গুয়াহাটির জঙ্গলে ভূতের নাচ! সরাইঘাটের যুদ্ধে যেভাবে মুঘলদের হারিয়েছিল অহমরা

Battle of Saraighat: রাম সিংহ লছিতকে একটি চিঠিতে তিনি অনুরোধ করেন গেরিলা যুদ্ধ বন্ধ করতে। জবাবে লছিত বোরফুকন লেখেন, “ভুলবেন না, সিংহরা রাত্রেই লড়াই করে”।

ভারতবর্ষের ইতিহাসে অনেক বড় বড় রাজা-বাদশাহ এসেছেন। প্রত্যেকেই কখনও না কখনও কাউকে যুদ্ধে হারিয়েছেন অথবা নিজে হেরেছেন। যুদ্ধে সাধারণত শক্তিশালী সেনা, তুলনামূলক দুর্বল সেনাকে হারিয়ে দিত। কখনও আবার উল্টোটাও হত। এমনই এক যুদ্ধ হয়েছিল ভারতের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত অসমে। ১৮২০-র দশকের আগে পর্যন্ত অসমের শাসনভার ছিল অহম রাজবংশের হাতে। নিজেদের শাসনকালে অসংখ্য ঐতিহাসিক যুদ্ধ লড়েছে এবং জিতেছে অহম রাজবংশ। কিন্তু এই যুদ্ধগুলির মধ্যে সবচেয়ে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধটি হল সরাইঘাটের যুদ্ধ বা ‘The Battle of Saraighat’। মুঘল বনাম অহমদের এই যুদ্ধে অহমদের হার কার্যত নিশ্চিত ছিল। দেশের অন্যান্য প্রান্তগুলির মতোই ভারতের উত্তর পূর্ব প্রান্তও মুঘলদের দখলে চলে যেতে বসেছিল। কিন্তু মুঘলদের সম্পূর্ণ ভারত দখলের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান এক নিপুণ যোদ্ধা। এমন এক যোদ্ধা যাঁর যুদ্ধনীতি আজও বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কেস স্টাডি’ হিসেবে পড়ানো হয়। বিশ্বে বন্দিত হলেও ভারতের মানুষের কাছে প্রায় ভুলতে বসা এই যোদ্ধা হলেন, লছিত বোরফুকন।

ভারতের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত অসম, ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থিত। পুরাতন গ্রন্থে এবং শাস্ত্রে এই অঞ্চলকে প্রাগজ্যোতিষপুর নামে উল্লেখ করা আছে। চারিদিক পাহাড় এবং জঙ্গল দিয়ে ঘেরা হওয়ায় বরাবরই প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য ছিল এই অঞ্চলে। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে এই অঞ্চলে প্রায় ৬০০ মাইল এলাকা জুড়ে নিজের সাম্রাজ্য স্থাপন করে অহম রাজবংশ। প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য এবং ব্রহ্মপুত্র নদীর নৈকট্য, এই দুইয়ের কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই ভারতের অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল হয়ে ওঠে এটি। পূর্ব ভারতে বাংলার পাশাপাশি আরও একটি ব্যবসায়িক কেন্দ্র হয়ে ওঠে অসম। এত সমৃদ্ধি এবং ধন-সম্পদের কারণে এই অঞ্চলটি নিজেদের অধীনে করতে চেয়েছিল মুঘলরা। ১৬১৫ সাল থেকে পরবর্তী ৬০ বছর, ১৭ বার অসম আক্রমণ করে মুঘলরা। মুঘলদের রুখতে ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর বেশ কয়েকটি দুর্গ নির্মাণ করেছিল অহমরা। এই যুদ্ধগুলিতে কখনও মুঘলরা জিতত, কখনও আবার অহমরা। তবে সারা দেশের মতো এই অঞ্চলে নিজেদের ক্ষমতা কায়েম করতে পারেনি মুঘলরা।

লছিত হলেন ‘বোরফুকন’

১৬৬১ সালে বাংলার সুবেদার মীর জুমলা অসম আক্রমণ করেন এবং গুয়াহাটি সমেত অহম সাম্রাজ্যের অনেক বড় একটি অংশের দখল নেন। এই হারের ধাক্কা সইতে না পেরে অহম রাজা জয়ধ্বজ সিং পরলোকগমন করেন। নতুন রাজা হন চক্রধ্বজ সিং। চক্রধ্বজ বদ্ধপরিকর ছিলেন মুঘলদের হাত থেকে সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে। তিনি নিজের সেনাবাহিনীর পুনর্ববিন্যাস করেন। দশ জন সেনার নেতাকে বলা হত ডেকা, একশো জন সেনার নেতাকে বলা হত সেনিয়া, হাজার জন সেনার নেতাকে বলা হত হাজারিকা। এভাবেই ছয় হাজার জন সেনার নেতাকে বলা হত ফুকন। এভাবেই পদাতিক, তিরন্দাজ, বন্দুকবাহিনী প্রভৃতি দলের একটি করে ফুকন ছিল। আর এই ফুকনদের নেতাকে বলা হত বোরফুকন। রাজা চক্রধ্বজ লছিতকে নিজের সেনার বোরফুকন নিযুক্ত করেন। ১৬২২ সালে অহম রাজবংশের এক ফুকন, মোমাই বরবড়ুয়ার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন লছিত বোরফুকন। শৈশব থেকেই অস্ত্রবিদ্যা এবং যুদ্ধকৌশলে পারদর্শী ছিলেন লছিত। দায়িত্ব পেয়েই সবার আগে একটি শক্ত সমর্থ নৌসেনা তৈরি করতে উদ্যোগী হন তিনি। লছিত বোরফুকন জানতেন, যদি মুঘলদের একবার ব্রহ্মপুত্রের জলে নামানো যায় তাহলে তাদের ভালোরকমই নাকানি-চোবানি খাওয়ানো যাবে।

লছিত বোরফুকন

আরও পড়ুন- কলকাতার বস্তিতে বাস মুঘল সম্রাটের নাত বউয়ের, রিকশা চালান টিপুর বংশধর!

গুয়াহাটি পুনর্দখল

অহম বনাম মুঘলদের জলযুদ্ধ অর্থাৎ সরাইঘাটের যুদ্ধ হতে তখনও বছর পাঁচেক বাকি। ১৬৬৬ সালে গুয়াহাটি পুনর্দখলের পরিকল্পনা করেন লছিত বোরফুকন। সেই সময় গুয়াহাটির সামরিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ ছিল ইটাখোলা দুর্গ। ইটাখোলা জয় মানে গুয়াহাটি জয়। ইসমাইল সিদ্দিকী ওরফে বাঘ হাজারিকার নেতৃত্বে এই দুর্গ দখলের পরিকল্পনা করেন লছিত। এই দুর্গটি দখল করতে প্রয়োজন ছিল অশ্বারোহী সৈন্যের। তা না থাকায় এক অভিনব উপায় বের করেন তাঁরা। রাতের অন্ধকারে বাঘ হাজারিকার সঙ্গে গোটা শয়েক সৈন্য পাঁচিল বেয়ে দুর্গে ঢুকে যায়। দুর্গে ঢুকেই কামানগুলির বারুদে ভালো করে জল ঢেলে দেয়। কামান হয়ে গেল অকেজো। পরের দিন সকাল হতেই ইটাখোলা আক্রমণ করে অহম সৈন্যরা। আগের রাতে কামান অকেজো করার পাশাপাশি, অস্ত্রাগার থেকে সৈনিকদের অস্ত্র নিয়েও পালিয়েছিল অহম সেনার ওই ছোট্ট দলটি। ফলে কার্যত নিরস্ত্র অবস্থায় অহম সৈন্যদের কাছে আত্মসমর্পণ করে মুঘল সেনারা। এভাবেই গুয়াহাটি পুনর্দখল করেন লছিত বোরফুকন।

গুয়াহাটির জঙ্গল এবং ভূতের উপদ্রব

গুয়াহাটি হাতছাড়া হওয়ার খবর কানে পৌঁছতেই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন ঔরঙ্গজেব। আমেরের রাজা রাম সিংহের নেতৃত্বে একটি বিশাল বড় সেনা অসমের দিকে পাঠিয়ে দেন তিনি। সেই সেনায় ছিল ২১ জন রাজপুত সর্দার, ৩০ হাজার পদাতিক সৈন্য, ১৮ হাজার অশ্বরোহী, সহস্র তোপ এবং কয়েকশো যুদ্ধ জাহাজ। অসমে পৌঁছে, এই সুবিশাল বাহিনী গুয়াহাটি ঘিরে ক্যাম্প লাগিয়ে বসে পড়ে। লছিত জানতেন খোলা ময়দানে তার সেনা পেরে উঠবে না মুঘলদের সঙ্গে। তাই তিনি মুঘলদের অসমের এতটা ভেতরে ঢুকতে দিলেন। মুঘলরা মনের আনন্দে ঢুকে গেলেও খেয়াল করেনি দুই পাশ পাহাড় এবং জঙ্গলে ঘেরা। ঠিকই ধরেছেন, লছিত বোরফুকনের পরিকল্পনা ছিল গেরিলা যুদ্ধের। মুঘলরা যখন নিজেদের ভুল বুঝতে পারে, ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। রাতের অন্ধকারে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করল অহম সেনারা। এমন কিছু যে হতে পারে তা ভাবতেই পারেননি মুঘল সেনার কেউ। পরিস্থিতি এমন হয় যে রাত্রিবেলা সেনাবাহিনীর খাবার পর্যন্ত নিয়ে পালিয়ে যায় অহম সেনারা। এমনকী ভূত সেজে ভয়ও দেখায় মুঘল সেনাদের। মুঘল শিবিরের সেনাদের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়। এইসব দেখে বিরক্ত হয়ে রাম সিংহ লছিতকে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি অনুরোধ করেন গেরিলা যুদ্ধ বন্ধ করতে। জবাবে লছিত বোরফুকন লেখেন, “ভুলবেন না, সিংহরা রাত্রেই লড়াই করে”। রাম সিংহ বুঝতে পারেন বাঁচতে হলে জঙ্গল থেকে বেরোতে হবে। আর জঙ্গল থেকে বেরোনোর একমাত্র পথ ব্রহ্মপুত্র। আগেই বলেছি, লছিত চেয়েছিলেন মুঘল সেনাকে জলে নামাতে। বাধ্য হয়ে মুঘল সেনা ঠিক করে জলে নেমেই যুদ্ধ করবে অহমদের সঙ্গে।

আলাবোয়ার যুদ্ধ

এরকম কিছুই হবে আগেভাগে জেনে নিজের শক্তিশালী নৌসেনাকে সরাইঘাটে বসিয়ে রেখেছিলেন লছিত। সরাইঘাটে ব্রহ্মপুত্র সবচেয়ে সংকীর্ণ। সুতরাং ওই অঞ্চলে মুঘল নৌবহরকে টক্কর দেওয়া তুলনামূলক সহজ। সরাইঘাটে আসার আগে মুঘল নৌবহর আটকে পড়ল আলাবোয়াতে। কিন্তু আলাবোয়াতেও সেই ভূতের উপদ্রব। মুঘল সেনা ভয় পাচ্ছে শুনে লছিত তার সৈন্যদের নির্দেশ দেন রাতের অন্ধকারে অদ্ভুত সব আওয়াজ করতে। মুঘল শিবিরে রটে যায় অহমদের কাছে পৈশাচিক শক্তি আছে যা রাত্রিবেলা বৃদ্ধি পায়। রাম সিংহ জানতেন চিঠি লেখা বৃথা, তাই এবার রাজনীতিই পথ। তিনি একটি চিঠি লিখেন এবং তা ইচ্ছা করে অহম গুপ্তচরদের হাতে পাঠিয়ে দেন। সেই চিঠিতে লেখা ছিল লছিত ঔরঙ্গজেবের থেকে ১ লক্ষ টাকা নিয়েছেন বলে সরাসরি যুদ্ধে যেতে চাইছেন না। চিঠি গিয়ে পৌঁছল মহারাজ চক্রধ্বজের কাছে। চিঠি পড়ে তিনি বেজায় চটে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে লছিতকে নির্দেশ দিলেন যুদ্ধ করার। অভিজ্ঞ যোদ্ধা লছিত বোরফুকন জানতেন এর পরিণতি কী ভয়ানক হতে পারে। কিন্তু তাও রাজার নির্দেশে তিনি যুদ্ধ করেন। ১৬৬৯ সালে শুরু হয় আলাবোয়ার যুদ্ধ। এই যুদ্ধে হেরে যায় অহমরা। গুরুতর আহত হন লছিত বোরফুকন। যদিও গুয়াহাটি তখনও মুঘলরা দখল করতে পারেনি। ইতিমধ্যেই দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে প্রয়াত হন রাজা চক্রধ্বজ।

সরাইঘাটের যুদ্ধ

চক্রধ্বজের পর সিংহাসনে বসলেন তাঁর ছেলে উদয়াদিত্য সিং। রাম সিংহ এবার সোজাসুজি পত্র লিখলেন উদয়াদিত্যকে। তিনি পরামর্শ দিলেন যুদ্ধ থামিয়ে সন্ধির প্রস্তাব করার। পত্রের কথা শুনে মহারাজকে সন্ধিপ্রস্তাব নাকচ করে দিতে বলেন লছিত বোরফুকন। মুঘলদের কখনই ভরসা করা যায় না। ওদিকে, ঔরঙ্গজেবও রাম সিংহকে পত্র লিখে জানিয়ে দেন সন্ধির কোনও দরকার নেই। পত্রে তিনি মনে করিয়ে দেন, রাম সিংহকে গুয়াহাটি জয় করতে পাঠানো হয়েছে, সন্ধি করতে নয়। দু'পক্ষের তরফেই পরিষ্কার হয়ে গেল আর সন্ধি হবে না, এবার যুদ্ধ হবে। আলাবোয়ায় অহম সেনার ব্যারিকেড কার্যত উড়িয়ে দিয়ে সরাইঘাটের দিকে এগোতে লাগলেন রাম সিংহ। তাঁকে রোখার জন্য সরাইঘাটে কুড়ি হাজার অহম সেনা নিয়ে তৈরি হতে লাগলেন লছিত বোরফুকন। ১৬৭১ সালে শুরু হল সরাইঘাটের যুদ্ধ। কামাক্ষ্যা মন্দিরের কাছে নীলাচল পাহাড়, ইটাখোলা এবং আস্ফাকান্তা, এই তিনটি অঞ্চলের মাঝে, প্রায় এক তৃতীয়াংশ সেনাকে বন্দুক এবং তির-ধনুক নিয়ে ত্রিভুজাকৃতি প্যাটার্নে দাঁড় করিয়ে দেন লছিত। তারা এক নৌকা থেকে লাফ দিয়ে আরেক নৌকায় ঘুরতে ঘুরতে যুদ্ধ শুরু করেন মুঘলদের সঙ্গে। বাকি সেনার একটি অংশ, অন্য তিনটি প্রান্ত অর্থাৎ নীলাচল পাহাড়, ইটাখোলা এবং আস্ফাকান্তার দুর্গ থেকে আক্রমণ শুরু করে মুঘল নৌবহরের ওপর। অপর অংশটি নৌকো নিয়ে গিয়ে একদল সেনা দখল করতে শুরু করে মুঘলদের জাহাজগুলি। একে তিন দিক থেকে আক্রমণ তার, সামনাসামনি অমন গোলাগুলি এবং অহমদের অতর্কিত আক্রমণ- যুদ্ধের মাঝে কার্যত খেই হারিয়ে ফেলে মুঘল সেনা। এই যুদ্ধে অসংখ্য মুঘল সেনা মারা যায়। চার হাজার সেনার শুধু দেহ উদ্ধার করা গিয়েছিল। আরও কয়েক হাজারের সলিল সমাধি হয়ে থাকতে পারে। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অহমরাও। দুই তরফেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় অহমরা, পিছু হটতে বাধ্য হয় মুঘলরা।

আরও পড়ুন- ঔরঙ্গজেবের বদলে তিনিই হতেন মুঘল সম্রাট, আজও দগদগে ইতিহাসের সেই ক্ষত

সরাইঘাটের যুদ্ধের গতি প্রকৃতি

এই যুদ্ধের পর লছিত বোরফুকনকে কার্যত ভগবান রূপে পুজো করা হয় গোটা অসমে। রাজা উদয়াদিত্য জোড়হাটে একটি সুবিশাল মূর্তি স্থাপন করেন লছিত বোরফুকনের। ১৬৭২ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন লছিত বোরফুকন। সরাইঘাটের যুদ্ধের পর প্রায় দেড়শো বছর অসমে শাসন করেছিল অহম রাজবংশ। এরপর ১৮২৬ সালে অসমের শাসনভার গ্রহণ করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। প্রতিবছর ২৪ নভেম্বর অসমে পালিত হয় লছিত দিবস। ১৯৯৯ সাল থেকে এনডিএর সেরা ক্যাডেটকে ‘লছিত বোরফুকন অ্যাওয়ার্ড’ দিয়ে সম্মানিত করা হয়। আমাদের দুর্ভাগ্য, অসম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে পূজিত হলেও দেশের সব মানুষ লছিত বোরফুকন সম্বন্ধে কিছুই প্রায় জানেন না।

জোড়হাটের স্মৃতিসৌধ

More Articles