রীতিমতো শিকলে বেঁধে পুজো করা হতো দেবীকে, বাংলার এই কালীকে ঘিরে রয়েছে অজানা রহস্য

Mysterious Kali Of Bengal : কালীপুজো নাকি জুঁই ফুলের মতো, রাত পোহালেই তার সুবাস নষ্ট। এখানেও হতো ঠিক তাই। এক রাতের পুজোর জন্যই যত আয়োজন। তাই গভীর রাতেই মশাল জ্বালিয়ে প্রতিমা তৈরি করা হতো।

কালী প্রসঙ্গে আলোচনা উঠলে বারবার কলকাতা শহরের নাম আসে ঠিকই তবে, সারা বাংলা জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এমন বেশ কিছু কালীর রহস্য যা আজও অবাক করে। সেই ইতিহাস শুনলে গায়ে কাঁটা দেয়। দেবীর রুদ্র মূর্তির ব্যাখ্যা মেলে বিভিন্ন প্রকারে। এরকমই একটু প্রান্তিক গ্রামের কালীপুজো হল মালদহের মানিকোড়া কালীপুজো। নামটা শুনে প্রান্তিক মনে হলেও, এই পুজোর ৩০০ বছরের ইতিহাস শুনলে রীতিমতো শিহিরণ জাগে আজও। আজকের সর্বজনীন এই কালীপুজো অবশ্য একটা সময় ছিল জমিদারদের কুক্ষিগত। তবে ইতিহাস অবশ্য আরও অন্য এক গল্পের কথা বলে। বলা হয়, এই পুজোর শুরু করেন ডাকাত দল। শুধু তাই নয়, শোনা যায়, ৩০০ বছর আগে গভীর জঙ্গলে ঘেরা এই এলাকায় পুনর্ভবা নদী পেরিয়ে পুজো দিতে আসত ডাকাতেরা।

কালী পুজো ঘিরে এমনিতেই বাংলায় অজস্র রহস্য। তাই বলে এমন কথা কি শুনেছেন কখনও যে রীতিমতো শিকল দিয়ে বেঁধে পুজো করা হতো কোনও কালীকে! হ্যাঁ এটাই সত্যি। মানিকোড়ার কালীকে নিয়ে রয়েছে এমনই প্রচার। মালদহ জেলার হবিবপুরের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পুনর্ভবা নদীরপাড়ের গ্রাম মানিকোড়া। গ্রামের নামেই এখানকার মা কালীর পরিচিতি "মানিকোড়া কালী" হিসেবে।

আরও পড়ুন - কখনও দক্ষিণা, কখনও শ্মশান, কখনও আবার রক্ষাকালী, কেন ভিন্ন ভিন্ন নামে পূজিতা হন দেবী?

কালীপুজো নাকি জুঁই ফুলের মতো, রাত পোহালেই তার সুবাস নষ্ট। এখানেও হতো ঠিক তাই। এক রাতের পুজোর জন্যই যত আয়োজন। তাই গভীর রাতেই মশাল জ্বালিয়ে প্রতিমা তৈরি করা হতো। তারপর শুরু হতো পুজো। বলিও দেওয়া হতো সেই সময়। অবশেষে রাত ফুরিয়ে ভোর হলেই শেষ। নদীতে বিসর্জন দিয়ে আবার ফিরে যেত ডাকাত দল। যদিও এরপরে ব্রিটিশ আমলে ডাকাতের দৌরাত্ম্য কমে যায়। কিন্তু কালীর মাহাত্ম্য তো কমার নয়। তাই সেই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে তৎকালীন জমিদার ভৈরবেন্দ্র নারায়ণ রায়ের উদ্যোগে শুরু হয় কালী পুজো।

এই পুজোর বলি নিয়ে রয়েছে রহস্যময় মিথ। শোনা যায় বলি সময় নাকি প্রতিমা কেঁপে উঠতো, তাই শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো দেবীকে। যদিও এখন সেই নিয়ম আর মানা হয় না কিন্তু বলি যাতে দেবী চাক্ষুষ দেখতে না পান তাই বলির সময় চোখে কাপড় বেঁধে রাখা হয়। কথিত আছে একসময় ছদ্মবেশে মা কালী এক শাঁখারির কাছে পুজোর উপলক্ষে শাঁখা পরতে গিয়েছিলেন, সেই থেকেই এই গ্রামে কালীপুজোর দিন মেয়ে বউদের নতুন শাঁখা পড়ার রেওয়াজ প্রচলিত আছে।

আরও পড়ুন - মাছ ছাড়া ভাত খান না স্বয়ং কালী, লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়ে গিয়েছে বাংলার এই শক্তিপীঠ

আরও অবাক করে যে বিষয়টি, তা হল আজকের এই এটি শব্দ বাজির যুগে দাঁড়িয়েও এখনকার কালী একেবারেই নিভৃতচারী। নিরবিলি প্রেমী। শব্দ পছন্দ করেন না তিনি। তাই, আজও এখানে কালীপুজোয় কোনওরকম শব্দদূষণ নেই। দীর্ঘদিন ধরে এই এখনকার প্রতিমা তৈরি করছেন স্থানীয় বাসিন্দা নীরেন্দ্রনাথ রায়। উত্তরাধিকার সূত্রেই তিনি পেয়েছেন এই অধিকার। দেবী এতই জাগ্রত যে মনস্কামনা পূরণ না করে খালি হাতে নাকি কাউকেই ফেরান না। পূজো উপলক্ষে মানিকোড়া গ্রামে সাতদিন ধরে মেলা বসে। শুধু এরাজ্যই নয়, অন্যান্য অনেক রাজ্য থেকে ভক্তরা আসেন এখানে পুজো দিতে। যদিও দেবীর মাহাত্ম্য সেখানেই, যেখানে ভক্তি আর বিশ্বাস রয়েছে। বিজ্ঞান সেখানে হাবুডুবু খায়। জিতে যায় মিথ। তাই শিকল বেঁধে হলেও আটকে রাখা ছাড়া উপায় কি!

More Articles