূন্যতা”। মহীনের ঘোড়াগুলির এই বিখ্যাত গানটিই বারবার মাথায় আসছে। রানওয়ে জুড়ে একরাশ ধ্বংসস্তূপ। লোহা লক্কড়ের ছড়াছড়ি, সেইসঙ্গে ইতিউতি পড়ে রয়েছে দগ্ধ লাশ। রক্ত, ছাই আর আর্তনাদ – সবকিছুর মাঝেই পড়ে রয়েছে এক অসীম শূন্যতা। ২০২৩-এর নেপাল বিমান দুর্ঘটনা দেখে শিউরে উঠছেন সকলে। কিন্তু ইতিহাস বলছে আরও আরও ভয়ংকর এক অধ্যায়ের কথা। বিমান সভ্যতার কালো দিন ছিল সেটি। আজ থেকে ৪৫ বছর আগে ৫৮৩ জন মানুষের মৃত্যু দেখেছিল বিশ্ব। ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল দুটি বিমান। টেনেরিফ বিমান বিপর্যয়ের (Tenerife Airport Disaster) সেই দৃশ্য মনে করলে আজও গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে যায় সবার। সেই ভয়াবহতা দেখে চোখ বন্ধ করে ফেলেন অনেকে।
কী ঘটেছিল সেদিন? কেন এতগুলো নিরীহ মানুষের প্রাণ অকালে ঝরে গেল? টেনেরিফ আসলে একটি দ্বীপ। আরও ভালো করে বললে, আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বড়ো দ্বীপ। আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর অবস্থিত এই দ্বীপটি আসলে স্পেনের অধীনে। এখানেই অবস্থিত লস রোডেওস বিমানবন্দর। ছোট্ট একটি বিমানবন্দরেই ঘটে এই বিপর্যয়।
আরও পড়ুন : ১৬ বছরের ব্যবধান, স্বামীর মতোই শেষ পরিণতি! নিয়তিই মিলিয়ে দিল নেপালের বিমান দুর্ঘটনার পাইলটকে
১৯৭৭ সালের ২৭ মার্চ। দিনটি ছিল রবিবার। লস রোডেওস বিমানবন্দরে সাধারণত স্থানীয় ফ্লাইটগুলি পরিচালনা করা হয়। রবিবার চাপও একটু কম থাকে। ওইদিন মাত্র দুজন কন্ট্রোল টাওয়ারের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু একটু আলাদা ছিল ৪৫ বছর আগের ওই দিনটি। পাশের দ্বীপ গ্রান ক্যানারির লাস পালামাসে বোমা হামলা হওয়ায় সমস্ত বিমান লাস রোডেওস দিয়ে ঘোরানো হয়। সেরকমই দুটি বিমান ছিল কেএলএম ডাচ এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৪৮০৫ এবং প্যান আমেরিকান ওয়ার্ল্ড এয়ারওয়েজ বা প্যান অ্যামের ফ্লাইট ১৭৩৬।
এদিকে এয়ার কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়, প্যান অ্যাম ১৭৩৬ রানওয়ে থেকে থার্ড এক্সিট হয়ে ট্যাক্সিওয়ের দিকে যাবে। অন্যদিকে, কেএলএম ৪৮০৫ যেন রানওয়েতে চলে আসে এবং টেকঅফ করার জন্য প্রস্তুত হয়। কিন্তু কোনও বিমানকেই উড়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়নি। একেই দেরি হয়ে গিয়েছে, তার ওপর তাড়াহুড়ো, কেএলএমের পাইলট ঠিক করে শুনলেনই না নির্দেশ। বিমানটি সরাসরি চালাতে শুরু করলেন। এদিকে ঘন কুয়াশায় একটু একটু অস্পষ্ট সামনের দিক। একেবারে সামনেই, রানওয়ের ওপর যে প্যান অ্যামের বিমান দাঁড়িয়ে আছে, বুঝতে পারলেন না পাইলট। একেবারে মুখোমুখি দুটি বিমানের সংঘর্ষ হয়।
আরও পড়ুন : বিমান দুর্ঘটনায় পাইলটদের মৃত্যু, মারা যান মালিকও, নেপালের ইয়েতি এয়ারলাইন্স সত্যিই ‘অভিশপ্ত’?
সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণের শব্দ, আর রানওয়ে জুড়ে আগুন। মুহূর্তে হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। জানা গেল, কেএলএম বিমানে ছিলেন ২৩৪ জন যাত্রী; যার মধ্যে ৫৩ জন শিশু। অন্যদিকে প্যান অ্যামে ছিলেন ৩৮০ জন যাত্রী। শেষমেশ দেখা যায়, প্যান অ্যামের একেবারে সামনের দিকে বসা ৬১ জন যাত্রী কেবল বেঁচে আছেন। বাকি ৫৮৩ জন ওখানেই মারা গিয়েছেন। সঙ্গে শিশুরাও…
পরে তদন্তে জানা যায়, কেএলএম বিমানের কো-পাইলট বারবার বিমান না চালানোর কথা বলেন। কিন্তু পাইলট কন্ট্রোল টাওয়ারের নির্দেশ ভুল শোনেন। কিছুতেই কো-পাইলটের কথা শোনেননি। আর তার মাশুল দিতে হল এতগুলো প্রাণের বলির বিনিময়ে। শেষমেশ ওই রানওয়েতে ধ্বংসস্তূপ ছাড় আর কিছুই পড়ে ছিল না। ছিল কেবল বিমানের কঙ্কাল, আর অজস্র মানুষের লাশ।